অসন্তোষ: কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় নাদাল ও শাপোভালভের। মঙ্গলবার। ছবি: গেটি ইমেজেস।
গত বছরের শেষ দিকেও প্রতিযোগিতামূলক টেনিসে ফিরে আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না রাফায়েল নাদাল। একে পায়ের চোট, তার উপরে ডিসেম্বরে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ২০২২ মরসুম অস্ট্রেলীয় ওপেন দিয়ে যে শুরু করতে পারবেন, তা কল্পনাও করেননি স্প্যানিশ তারকা।
৩৫ বছরের নাদালই শুক্রবার মেলবোর্ন পার্কে সেমিফাইনালের ছাড়পত্র আদায় করে নিলেন মঙ্গলবার ডেনিস শাপোভালভকে ম্যারাথন পাঁচ সেটে চার ঘণ্টা ৮ মিনিটে হারিয়ে। ম্যাচের ফল স্পেনীয় তারকার পক্ষে ৬-৩, ৬-৪, ৪-৬, ৩-৬, ৬-৩ । ‘‘পুরোপুরি নিজেকে নিংড়ে দিয়েছি। খুব গরম এখানে। খুব কঠিন দিন ছিল আমার জন্য। সত্যি বলতে, এ রকম একটা লড়াইয়ের জন্য আমি অনুশীলনও করিনি,’’ বলেন নাদাল।
তাঁর চেয়ে বয়সে ১৩ বছরের ছোট, কানাডার তরুণের চ্যালেঞ্জের জবাবে নাদাল নিজের সর্বশক্তি উজাড় করে দেন। ‘‘পঞ্চম সেটের শুরু দিকে আমি কিছুটা ভাগ্যের সঙ্গ পেয়েছি। ডেনিসের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলা খুব কঠিন। প্রচণ্ড প্রতিভাবান এবং আগ্রাসী,’’ বলেছেন নাদাল।
তবে জিতলেও স্প্যানিশ তারকা ‘একশো শতাংশ’ অন্যায় সুবিধা পাচ্ছেন বলে চেয়ার আম্পায়ারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন শাপোভালভ। কানাডার তারকা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ম্যাচের মধ্যে নাদাল যতটা সময় নিয়েছেন, তা নিয়ে। চোটের শুশ্রূষার জন্যও তিনি অতিরিক্ত সময় ব্যয় করেছেন বলে অভিযোগ শাপোভালভের। তার উপর টয়লেট ব্রেকও আম্পায়ার কেন মঞ্জুর করলেন সেই প্রশ্নও তুলেছেন। নিয়ম অনুযায়ী শটের মাঝে ২৫ সেকেন্ড এবং সেটের মধ্যে দু’মিনিটের বেশি নেওয়া যাবে না। দু’বার শাপোভালভ অভিযোগ করেন চেয়ার আম্পায়ার কার্লোস বার্নার্ডেসের কাছে। চেয়ার আম্পারকে এক সময় বলে ওঠেন, ‘‘আপনারা সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত।’’ শাপোভালভ পরে অবশ্য নিজের মন্তব্য নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন, তবে নিজের অবস্থান থেকে আদৌ নড়েননি। তিনি বলেছেন, ‘‘নিজের জায়গায় অনড় রয়েছি। রাফা ১০০ শতাংশ অন্যায় সুবিধা পেয়েছে। আমি খেলার জন্য পুরো তৈরি দেড় মিনিট ধরে। আম্পায়ারের দিকে তাকাতে উনি বললেন রাফাকে কোড ভায়োলেশন দেবেন না, কারণ আমি খেলার জন্য তৈরি নই। এটা হাস্যকর।’’ আরও বলেছেন, ‘‘রাফা অবিশ্বাস্য খেলোয়াড়। কিন্তু নিয়ম বলে একটা কথাও রয়েছে। এক জন খেলোয়াড়ের কাছে এটা হতাশাজনক। তখন মনে হয় কোনও খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে নয়, আম্পায়ার ও আরও অনেক কিছুর বিরুদ্ধে যেন খেলতে নেমেছি।’’
শাপোভালভের অভিযোগের জবাবে নাদাল বলেছেন, ‘‘আমার বিশ্বাস প্রতিপক্ষের মনে সব সময়ই এটা ঘোরে যে, আমাদের মতো খেলোয়াড়েরা বেশি সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। কখনওই মনে হয়নি কোর্টে কোনও সুবিধা পেয়েছি। আমার বিশ্বাস, এক্ষেত্রে ও ভুল করছে।’’ বিশ্বের ১৪ নম্বর শাপোভালভের বিরুদ্ধে প্রথম দুটো সেট এবং তৃতীয় সেটের মাঝামাঝি দাপট দেখান নাদালই। কিন্তু তৃতীয় সেটে নাদালের ছন্দ নষ্ট হয় সম্ভবত পেটের সমস্যায়। এই প্রতিযোগিতায় নাদাল এক বারই খেতাব জিতেছেন। তাও ২০০৯ সালে। এমনকী শেষ ১৩টি কোয়ার্টার ফাইনালের সাতটি হেরেছেন তিনি মেলবোর্ন পার্কে। হঠাৎই এই সময় আবারও নাদালকে ম্যাচ থেকে হারিয়ে যেতে দেখা যায়। কিন্তু চতুর্থ সেটের শেষ পয়েন্ট আর পঞ্চম সেটের প্রথম সার্ভিসের মধ্যে সাত মিনিটের ব্রেক নেওয়ার পরে ফের কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠতে দেখা যায় তাঁকে। নিজের সার্ভিস ধরে রেখে তিনি শাপোভালভের সার্ভিস ভেঙে পঞ্চম সেটে ২-০ এগিয়ে যান। এর পরে আর ম্যাচ দখল করতে সমস্যা হয়নি তাঁর।
পুরুষদের সিঙ্গলসে দুটি সেমিফাইনালই শুক্রবার হওয়ায় দু’দিন বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন নাদাল। যা নিয়ে বলেছেন, ‘‘এই দু’দিনের বিশ্রামটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার বয়স তো আর এখন ২১ নয়।’’ সেমিফাইনালে নাদালের মুখোমুখি সপ্তম বাছাই ইটালির মাত্তেয়ো বেরেত্তিনি। যিনি ফ্রান্সের গেল মঁফিসকে পাঁচ সেটে হারান। ফল ৬-৪, ৬-৪, ৩-৬, ৩-৬, ৬-২।
মেয়েদের সিঙ্গলস কোয়ার্টার ফাইনালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাডিসন কিজ অঘটন ঘটিয়েছেন চতুর্থ বাছাই বার্বোরা ক্রেচিকোভাকে ৬-৩, ৬-২ হারিয়ে। অপর কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্বের এক নম্বর অ্যাশলে বার্টি ৬-২, ৬-০ উড়িয়ে দিয়েছেন জেসিকা পেগুলাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy