Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

ছৌ-নাচে মেয়েরা, প্রসারিত হচ্ছে বৃত্ত

লোক-গবেষকদের একাংশের মতে, ছৌ মূলত বীররসের নাচ। শারীরিক কসরতও লাগে। বিশেষ করে পরপর ডিগবাজি খাওয়া বা ‘উলফা’ এই নাচের একটা বিশেষ অথচ অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

শিল্পী: চেলিয়ামা গ্রামে চলছে প্রশিক্ষণ। ছবি: সঙ্গীত নাগ

শিল্পী: চেলিয়ামা গ্রামে চলছে প্রশিক্ষণ। ছবি: সঙ্গীত নাগ

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:৫৯
Share: Save:

মুখোশ, শাড়ি পরে দুর্গা, কালী, সরস্বতীর সাজে ছৌ-নাচের আসর জমাতেন যাঁরা, তাঁরা পুরুষ। এ রীতি এখন ইতিহাস। বিশিষ্ট ছৌশিল্পী গম্ভীর সিং মুড়ার জেলা পুরুলিয়ায় এ বার ছৌ-এর আসরে পুরুষদের টক্কর দিতে চলেছেন মেয়েরা। ইতিমধ্যেই পুঞ্চায় মহিলাদের একটি দল অনুষ্ঠান করছে। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের বিসি গার্লস স্কুলের কন্যাশ্রীরাও ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ পালার মহড়ায় ব্যস্ত।

লোক-গবেষকদের একাংশের মতে, ছৌ মূলত বীররসের নাচ। শারীরিক কসরতও লাগে। বিশেষ করে পরপর ডিগবাজি খাওয়া বা ‘উলফা’ এই নাচের একটা বিশেষ অথচ অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বরাবাজারের প্রবীণ ছৌ-শিল্পী দেবীলাল কর্মকারের কথায়, ‘‘মনে করা হত, শারীরিক সক্ষমতার জন্য শুধু বেটাছেলেরাই ছৌ নাচতে পারে। মেয়েরা অতটা ধকল নিতে পারবেন না ভেবে তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখা হত। কিন্তু এখন ধারণা বদলাচ্ছে। এটা ভাল।’’

ইতিমধ্যে নিজের দুই মেয়ে-সহ আরও চারটি মেয়েকে নিয়ে ছৌ-এর দল গড়েছেন পুঞ্চার শিল্পী জগন্নাথ চৌধুরী। বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করছেন তাঁরা। তাঁর মেয়ে ছৌ-শিল্পী মৌসুমী চৌধুরীর কথায়, ‘‘সুযোগ পেলে মেয়েরাও যে ছৌ নাচতে পারে, আমরা দেখিয়ে দিচ্ছি।’’ পুরুলিয়ায় এখন ছৌ-এর অন্তত তিন-চারটি দল রয়েছে মেয়েদের।

তবে, বিসি গার্লস হাইস্কুলের কন্যাশ্রীদের ছৌ-দল গড়া ততটা মসৃণ ছিল না। প্রধান শিক্ষিকা চৈতালি মজুমদার বলেন, ‘‘ছৌ-নাচের ভবিষ্যৎ রয়েছে। তাই সাধারণ নাচের বদলে ছাত্রীদের ছৌ-এর প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ভাবি। কিন্তু, যে কোনও কারণেই হোক অনেক মেয়েই পিছিয়ে যায়। শেষে হস্টেলের আবাসিক কন্যাশ্রী প্রকল্পের জনা পনেরো মেয়েকে বুঝিয়ে শুরু হয় প্রশিক্ষণ।’’

গত বছর ওই স্কুল থেকে কন্যাশ্রীদের একটি দল প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারা ‘মহিষাসুরমর্দিনী’, ‘কিরাত-অর্জুন’, ‘গণেশের দন্তভঙ্গ’ পালায় তালিম নিয়েছে। কিছু জায়গায় মঞ্চস্থও করেছে। মাসখানেক ধরে আরও একটি দলের প্রশিক্ষণ চলছে স্থানীয় সগড়কা গ্রামে লোক গবেষক সুভাষ রায়ের লোক-সংস্কৃতি কেন্দ্রে। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘মেয়েদের নিয়ে ছৌ-এর দল তৈরির ইচ্ছা ছিলই। স্কুলের প্রস্তাব লুফে নিয়েছি।’’ স্কুল ছুটির পরে ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ছৌ-শিল্পী শান্তিরাম মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘নিয়মিত অভ্যাসে মেয়েরা দক্ষতার সঙ্গেই উলফা পারছে। নাচের অঙ্গহানির প্রশ্নই ওঠে না।’’

দুর্গার মুখোশ পরা বিউটি মাহাতো, গণেশ রূপী রূপালি মাহাতো, অসুরের সাজে সীমা বাউরিরা বলল, ‘‘ছৌ-নাচ ভাল লাগত। কিন্তু নিজেরাই যে ছৌ-নাচব, ভাবিনি।’’ প্রধান শিক্ষিকা জানান, চলতি মাসে কলকাতায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ পালা করার ডাক পেয়েছে কন্যাশ্রীরা। মহিষাসুর বধ হল বলে।

অন্য বিষয়গুলি:

Chhau Dance girls Training
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE