উমেশ ৩-৪৮। ভারতকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। ছবি: গেটি ইমেজেস।
দ্বিতীয় দিনের শেষে ব্রিসবেন টেস্টে বেশ জাঁকিয়ে বসতে পেরেছে ভারত। চাপটা পরের তিন দিনও ঠিকঠাক বজায় রাখতে পারলে টেস্ট জিতে সিরিজে সমতা ফেরানোর দারুণ সুযোগ ভারতের সামনে। তবে মনে রাখতে হবে গোটা ম্যাচে এখনও অনেক ক্রিকেট খেলা বাকি। ভারতকে কিন্তু রাশ আলগা করলে চলবে না।
আরও এক বার মুরলী বিজয়ের ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হলাম। ছেলেটা ক্রমশ ভারতীয় ব্যাটিংয়ের নির্ভরযোগ্য স্তম্ভ হয়ে উঠছে। টেকনিকের দিক থেকে বিজয় একদম নিখুঁত। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, অসম্ভব বুদ্ধিমান ক্রিকেটার, ব্যাটিংটা মাথা খাটিয়ে করে। আর যে ভাবে দায়িত্ব নেওয়া শুরু করেছে তাতে ভবিষ্যতে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের অন্যতম শক্তি আর নির্ভরতার জায়গা হয়ে উঠবে বিজয়। আমি ওকে নিয়ে বাড়তি আশাবাদী আরও একটা কারণে। ঘরের মাঠে রান করার পাশাপাশি বিজয় অ্যাওয়ে সিরিজেও নিয়ম করে রান করছে। এটা অবশ্যই বড় ব্যাটসম্যানের লক্ষণ।
গাব্বায় অস্ট্রেলীয় বোলারদের গরমে ক্র্যাম্প করে যেতে দেখে কিন্তু বেশ আশ্চর্যই হলাম। এদের প্রত্যেকের বয়স বেশ কম। তার উপর অস্ট্রেলিয়া ছ’জন বোলার খেলাচ্ছে। ফলে কারও উপর বাড়তি চাপ তৈরি হওয়ার কথা নয়। তা-ও ওদের গরমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারাটা অবাক করা। অস্ট্রেলিয়ার সমস্যা অবশ্য শুধু গরম নয়। টেস্টের প্রথম দিন দলের অন্যতম স্ট্রাইক বোলার মিচেল জনসনের ফর্মও টিম ম্যানেজমেন্টের দুশ্চিন্তার কারণ হতে বাধ্য। এমন নয় যে জনসনের গতি কমেছে। কিন্তু বলটা কিছুতেই ঠিক জায়গায় রাখতে পারছে না। লাইন-লেংথ নিয়ে সমস্যায় পড়ছে। আমার মতে, অস্ট্রেলিয়ার দু’জন বাঁ-হাতি পেসার খেলানোর স্ট্র্যাটেজিটা খাটছে না। ভবিষ্যতে ওদের কিন্তু এটা নিয়ে ভেবে দেখতে হবে।
অন্য দিকে, ভারত শেষ নব্বই রানে আবার একগাদা উইকেট দিয়ে এল। সেটা না হলে বোর্ডে ৪০৮-এর বদলে আরও বড় রান তোলা যেত। কারণ ভারতের শুরুটা যা হয়েছিল, তাতে স্বচ্ছন্দে প্রথম ইনিংসেই রানের বিশাল পাহাড় গড়ে তার তলায় চেপে ধরা যেতে পারত অস্ট্রেলিয়াকে। সেটা হলে ওদের ইনিংস হারের দিকে ঠেলে দেওয়া যেত। অবশ্য এখনও যা রান উঠেছে প্রথম ইনিংসের টোটাল হিসাবে সেটা মন্দ নয়। বিশেষ করে গাব্বার পিচে টস জিতে আগে ব্যাট নেওয়ার পর।
এই টেস্টে উমেশ যাদবকে বোলিং আক্রমণে ফেরানো ভারতের একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় দিন তিন উইকেট তুলে নিয়ে সেটা ও প্রমাণ করে দিয়েছে। শুক্রবার সকালের প্রথম দু’টো ঘণ্টা এখন ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম সেশনে উইকেট নিতে পারলে অস্ট্রেলিয়ার উপর চাপ বজায় রাখা যাবে। আর সেটা করে দেখানোর জন্য তৃতীয় দিনও উমেশের দিকে তাকিয়ে থাকবে দল।
তবে জিততে চাইলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দ্বিতীয় ইনিংসেও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে হবে। গাব্বা পিচের চরিত্র এমনই যে টেস্টের চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে গতি আর বাউন্সের তেমন খুব একটা হেরফের হয় না। তাই শেষ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার দশটা উইকেট নেওয়ার মতো সময় যাতে হাতে থাকে, সেটা মাথায় রেখে ভারতকে ব্যাট করতে হবে।
নিজেদের লড়াকু চরিত্রটা টেনে বার করে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে অস্ট্রেলিয়া দারুণ ভাবে পাল্টা চাপে ফেলেছিল ভারতকে। সিরিজে ভেসে থাকার জন্য শুক্রবার সকালে ভারতকেও কিন্তু সেই একই রকম খিদে নিয়ে ঝাঁপাতে হবে।
ভারত
প্রথম ইনিংস
(আগের দিন ৩১১-৪)
রাহানে ক হাডিন বো হ্যাজেলউড ৮১
রোহিত ক স্মিথ বো ওয়াটসন ৩২
ধোনি ক হাডিন বো হ্যাজেলউড ৩৩
অশ্বিন ক ওয়াটসন বো হ্যাজেলউড ৩৫
উমেশ ক রজার্স বো লিয়ঁ ৯
অ্যারন ক অতিরিক্ত (লাবুসচ্যানে) বো লিয়ঁ ৪
ইশান্ত ন.আ. ১
অতিরিক্ত ৮
মোট ৪০৮।
পতন: ৫৬, ১০০, ১৩৭, ২৬১, ৩২১, ৩২৮, ৩৮৫, ৩৯৪, ৪০৭।
বোলিং: জনসন ২১-৪-৮১-০, হ্যাজেলউড ২৩.২-৬-৬৮-৫,
স্টার্ক ১৭-১-৮৩-০, মিচেল মার্শ ৬-১-১৪-১, লিয়ঁ ২৫.৪-২-১০৫-৩,
ওয়াটসন ১৪.৪-৬-৩৯-১, ওয়ার্নার ১-০-৯-০, স্মিথ ১-০-৪-০।
অস্ট্রেলিয়া
প্রথম ইনিংস
রজার্স ক ধোনি বো উমেশ ৫৫
ওয়ার্নার ক অশ্বিন বো উমেশ ২৯
ওয়াটসন ক ধবন বো অশ্বিন ২৫
স্মিথ ব্যাটিং ৬৫
শন মার্শ ক অশ্বিন বো উমেশ ৩২
মিচেল মার্শ ব্যাটিং ৭
অতিরিক্ত ৮
মোট ২২১-৪।
পতন: ৪৭, ৯৮, ১২১, ২০৮।
বোলিং: ইশান্ত ৯-০-৪৭-০, অ্যারন ১২-১-৫৯-০,
উমেশ ১৩-২-৪৮-৩, অশ্বিন ১৮-৩-৬৬-১।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy