অতীতে ফিরে যাওয়া নিয়ে হলিউডি ছবির পোস্টার।
ফাটা ডিম কখনও জোড়া লাগতে দেখেছেন কি? দেখেছেন কি, টেবিল থেকে পড়া চিনেমাটির প্লেট টুকরো-টুকরো হওয়ার পরে ফের অক্ষত প্লেটে পরিণত হওয়া!
প্রায় তেমনই একটা কাণ্ড ঘটিয়েছেন পদার্থবিজ্ঞানীরা। যাঁরা গবেষণা করেন ‘মস্কো ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-তে। সহযোগিতা করেছেন সুইৎজারল্যান্ড এবং আমেরিকার গবেষকেরা।
গোটা থেকে ভাঙা ডিম, চিনেমাটির প্লেট টেবিল থেকে পড়ে টুকরো হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। এটাকেই বিজ্ঞানীরা বলেন, সময়ের গতি। ভিডিয়োয় ঘটনার ক্রম দেখে আপনি বলতে পারেন, সময় ঠিক দিকে এগিয়েছে। যদি দেখেন ফাটা ডিম জোড়া লাগছে, অথবা টুকরো টুকরো জোড়া লেগে অক্ষত প্লেট হচ্ছে, তবে আপনি বুঝতেই পারেন ভিডিয়োটি রিওয়াইন্ড করে চালানো হচ্ছে।
পদার্থবিদ্যার যে শাখার নাম থার্মোডিনামিক্স বা তাপগতিবিদ্যা, তার একটা সূত্র-ই এটা। দ্বিতীয় সূত্র— যা বলছে, ব্রহ্মাণ্ড সব সময় শৃঙ্খলা থেকে বিশৃঙ্খলার দিকে এগোয়। ওই এগোনোটাই সময়ের স্বাভাবিক গতি। অতীত থেকে বর্তমান। বর্তমান থেকে ভবিষ্যৎ।
রুশ, সুইস এবং মার্কিন বিজ্ঞানীরা সময়কে ‘রিওয়াইন্ড’ করেছেন। মানে, বর্তমান থেকে অতীতে ফিরে গিয়েছেন। ওঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ জার্নালে। ওঁরা যে যন্ত্রে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তার পোশাকি নাম— ‘কোয়ান্টাম কম্পিউটার’। যে কম্পিউটার আমার-আপনার ল্যাপটপ নয়, তার চেয়ে অনেক-অনেক বেশি ক্ষমতাবান, কারণ তা কাজ করছে পদার্থবিদ্যার শাখা ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ অনুযায়ী।
কোয়ান্টামের জগৎ বড় বিচিত্র। ব্যাপারটা বোঝাতে অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী আরউইন শ্রোয়েডিঙ্গার টেনেছিলেন বেড়ালের উদাহরণ। আমাদের জগতে একটা বেড়াল হয় জীবিত, নয় মৃত, এই দুই দশার এক দশাতেই থাকতে পারে। কিন্তু কোয়ান্টামের জগতে একই বেড়াল হয়ে যায় দু’টো— একটি জীবিত, অন্যটি মৃত। আমাদের কম্পিউটার কাজ করে তথ্যের এক দশা নিয়ে, কিন্তু ‘কোয়ান্টাম কম্পিউটার’ একসঙ্গে জীবিত ও মৃত বেড়ালের মতো কাজ করে তথ্যের অনেক দশা নিয়ে। সেই জন্যই ‘কোয়ান্টাম কম্পিউটার’ আমাদের ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাবান।
এ হেন ‘কোয়ান্টাম কম্পিউটার’-এ রুশ, সুইস এবং মার্কিন গবেষকেরা তথ্যের নতুন দশা থেকে ফিরে গিয়েছেন পুরনো দশায়। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করে ওঁদের প্রধান আন্দ্রেই লেভেদভ বলেছেন, ‘‘ব্যাপারটা যেন এ-রকম: ধরুন আপনি এক গ্লাস জলে একটা কালির ফোঁটা ফেললেন। সে ফোঁটা মিশে গেল গ্লাসের পুরো জলে। কালিতে রাঙানো জল থেকে বিশুদ্ধ জল এবং কালির ফোঁটা দশায় ফেরা যায় কি? ধরে নিন, আমরা ফিরতে পেরেছি। বর্তমান থেকে অতীতে।’’
‘ব্যাক টু দ্য ফিউচার’ ছবির কথা মনে পড়ছে? যেখানে বালক হিরো ফিরে যাচ্ছে অতীতে। যখন তার মা এবং বাবা অবিবাহিত, সবে প্রেম শুরু হচ্ছে। কল্পবিজ্ঞানে ‘সময়-ভ্রমণ’ করে অতীতে ফিরে যাওয়া প্রায়ই দেখানো হয়। মজা করতে। ব্যাপারটা কি বাস্তবে সম্ভব? এক দল বিজ্ঞানী মনে করেন, ওটা অসম্ভব। কেননা, ছেলে অতীতে ফিরে গিয়ে ভেস্তে দিতে পারে বাবা ও মায়ের বিয়ে। তা হলে সে এল কী করে! এর নাম ‘ক্রোনোলজি প্রোটেকশন কনজেকচার’। ঘটনা পরম্পরায় আস্থা। তা না হলে, সমূহ গোলমাল।
রুশ, সুইস এবং মার্কিন বিজ্ঞানীরা যা করেছেন, তার মানে দাঁড়ায়— মানুষের বয়স বাড়া নয়, কমা। এমন ঘটনা কোয়ান্টামের জগতে করে দেখালেন তাঁরা।
এই জন্যই হয়তো আলবার্ট আইনস্টাইন মেনে নিতে পারতেন না ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্স’। ওঁর কাছে পদার্থবিজ্ঞানের এই শাখা ‘অদ্ভুতুড়ে’ আখ্যা পেয়েছিল। কোয়ান্টামের জগৎ সত্যিই অদ্ভুত। আরও এক বার প্রমাণ হল তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy