বিপর্যস্ত: ম্যাচের শেষে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বুফন। মিলানে। ছবি: টুইটার
যেখানে শুরু হয়েছিল, সেখানেই শেষ হল।
কুড়ি বছর আগে এমনই একটা বিশ্বকাপের প্লে অফ ম্যাচে অভিষেক ঘটেছিল তাঁর। সে রকমই একটা বিশ্বকাপের প্লে অফ ম্যাচেই শেষ হয়ে গেল এক বর্ণময় ফুটবল কেরিয়ার। সুইডেনের কাছে আটকে গিয়ে ইতালির বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়ার দিনেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানালেন জিয়ানলুইগি বুফন।
ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলকিপারের বিদায়টা অবশ্য চোখের জলে হয়ে থাকল। সান সিরো স্টেডিয়ামে রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে আশঙ্কাটা বাস্তব হয়ে আছড়ে পড়ল— ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে আর খেলা হচ্ছে না ইতালির। ১৯৫৮ সালের পরে আবার বিশ্বকাপে নেই ইতালি। ঠিক তখনই কান্নায় ভেঙে পড়লেন বুফন। ম্যাচ শেষে টিভি ক্যামেরার সামনে এসেও নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন: রোনাল্ডোর ক্লাব ছাড়া নিয়ে জল্পনা
‘‘আমি পারলাম না,’’ চোখের জল মুছতে মুছতে বলছিলেন ২০০৬ বিশ্বকাপ জয়ী মহাতারকা। ৩৯ বছর বয়সে, দেশের জার্সিতে ১৭৫টি ম্যাচ খেলা বুফন বলে চলেন, ‘‘খুব খারাপ লাগছে যে দেশের হয়ে আমার শেষ ম্যাচেই ইতালির বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। আমি দুঃখিত। নিজের জন্য নয়। দেশের জন্য। এটাই আমার জীবনের একমাত্র আক্ষেপ। কিন্তু কী আর করা যাবে। সময় খুব নিষ্ঠুর। কারও জন্য থেমে থাকে না।’’
সময় সত্যিই বুফনের জন্য থেমে থাকল না। তিনি চেয়েছিলেন আরও একজন কিংবদন্তিকে স্পর্শ করে বিদায় নিতে। চল্লিশ বছরের বেশি বয়সে বিশ্বকাপ জিতে বিদায় নিয়েছিলেন ইতালিরই দিনো জফ। রাশিয়ায় সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার একটা সুযোগ ছিল বুফনের সামনে। সুযোগ ছিল প্রথম ফুটবলার হিসেবে ছ’টা বিশ্বকাপ খেলার রেকর্ড করারও। কিন্তু তার আগেই থেমে যেতে হল তাঁকে। তবে দিনো জফের মতোই সুইডেনের বিরুদ্ধে নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেন বুফন। যেখানে দেখা গেল, সুইডেনের জাতীয় সঙ্গীতের সময় হাততালি দিচ্ছেন তিনি।
দেশের হয়ে সব চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা, বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে দেশের হয়ে সব চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা, এক বিশ্বকাপে যুগ্মভাবে সবচেয়ে কম গোল খাওয়া। বুফনের ঝুলিতে রেকর্ডের সংখ্যা কম নেই। কিন্তু শুধু রেকর্ড দিয়ে তো এই কিংবদন্তিকে মাপা সম্ভব নয়। বুফন এমন এক জন খেলোয়াড় ছিলেন, যার জন্য গোটা দেশ এক হয়ে যেত। ইতালির দুঃসময়ের মধ্যেও তাঁর জন্য চোখের জল ফেলেছে দেশের মানুষ।
বিদায়বেলায় বুফন বিশেষ করে ধন্যবাদ দিয়ে গিয়েছেন তাঁর কয়েক জন সতীর্থকে। বলেছেন, ‘‘আমি জর্জিও কিয়েলিনি, আন্দ্রে বারজাগলি, লিওনার্দো বোনুচ্চিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যাদের সঙ্গে আমি দীর্ঘ দিন ধরে খেলেছি।’’ এর পরে তিনি বলে যান, ‘‘খেলা আপনাকে শেখায় কী ভাবে এক সঙ্গে আনন্দ এবং যন্ত্রণা ভাগ করে নিতে হয়। এই বিপর্যয়ের জন্য আমরা যতটা দায়ী, আমাদের কোচও ততটাই দায়ী।’’
ইতালির এই ভাবে বিদায় নেওয়ার দিনে বুফনের সবচেয়ে বেশি চিন্তা ছিল দেশের মানুষকে নিয়ে। এই বিপর্যয়ের প্রভাব কী ভাবে পড়বে তাঁদের ওপর, এই ভাবনায়। একই সঙ্গে বুফন বলে গেলেন, ‘‘সান সিরোয় আজ সবচেয়ে সুন্দর জিনিস ছিল এত মানুষকে দেশের হয়ে গলা ফাটাতে দেখা। ৯৫ মিনিট ধরে ওরা আমাদের উৎসাহ দিয়ে গিয়েছে। দেশের বিভিন্ন ক্লাবের সমর্থক, বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ এক হয়ে গিয়েছে একটা নীল জার্সির জন্য।’’ তাঁরা এক হয়ে গিয়েছিলেন আরও একটা কথা বলার জন্য: ‘গ্রাজি গিগি’— ধন্যবাদ গিগি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy