হতাশ: ট্রায়ালে বোনাস পয়েন্ট না-থাকায় সমস্যা হয়েছে মেহুলির। ফাইল চিত্র
সামান্য হলেও একটা আশা তাঁর সামনে ছিল। বিশ্বকাপ শুটিংয়ে দারুণ ভাল কিছু করে অলিম্পিক্সের দলে সুযোগ করে নেওয়া। কিন্তু করোনার ধাক্কায় বাতিল হয়ে যায় বিশ্বকাপ শুটিং। সঙ্গে সঙ্গে ধাক্কা খায়মেহুলি ঘোষের টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যোগদান করার স্বপ্নও। ঠিক সময় যদি অলিম্পিক্স হয়, তা হলে আর টোকিয়োর বিমানে ওঠা হবে না বাংলার এই অষ্টাদশী শুটারের। তবে অলিম্পিক্স পিছিয়ে গেলে, মেহুলির সামনে নতুন করে সুযোগ আসতেও পারে।
মার্চ মাসেই হওয়ার কথা ছিল শুটিং বিশ্বকাপের। কিন্তু করোনাভাইরাসের আক্রমণে আন্তর্জাতিক শুটিং সংস্থা বাতিল করে দেয় সেই প্রতিযোগিতা। তার বদলে দিল্লিতে তড়িঘড়ি ট্রায়ালের আয়োজন করা হয়। যে ট্রায়ালে ১০ মিটার এয়াররাইফেলে ভারতকে অলিম্পিক-কোটা এনে দেওয়া দুই শুটার অপূর্বি চাণ্ডিলা আর অঞ্জুম মুদগিলের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে উপরের দিকে থেকেও মেহুলির দলে সুযোগ পাওয়া হয়নি।
কেন হয়নি? ১৬ তারিখ নয়াদিল্লিতে হয়ে গিয়েছে ওই ট্রায়াল। রবিবার মেহুলির প্রশিক্ষক জয়দীপ কর্মকার বলছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপ হলে র্যাঙ্কিং ভাল থাকলে সঙ্গে বোনাস পয়েন্ট পাওয়া যায়। ফাইনালে উঠলে বাড়তি পয়েন্ট পাওয়া যায়। শুধু স্কোর দিয়ে মেহুলির পক্ষে অঞ্জুমদের টপকে অলিম্পিক্সের দলে ঢুকে পড়া সম্ভব ছিল না। ওরা আগে থেকেই গড় পয়েন্টের উপরে দু’পয়েন্টে এগিয়ে ছিল। তাই মেহুলির বোনাস পয়েন্ট পাওয়া ছাড়া কোনও রাস্তা ছিল না। যেটা বিশ্বকাপ হলে পাওয়ার একটা সুযোগ থাকত। কিন্তু ট্রায়ালে সেই সুযোগ থাকে না।’’
বিশ্বকাপের জন্য আলাদা ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন মেহুলি। জানতেন, ওখানে ভাল ফল করলে অলিম্পিক্স দলে ঢোকার একটা সুযোগ থাকবে। এর আগে আনন্দবাজারকে তিনি বলেওছিলেন, ‘‘অলিম্পিক্সে যাওয়ার লড়াই কঠিন হলেও হাল ছাড়ছি না।’’ এই ভাবে প্রতিযোগিতা বাতিল হয়ে যাওয়ায় মেহুলি রীতিমতো হতাশ। পাশাপাশি ভারতের এই প্রতিভাবান শুটার একটা প্রশ্নও তুলছেন। রবিবার আনন্দবাজারকে মেহুলি বলেন, ‘‘আমি জানি না, এই পরিস্থিতিতে আর মাত্র চার মাস পরে কী করে অলিম্পিক্স হওয়া সম্ভব। অলিম্পিক্স তো শুধু মাত্র খেলোয়াড়দের জন্যই নয়। এখানে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক আসে, হাজার, হাজার দর্শক আসে। তাদের নিরাপত্তার দিকটাও তো মাথায় রাখতে হবে। তার উপরে এই অনিশ্চয়তার পরিস্থিতিতে অ্যাথলিটদের প্রস্তুতিতেও ঘাটতি পড়ে। সব চেয়ে ভাল হয়, যদি পরের বছর, একটা সুস্থ পরিবেশে অলিম্পিক্স হয়।’’
পাশাপাশি মেহুলির আরও একটা আর্জি আছে। তাঁর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে অনেক খেলার অনেক প্রতিযোগিতা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। যেগুলো হলে নিজেদের প্রমাণ করার একটা সুযোগ থাকে ক্রীড়াবিদদের সামনে। আশা করব, অলিম্পিক্সের আসরে নামার জন্য নিজেদের প্রমাণ করার মঞ্চটা যেন সবাই পায়।’’ লন্ডন অলিম্পিক্সে এক চুলের জন্য পদক হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল মেহুলির প্রশিক্ষকের। জয়দীপ ভালই জানেন, একটা অলিম্পিক্সের জন্য কী ঘামরক্ত ঝরিয়ে তৈরি হয় এক জন অ্যাথলিট। তিনি বলছিলেন, ‘‘অলিম্পিক্স তো আট-দশটা দেশের খেলা নয়। এটা মহাযজ্ঞ। সুষ্ঠু ভাবে হওয়াটাই উচিত। তবে টোকিয়োর সংগঠকদের যেন বিশাল আর্থিক ক্ষতি না হয়, সেটাও দেখা উচিত স্পনসরদের।’’
১৬ তারিখ নয়াদিল্লিতে একটু তাড়াহুড়ো করেই ট্রায়াল হয়ে যায় শুটিংয়ের। তা হলে ১০ মিটার এয়াররাইফেল দলে ভারতীয় দলে কারা থাকছেন? জয়দীপ জানাচ্ছেন, এখনও চূড়ান্ত দল নির্বাচন হয়নি। কেন নাম ঘোষণায় এই ঢিলেঢালা মনোভাব? শুটিং মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অপূর্বির দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে কোনও সন্দেহ না থাকলেও অঞ্জুমের ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা থেকে যাচ্ছে। কারণ, অঞ্জুমের সাম্প্রতিক খারাপ ফর্ম। অপূর্বিও খুব একটা ভাল ফর্মে নেই, কিন্তু তিনি অনেক পয়েন্টেই এগিয়ে আছেন বাকিদের চেয়ে। কিন্তু অঞ্জুম কতটা কী করতে পারবেন, এই নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যে কারণে কেউ, কেউ মনে করছেন, অঞ্জুমের বদলে এলাভেনিল ভালারিভানকে দলে সুযোগ দেওয়া যেতেই পারে। এই মুহূর্তে মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে আছেন এলাভেনিল। যার ফলে তাঁকে সুযোগ দেওয়ার একটা কথা উঠছে।
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সম্ভবত ঠিক হয়ে যাবে অলিম্পিক্স এবং মেহুলিদের ভাগ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy