হাতে ব্যাট-বল হোক বা মাইক, সমান স্বচ্ছন্দ ছিলেন অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি। —ফাইল চিত্র
বেনোর মাইক থেকে
মর্নিং এভরিওয়ান!
কনফেকশনারি স্টলে সোজা ঢুকে আবার বেরিয়ে গেল!
গ্লেন ম্যাকগ্রা আউট ২ রানে,
সেঞ্চুরি থেকে মাত্র আটানব্বই রান দূরে!
আমাদের দেশের আর পাঁচ জন ক্রিকেট ভক্তের মতো আমিও বড় হয়েছি অস্ট্রেলিয়া থেকে ক্রিকেটের সম্প্রসারণ দেখে। যখন টিনএজার ছিলাম, তখন অস্ট্রেলিয়া থেকে লাইভ ম্যাচ দেখানোর ব্যাপার থাকলেই আমি বসার ঘরে একা শুতাম। পরের দিন ভোরবেলা উঠতে হবে যে! দুটো সোফা সেটের মধ্যিখানে দিনের বেলা একটা সেন্টার টেবল রাখা থাকত। রাতে ওটা সরিয়েই সুন্দর বিছানা করে নিতাম। আমাদের সময়ে ভোর সাড়ে পাঁচটায় ম্যাচ শুরু হত কিংবদন্তি রিচি বেনোর ‘মর্নিং এভরিওয়ান’ শুভেচ্ছা দিয়ে। ওই কথাটা আর কোনও দিন শুনতে পারব না। শুক্রবার আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন মিস্টার বেনো।
চ্যানেল নাইন, মানে তখনকার সময়ের ওয়াইড ওয়ার্ল্ড অব স্পোর্টসে রিচি বেনো মানে রুপোলি কিন্তু দারুণ স্টাইলিশ চুল, শুকনো ইয়ার্কি-ঠাট্টা, যতটা সম্ভব কম শব্দে ম্যাচের বর্ণনা দেওয়া আর সেই বিখ্যাত ক্রিম রঙের জ্যাকেট। আমি কোনও দিন ওঁর খেলা দেখিনি। কিন্তু নেতৃত্ব নিয়ে ওঁর ভাবনা শুনে ক্রিকেট মাঠে উনি কী করতে পারতেন, সেটা বুঝতে সমস্যা হয়নি। মনে আছে এক বার উনি বলেছিলেন, ‘‘ক্যাপ্টেন্সি হল নব্বই শতাংশ ভাগ্য আর দশ শতাংশ স্কিল। কিন্তু ঈশ্বরের দোহাই, ওই দশ শতাংশ ছাড়া ব্যাপারটা করতে চেষ্টা কোরো না।’’ মনে হয় কোনও একটা অ্যাসেজের সময় কথাটা বলেছিলেন। ওই সময় অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক মার্ক টেলরের বেশ ভাল সময় যাচ্ছিল। মনে হচ্ছে উনিই বেনোর মন্তব্যের বিষয় ছিলেন।
আজকাল যখন কলকাতা নাইট রাইডার্সকে নেতৃত্ব দিই, মাঝে মাঝেই মিস্টার বেনোর কথাগুলো মনে পড়ে। হ্যাঁ, মাঠে সত্যিই ভাগ্যের দরকার। কিন্তু কোনও কোনও সময় ঝাঁপিয়ে পড়ে সব কিছু করলে নিজেই নিজের ভাগ্য তৈরি করা যায়। মিস্টার বেনো, আপনাকে স্মৃতিগুলোর জন্য ধন্যবাদ। মনে হয় চ্যানেল নাইনের কমেন্ট্রি বক্স কোনও দিন আগের মতো থাকবে না। কোনও দিন না।
যাই হোক, ম্যাচের কথায় আসি। আজ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সেরা খেলাটা খেলতে হবে। আমি সব সময় মনে করি, বিরাট কোহলির এই টিমটা খুব শক্তিশালী। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরাও। বিরাট ছাড়াও ওদের কাছে আছে এবি ডে’ভিলিয়ার্স নামক এক জাদুকর। আমার মনে হয় এবিই হবে আমাদের প্রধান টার্গেট। ওকে আউট করতেই হবে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচটা জেতার পর আমাদের আত্মবিশ্বাসও কিন্তু খুব ভাল জায়গায় আছে।
ভাবলে অবাক লাগে, দারুণ একটা জয়ের পরে প্র্যাকটিস সেশনও কত মজাদার হয়ে যায়। শুক্রবার সে রকম একটা দিন ছিল। যে দিন সবাই পড়েছিল আমার পা-দুটো নিয়ে। হ্যাঁ, একদম সত্যি কথা বলছি। ব্যাপারটা শুরু করেছিল ইউসুফ পাঠান। ও কী বলল জানেন? বলল, আমি নাকি খুব রোগা হয়ে গিয়েছি। আমার এই নতুন ‘লুক’ নাকি যে কোনও মহিলা মডেলের ব্যবসায় ভাগ বসিয়ে দেবে। কথাটা প্রশংসা হিসেবে নিতে যাব কী, দেখি সবাই হাসছে! এটা আবার কোনও জোক নাকি? যাই হোক, কিছু করার ছিল না। ইউসুফের কথা শুনে একটু লজ্জা পেলাম আর কী! কিন্তু ড্রেসিংরুম যদি এ রকমই মজায় ভরে থাকে, তা হলে এ সব ইয়ার্কি-ঠাট্টাও মেনে নিতে আমি রাজি।
তবে হ্যাঁ, ইউসুফকে আমি ঠিকই পাল্টা দিয়েছি। কী ভাবে? ওর প্রিয় ব্যাটটা লুকিয়ে রেখেছি। আমার ব্যাটগুলোর তো এখন সময়টা ভাল যাচ্ছে না। ভাবছি আজ ওর ব্যাট নিয়ে নামব। দেখি ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়। মাঝে মাঝে ভাবার চেষ্টা করছি, আমার ব্যাট-ভাঙা পর্বটা মিস্টার বেনো কী ভাবে বর্ণনা করতেন? নিশ্চয়ই ওঁর নিদারুণ ঠাট্টা মেশানো কিছু একটা বলতেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy