অদম্য: হেডে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম গোল ডিওনের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
শঙ্কর সরকার বা শঙ্কর মৈত্রদের চেনেন না ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিল! চেনার কথাও নয়।
তবে ময়দানের এই জোড়া শঙ্করের মস্তিষ্কপ্রসূত তত্ত্ব জানা কাস্টমস কোচ রাজীব দে এবং তাঁর সহকারী প্রলয় সাহার। তাই ইস্টবেঙ্গল মাঠ থেকে পয়েন্ট আনার জন্য, বুধবার কাস্টমসের উজ্জ্বল হাওলাদার, সুমিত ঘোষদের রণকৌশল ছিল, নিজেদের গোলের সামনে ভিড় বাড়াও। মাঝমাঠ ব্লক করে দিয়ে সময় নষ্ট করো। বড় দলের হতাশা বাড়িয়ে দাও— এটাই যে ময়দানের একদা ‘খাড়ুশ’ দুই কোচ শঙ্কর সরকার ও শঙ্কর মৈত্রের ধারাপাত। কলকাতা লিগে বড় দলকে রুখতে ছোট দলগুলো যা অনুসরণ করে আসছে গত কয়েক দশক ধরে।
এ দিন কাস্টমস ছিয়াত্তর মিনিট পর্যন্ত এই সরকার-মৈত্র ফর্মুলাতেই প্রায় আটকে দিয়েছিল খালিদ জামিলের টিমকে। ৪-৫-১ ছকে গোলের সামনে পায়ের জঙ্গল তৈরি করে রেখেছিলেন সৌরভ দাশগুপ্ত, ধীমান সিনহারা। যা টপকে গোল করতে পারছিলেন না আগের ম্যাচের হ্যাটট্রিককারী সুহেইর ভিপি বা উইলিস প্লাজা।
কিন্তু সেই পরিস্থিতি থেকেও খালিদের মুখরক্ষা হল লাল-হলুদ শিবিরের ক্যারিবিয়ান ডিফেন্ডার কার্লাইল ডিওন মিচেলের সৌজন্যে। ডিওনের কপালই তিন তিনটে অমূল্য পয়েন্ট শেষমেশ এনে দিল খালিদকে।
আরও পড়ুন: ‘কট সাহা বোল্ড শামি’তে মুগ্ধ কোচ
ব্রায়ান লারার দেশ ত্রিনিদাদের ছেলে হেডেই শেষ মুহূর্তে করলেন জোড়া গোল। বাড়ি ফেরার আগে ডিওন বলে গেলেন, ‘‘খুব খারাপ পারফরম্যান্স নয়। একে কোনও গোল খাইনি। তার উপর আমার জোড়া গোলেই জয়। এটা তো বোনাস! কোরিয়া এবং এমএলএস-এ এ রকম শেষ দিকে উঠে গিয়ে গোল প্রচুর করেছি। এখানেও করব।’’
কাস্টমস শিবিরে তখন বিলাপ চলছে, দুই বিদেশির মাঝখানে থেকে কী ভাবে মিচেল হেড করে গেলেন। এক বার নয়। দু’বার। এ সব দেখে আবার হাফ ছাড়ার মতো অবস্থা খালিদ জামিলের। লিগের দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে ইস্টবেঙ্গল কোচের সাফ কথা, ‘‘খারাপ না ভাল খেললাম তা মাথায় রাখতে চাই না। ফুটবলে মোদ্দা কথা হল জয়। সেটাই তো পেয়ে গিয়েছি।’’
ম্যাচ জিতে খালিদ স্বস্তি পেতে পারেন। কিন্তু এ দিন তাঁর দলের অগোছাল খেলার সুযোগ নিয়ে যে ভাবে ম্যাচ নিজেদের পকেটে প্রায় পুরে ফেলেছিল কাস্টমস, তা দেখে এক সময় ফুঁসতে শুরু করেছিল হাজার দশেকের লাল-হলুদ গ্যালারি।
গোটা প্রথমার্ধ জুড়ে ইস্টবেঙ্গলের খেলায় না দেখা গেল সঠিক কম্বিনেশন, না দেখা গেল সঠিক পাস। আমনাদের মাঝমাঠও এই সময় এক সঙ্গে ছ’-সাতটা পাস খেলতে পারছিল না। তার উপর প্রথম মিনিট থেকেই কাস্টমস রক্ষণের সামনে পায়ের জঙ্গল। এই পরিস্থিতিতে দরকার ছিল উইং ধরে আক্রমণ শানানো। সেটাও করতে পারছিলেন না ব্রেন্ডন বা লালডানমাউইয়ারা। ওভারল্যাপে গেলে নামতে সময় নিচ্ছিলেন খালিদের দুই সাইডব্যাক সামাদ এবং চুল্লোভা। ফলে সুহেইর ভিপি, উইলিস প্লাজারা পেনিট্রেটিভ জোনে বিপক্ষকে চেপে ধরার বদলে সেন্টার সার্কলের কাছে নেমে আসছিলেন বারবার।
বিরতির পর বোধোদয় হতে খালিদ দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি নামিয়ে দিয়েছিলেন কেভিন লোবো ও সুরাবুদ্দিন মল্লিককে। এই দু’জন নামতেই আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়ে ইস্টবেঙ্গলের। তার পরেই মিচেলের জোড়া গোল। প্রথমটা কেভিন লোবোর কর্নার থেকে সামাদের পা ঘুরে কাস্টমস বক্সে ভেসে আসতেই বিপক্ষের দুই বিদেশি স্যামুয়েল এবং জনের মাঝখান থেকে জোরালো হেডে। দ্বিতীয় গোলও লোবোর সেট পিসে মাথা ছুঁইয়ে। তখনও ঘাড়ে বিদেশি ডিফেন্ডার।
দু’ম্যাচ থেকে ছয় পয়েন্ট এলেও প্রিয় দলের খেলা দেখে খুব একটা স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না লাল-হলুদ সমর্থকরা। খালিদের অস্বস্তি আবার বাড়ছে আল আমনা ও উইলিস প্লাজার জন্য। প্রথম জন এখনও প্রত্যাশিত ফর্মে পৌঁছাতে পারেননি। আর প্লাজাকে ফের এই মরসুমে দলে নেওয়ায় খালিদকে না পস্তাতে হয়।
রোজ রোজ তো জেরার পিকে ভক্ত কার্লাইল ডিওন মিচেল উঠে গিয়ে গোল করে আসবেন না!
ইস্টবেঙ্গল: লুইস ব্যারেটো, সামাদ আলি মল্লিক, কার্লাইল ডিওন মিচেল, গুরবিন্দর সিংহ, লালরামচুল্লোভা, ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা, রিচার্ড কোস্তা (কেভিন লোবো), মাহমুদ আল আমনা, লালডানমাউইয়া রালতে (সুরাবুদ্দিন মল্লিক), সুহেইর ভিপি, উইলিস প্লাজা (প্রকাশ সরকার)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy