কেদারের শতরানের পরে ‘বিরাট’ অভিনন্দন। ছবি: পিটিআই
একেই বলে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট! যা দেখলাম রবিবার। কোন স্তরের ক্রিকেট খেললে এমন অনায়াসে সাড়ে তিনশো রান তাড়া করে জেতা যায়!
পুণের মাঠে অশ্বিন যখন শেষ ছয়টা মারল, তখনও ভারতের ১১টা বল খেলা বাকি! এ থেকেই বোঝা যায় কোন মানের ব্যাটিং হল এই ম্যাচে। এমন ক্রিকেটই তো দেখতে চায় সারা দেশ, দুনিয়া।
উইকেট, মাঠ যে রকমই হোক। ম্যাচের দু’দল যেমনই হোক। ওয়ান ডে ম্যাচে সাড়ে তিনশোর টার্গেট কোনও দিক থেকেই সাধারণ নয়, সহজ তো নয়ই। ভারতীয় দলের এক জন প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে আমার উপলব্ধি— এমনকী এই টি-টোয়েন্টির যুগেও নয়। আর সেই টার্গেট এ রকম সহজে ছুঁয়ে ফেলাটাও বিশাল কৃতিত্বের। যা করে দেখাল বিরাট কোহালি। সঙ্গে কেদার যাদব।
আসলে ভারতীয় ক্রিকেট দলে বিরাট কোহালি এমনই একটা শক্তি হয়ে উঠেছে যে, ড্রেসিংরুমে ওর আশপাশের ছেলেগুলোও ওর শক্তিতে ‘চার্জড’ হয়ে যায়। টেস্টে করুণ নায়ার সুযোগ পেয়ে একটা ট্রিপল সেঞ্চুরি করে দিল। এ বার কেদার। ৭৬ বলে ১২০। ভারতীয় ক্রিকেটের রিজার্ভ বেঞ্চও এখন সোনায় মোড়া। ক্রিকেট বিশ্বের কাছে যা ঈর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
পাঁচ মাস পর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তার আগে ভারতের এই পারফরম্যান্স কিন্তু অন্যদের ভয় পাইয়ে দেবে। অন্তত রবিবার পুণের পারফরম্যান্সের পর তেমনই মনে হচ্ছে। ম্যাচটা দেখার পর মনে হচ্ছে, এই সিরিজটা ৩-০ জিততে ভারতের কোনও সমস্যা হবে না।
বিরাটকে নিয়ে আর কত ভাল ভাল কথা বলব বলুন তো? আমার ভাল কথার স্টক যে কোনও দিন ফুরিয়ে যাবে। বিরাটের ব্যাটিংয়ের জন্য যেন একটা শব্দই খাটে— অপার্থিব। রবিবারের ম্যাচটা ছিল ওর অধিনায়কত্বে ভারতের প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচ। ওর ব্যাটিং দেখে সেটা বোঝার উপায়ই নেই। নিজের দলের বোলাররা ডেথ ওভারে প্রচুর রান দিয়েছে (শেষ দশ ওভারে ১১৫)। ইংল্যান্ড এত বড় একটা রান ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। ব্যাট করতে নেমে আবার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, যুবরাজ সিংহ-সহ প্রথম চার ব্যাটসম্যান ফিরে গিয়েছে ৬৩ রানের মধ্যে। তখনও ক্রিজে থাকা বিরাটের মধ্যে টেনশনের কোনও ছায়া দেখলেন? আমার তো মনেই হল না ও বিন্দুমাত্র টেনশনে আছে। বরাবর যে শটগুলো মারে, সেগুলো মারল। এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে ব্যাকফুটে গিয়েও ছয় হাঁকাল। আর ওর মতো এক জন ব্যাটসম্যানকে দেখলে নন স্ট্রাইকারের ভেতরের সিংহটা যে বেরিয়ে আসার জন্য ছটফট করতে থাকে, কেদারের ক্ষেত্রে সেটাই হল।
যাঁরা ঘরোয়া ক্রিকেটের খবরাখবর একটু আধটু রাখেন, তাঁরা জানবেন কেদারের কথা। ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন আগ্রাসী ব্যাটিং ও বহু বার করেছে। ও স্বভাবজাত এক জন মারকুটে ব্যাটসম্যান। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এই আসল কেদারকে এত দিন দেখতে পায়নি। কী অদ্ভূত ব্যাপার দেখুন, সেটা ঘটল আবার ওর ঘরের মাঠেই। নিজের শহরের মানুষের সামনে, নিজের পরিবারের সামনেই। যে কোনও ক্রিকেটারের জীবনে এমন দিন কমই আসে। এই আগ্রাসী কেদারকে যদি ধারাবাহিক ভাবে পায় ভারত, তা হলে আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না। বিশ্বকাপের কথা এখন থেকেই বলাটা ঠিক নয়।
রবিবার বিরাটের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে ও। এমন সব শট মেরেছে, যা বিরাটের আগ্রাসনকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। অবাক হয়ে গিয়েছে ইংরেজ বোলাররাও। এ দিন কেদারের স্ট্রাইক রেটও (১৫৭.৮৯) তো ছিল বিরাটের (১১৬.১৯) চেয়ে বেশি। এক ডজন বাউন্ডারি মেরেছে ছেলেটা। ওদের দুশো রানের পার্টনারশিপের সময় ইংরেজ বোলারদের কেমন যেন অসহায় মনে হচ্ছিল। একটা বিরাট সামলাতেই যেখানে হিমশিম অবস্থা, সেখানে আর এক জন— এই ভেবেই বোধহয়। এই ছ’নম্বর জায়গাটা ওর জন্য রেখে দেওয়া যেতেই পারে। বরং ওকে এক ধাপ উপরে উঠিয়েও আনা যেতে পারে। কেদারের এই আত্মবিশ্বাসটা ধরে রাখার দায়িত্ব ওর টিমের, অধিনায়কেরও।
ওয়ান ডে অধিনায়ক হিসেবে বিরাটের প্রথম ম্যাচ। ভারতের বোলিংয়ের শেষ দশ ওভার ছাড়া ম্যাচের বাকি সময়ে ওকে এক বারও চাপে থাকতে দেখিনি। তাও বলা যাবে না যে, স্লগ ওভারে কোনও ভুল করেছে বিরাট। শেষ দশ ওভারে জসপ্রীত বুমরাহ যে অত মার খাবেন (পাঁচ ওভারে ৫৮), তা কেউ ভাবতে পারেনি বোধহয়। দলের তিন সেরা বোলার উমেশ যাদব, রবীন্দ্র জাডেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনও তো ওই সময় দলকে তেমন সাহায্য করতে পারেনি। তবে শেষ দশ ওভারের এই অভিজ্ঞতা একটা জিনিস বুঝিয়ে দিয়েছে— এই ইংল্যান্ড দলটা মোটেই হেলাফেলা করার নয়। ওদের স্ট্র্যাটেজিই ছিল শেষ দিকে ভারতে আক্রমণ করার। সেটা ওরা সুপরিকল্পিত ভাবে করেছে।
তা সত্ত্বেও বলব এই ইংল্যান্ডকেও সিরিজ হারাবে ভারত। কারণ, বিরাট কোহালির এই দলই এখন বিশ্বসেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy