Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Mohanbagan

গর্বের উৎসবে কুরুচির ছিটে, ‘মোহনবাগানি’ ভিডিয়োয় বিতর্ক

এটা তো কলকাতা ফুটবলের ছবি হতে পারে না। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের মধ্যে রেষারেষি, ব্যঙ্গ বিদ্রুপ থাকবে। থাকবে মিঠে কড়া সম্পর্ক। কিন্তু পুরোটাই থাকবে শালীনতার মোড়কে।

বিতর্কের কেন্দ্রে যে ঘটনা। নিজস্ব চিত্র।

বিতর্কের কেন্দ্রে যে ঘটনা। নিজস্ব চিত্র।

কৃশানু মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২০ ২০:০০
Share: Save:

সকালটা শুরু হয়েছিল বেশ উৎসবমুখর ভাবেই। রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশ জানান দিচ্ছিল বাঙালির বছরের সেরা উৎসব আসন্ন। করোনা অতিমারিকে হারানোর বড় চ্যালেঞ্জ এ বারের শারদীয়ায়। তার আগেই ফুটবল ময়দানে উৎসবের বোধন ঘটে গেল। বাইপাস সংলগ্ন পাঁচতারা হোটেলে সকাল সকালই পৌঁছে গিয়েছিলাম। সেখানেই সরকারি ভাবে মোহনবাগানের হাতে আই লিগ ট্রফি তুলে দেওয়া হল।

দুর্গাপুজোর আগে শেষ রবিবার। তার উপর ট্রফি প্রদান করে সরকারি ভাবে সিলমোহর বসিয়ে দেওয়া ২০১৯-’২০ মরসুমের চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান। সমর্থকদের স্রোত নেমেছিল বাইপাস সংলগ্ন এলাকায়। বহু দিন পর যুবভারতী সংলগ্ন এলাকায় প্রাণের ছোঁয়া। বড় ম্যাচ হলে এই ছবিই তো দেখা যায়। সুরে বাঁধা খেলার ছড়া আর প্রিয় দলের জন্য আবেগের ভুভুজেলা বুকে নিয়ে শয়ে শয়ে সমর্থক। দেখে মন উৎফুল্ল হয়ে গিয়েছিল। এটাই তো বাংলা ফুটবলের পরিচিত আবেগ।

মোহনবাগান এ বারই এটিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে খেলতে নামবে আইএসএলে। প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলও নতুন ইনভেস্টরদের সঙ্গী করে দেশের সেরা লিগ খেলবে। দুই দলের সমর্থকের কাছেই এই মরসুম অনেক পাওয়ার বার্তা নিয়ে আসছে। এর মধ্যেই আই লিগের 'হোমকামিং' সবুজ মেরুন তাঁবুতে। উৎসাহ আর আবেগ তো থাকবেই!

ট্রফি পাওয়ার পরই মোহন জনতা শহর পরিক্রমায় বেরিয়েছিল। বাইপাস, উল্টোডাঙ্গা, মানিকতলা, শ্যামবাজার হয়ে যখন বিধান সরণিতে মিছিলের ঢেউ, তখনই 'দৃশ্য'টা দেখলাম। সবুজ-মেরুন স্রোতে যেন মিশে গিয়েছে লাল-হলুদ রং। আহা, এই মিশে যাওয়া রঙের নামই তো কলকাতা ফুটবল। অতীতের ঐতিহ্য ধরেই পরম্পরার সেই হাইওয়ে এখনো অক্ষত। কোনও বিদ্বেষ ছোঁয়নি সেই সনাতনী ইতিহাসে।

কিন্তু যা ভাবলাম তাই কি! ভিড়ে মিশে থাকা এই লাল-হলুদ রং তো সম্মানের পতাকা নিয়ে এগোচ্ছে না। কাশী বসু লেনের কাছে গিয়ে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হল। এ তো মিলনান্তক ছবি একেবারেই নয়। দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে কোথায় সম্প্রীতি! উৎসবের পরিবেশ যেন কলুষিত করছে লাল-হলুদ রংকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে। এই ঘটনার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। এটা তো কলকাতা ফুটবলের ছবি হতে পারে না। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের মধ্যে রেষারেষি, ব্যঙ্গ বিদ্রুপ থাকবে। থাকবে মিঠে কড়া সম্পর্ক। কিন্তু পুরোটাই থাকবে শালীনতার মোড়কে। প্রিয় দলের জন্য আবেগের চিরন্তন শিরশিরানিতে অবশ্যই পড়শি ক্লাবের জন্য বিদ্বেষের বাষ্প থাকবে না। এমনটাই তো দেখে এসেছে কলকাতার ফুটবল। তবে কেন এমন রুচিহীনতা। তা-ও আবার এমন এক গৌরবের মুহূর্তে।

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তা শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত তো সব শুনে হেসেই ফেললেন। তিনি এই ঘটনাকে সামাজিক অবক্ষয়ের পরিচায়ক বলেই মনে করছেন। ফোনে নিরুদ্বিগ্ন গলায় বললেন, “বর্তমান সমাজের অবক্ষয়কেই আসলে ফুটিয়ে তুলেছে এই ঘটনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় আগমনের পরে একে অন্যকে হেয় করার যে ট্রেন্ড চলছে, এটা তারই একটা অংশ। তবে আমি এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। যাঁরা এমন করলেন তাঁরা মোহনবাগান ক্লাবকে সঠিক ভাবে প্রতিনিধিত্ব করেন না। মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হলে জ্যোতিষদা আগে মিষ্টি পাঠাতেন। তেমন ভাবে সৌজন্য বজায় রাখতেন অন্য মোহনবাগান কর্তারাও। আজ যেটা দেখলাম সেটা সার্বিক ভাবে মোহনবাগানের সংস্কৃতি নয়।”

দলের সমর্থকদের এমন কীর্তিতে আবার প্রচণ্ড ব্যথিত মোহনবাগানে ১১ বছর খেলা প্রাক্তন ফুটবলার কম্পটন দত্ত। ফোনে আনন্দবাজার ডিজিটালকে সমর্থকদের কার্যত বিঁধে বলে দিলেন, “মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এতে সমর্থকরা আনন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আনন্দের মধ্যেই পড়শি ক্লাবকে নিয়ে এমন কটাক্ষের কারণ কী! খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাঠের ৯০ মিনিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক না! মাঠের লড়াইয়ের বাইরে তো আমরা বন্ধু হতেই পারি।”

আরও পড়ুন: আইলিগ হাতে নিয়ে আইএসএল-এর আগমনী, শহর আজ সবুজ-মেরুন

আরও পড়ুন: আট মাস পর ট্রফি, ঐতিহাসিক লিগ জয় নিয়ে আবেগে ভাসছেন মোহন সমর্থকরা​

উৎসবের আবহ। কত স্বপ্ন মিশে থাকে এই মিছিলে। কত না পাওয়ার যন্ত্রণা নিমেষে ফুরিয়ে যায় এমন মিছিলে হাঁটলে। তবু যেন তাল কাটে এ রকমই কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনায়। নতুন লক্ষ্যে এগিয়ে চলুক দুই ক্লাব। মাঠের লড়াই মাঠেই থাকুক। মাঠের বাইরে থাকুক পারস্পরিক শ্রদ্ধা।

অন্য বিষয়গুলি:

Mohanbagan I League Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy