শহরে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার ওপর ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনার স্তূপ।
শিলিগুড়ি কলেজের ঠিক পিছনের সীমানা দেওয়াল ঘেঁষা রাস্তা। বেলা ১২টাতেও দু’টি জঞ্জালের ভ্যাট উপচে পড়ছে রাস্তায়। বাড়ি বাড়ি থেকে সাফাইওয়ালারা আরও নোংরা এনে জমা করছেন তাতে। এলাকাটি ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে। তার ঠিক পাশের ১৬ নম্বরেরও একই ছবি। পুরানো আবহাওয়া দফতর লাগোয়া রোড বা বিবেকান্দ স্কুল লাগোয়া এলাকার ওই একই দশা। পাশের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থাও শোচনীয়। উদয়ন সমিতি লাগোয়া মোড়ে জঞ্জালের স্তূপের কারণে নাকে রুমাল চেপে যাতায়াত করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বুদ্ধদেব বসু রোডেও জঞ্জাল। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে শিলিগুড়ি সংশোধনাগারের দেওয়ালে দুপুর অবধি দেখা গিয়েছে জঞ্জালের স্তূপ।
একই অবস্থা হাকিমপাড়া, আশ্রম পাড়া, ডাবগ্রাম, সুভাষপল্লি, প্রধাননগর, মিলনপল্লি, শক্তিগড় সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বৃহস্পতিবার বিকেল অবধি শিলিগুড়ি শহরের রাস্তাঘাটের দশা ছিল এমনই বেহাল। বাসিন্দাদের অনেকেরই বক্তব্য, “২০১১ সালে শিলিগুড়ি পুরসভার প্লাস্টিক ক্যারিবাগ বন্ধ এবং পরিবেশ সচেতনতার জেরে পুরস্কার পায়। মাত্র তিন বছরের মধ্যে সেই শহরের এই অবস্থা হবে, তা ভাবাই যাচ্ছে না।”
শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা হিলকার্ট রোড, বর্ধমান রোড বা বিবেকানন্দ রোড বেলা ১টার পরেও জঞ্জাল সরেনি। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওভারব্রিজের নিচে বা গর্ভমেন্ট স’মিলের সামনে জঞ্জালের স্তূপ। একইভাবে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কেদারমাঠ লাগোয়া এলাকায় দুপুর অবধি জঞ্জালের পাহাড়। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের গত তিনদিন ধরে চার্চ রোডের মোড়ে জমা জঞ্জালে দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়েছেন বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের। তবে কিছু কিছু এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে আবার কাউন্সিলরেরা দাবি করেছেন।
২০ মে পুরবোর্ডে ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসের মেয়র সর্পাষদ পদত্যাগ করেছেন। বর্তমানে রাজ্য সরকারের নির্দেশ পুর কমিশনার সোনাম ওয়াংদি ভুটিয়া পুরসভার রোজকার কাজকর্ম দেখভাল করছেন। পুর কমিশনার বলেন, “যে সমস্ত এলাকা থেকে অভিযোগ মিলছে, সেখানে ২-৩ বার ময়লা গাড়ির ডিউটি করতে বলা হয়েছে।”
পুরসভা সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি শহরে প্রতিদিন ৪০০ মেট্রিক টনের উপর জঞ্জাল জমা হয়। পুজো-সহ নানা অনুষ্ঠানে পরিমাণ বেড়ে ৪৫০ টন ছাড়িয়ে যায়। শহরের পুরসভার তালিকাভুক্ত ১১টি বাজারে এ দিন দুপুর অবধি নোংরা সাফাই করা হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। তা ছাড়া পুরসভার ময়লা ফেলার গাড়ি ভাড়া নভেম্বর মাস থেকে বকেয়া থাকায় সমস্যা বেড়েছে। গাড়ি মালিকদের পক্ষে সুব্রত ভৌমিক অবশ্য বলেছেন, “আমরা অক্টোবর মাসের পর টাকা পাইনি। প্রায় দেড় কোটি টাকা বকেয়া। তবুও সরকারি নির্দেশ মেনে সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি।”
প্রাক্তন মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক জানান, তাঁদের সময়ে সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে শহর পরিষ্কার হত। রাস্তা ধোওয়া হত। তাঁর অভিযোগ, “এখন কিছুই হচ্ছে না। জঞ্জালে শহর ছেয়ে যাচ্ছে। এখন তো পুরসভার রাজ্য সরকারে নিয়ন্ত্রণে। তাঁরা কী করছেন বোঝা যাচ্ছে না।” আরেক প্রাক্তন মেয়র পারিষদ স্বপন চন্দ মনে করেন, ভোর থেকে কোনও নজরদারি হচ্ছে না বলেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
বিরোধীদের বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গৌতম দেব। তিনি বলেন, “বিরোধীদের কথায় আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমরা কাজ করে কথা বলায় বিশ্বাসী। জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ হচ্ছে। কোথাও ফাঁক থাকলে তা দেখা হবে। ৭ জুনের পর পুরসভা নিয়ে বৈঠক হবে। আর কমিশনারকে বলা হয়েছে। তিনি কোথাও সমস্যা হলে দেখবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy