একফ্রেমে লক্ষ্মণ, সৌরভ, আজহার। শুক্রবার ইডেনে। নিজস্ব চিত্র।
টিপ টিপ করে ইডেনের সবুজ গালিচায় ঝরে পড়ছে বৃষ্টি। প্রকৃতির প্রতিকূলতাকে হারিয়ে দিয়েই কিন্তু ইডেনে সৌরভ সংবর্ধনা ছড়িয়ে দিল আন্তরিকতার উত্তাপ। তুবড়ির ঝলমলানি, আতসবাজির রোশনাইয়ের মধ্যে দিয়ে যা কখনও অতীতের গল্প সামনে আনল। কখনও আবার ভারতীয় ক্রিকেটের রূপরেখার ইঙ্গিত দিল।
দু’দিন হল সরকারি ভাবে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন বেহালার বাঁ-হাতি। কিন্তু দেশে-বিদেশে প্রত্যাশা এর মধ্যেই আকাশছোঁয়া। ব্রায়ান লারা থেকে গ্রেম স্মিথ, কেভিন পিটারসেন— ভিডিয়ো বার্তায় শুভেচ্ছার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে প্রত্যাশা। সুনীল গাওস্কর, বীরেন্দ্র সহবাগ, হরভজন সিংহ— অভিনন্দন ও প্রত্যাশা একই ভাবে হাত-ধরাধরি করে চলছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকায়।
শুক্র-সন্ধেয় ইডেনের লনে থাকল স্বপ্নও। লড়াই, হার-না-মানা জেদ আর নিজের প্রতি আস্থা রেখে অসম্ভব লড়াইয়েও বাজিমাত করা স্বপ্নের ফেরিওয়ালাকে ফুল-স্মারক-পাগড়ি দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। গত কয়েক বছর ধরে সিএবি-তে যাঁরা সঙ্গী হিসেবে ছিলেন প্রশাসনে, তাঁরা একে একে বরণ করে নিলেন। বাংলার পুরুষ-মহিলা দলের অধিনায়করাও ছিলেন। ছিলেন বাংলার অতীত দিকপালরা। এবং ছিলেন সৌরভের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন ও তাঁর ‘লাইফ সেভার’ ভিভিএস লক্ষ্মণ।
আরও পড়ুন: নিয়ম না মানায় জরিমানা হতে পারে অশ্বিনের
ইডেনের সঙ্গে আজহারের ভালবাসার সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। একদা ইডেনের বাদশার মজার ছলে আক্ষেপ, সৌরভের আবির্ভাবের আগে তিনিই ছিলেন দর্শকদের ভালবাসায় এক নম্বরে। ঘরের ছেলে সৌরভ এসে তাঁকে নামিয়ে দিয়েছেন দু’নম্বরে। আর লক্ষ্মণ আসায় তাঁর অবস্থা আরও কোণঠাসা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে উঠল হাততালি। ১৯৯৬ ইংল্যান্ড সফরের কথা উঠে এল আজহারের স্মৃতিচারণে। একইসঙ্গে আশা, ‘‘সৌরভ নিজের মতো করেই চালাবে বোর্ড।’’ হায়দরাবাদের ক্রিকেট প্রেসিডেন্ট দিলেন সহযোগিতার আশ্বাসও।
লক্ষ্মণ শোনালেন কী ভাবে কঠিন সময়ে দায়িত্ব নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের পুনরুত্থান ঘটিয়েছিলেন সৌরভ। সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেওয়া, তরুণদের অনুপ্রাণিত করা, ইগোকে পিছনে রেখে কাজ করা, বন্ধুর জীবনের নানা কাহিনি মেলে ধরলেন তিনি। ক্রিকেটের প্রতি সৌরভের ভালবাসা, প্যাশন, গভীর রাতেও বাংলার ক্রিকেট নিয়ে এসএমএস চালাচালি, উঠে এল অজানা নানা ঘটনা। ক্রিকেটার সৌরভের চেয়েও ক্যাপ্টেন সৌরভ তাঁর কাছে অনেক এগিয়ে। লক্ষ্মণের কথায়, ‘ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলি ভেরি ভেরি স্পেশাল।’
এর পর সৌরভের পালা। মাইক হাতে দাদাগিরির মেজাজে বললেন, “কখনও ভাবিনি ভারতীয় দলের অধিনায়ক হতে পারব। এখনও ভাবিনি বোর্ড প্রেসিডন্ট হব। মাঝে মাঝে চিমটি কাটি নিজেকে, প্রশ্ন করি, আমি কি সত্যিই এতটা ভাল? অধিনায়ক হিসেবে আমার কোনও ফর্মুলা ছিল না। যা জানতাম, সেটাই করার চেষ্টা করেছি। হৃদয়ের কথা শুনেছি, সহজাত প্রবৃত্তি অনুসারে চলেছি। ভাল লাগে, যখন কঠিন অবস্থায় আমাকেই প্রয়োজন হয়। ১০ মাস না তিন বছর, কত দিন থাকব জানি না। তবে কিছু বদলানোর চেষ্টা করব। বসে থাকব না। আমি বিশ্বাস করি, কিছু করতে পারবও।” মহারাজকীয় বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাসই জীবনের সব ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছে তাঁর লড়াইয়ের মন্ত্র। কে কী ভাবছেন, তা পাত্তা দেননি। নিজে যা মনে করেছেন, সেটাই আঁকড়ে ধরেছেন।
আরও পড়ুন: ভারত সফরের আগেই বড় ধাক্কা, চোটের জন্য ছিটকে গেলেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার
থাকল দিন-রাতের টেস্টে ভরসা রাখার প্রসঙ্গও। টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এটাই মনে করছেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমি দিন-রাতের টেস্টে বিশ্বাসী। বিরাট কোহালিরও সম্মতি আছে। ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে যেতেই হবে। কারণ, টি-টোয়েন্টি ও ৫০ ওভারের ক্রিকেটের দরুণ চ্যালেঞ্জে পড়েছে টেস্ট ক্রিকেটে। জানি না দিন-রাতের টেস্ট কবে হবে। তবে আমি আশাবাদী যে এটা হবে। টেস্টের আকর্ষণ বাড়াতে এটা দরকার।” প্রচারমাধ্যমে পড়ে তাঁর মনে হয়েছিল অধিনায়ক সৌরভের বোধহয় গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট পছন্দ নয়। সেই ধারণা ভেঙে দিলেন নিজেই। একই সঙ্গে বললেন, এখন আর অফিস কামাই করে টেস্ট ম্যাচ দেখার পরিস্থিতি নেই ক্রিকেটপ্রেমীদের। তাঁদের মাঠে আনতে গেলে তাই দিন-রাতের টেস্টই ভবিষ্যৎ। ঘটনা হল, সিএবি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ইডেনে গোলাপি বলে দিন-রাতের ম্যাচ খেলিয়েও ছিলেন তিনি। এ বার বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবেও একই রাস্তায় চলার ইঙ্গিত মিলল।
আজহারউদ্দিন আবার শোনালেন, দাদার কাছে তাঁর চাহিদার কথা। বললেন, ক্রিকেটার ও অধিনায়ক হিসেবে যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন, বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকেও যেন ছাপিয়ে যান সৌরভ। আর বহু লড়াইয়ের সহযোদ্ধা লক্ষ্মণ চান, জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাদেমি থেকে বেরিয়ে আসুক আরও চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। আর সৌরভ কী চান? তিনি চান বোর্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরুক। থাকুক সততা। ‘ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলি’ হয়ে ওঠার নেপথ্যে রেসিপি এগুলোই ছিল না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy