ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। ছবি: টুইটার
ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। আইপিএল বা কলকাতা নাইট রাইডার্স এখন আর তাঁর ভাবনায় নেই। অতীত নিউজিল্যান্ডও। একটু ভুল হল। নিজের দেশকে নিয়ে অবশ্য তাঁকে ভাবতে হচ্ছে। সেই ভাবনা কিন্তু দেশের পক্ষে নয়। বিপক্ষে!
পেশাদার জীবনের হাতছানিতে ম্যাকালাম এখন ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের কোচ। সেই টেস্ট ক্রিকেট, যাকে এখনও আসল ক্রিকেট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেই টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে সাফল্যের পথ দেখানোর গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে ব্যর্থতার অতলে ডুবে থাকা ইংল্যান্ড চাইছে ঘুরে দাঁড়াতে।
চ্যালেঞ্জ নিতে কোনও দিনই পিছু পা নন ম্যাকালাম। এ ক্ষেত্রেও হননি। পেশাদার কোচের জীবনে সব প্রতিপক্ষই সমান। তবু তো তিনি রক্ত মাংসর মানুষ। সেই নিউজিল্যান্ড। তাঁর জন্মভূমি। যে দেশের হয়ে এক দশকের বেশি সময় রক্তজল করেছেন। ১০১ টি টেস্ট, ২৬০টি এক দিনের ম্যাচ এবং ৭১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নানা পরিকল্পনা করেছেন। সেই মাতৃভূমির বিরুদ্ধেই এ বার রণকৌশল তৈরি করতে হবে তাঁকে। করতে হবে সেই দেশের হয়ে, যাদের গোটা ক্রিকেট জীবনে অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে এসেছেন।
জীবন আসলে এমনই বৈপরীত্যে ভরা। নিজের ঘরই এখন তাঁর শত্রু শিবির। আর শত্রু শিবিরই এখন তাঁর নিজের! ইংল্যান্ড ক্রিকেট আসলে একটা গা ঝাড়া দিতে চাইছে। ভাঙতে চাইছে অচলায়তন। সিনিয়র ক্রিকেটারদের একাংশের তারকাসুলভ মনোভাবের কুফল থেকে মুক্ত করতে চাইছে। সেই কুফল, যার ধাক্কায় হারতে হয়েছে অ্যাশেজ। এমনকী তুলনামূলক দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও টেস্ট সিরিজ। ম্যাকালামের কাজটা কঠিন নিঃসন্দেহে। তার উপর তাঁর পথ চলা শুরু হবে নতুন অধিনায়ককে নিয়ে। টানা ব্যর্থতার জেরে জো রুট দায়িত্ব ছেড়েছেন। অধিনায়ক হয়েছেন বেন স্টোকস।
স্টোকস দক্ষ ক্রিকেটার। কিন্তু জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই তাঁর। মাঠের ভিতরের লড়াইয়ে ফাঁকফোকর তৈরি হতে পারে। জানেন অভিজ্ঞ ম্যাকালাম। ক্রিকেটারদের ফুরফুরে মেজাজে রাখতে চান তিনি। বলেছেন, ‘‘আমার প্রাথমিক কাজই হবে চাপ কমানো। ছেলেদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি করতে হবে। কিছু পরিবর্তন হলে কিছু নতুন গ্রহণ করতে হয়। আশা করব ছেলেরা সেটা পারফরম্যান্সে প্রতিফলিত করতে পারবে।’’
ইংল্যান্ড ক্রিকেটকে পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছে দিতে চান ম্যাকালাম। কী ভাবে করবেন সেই কাজ। প্রাক্তন কিউয়ি অধিনায়ক জানিয়েছেন, ‘‘আমাকে প্রথমেই দেখতে হবে কোন কোন জায়গায় খামতি রয়েছে। জায়গাগুলো চিহ্নিত করে কিছু পরিবর্তন করতে হবে। এটুকু বলতে পারি এই চ্যালেঞ্জটাকে ইতিবাচক ভাবেই নিচ্ছি।’’
সাফল্যের ক্ষেত্রে কোচ-অধিনায়কের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। অজানা নয় অভিজ্ঞ ম্যাকালামের। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় ক্রিকেটে কোচ-অধিনায়কের সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ। সত্যিই একটা দৃঢ় বন্ধন প্রয়োজন হয়। হয়তো সবসময় সেরা বন্ধু হওয়া যায় না। কিন্তু পরস্পরের সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা থাকা খুব জরুরি। দলের জন্য দু’জনের চাহিদা, ভাবনা একরকম হওয়া প্রয়োজন। সেটা সম্ভব হলেই আপনি শূন্যস্থান পূরণ করার চেষ্টা করতে পারবেন।’’ ম্যাকালাম আরও বলেছেন, ‘‘কোচ হিসেবে আমার দায়িত্ব স্টোকসের ফাঁকফোকরগুলো ভরাট করে দেওয়া। আমি ওকে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে যোগ্যতম ব্যক্তি হিসেবে দেখতে চাই। সে জন্য কখনও হয়তো ওকে একটু পিছনে টেনে ধরতে হবে, আবার কখনও কিছুটা সামনে ঠেলে দিতে হবে।’’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোচ হিসেবে ম্যাকালাম যাত্রা শুরু করবেন ২ জুন থেকে। বিপক্ষে অধিনায়কের নাম কেন উইলিয়ামসন। যিনি তাঁরই জাতীয় দলের প্রাক্তন সতীর্থ। ম্যাকালামের ক্রিকেট ভাবনা অজানা নয় অভিজ্ঞ উইলিয়ামসনের। সুতরাং, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্বিতীয় ইনিংসের অভিষেকেই তাঁর জন্য সাজানো থাকছে কাঁটার মুকুট!
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy