সম্মানিত: আই লিগ জয়ের জন্য মোহনবাগান দলকে বিশেষ ট্রফি তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
করোনাভাইরাসের জেরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশ ছিল দর্শকশূন্য অবস্থায় খেলা করা যেতে পারে। ফেডারেশন সে ভাবেই আই লিগের ডার্বি-সহ সব ম্যাচ ফাঁকা স্টেডিয়ামে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। ইতিমধ্যেই চ্যাম্পিয়নের মুকুট জিতে নেওয়া মোহনবাগান ফাঁকা মাঠে খেলতে রাজি ছিল। কিন্তু আপত্তি তুলছিল ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদ কর্তারা এ-কারণ, সে-কারণ দেখিয়ে ডার্বি পিছিয়ে দিতে চাইছিলেন।
বিভিন্ন ক্লাব ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে শুক্রবার বিকেলে আলোচনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সামনেও ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের ‘খেলব না’ মনোভাব পাল্টায়নি। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য করোনাভাইরাসের জেরে ডার্বি ফাঁকা মাঠে না-করে পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষেই মত দেন। ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের সব ঘেরা মাঠে খেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। পরিস্থিতি ফের খতিয়ে দেখা হবে এ মাসের শেষে গিয়ে। ফলে রবিবার ১৫ মার্চ ডার্বি তো হচ্ছেই না, কবে তা হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত ধোঁয়াশা।
দিল্লি থেকে ফেডারেশনের কর্তারা বলে দিয়েছেন, রাজ্য সরকার অনুমতি না-দিলে খেলা করা সম্ভব নয়। সবার সঙ্গে কথা বলে আই লিগের নতুন সূচি জানানো হবে কয়েক দিনের মধ্যে। যদিও আজ, শনিবার গোয়ায় ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ফাইনাল দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হচ্ছে। তবে সম্ভবত আইএসএল ফাইনালই শেষ ম্যাচ। এর পরে আইপিএল-সহ সব খেলাই আপাতত বন্ধ থাকবে। ডার্বি-সহ এ রাজ্যে আই লিগের অন্যান্য ম্যাচ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা সভাতেই নাটকীয়ভাবে বিতণ্ডায় জড়ালেন দুই প্রধানের কর্তারা। আই লিগ-জয়ী মোহনবাগানের পক্ষ থেকে ছিলেন সচিব সৃঞ্জয় বসু। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ইডেনে ক্রিকেট (তখনও বোর্ড ইডেনের খেলা বন্ধ করেনি) এবং গোয়ায় আইএসএল ফাইনাল হলে এখানে ফাঁকা মাঠে কেন খেলা হবে না? ওয়ান ডে ক্রিকেট হবে সারা দিন ধরে। আর ফুটবলে ডার্বি হবে নব্বই মিনিটের।’’ শতবর্ষ উদ্যাপনের হইচইয়ের মধ্যে আই লিগে ধাক্কা খাওয়া ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে সভায় আসা দেবব্রত সরকার বলেন, ‘‘দর্শকেরা ডার্বি দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই দর্শকশূন্য অবস্থায় ম্যাচ করতে চাই না।’’ মোহনবাগান সচিব পাল্টা বলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের কোন ম্যাচে কত দর্শক মাঠে এসেছেন, চাইলে সেটা আমি দেখিয়ে দিতে পারি।’’ তখন লাল-হলুদ কর্তা বলেন, ‘‘৩১ মে পর্যন্ত সময় আছে। কিছু দিন খেলা পিছিয়ে দিলে অবস্থার উন্নতি হতেই পারে।’’ যদিও ঘটনা হচ্ছে, মোহনবাগান খেতাব জিতে নেওয়ায় এটা একেবারেই নিয়মরক্ষার ডার্বি। ঘটি-বাঙালের চিরকালীন আবেগ ছাড়া দ্বৈরথে বিশেষ কিছু পড়ে নেই।
ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্ত সভায় বলেন, আই লিগ ফাঁকা মাঠে হবে সিদ্ধান্ত হয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় ডার্বি পিছিয়ে দিলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে পাল্টা বলেন, ‘‘কয়েক দিন পিছিয়ে দিলে কী এমন ক্ষতি হবে?’’ সুব্রতবাবু তখন কথা বলার চেষ্টা করেন ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেলের সঙ্গে। তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই খবর চলে আসে, ইডেনের ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট ম্যাচও বাতিল হয়ে গিয়েছে। দ্রুত ডার্বি পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ে যায়।
রাতে মোহনবাগান সচিব বলে দিলেন ‘‘যখন যেখানে খেলা দেবে, আমরা খেলব। কাশ্মীরেও যদি আমাদের হোম ম্যাচ দেওয়া হয়, খেলতে রাজি।’’ ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘দেখা যাক না, কী হয়। পরিস্থিতির উন্নতি তো ঘটতেই পারে। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’’
শতবর্ষের ইস্টবেঙ্গল যে ১৩০ বছরের মোহনবাগানের চেয়ে ভাবনায় কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়েছে তা আরও সামনে এসে পড়ে এ দিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে খেলাশ্রী অনুষ্ঠানে। কোচ কিবু ভিকুনা-সহ আই লিগ জয়ী দল বুকে ট্রফির ছবি দেওয়া সবুজ-মেরুন জার্সি পরে এসেছিলেন পুরস্কার নিতে। মারিয়ো রিভেরার ইস্টবেঙ্গলের কোনও ফুটবলারকেই অবশ্য দেখা যায়নি লাল-হলুদ জার্সিতে। তাঁরা যে যার মতো পোশাকে এসেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, আই লিগ জয়ী মোহনবাগানের পক্ষে রাজ্য সরকারের দেওয়া ট্রফি নিলেন কোচ কিবু ভিকুনা এবং অধিনায়ক ধনচন্দ্র সিংহ। পরে মুখ্যমন্ত্রী সব ফুটবলারকে ডেকে নেন ছবি তোলার জন্য। অন্য দিকে কোচ ও ফুটবলারেরা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ট্রফি নিতে এলেন চার ক্লাবকর্তা।
খেল সম্মান, বাংলার গৌরব, ক্রীড়া গুরু জীবনকৃতি সম্মান ও বিশেষ পুরস্কার দেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী বলে দেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ চলছে। ওরা যদি এর জন্য কোনও স্মারক তোরণ তৈরি করে তা হলে সাহায্য করব। অন্য পরিকাঠামো তৈরির জন্যও সাহায্য করব।’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘মোহনবাগানও ভারত সেরা হয়ে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করছে। আশি শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দিয়ে ওরা স্পনসর পেয়ে গিয়েছে। আইএসএল খেলছে। ইস্টবেঙ্গলও আশা করি স্পনসর পেয়ে যাবে।’’ দুটি ক্লাবকেই ট্রফি এবং ২১ লাখ টাকা করে দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।
জীবনকৃতি সম্মান দেওয়া হল অলিম্পিক্সের সোনা জয়ী হকি কিংবদন্তি কেশব দত্তকে। চুরানব্বই বছর বয়সি কেশববাবু এসেছিলেন হুইলচেয়ারে। আর এক অলিম্পিয়ান গুরবক্স সিংহকে দেখা যায় অগ্রজের চেয়ারের পাশে। কোচ হিসেবে ক্রীড়াগুরু পুরস্কার পান ক্রিকেটের প্রণব নন্দী, হকির অসীম গঙ্গোপাধ্যায় এবং টেবল টেনিসের অমিত দাম। রাজ্যের অন্য কৃতিদেরও ট্রফি ও চেক দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক জন প্রাপকের নির্বাচন নিয়ে এ দিন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy