Advertisement
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভারতের জ্বালানি ভরার মাঠে অসম্ভবের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ

ঢাকা ভারতীয় ক্রিকেটের বিস্তৃত মানচিত্রে কখনও বিশেষ ইঙ্গিতবাহী নয়। পটৌডির দেশের ক্রিকেটে যে অর্থে ওয়েলিংটন, লন্ডন, মেলবোর্ন বা পোর্ট অব স্পেনের ঐতিহাসিক প্রাসঙ্গিকতা। বুড়িগঙ্গার পাশের শহর অন্তত সেই ফার্স্ট লিস্টে নেই।

গৌতম ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:১২
Share: Save:

ঢাকা ভারতীয় ক্রিকেটের বিস্তৃত মানচিত্রে কখনও বিশেষ ইঙ্গিতবাহী নয়। পটৌডির দেশের ক্রিকেটে যে অর্থে ওয়েলিংটন, লন্ডন, মেলবোর্ন বা পোর্ট অব স্পেনের ঐতিহাসিক প্রাসঙ্গিকতা। বুড়িগঙ্গার পাশের শহর অন্তত সেই ফার্স্ট লিস্টে নেই।

এক ঝলকের হিসেব তাই বলে। এবং সব সময় সত্যি যে বলে না, একা মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে জিজ্ঞেস করলেই জানা সম্ভব।

মীরপুর মাঠে সচিনের শততম শতরানের প্রাণপ্রতিষ্ঠার কথা বাদই দিচ্ছি। ঢাকা গত ন’বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের খুব গুরুত্বপূর্ণ স্টপওভার শহর। একটা কেন্দ্রে বিজয়কীর্তি রচিত হলে সব সময় সেটা আড়ালে ফেলে দেয় পেছনের প্রস্তুতির গোপন মুহূর্তগুলো।

আর গত ন’বছরের ইতিহাস অনুযায়ী ঢাকা হল ভারতীয় ক্রিকেটের জ্বালানি ভরার গোপন জায়গা। গ্রেগ চ্যাপেল পরবর্তী ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন উৎসমুখ এহেন ঢাকা থেকেই শুরু। সে বার নতুন ক্রিকেট ম্যানেজার হয়ে এসেছিলেন এখনকার ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী।

সিরিজের প্রথমে ছিল ওয়ান ডে। তার পর টেস্ট। ওয়ান ডে-তে সচিন-সৌরভকে নেওয়া হয়নি। সরকারি ভাবে বলা হয়েছিল বিশ্রাম। আসলে বোর্ড বকলমে তাঁদের বাদ দিয়ে টেস্ট টিমে রাখে। তেন্ডুলকরকে জীবনে ওই এক বারই বিশ্রামের অছিলায় বাদ দেওয়া হয়েছিল। শোনা যায়, এর পর ঢাকার হোটেলে একদিন সকালে তাঁকে ফোন করেন তখনকার নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান দিলীপ বেঙ্গসরকর। ঘুম জড়ানো তখন সচিনের গলা।

‘‘কী রে, স্লিপিং?’’

প্রশ্ন শুনে সচিন বলেন, ‘‘নো, রেস্টিং।’’ তীব্র ব্যাঙ্গ, কিন্তু শুনে বেঙ্গসরকরও হেসে ফেলেন।

এই রকম একটা থমথমে প্রেক্ষিত থেকে সিরিজ শেষ হয় চূড়ান্ত মধুচন্দ্রিমায়। টেস্ট ও ওয়ান ডে রমরম জেতার পর ভারতীয় ক্রিকেট ম্যানেজারের জন্মদিনের পার্টিতে বারটেন্ডারকে দেখে চমকে যান অভ্যাগতরা। সকলের হাতে হাতে ড্রিঙ্কস সার্ভ করছিলেন স্বয়ং তেন্ডুলকর। ওই সুখী পরিবারের ছবিটাই বলে দিচ্ছিল নতুন জ্বালানি আর নতুন করে সার্ভিসিং হয়ে গিয়েছে।

গত বছর বাংলাদেশে ওয়ান ডে সিরিজ ১-২ হেরে ফেরাটা ছিল ধোনির টিমের কাছে ভয়ঙ্কর এক ধাক্কা। টিম ঘিরে নানা পরিকল্পনা এই হারে নতুন মোড় নেয়। ডালমিয়া-সহ বোর্ড কর্তাদের ধোনির ওপর চাপ বাড়তে থাকে। সব মিলিয়ে টিমটা নতুন উড়ান শুরু করে। ঢাকাকে সেই গুরুত্বপূর্ণ স্টপওভার ক্রিকেটিং সিটি হিসেবে রেখেই।

এ বার কী হবে? রাত্তিরে রবি শাস্ত্রীর কথা শুনে মনে হল তিরাশির ফাইনালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ হতে তাঁরা একেবারেই চান না। বাংলাদেশ যে ধারাবাহিক ভাল খেলে যাচ্ছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সচেতন দেখলাম তাঁকে।

ও দিকে বাংলাদেশ প্রথম ফাইনাল জয়ের অসম্ভব স্বপ্নে এমন বিভোর যে প্রতি মোড়ে মোড়ে যেন প্রশ্ন, মিয়াঁ টিকিট আছে রোববারের? মীরপুরে পঁচিশ হাজার লোক ধরে। স্থানীয় মিডিয়া বলছে এক লাখ লোক স্টেডিয়ামে ধরলেও টিকিটের চাহিদা থাকত। মনে রাখতে হবে শুক্র-শনি ছুটি গিয়ে রোববার এখানে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন।

সাড়া পড়ে গেছে ফাইনাল নিয়ে যে, প্রধানমন্ত্রী নাকি প্রথম বল থেকে দেখবেন। বাংলাদেশের গোটা ক্যাবিনেটও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ম্যাচ দেখতে আসছে। স্থানীয় মিডিয়ায় এ দিন ছবি বেরিয়েছে, পাকিস্তান ম্যাচ জেতার পর মাঠে শেখ হাসিনার চোখে জল। বাংলাদেশ টিমের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন যে, আপা যাতে হাসি মুখে রোববার ফিরতে পারেন, সেই দায়িত্বটা আমাদের নিতে হবে।

মাশরাফির দলের জনপ্রিয় ম্যানেজার খালিদ মহম্মদ সুজন বলছিলেন, ‘‘জানি ইন্ডিয়া অনেক শক্তিশালী। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে হঠাৎ হঠাৎ মোমেন্টাম তৈরি হয়। হঠাৎ খেলা ঘোরে। সেটাকে যারা কাজে লাগায়, তারাই জেতে।’’ শুনে মনে হল ম্যাচের আগে তাঁদের ড্রেসিংরুমের ভোকাল টনিক কোন চেহারা নেবে, বোঝা যাচ্ছে।

আর বোঝা যাচ্ছে ফাইনালটা জমজমাট হবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মাঝামাঝি পেরোতে না পেরোতেই টিম ইন্ডিয়া হয়তো ভারতে বসে ভাববে, ঢাকার স্টপওভার না পেলে বিশ্বকাপটায় ঝামেলা ছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

asia cup final bangladesh india
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy