টিমগেম খেলতে নামা প্লেয়ারের জন্য ইগো বেশ জরুরি চারিত্রিক বৈশিষ্ট হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত ইগো আসল লক্ষ্যটাকে আবছা করে দেয়। কিন্তু সঠিক পরিমাণে থাকলে ইগো একজনকে সাফল্যের দিকেও ঠেলে দিতে পারে। আসুন এ বার ইগো নিয়ে এই বক্তৃতাটা ক্রিকেটে প্রয়োগ করি।
মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই ভেবে যে, টিমে তিন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু দল পরিচালনা করে? গেইল, এবি, বিরাট— তিন জনই নিজের নিজের অধিকারে এক-এক জন সুপারম্যান। কিন্তু এরা কেউ একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে না। মুগ্ধ হওয়ার মতো ব্যাপার কি না বলুন!
ওদের কাউকে দেখেই মনে হয় না নিজেকে নিয়ে নিরাপত্তার অভাবে ভুগছে। বা বাকি দুইয়ের উপস্থিতিতে ঘাবড়েছে। জানতে ভীষণ ইচ্ছে করে, এই ভারসাম্যটা ওরা কী ভাবে রাখছে। ওদের দেখে ‘শক্তি’ সিনেমাটার কথা মনে পড়ে। যেখানে মিস্টার অমিতাভ বচ্চন আর দিলীপ কুমারের মতো দুই কিংবদন্তি অভিনয় করেছেন। সিনেমাটা দেখেছি। ওখানে দুই অভিনেতাকে দেখে মনে হয়েছে, ওঁরা একে অন্যকে জায়গা ছেড়ে দেওয়া নিয়ে খুব স্বচ্ছন্দ।
সচিন তেন্ডুলকর-রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে খেলার সময়ও এটা দেখেছি। দু’জনের তুলনা করছি না। শুধু বলছি যে, টিমে নিজের ভূমিকায় অটুট থাকার পাশাপাশি এরা দু’জনই একে অন্যের প্রতিভাকে সম্মান দেখিয়ে এসেছে। বুধবার যে ম্যাচ জেতানো জুটিটা গড়ল রোহিত শর্মা আর জস বাটলার, সেখানেও ক্ষণিকের জন্য এই ব্যাপারটা চোখে পড়েছে। প্রথম দিকে রোহিত রোলস রয়েসের মতো এগোচ্ছিল। উল্টো দিকে গালে টোল পড়া হাসি নিয়ে মুগ্ধ ভাবে ক্যাপ্টেনের ব্যাটিং দেখছিল বাটলার। কিন্তু দ্রুত বাটলার নিজে ঝড়ের মতো আমাদের লণ্ডভণ্ড করে দিল। যাতে রোহিত শো পর্যন্ত ম্লান হয়ে গেল।
ওদের দু’জনকে আউট করার জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন ল্যাপটপ কিবোর্ডে খুটখাট করতে করতে মনে হচ্ছে, আর একটু হলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের এই জুটিটাকে উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাব। ওই পার্টনারশিপটার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, ওরা কেউ একে অন্যের নকল করতে চায়নি। বাটলার কখনও রোহিত হতে চায়নি। রোহিতও কিন্তু বাটলারের মতো মারেনি। সফল ড্রেসিংরুমে এটা ভীষণ জরুরি।
বুধবার আমার বোলাররা কোনও ভুল করেনি। যদি জোর করে সমালোচনা করতেই হয়, বলব লেংথটা একটু বেশি মিস করেছি। কয়েকটা লেংথ বল ছিল যেগুলো ব্যাটসম্যান মাছি তাড়ানোর মতো করে ফেলে দিয়েছে। ইয়র্কারও খুব কম দেওয়া হল দেখলাম। বোলিং কোচ ওয়াসিম আক্রমের সঙ্গে আমি এটা নিয়ে কথা বলব। পাকিস্তানি এই কিংবদন্তি অবশ্য নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ম্যাচের পর উনি ছোট কিন্তু বেশ শক্তিশালী একটা বক্তৃতা দিয়েছেন। বোলারদের বলে দিয়েছেন, প্ল্যান এ কাজ না করলে প্ল্যান বি বা সি তৈরি রাখতে হবে। তবে সত্যি বলতে কী, আমি খুব একটা চিন্তা করছি না। মনে হয় আমার হাতে ভাল একটা টিম আছে। পরের ম্যাচগুলোয় ঘুরে দাঁড়াতেও পারব।
আমরা এখন হায়দরাবাদে। এই শহরটার গতি আমার খুব পছন্দের। এখানকার লোকজনকে দেখলে মনে হয় না এঁদের দাবিদাওয়া খুব বেশি। মনে হয় একে অন্যের জন্য এঁদের কাছে অনেক সময় আছে। দিল্লিতে যে ব্যাপারটা পাই না। এখানে এলে তাই মাঝেমধ্যে বেরিয়ে পড়তে ভাল লাগে খুব। কিছু না, জায়গাটার সংস্কৃতি আর স্পর্শ উপভোগ করতে। গত বার এই শহরে এসে হুসেন সাগর লেকে কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে চুপচাপ সময় কাটিয়েছিলাম। সন্ধে হয়ে গিয়েছিল। টাটকা লেবুর রসের সঙ্গে দুর্দান্ত সব কাবাব খেয়েছিলাম। এ বারও ওখানে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। তবে কাবাব নয়, এ বার সঙ্গে একটা বই রাখতে পারি।
লেখাটা শেষ করার আগে পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানাই সবাইকে। ঈশ্বরের কাছে আপনাদের শান্তি আর সুস্বাস্থ্য কামনা করি। সরি, কেকেআর ফ্যানদের নববর্ষের উৎসবের বাড়তি কারণ দিতে পারলাম না। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচটা জিততে পারলাম না। দেখি, সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারিয়ে ব্যাপারটা পুষিয়ে দিতে পারি কি না! (দীনেশ চোপড়া মিডিয়া)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy