আদিত্য-এল১ উৎক্ষেপণের মুহূর্ত। ছবি সৌজন্যে: ইসরো।
কলকাতা থেকে মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলেন আইসারের দিব্যেন্দু নন্দী।
সূর্য তখন মধ্যগগনে। আদিত্যকে নিয়ে পিএসএলভি রকেট প্রবল গর্জন করে উড়ে যেতেই শ্রীহরিকোটায় কন্ট্রোল রুমে মিষ্টি বিলি করলেন আইসার কলকাতার ‘সেন্টার অব এক্সসেলেন্স ইন স্পেস সায়েন্স, ইন্ডিয়া’র বিভাগীয় প্রধান দিব্যেন্দু।
পৃথিবী থেকে সূর্যের দিকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার এগিয়ে গিয়ে ভারতের প্রথম সৌরযান ‘আদিত্য-এল ওয়ান’ যা দিয়ে সৌরকলঙ্কের ছবি তুলতে শুরু করবে, সেই সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ (সংক্ষেপে ‘সুট’) তৈরির সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন দিব্যেন্দু। পুণেতে ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স (সংক্ষেপে ‘আয়ুকা’) তৈরি করেছে সেই টেলিস্কোপ।
শনিবার দুপুরে ফোনে দিব্যেন্দু বলেন, “রকেট ছাড়ার মিনিটখানেক আগে আমরা বেশ কয়েক জন কন্ট্রোল রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় চলে যাই। উৎক্ষেপণের আগে সেই ঝমঝম আওয়াজ, চারদিকে সব কিছু কাঁপছে, অভাবনীয় অনুভূতি। সূর্য প্রায় মাথার উপরে। রকেট উড়ে গেল সোজা, যেন সটান সূর্যের দিকেই চলেছে!”
অনেক দূরে, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে ফিজি-তে টেলিমেট্রি স্টেশনের ‘শিপ বোর্ন টার্মিনাল’-এ বসে তখন আদিত্যের যাত্রাপথ ‘ট্র্যাক’ করতে শুরু করেছেন বরুণ বিশ্বাস আর তাঁর ইসরোর সহকর্মীরা। এর আগে চন্দ্রযান ৩-কে চাঁদের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার পরে আদিত্যের চলার পথে নজরদারি করার দায়িত্বে আছেন যাঁরা, বরুণেরা তাঁদের অন্যতম। ইসরোর এ রকম পাঁচটি দল যথাক্রমে শ্রীহরিকোটা, আন্দামান, ব্রুনেই, ফিজি এবং লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে নজরদারি চালাচ্ছে, যাতে আদিত্য কখনও নির্ধারিত কক্ষপথ থেকে সরে গেলে, তা শুধরে দেওয়া যায়।
বেলা একটু গড়াতেই নদিয়ার বীরনগরের কাছে কামগাছি গ্রামের বাড়িতে টিভির পর্দায় চোখ রেখে বসেছিলেন জহরলাল বিশ্বাস এবং সরস্বতী বিশ্বাস। বরুণের বাবা-মা। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে শ্রীহরিকোটা থেকে রকেট উড়তেই কপালে হাত ছোঁয়ালেন সরস্বতী। জহরলাল বলেন, “কাল রাতেও ছেলে ফোন করে বলছিল, গত কয়েক দিন কী প্রচণ্ড উদ্বেগের মধ্যে আছে ওরা। অবশেষে যাত্রা শুরু হল! এই ভাল লাগা প্রকাশ করার ভাষা আমাদের জানা নেই।”
কোচবিহার শহরের পিনাকীরঞ্জন সরকার ইসরোর যে দলে রয়েছেন, তাদের কাজ সৌরযানকে ঠিকঠাক কক্ষপথ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। গত ছ’বছর যাবৎ ইসরোয় কাজ করা পিনাকী বিকেলে শ্রীহরিকোটা থেকে ফোনে বলেন, ‘‘এখনই বলা যাবে না, আমরা সফল কি না। কারণ, ‘এল ওয়ান পয়েন্ট’ পর্যন্ত যেতে অন্তত ১২৫ দিন সময় লাগবে আদিত্যের। তবে এটা গোটা দেশের পক্ষে অত্যন্ত গর্বের বিষয়।’’
এই সৌরযান প্রকল্পে প্রযুক্তিবিদ হিসাবে যুক্ত আছেন রানিগঞ্জের সানি মিত্র। উৎক্ষেপণের পরে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘নতুন ধরনের অভিযান। অন্তিম পর্যায়ে পিএসএলভি রকেটের ইঞ্জিনকে দু’বার ‘ফায়ার’ করা হয়েছে। এই সাফল্যে আমরা দারুণ খুশি।’’ কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে ইসরোর আর এক কেন্দ্রে রয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির কৌশিক মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘এ যে কী দারুণ অনুভূতি, তা বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়।”
বীরভূমের সিউড়ি ১ ব্লকের রায়পুরের সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় এ দিন ছিলেন শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্রেই। গত কিছু দিন তিনি কাকভোরে বেঙ্গালুরুর বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন আর ফিরেছেন রাতে। এ দিন সন্ধ্যায় কলকাতার নিউটাউনের আবাসন থেকে ফোনে তাঁরা বাবা দেবদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই উৎক্ষেপণ দেশের গর্ব। ছেলে এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত বলেই আরও ভাল লাগছে। তবে এখনও ওর সঙ্গে কথা হয়নি। ও এখনও বাড়ি ফেরেনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy