চ্যালেঞ্জ: ফেডেরারের সামনে ট্রফি ধরে রাখার লড়াই। ছবি:গেটি ইমেজেস
প্রশ্ন: ক্রিস এভার্ট বলতে আমরা বুঝি সেই খেলোয়াড়কে, যাঁর সঙ্গে মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার প্রতিদ্বন্দ্বিতা টেনিস ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। এখন তো সেই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হারিয়েই গিয়েছে।
ক্রিস এভার্ট: হ্যাঁ, সেটা ঠিক কথা। সেরিনা উইলিয়ামস চলে আসার পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কোথায় মেয়েদের টেনিসে?
প্র: কিন্তু এই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হারিয়ে যাওয়ার ফলে মেয়েদের টেনিস থেকে জৌলুসটাও হারিয়ে যাচ্ছে না?
ক্রিস: যাচ্ছে তো বটেই। আমার মনে হয়, এই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলে টেনিসের মানও অনেক ভাল হয়ে যায়। টেনিস নিয়ে আগ্রহ বাড়ে। দু’জন খেলোয়াড়ের আলাদা আলাদা ফ্যান টিম হয়। কোর্টে একে অন্যের মুখোমুখি হলে ভক্তরাও দু’ভাগ হয়ে গলা ফাটাতে পারে। আমাদের সময় যেমন ছিল। এই একটা ব্যাপার এখন হারিয়ে গিয়েছে। তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হারিয়ে যাওয়ায় মেয়েদের টেনিসের জৌলুসও কমছে।
প্র: তা হলে সামনে রাস্তা কী?
ক্রিস: একেবারে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমি তিন ভাবে ব্যাপারটা দেখছি। এক, যখন দু’জন সুপারস্টারের মধ্যে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। যেটা এখন আর নেই। দুই, এক জন যখন রাজত্ব করে। যেমন সেরিনা উইলিয়ামস। সেরিনা যখন একের পর এক ট্রফি জিতছে, তখন বলা হতো টেনিস এ বার শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু দেখবেন, টিভি রেটিং তখন সবচেয়ে বেশি ছিল। তিন, এমন একটা পরিস্থিতি, যেখানে ২০-২৫ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে যে কেউ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারে। যেটা এই মুহূর্তে মেয়েদের টেনিসের ছবি।
প্র: আপনি নিজে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে দীর্ঘদিন ধরে এক নম্বরে ছিলেন। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের সঙ্গে যুক্ত। মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা থেকে সেরিনা উইলিয়ামস, পিট সাম্প্রাস থেকে রজার ফেডেরার— সবাইকে দেখেছেন। আপনার কাছে সর্বকালের সেরা পুরুষ এবং মহিলা টেনিস খেলোয়াড় কারা?
ক্রিস: আমার কাছে সর্বকালের সেরা দুই টেনিস খেলোয়াড় হল রজার ফেডেরার এবং সেরিনা উইলিয়ামস। এই দু’জনকেই আমি টেনিস ইতিহাসের র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে রাখব।
প্র: কেন বলছেন এ কথা?
ক্রিস: রজার এবং সেরিনা কত দিন ধরে খেলে চলেছে একবার দেখুন। ওদের টেনিস কেরিয়ার কতটা দীর্ঘ একবার ভেবে দেখুন। মধ্য তিরিশে এসেও ওরা অনায়সে গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন হয়ে চলেছে। এক কথায় অবিশ্বাস্য। টেনিস ইতিহাসে কেউ কখনও এ রকম কিছু করতে পারেনি। এখনকার টেনিস অনেক বদলে গিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেড়েছে। গভীরতা অনেক। তাই সর্বকালের সেরা র্যাঙ্কিংয়ে ছেলেদের এক নম্বর আর মেয়েদের এক নম্বর হিসেবে রজার এবং সেরিনাকে না রেখে কোনও উপায় নেই।
আরও পড়ুন: সঞ্জয়কে ফের কোচের জার্সি দিচ্ছে এটিকে
প্র: ফেডেরারের কথায় আসি। কী ভাবে সম্ভব সময়কে হার মানিয়ে এ ভাবে ফিরে আসা?
ক্রিস: ফেডেরারকে দেখে মনে হয় ও যেন টেনিসের প্রেমে ডুবে আছে। টেনিসের সঙ্গে জড়িত সব কিছু ও ভীষণ ভাবে উপভোগ করে। প্র্যাক্টিস থেকে সারা বিশ্বে খেলে বেড়ানো— কোনও কিছু নিয়ে অভিযোগ নেই। যেটা আমি অনেক নামী-দামি খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে দেখেছি। কিন্তু ফেডেরার সব কিছু দারুণ উপভোগ করে। এই বয়সে এসেও। তার ওপর ফেডেরারের পারিবারিক জীবনও ওর খেলায় প্রভাব ফেলেছে। ওর স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ফেডেরার খুব রিল্যাক্সড থাকে। যেটা কোর্টে ওর পারফর্ম্যান্সে প্রভাব ফেলে। ফেডেরার খুব ভাল সুইচ অন-সুইচ অফ করতে পারে। কোর্ট থেকে বেরিয়েই ডুবে যায় পরিবারের মধ্যে। টেনিসের টেনশন ওকে ছুঁতে পারে না।
প্র: ফেডেরারের খেলার ধরনও কি ওকে চোটমুক্ত রেখেছে?
ক্রিস: অবশ্যই। ফেডেরার-কে দেখে মনে হয় ও যেন কোর্টে উড়ে বেড়াচ্ছে। শারীরিক টেনিস খেলে না। দেখে মনে হয় না, প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে কোনও শট খেলছে। শরীরের ওপর চাপ পড়তে দেয় না। এ ছাড়া ওর ট্রেনিং পদ্ধতি, বেছে বেছে টুর্নামেন্ট খেলা— এ সবই ফেডেরারকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। ওকে দেখে তো আমার মনে হয়, আরও ৪-৫ বছর অনায়সে খেলে দেবে।
প্র: আসন্ন অস্ট্রেলিয়া ওপেনে ফেডেরারের কী ভবিষ্যৎ দেখছেন?
ক্রিস: অবশ্যই ও ফেভারিট। তবে নাদালও আছে। নাদালকে দেখে আমার এক জন বক্সারের কথা মনে হয়, যে রিংয়ে নামার জন্য সব সময় মুখিয়ে আছে। আর ফেডেরারকে দেখে মনে হয়, ও শুধু টেনিসটা খেলতে পারলেই খুশি। কারণ ফেডেরারের কাছে টেনিসের চেয়ে সুন্দর আর কিছু হয় না। তবে দু’জনের মধ্যেই নিজেকে উদ্দীপিত করার একটা অস্বাভাবিক ক্ষমতা আছে।
প্র: তা হলে এই দু’জনের বাইরে এ বারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে আপনার আর কোনও ফেভারিট নেই?
ক্রিস: নোভাক জকোভিচ চোট সারিয়ে সবে ফিরছে। ওর কনুই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবে আমি এক জন সম্পর্কে সতর্ক করে দিতে চাই। নিক কিরিয়স। ও কিন্তু খুব বিপজ্জনক খেলোয়াড়।
প্র: বিপজ্জনক কার জন্য? বিপক্ষের না নিজের?
ক্রিস (হেসে): প্রতিপক্ষের জন্য, আবার মাথা গরম করে নিজের জন্যও। তবে নিকের ক্ষমতা আছে যে কোনও রাউন্ডে অঘটন ঘটানোর।
প্র: এখন কেন খেলোয়াড়রা এত চোট পাচ্ছেন?
ক্রিস: টেনিসের ধরনটাই এখন বদলে গিয়েছে। গ্রিপ বদলেছে, স্টান্স বদলেছে। সুইং, স্পিন সব। কোর্ট অনেক গতিশীল হয়েছে, বলও। আমি যখন টেনিস খেলতাম, তার চেয়ে সব কিছু এখন কত আলাদা! এখন দেখছি, বেশির ভাগই ওপেন স্টান্সে খেলছে। যার ফলে শরীর ঘোরানোর জন্য সময় পাওয়া যাচ্ছে না। হাত আর কব্জির ওপরে চোট পড়ে যাচ্ছে। চোটও তাই বেশি হচ্ছে।
প্র: এ বারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে সেরিনা নেই। মেয়েদের মধ্যে আপনার ফেভারিট কে?
ক্রিস: সিমোনা হালেপ। যত বারই ওকে টিভি-তে দেখেছি, সব সময় মুখে হাসি ছিল। ও কিন্তু টেনিসটা উপভোগ করছে। এক নম্বর হওয়াটা ওর কাছে চাপের নয়। বরং চ্যালেঞ্জটাকে উপভোগ করছে।
প্র: সেরিনা কি আবার নিজের ছন্দে ফিরতে পারবেন?
ক্রিস: সেরিনা খুব বুদ্ধিমানের কাজ করেছে সরে দাঁড়িয়ে। মা হওয়ার পরে কিন্তু অন্য দিকে দায়বদ্ধতা অনেক বেড়ে যায়। আমার মনে হয় না, এ বারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ও ভাল কিছু করতে পারত। এ বার হাতে সময় পাবে। আবার পুরনো সেরিনাকে দেখা গেলে অবাক হব না।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন টেনিস:
১৫ জানুয়ারি ভোর ৫.৩০ থেকে সোনি সিক্স/এইচডি, সোনি টেন২/এইচডি চ্যানেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy