এরিকসনকে বাঁচানোর সেই ঘটনা। ছবি: টুইটার।
প্রার্থনা শুনেছেন ঈশ্বর! কোপেনহাগেনের হাসপাতালে আপাতত বিপন্মুক্ত রয়েছে আমার ছেলের বয়সি ফুটবলার ডেনমার্কের ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন।
আমার রাজ্য গোয়া থেকে আকাশপথে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহাগেনের দূরত্ব সাড়ে ছ’হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। আর সে দেশের জনপ্রিয় ফুটবল তারকা যে উচ্চমার্গের মঞ্চে খেলে, তা আমার ফুটবল-বৃত্তের বাইরে। গোটা বিশ্ব ডেনমার্কের এই ফুটবলারের আরোগ্য কামনায় প্রার্থনা করেছে। যে তালিকায় রয়েছেন গ্যারি লিনেকার থেকে আমাদের দেশের অমিতাভ বচ্চন পর্যন্ত। কিন্তু আমি বেশি বিচলিত এই কারণেই যে, এ ভাবেই ম্যাচের মধ্যে হারিয়েছিলাম ডেম্পোর ব্রাজিলীয় ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়রকে। কোচের আসনে বসে অসহায় হয়ে দেখেছিলাম ওকে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে।
শনিবার রাতে যখন ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধের শেষ দিকে মাঠে হঠাৎ সংজ্ঞা হারিয়ে লুটিয়ে পড়েছিল এরিকসেন, তখন আশঙ্কায় কেঁপে উঠেছিল বুকটা। কারণ, ভারতীয় উপমহাদেশে এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা যে একমাত্র আমারই রয়েছে। সে কারণেই বেড়ে গিয়েছিল হৃদস্পন্দন। ঈশ্বরের কাছে কাঁদতে কাঁদতে প্রার্থনায় বসেছিলাম। বারবার বলছিলাম, ‘‘প্রভু, আর একটা জুনিয়র যেন না হয়। এই দৃশ্য আমাকে আর দেখিয়ো না। করুণা করো।’’
অতিমারির ভয়াবহতা অনেকটাই অতিক্রম করেছে ইউরোপ। এক বছর পিছিয়ে শুরু হয়েছে ইউরো কাপ। গোয়ার বাড়িতে খেলা দেখছি। শনিবার রাতে মনের উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গিয়েছে।
২০০৪ সালের ৫ ডিসেম্বর আজও ভুলতে পারি না। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে সেই ফেডারেশন কাপ ফাইনালে আমরা প্রথমার্ধেই জুনিয়রের গোলে এগিয়ে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে ফের জুনিয়রের গোল। আর সেই ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ, যা কেড়ে নিল জীবন।
আজও ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্নে ভেসে আসে সেই হৃদয়বিদারক মুহূর্তগুলো। সংঘর্ষের পরে জুনিয়রের মাঠে লুটিয়ে পড়া, ওকে সিপিআর (কার্ডিয়ো পালমোনারি রিসাসিটেশন। বুকে মালিশ করে ও মুখ দিয়ে বিশুদ্ধ অক্সিজেন ঢুকিয়ে বন্ধ হওয়া হৃদযন্ত্র চালু করার পদ্ধতি) দেওয়ার জন্য ছেলেদের মরিয়া চেষ্টা, ওকে হাসপাতালে পাঠানো। তার পরে সব শেষ। হাসপাতালে আমাকে জড়িয়ে ধরে ওর স্ত্রী জুলিয়ানার কান্না আজও কানে বাজে।
সেই মুহূর্তগুলোই যেন শনিবার টিভির পর্দায় ভেসে উঠছিল। পার্থক্য হল, এরিকসেনের সঙ্গে কারও সংঘর্ষ হয়নি। প্রায় ৪৫ মিনিট এক মনে ওর জীবনের প্রার্থনার পরে আমার স্ত্রী জানায়, এরিকসেন সুস্থ রয়েছে, শ্বাস নিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি। তখন প্রার্থনা সেরে উঠি। এরিকসেন জীবন ফিরে পাওয়ায় কতটা যে খুশি, বলে বোঝানো কঠিন। সে দিন চোখের সামনে জুনিয়রকে চলে গিয়েছিল, এ বার এরিকসেন ফিরে এল। ঈশ্বর আমার প্রার্থনা শুনেছেন এ বার!
রবিবার সকালে অনেকেই ফোন করে জানতে চেয়েছেন, এরিকসেনের মতো কম বয়সি ফুটবলার যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ফুটবল খেলছে, তাঁর খেলার মাঝে সংজ্ঞা হারানোর মতো ঘটনা কী ভাবে হয়? ওর তো কোনও সমস্যা ছিল না।
এর উত্তর আমার কাছেও নেই। শারীরবৃত্তীয় অবস্থা প্রত্যেকেরই আলাদা। তাই কখন কার বিপদ ধেয়ে আসবে, তা চিকিৎসাবিজ্ঞানও অনেক সময় বলতে ব্যর্থ হয়। ভরসা থাকে অসহায় সেই মানুষের সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy