যোগ্যতা অর্জন পর্বে সিমোন বাইলস। ছবি: রয়টার্স।
অলিম্পিক্সের দ্বিতীয় দিনেই দেখা গেল সিমোন বাইলসকে। সেই পুরনো বাইলসকে। ২০১৬ রিয়ো অলিম্পিক্সের বাইলসকে। প্যারিসে ডানা মেললেন তিনি। পায়ের চোট নিয়েও যোগ্যতা অর্জন পর্বে আমেরিকাকে টানলেন বাইলস। ব্যক্তিগত স্কোরে সকলের উপরে শেষ করেছেন তিনি।
জিমন্যাস্টিক্সে দলগত প্রতিযোগিতায় যোগ্যতা অর্জন পর্বে দাপট দেখিয়েছে আমেরিকা। চারটি আলাদা আলাদা বিভাগে সব মিলিয়ে তাদের পয়েন্ট ১৭২.২৯৬। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইটালি (১৬৬.৮৬১)। তিন নম্বরে চিন (১৬৬.৬২৮)। ব্যক্তিগত স্কোরে সকলের উপরে বাইলস। তাঁর স্কোর ৫৯.৫৬৬। বাইলসের দলেরই সুনি লির স্কোর ৫৬.১৩২। তিন নম্বরে জর্ডন চিলেস। তাঁর স্কোর ৫৬.০৬৫। কিন্তু তিনি অলরাউন্ড ফাইনালে উঠতে পারেননি। কারণ, সেই ইভেন্টে প্রতিটি দেশ থেকে দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বাইলসের সঙ্গে সেই ইভেন্টে দেখা যাবে সুনিকে।
তিন বছর আগে ছবিটা এ রকম ছিল না। টোকিয়োয় মহিলাদের দলগত ফাইনালের মাঝপথে সরে দাঁড়ান বাইলস। ব্যক্তিগত কয়েকটি ইভেন্টেও নামেননি তিনি। বাইলস জানিয়েছিলেন, ‘টুইস্টিস’ (জিমন্যাস্টেরা হাওয়ায় নিজের অবস্থান বুঝতে পারেন না। ফলে ল্যান্ডিংয়ে সমস্যা হয়। জিমন্যাস্টেরা এই সমস্যাকে এই নামেই ডাকেন)-এর সমস্যা হয়েছে তাঁর। রবিবার বাইলসকে দেখে মনে হল, সেই সমস্যা স্যেন নদীর জলে ছুড়ে ফেলে এসেছেন তিনি।
প্যারিসের বার্সি এরিনায় ২৭ বছরের বাইলস ঢোকার পরেই যে হাততালি পড়ল, মনে হল তিনি হয়তো ইতিমধ্যেই কয়েকটি সোনা জিতে গিয়েছেন। সমর্থকদের নিরাশ করেননি তিনি। প্রথমেই ব্যালান্স বিমে দাপট দেখালেন। বাইলসের রুটিনে কোনও ভুল চোখে পড়েনি। ১৪.৭৩৩ স্কোর করেন তিনি।
তার পরে ফ্লোর ইভেন্টে নামেন বাইলস। সেখানেই তাঁর পায়ে চোট লাগে। বাঁ পায়ের গোড়ালিতে টেপ বাঁধা ছিল। গোড়ালি কিছুটা ফুলেও ছিল। তাতে অবশ্য কোনও সমস্যা হয়নি বাইলসের। সেই অবস্থাতেই ফ্লোর ইভেন্টে ১৪.৬৬৬ স্কোর করেন তিনি। ফ্লোর থেকে বাইলস যখন বেরিয়ে আসছেন তখন তাঁর কাছে যান কোচ কেসিলে লান্ডি। ১৯৯৬ সালে ফ্রান্সের হয়ে অলিম্পিক্সে নেমেছিলেন তিনি। লান্ডিতে বাইলস জানান, ঠিক আছেন তিনি।
তৃতীয় ইভেন্ট ছিল ভল্ট। সেখানে তিনি কেমন করেন সে দিকেই নজর ছিল সকলের। বিশেষ করে যখন নিজের মার্কে তিনি যাচ্ছিলেন, তখন বেশ কিছু ক্ষণ খোঁড়াতে দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু ফল্টের সময় সে সব উধাও। নিজের পরিচিত ইয়ুরচেঙ্কো ভল্ট দিতে দেখা যায় তাঁকে। তবে ল্যান্ডিংয়ের সময় একটু সমস্যা হয়। শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে কয়েক পা পিছিয়ে যেতে হয় তাঁকে। ভল্ট ইভেন্টে ১৫.৮০০ স্কোর করেন বাইলস।
আমেরিকার জিমন্যাস্টের শেষ ইভেন্ট ছিল আনইভেন বার। সেখানে তিনি ১৪.৪৩৩ স্কোর করেন। চারটি ইভেন্ট শেষ হওয়ার পরে চওড়া হাসি দেখা যায় বাইলসের মুখে। গ্যালারিতে বসে থাকা বাবা ও মায়ের দিকে হাত নাড়েন। তাঁর চোট নিয়ে মুখ খোলেন লান্ডি। তিনি বলেন, “প্যারিসে আসার আগে অনুশীলনে চোট পেয়েছিল বাইলস। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে ও। যোগ্যতা অর্জন পর্বের শুরুতে একটু সমস্যা হলেও যত সময় গড়িয়েছে, ছন্দ ফিরে পেয়েছে বাইলস।”
দেশকে শীর্ষে তুলে যখন বাইলস বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখনও গোটা এরিনায় তাঁর নামে জয়ধ্বনি। যদিও ছাত্রীকে নিয়ে পুরো সন্তুষ্ট হতে পারছেন না লান্ডি। তিনি বলেন, “বাইলস ভাল করেছে। ৫৯.৫ ভাল স্কোর। কিন্তু খুব ভাল নয়। এর থেকেও ভাল করার ক্ষমতা ওর আছে।” কোচের কথা শুনে মুচকি হাসেন বাইলস। হয়তো এখানে নিজের সেরাটা দেননি তিনি। সেটা রেখে দিয়েছেন সোনার জন্য। ২০১৬ রিয়ো অলিম্পিক্সে চারটি সোনা জিতেছিলেন। সেই কীর্তি হয়তো আর এক বার করতে চান তিনি। ব্যক্তিগত ভল্ট ও আনইভেন বারের পাশাপাশি অলরাউন্ড ও দলগত ইভেন্টেও তো নামবেন তিনি। আরও এক বার কি চার সোনা নিয়ে দেশে ফিরবেন বাইলস। যে ভাবে যোগ্যতা অর্জন পর্বেই তিনি ডানা মেললেন তাতে কিন্তু সেই ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy