যশপ্রীত বুমরা।—ছবি এপি।
ভারত অধিনায়ক যখন তাঁর ২৬তম সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১৮ রান দূরে, মিচেল স্টার্কের অফস্টাম্পের বাইরের বল আপার কাট মারতে গিয়ে ডিপ থার্ডম্যানে ক্যাচ আউট হলেন। আইপিএলের মাঠ হলে নিশ্চিত ছয়। কিন্তু মেলবোর্নের মতো বড় মাঠে শটটা ক্যাচ হয়ে গেল।
সেঞ্চুরি না পেলেও কোহালি এবং পূজারা তত ক্ষণে ভারতকে অনেকটাই ভাল জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার লাঞ্চ পর্যন্ত এই দু’জনের কাউকেই আউট করতে না পেরে তখনই ব্যাকফুটে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া। কোহালি এই সিরিজে নিজেকে যেন পুরো বদলে নিয়েছেন। দুর্দান্ত সংযমী ইনিংস খেলছেন। অনেক বেশি করে বল ছেড়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা অফস্টাম্পের বাইরে প্রচুর বল করেছেন। কিন্তু কোহালি প্রলুব্ধ হননি।
দেখলাম, রিকি পন্টিংয়ের মতো কেউ কেউ বলছেন, পূজারা অত্যন্ত মন্থর ব্যাট করেছেন। এবং, ভারত জিততে না পারলে তাঁর মন্থর ইনিংস (৩১৯ বলে ১০৬) সে জন্য দায়ী হবে। আমি কিন্তু মনে করি, ভারত একেবারে ঠিক গতিতেই রান তুলেছে। খুব অঙ্ক কষে ব্যাট করেছেন পূজারারা। স্কোরবোর্ডে সাড়ে চারশোর কাছাকাছি রান ওঠাটা খুব দরকার ছিল। এই রানটা মোটামুটি নিশ্চিত করছে যে, ভারত এই টেস্ট হারবে না। হয় জয়, নয় ড্র। আমার কিন্তু মনে হচ্ছে, মেলবোর্ন টেস্ট ভারত জিতেই যাবে।
কেন বলছি এই কথা? পূজারা আর অজিঙ্ক রাহানের আউটটা দেখে। পূজারা বোল্ড হয়েছে কামিন্সের বলে, রাহানে এলবিডব্লিউ নেথান লায়ন। দুটো আউটের ক্ষেত্রে মিল একটাই। বল দু’বারই নিচু হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় দিনেই যদি বল এ ভাবে নিচু হতে থাকে, তা হলে বোঝা যাচ্ছে চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে এই পিচে ব্যাট করা কতটা কঠিন হবে। আর মনে রাখবেন, চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকেই ব্যাট করতে হবে।
পূজারার ইনিংসকে পন্টিং মন্থর বললেও আমার মত হচ্ছে, আদর্শ ব্যাটিংই করেছেন ভারতের তিন নম্বর ব্যাটসম্যান। শুধু এই টেস্টেই নয়, গোটা সিরিজেই দুরন্ত খেলছেন পূজারা। তিন টেস্টে মোট পাঁচ ইনিংসে ৩২৮ রান হয়ে গেল। গড় ৬৫.৬০। সর্বোচ্চ ১২৩, সেঞ্চুরি দু’টো, হাফসেঞ্চুরি একটা। পূজারার অন্যতম অস্ত্র হল, বল ছেড়ে ছেড়ে বোলারদের হতাশ করে দেওয়া। ঠিক সেটাই করে যাচ্ছেন নিয়মিত। শুধু অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের কথাই বা বলছি কেন, অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডাররাও ক্রমশ হতাশ আর ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। এ দিন রোহিত শর্মা আর ঋষভ পন্থের যে রকম ক্যাচ ছাড়লেন অস্ট্রেলীয় ফিল্ডাররা, স্কুল ক্রিকেটেও দেখা যায় না। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের খারাপ দিন যায়, বোলারদের যায়। কিন্তু ফিল্ডারদের যে এ রকম অবস্থা হয়, সেটা সচারচর দেখা যায় না।
ভারত ইনিংসটাও ঠিক সময়ে ডিক্লেয়ার করেছে। এখন পেসারদের বাকি কাজটা করতে হবে। পেসারদের কথা বলছি, কারণ মনে হচ্ছে, পিচ থেকে এই মুহূর্তে স্পিনাররা বিশেষ কোনও সাহায্য পাবেন না। সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি লায়নই মাত্র একটা উইকেট পেলেন। রবীন্দ্র জাডেজার উচিত হবে শুক্রবার স্টাম্প টু স্টাম্প বল করে ব্যাটসম্যানদের রান আটকানো।
ভারতীয় পেসারদের মধ্যে আমার বাজি হতে চলেছেন যশপ্রীত বুমরা। বৃহস্পতিবার বুম বুম বুমরার বল মার্কাস হ্যারিসের হেলমেটে লাগল। পরের বলটাই আবার একটু নিচু হয়েছিল। বুমরার ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটারের গতির বল যদি দুমদাম নিচু হয়ে যায়, তা হলে অস্ট্রেলিয়ার কপালে দুঃখ আছে।
আরও একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে ভারতকে। রিভার্স সুইং। মাত্র ছয় ওভার হয়েছে। ৮০ ওভার আসতে এখনও অনেক দেরি। দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার আগে তাই বুমরা, মহম্মদ শামিদের রিভার্স সুইং কিন্তু বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। তার জন্য অবশ্য বলটাকে ঠিকমতো ‘বানাতে’ হবে। মানে একটা দিকের পালিশ ধরে রাখতে হবে। এই কাজটা বেশি করে করতে হবে মিডঅন, মিডঅফের ফিল্ডারদের।
আগে যে কথাটা লিখেছিলাম, সেটা আর এক বার বলছি। পূজারা আর রাহানের আউট দেখে খুশি হতেই পারেন কোহালি। বল দুটো যে নিচু হয়ে গিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy