পাকিস্তানের কাছে হেরে গেলেন রোহিতরা। ছবি রয়টার্স
গ্রুপ পর্বে ভারতের কাছে হারের মধুর প্রতিশোধ নিল পাকিস্তান। সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে রোহিত শর্মাদের ৫ উইকেটে হারিয়ে দিলেন বাবর আজমরা। এশিয়া কাপে ভারতের প্রথম হার। দুর্বল বোলিং হারিয়ে দিল ভারতকে।
১৯তম ওভারে আসিফ আলির সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন অর্শদীপ সিংহ। শেষ ওভারে তিনি দুরন্ত বলে আসিফকে ফেরালেও ম্যাচে তার কোনও প্রভাব পড়ল না। অনেক আগেই ম্যাচ বের করে নিয়েছেন মহম্মদ রিজওয়ান এবং মহম্মদ নওয়াজ। দুবাইয়ে যে পিচে খেলা হল, সেখানে বোলারদের জন্য কিছুই ছিল না। যশপ্রীত বুমরা-হীন ভারতীয় দলের দুর্বলতা আরও এক বার প্রকট হল। পাকিস্তানকে চাপে ফেলার মতো কোনও বোলারকেই পাওয়া গেল না।
রবীন্দ্র জাডেজার অনুপস্থিতিতে এই ম্যাচে ঋষভ পন্থকে চার নম্বরে তুলে এনেছিল ভারত। লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানকে চাপে ফেলার। তবে উল্টো দিকে যে পাকিস্তান ফাটকা খেলে দেবে, সেটা ভাবতেও পারেননি রোহিত শর্মারা। পাকিস্তানের ইনিংসের নবম ওভারে ফখর জামান আউট হওয়ার পরে হঠাৎই ব্যাট করতে নামতে দেখা গেল মহম্মদ নওয়াজকে। অলরাউন্ডার নওয়াজ যে ভারতকে এ ভাবে বিপদে ফেলে দেবেন, সেটা কেউ আগাম আন্দাজ করতে পারেননি।
এমনিতেই ভারতীয় বোলারদের দাঁড়াতে দিচ্ছিলেন না রিজওয়ান। উল্টো দিকে নওয়াজ সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দিলেন। হার্দিক পাণ্ড্য, রবি বিষ্ণোই, যুজবেন্দ্র চহাল কেউ দাঁড়াতে পারেননি। তৃতীয় উইকেটে উঠল ৭৩ রান। সেটাই পাকিস্তানকে ম্যাচ জিতিয়ে দিল। ওই সময়ে লম্বা জুটিই তাদের সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল। সেই কাজটাই করলেন নওয়াজ।
এক সপ্তাহ আগে এই রবিবারই ব্যাটে-বলে পাকিস্তানকে শেষ করে দিয়েছিলেন হার্দিক। এই রবিবার তিনি চূড়ান্ত ফ্লপ। ব্যাটে শূন্য রানে আউট হলেন। বল হাতে দিলেন চার ওভারে দিলেন ৪৪ রান। রিজওয়ানকে যখন তিনি ফেরালেন, তত ক্ষণে ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন পাক উইকেটরক্ষক।
তবে ভারত হারলেও এক জনের কথা না উল্লেখ করলেই নয়। তিনি নিঃসন্দেহে বিরাট কোহলী। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে কি আলাদা কোনও স্ফূর্তি আসে কোহলীর? প্রতিবেশী দেশকে যত বারই সামনে পান, জ্বলে ওঠেন তিনি। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে দিব্যি অর্ধশতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন। মাঝপথে হঠাৎই আউট হয়ে গেলেন। নামের পাশে ৩৫। দ্বিতীয় বার পাকিস্তানকে পেয়ে ভুল করলেন না তিনি। অর্ধশতরান করলেন। ভারতকে পৌঁছে দেন লড়াই করার মতো স্কোরে। আগাগোড়া তাঁর ইনিংসে ছিল বুদ্ধিমত্তার ছাপ। ঠিক যে ভাবে কোহলী খেলে থাকেন। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা, কেএল রাহুল, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্য পর পর ফিরে যাওয়ার পর একজনকে ধরে খেলতেই হত। সেই কাজটাই করলেন কোহলী। অহেতুক ঝুঁকি নেননি। ক্রিকেটীয় শট খেলেই চাপে রেখেছেন পাকিস্তানকে।
ওপেন করতে নেমে রোহিত এবং রাহুল শুরুটা দুর্দান্ত করেন। টসের সময়ই রোহিত বলেছিলেন, শুরু থেকে চালাবেন। ক্রিজে নামার পর সেটাই দেখা গেল। প্রথম ওভারে অর্ধশতরানের জুটি হয়ে গেল। বড় রান হওয়ার জন্যে সেটা যথেষ্ট ছিল। তার পরেও একটা সময় মনে হচ্ছিল ভারত বড় রানে পৌঁছবে না। এর মূল কারণ, কোহলীকে বাকি কোনও ব্যাটারের সঙ্গ দিতে না পারা।
সূর্যকুমার শুরু থেকেই নিজের ভঙ্গিতে চালাতে থাকেন। তবে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিতে গিয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন। বাঁ হাতি ব্যাটার খেলানোর জন্য ঋষভ পন্থকে চারে নামানো হয়। পন্থ শুরুটা করেন ধীরগতিতে। মাঝে দু’-এক বার রান নিতে গিয়ে কোহলীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়। কোহলী তাতে কিছুটা বিরক্ত হন। তবে এই জুটি ভারতকে বড় রানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। শাদাবের বলে আচমকাই আউট হন পন্থ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ব্যাটে-বলে জেতানো হার্দিক নেমেছিলেন। রবিবার ব্যাট হাতে হতাশ করলেন। হাসনাইনের বলের গতি বুঝতে না পেরে দ্বিতীয় বলেই মিড উইকেটে থাকা আসিফ আলির হাতে ক্যাচ দেন।
এই প্রতিযোগিতায় প্রথম বার খেলতে নামা দীপক হুডার কাজ ছিল কোহলীকে সঙ্গ দেওয়া এবং সুযোগ পেলে বড় শট মারার। সেই কাজটা করেছেন তিনি। যেমন খুচরো রান নিয়েছেন। তেমনই সুযোগ পেলে চালিয়ে খেলেছেন। চালাতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত আউট হলেন তিনি। তবে কোহলী শেষ পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করলেন। ইনিংস শেষের দু’বল আগে রান আউট হয়ে যখন কোহলী ফিরলেন, তখন নামের পাশে বসেছে ৬০ রান। উল্টো দিকে ভুবনেশ্বর কুমার থাকায় চেয়েছিলেন জোর করে দু’রান নিতে। শ্রান্ত শরীর পারেনি ক্রিজ পর্যন্ত পৌঁছতে।
এশিয়া কাপে এখনও পর্যন্ত ছন্দ খুঁজে পাননি বাবর আজম। সামনে ভারতকে পেয়েও নায়ক হতে পারলেন না পাকিস্তানের অধিনায়ক। দুর্বল হংকংয়ের বিরুদ্ধে ৯ রানে আউট হয়েছিলেন। রবিবার ফিরে গেলেন ১৪ রানে। রবি বিষ্ণোইয়ের বলের ফ্লাইট বুঝতে না পেরে মিড উইকেটে রোহিতের হাতে ক্যাচ দিলেন তিনি। তিন নম্বরে নামা ফখর জমানও টিকতে পারলেন না। তাঁকে তুলে নিলেন যুজবেন্দ্র চহাল।
এর পরে রিজওয়ান এবং নওয়াজ খেলতে শুরু করলেন। ভারতের আশা শেষ হয়ে গেল ওখানেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy