জীবন তখন মসৃণ। হিউজকে নিয়ে ওয়ার্নার। —ফাইল চিত্র
নিউ সাউথ ওয়েলসের জুনিয়র ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ফিলিপ হিউজের বিপক্ষ টিমের সদস্য ছিলেন জশ হ্যাজলউড। অনূর্ধ্ব-১৭ কার্নিভালের সেই ম্যাচও শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় প্রচণ্ড স্বস্তি পেয়েছিলেন অস্ট্রেলীয় পেসার। কারণ পিঠোপিঠি দুটো সেঞ্চুরি করে হিউজ তখন দুরন্ত ফর্মে। কিন্তু নভেম্বরের যে মর্মান্তিক দিনে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাউন্সারের আঘাতে শুয়ে পড়েন ফিল হিউজ, সে দিন মাঠে ছিলেন না তরুণ হ্যাজলউড। তবু তাঁর মনে হচ্ছে, সিডনিতে সিরিজের চতুর্থ এবং শেষ টেস্ট খেলতে নামার সময় হিউজের ভাবনা তাঁর মনে ঘুরেফিরে আসবে। তাঁর আরও মনে হচ্ছে, যাঁরা সে দিন হিউজ-ট্র্যাজেডির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, জাতীয় দলের সেই চারের পক্ষে এই টেস্টটা আরও বেশি কঠিন। সেই চার জন— ব্র্যাড হাডিন, ডেভিড ওয়ার্নার, শেন ওয়াটসন এবং নাথন লিয়ঁ।
“এই টেস্টটা সবার জন্যই কঠিন। কিন্তু ওই চার জনের কাছে কঠিনতম। ব্রিসবেন আর মেলবোর্নে খেলার সময় ব্যাপারটা থেকে কিছুটা দূরে ছিলাম, ক্রিকেটের উপর বেশি ফোকাস ছিল। কিন্তু এসসিজিতে ট্রেনিং শুরু করতেই অনুভূতিগুলো ফিরে এল,” বলেছেন হ্যাজলউড। সিডনি ড্রেসিংরুমে প্রয়াত সতীর্থের চিরস্থায়ী অবস্থানও অস্ট্রেলীয় টিমকে তাঁর কথা বারবার মনে পড়িয়ে দেবে। মেম্বার্স প্যাভিলিয়নের দরজার উপর থাকবে হিউজের প্রতি স্মারক। টেস্ট ম্যাচ চলাকালীনও থাকবে তাঁর স্মৃতি ঘিরে নানা অনুষ্ঠান। যা শুনে ওয়ার্নার আগেই বলে দিয়েছেন, এই টেস্টটা তাঁর জীবনের কঠিনতম হতে চলেছে। “চেষ্টা করব সিডনি টেস্টকে আর পাঁচটা টেস্টের মতো দেখার, মন থেকে সব আবেগ সরিয়ে ফেলার,” বলছেন হ্যাজলউড।
হিউজ-আবেগ সরিয়ে ফেলা যাবে কি না, তা নিয়ে হাডিন কিন্তু মোটেও নিশ্চিত নন। প্রয়াত সতীর্থের নাম শুনলে এখনও নিজেকে সামলাতে একটু সময় লেগে যায় তাঁর। “সিডনি টেস্ট আমি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করতাম। এটাই আমার কাছে বিশ্বের সেরা ক্রিকেট মাঠ। কিন্তু এ বার কী হবে, সত্যিই জানি না। মাঠে না নামা পর্যন্ত বুঝতেও পারছি না। হিউজ তো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবেই। আমাদের সবার জীবনের এত বড় অংশ ছিল ও। জানি না কী বলব...” কথাই শেষ করতে পারেননি হাডিন।
সিডনি টেস্টে খেলবেন কি না, জানেন না পিটার সিডল। কিন্তু তিনিও সিডনি নিয়ে সমান আবেগে ডুবে। “ব্রিসবেন টেস্টের সময় সিডনিতে গিয়েছিলাম বিগ ব্যাশ খেলতে। মাঠে হেঁটে যেতেই তো প্রথমে অসুবিধে হচ্ছিল। খেলা তো দূরের কথা। সিডনি টেস্ট যে কতটা কঠিন হতে চলেছে, আমরা সবাই জানি,” বলে সিডল যোগ করেছেন, “আসলে টেস্ট শুরুর আগের সময়টাই সবচেয়ে কঠিন। তবে টিমের একতা ব্যাপারটাকে সহনীয় করে তুলবে মনে হয়। আমরা সবাই একে অন্যের বন্ধু, তাই একসঙ্গে গত কয়েক সপ্তাহ লড়তে পেরেছি। ম্যাচটা শুরু হোক, হিউজের স্মৃতিতে আমরা দারুণ একটা লড়াই দেব।”
মিচেল জনসন, যিনি এখন পর্যন্ত সিরিজের প্রধান স্লেজার হিসেবে বেশি শিরোনাম দখল করেছেন, তিনিও এই প্রসঙ্গে যেন অচেনা জনসন, “ফিলকে হারানোর কয়েক দিনের মধ্যে একটা সিরিজ খেলতে নামতে পারব, সেটা নিয়েই তো অনিশ্চয়তা ছিল। সিডনি খুব কঠিন হবে। ফিল চলে যাওয়ার পর ওই মাঠে এখনও পা দিইনি। জানি না কী হবে।”
শুনে কে বলবে, এই টিমটাই সিরিজ পকেটে পুরে নিয়মরক্ষার টেস্ট খেলতে নামছে সিডনিতে। আবেগের বিরুদ্ধে সিরিজটা যে অনেক আগেই হেরে বসেছে অস্ট্রেলিয়া!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy