ভয়াবহ: সুনামির দিন চেন্নাইতেই ছিলেন সপরিবার কুম্বলে। ফাইল চিত্র
ষোলো বছর আগে ২০০৪ সালে ২৬ ডিসেম্বরের সকালে সপরিবারে তিনি ছিলেন চেন্নাইয়ে। সেই সকালেই ভারতের পূর্ব উপকূলে আছড়ে পড়েছিল সুনামি। বিপদের হাত থেকে বেঁচে ফেরার সেই অভিজ্ঞতার কথাই আর অশ্বিনকে জানালেন প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক ও কোচ অনিল কুম্বলে।
ভারত মহাসাগরে ভয়াবহ সেই জলোচ্ছ্বাসের ফলে গোটা বিশ্বে দু’লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। ভারতে সেই সংখ্যাটা ছিল ১০,১৩৬ জন। স্রোতের টানে ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছিল ভারতীয় উপকূল সংলগ্ন এলাকার অনেক বাসিন্দারই। বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তামিলনাড়ু রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকা।
প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলার দিনে চেন্নাইয়েই ছিলেন কুম্বলে। ভারতীয় স্পিনার অশ্বিনকে তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে কুম্বলে জানিয়েছেন, সে দিন সকালেই চেন্নাই থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁদের। বলেছেন, ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সপরিবারে তাঁর বেঁচে ফেরার অভিজ্ঞতার কথা।
কুম্বলের কথায়, ‘‘সেবার চেন্নাইয়ে সমুদ্রতীরবর্তী একটি বিলাসবহুল হোটেলে ছিলাম। সঙ্গে ছিল স্ত্রী ও পুত্র। আমার ছেলের তখন মাত্র ১০ মাস বয়স। বাচ্চা ছোট থাকাতেই সড়কপথে ছ’ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিইনি। বিমানেই বেঙ্গালুরু থেকে চেন্নাই উড়ে গিয়েছিলাম।’’ যোগ করেছেন, ‘‘ছুটি ভালই কেটেছিল। কিন্তু ফেরার দিনেই এসেছিল সেই ভয়ঙ্কর সুনামি। সকাল সাড়ে এগারোটায় ফেরার বিমান ছিল। তাই সাড়ে ন’টা নাগাদ হোটেল থেকে বেরোনোর পরিকল্পনা ছিল আমাদের।’’
সে দিনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কুম্বলে বলেছেন, ‘‘ভোররাতে আমার স্ত্রী হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠেছিল। বলছিল, অস্বস্তি হচ্ছে ওর। ফলে সে দিন সকালে অন্য দিনের তুলনায় আগেই উঠে পড়েছিলাম আমরা। সকালে জানালা দিয়ে সমুদ্র দেখতে দেখতে কফি খাচ্ছিলাম, তখনও পরিবেশ শান্ত। তবে দিনটা ছিল মেঘলা।’’
প্রাক্তন ভারতীয় লেগস্পিনার আরও বলেছেন, ‘‘সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ প্রাতরাশ সারতে গিয়েছিলাম। জায়গাটা একটু উঁচুতে। প্রাতরাশ সারার সময়েই প্রথম জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ে চেন্নাই সৈকতে। আমরা যদিও বুঝতে পারিনি কী হয়েছে। যখন হোটেল ছেড়ে বেরোচ্ছি, তখন দেখলাম এক দম্পতি জলে ভিজে গিয়ে ঠকঠক করে কাঁপছেন।’’
কুম্বলে জানিয়েছেন, হোটেল থেকে গাড়িতে ওঠার পরেও তিনি বুঝতে পারেননি কী ঘটছে চেন্নাইয়ের সমুদ্রতটে। তাঁর কথায়, ‘‘কিছুই বুঝতে পারিনি। হোটেল ছেড়ে বেরোনোর পথে একটি সেতু আসে। সেখানে দেখলাম গাড়িতে প্রায় জল উঠে আসছে। কারণ, সেতু থেকে মাত্র এক ফুট তলায় বয়ে যাচ্ছে জলের স্রোত। আর জলের উচ্চতা ক্রমশ বাড়ছে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘একটু এগিয়েই দেখলাম রাস্তায় লোক প্রাণভয়ে ছুটছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বাক্স-প্যাঁটরা, বাচ্চাদের কাঁধে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে দ্রুত যাচ্ছেন। গাড়ি চালকের ফোন বার বার বাজছিল। ওঁর পরিবার যোগাযোগের চেষ্টা করছিল। আমি ওঁকে বলছিলাম গাড়ি চালানোয় মনোনিবেশ করতে। না হলে অন্য বিপদ ধেয়ে আসতে পারে।’’
প্রাক্তন ভারতীয় কোচ আরও বলেছেন, ‘‘প্রথমে গাড়ি চালকের থেকেই জানতে পারি প্রবল জলোছ্বাস হয়েছে। শহর জলে ভাসছে। শুনে অবাক হই। কারণ, ঝড়-বৃষ্টি কিছুই তো হয়নি। বুঝতে পারছিলাম না কী হচ্ছে। সুনামি প্রসঙ্গেও কিছু শুনিনি। বেঙ্গালুরুর বাড়ি ফিরে টিভি থেকে জানতে পারি কী ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy