পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
বিস্ফোরক খুঁজতে পুলিশ-কুকুর নয়, এ বার কাজে লাগবে রাসায়নিকের অতিক্ষুদ্র কণা! চলতি ভাষায় যাকে ক্ষুদ্রাণু বা ‘ন্যানো-মলিকিউল’ বলা যায়। ক্ষুদ্রাণু দিয়ে বিস্ফোরক খোঁজার কাজ করে চলেছেন বঙ্গসন্তান পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়। যে গবেষণার জন্য এ বছরের শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কারও পেয়েছেন বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের (আইআইএসসি) রসায়ন বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক।
বিস্ফোরক হিসেবে পিকরিক অ্যাসিডের মতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। পার্থসারথিবাবুর তৈরি করা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাগুলি পিকরিক অ্যাসিড মিশ্রিত বিস্ফোরকের ক্ষেত্রে ‘সেন্সর’ হিসেবে কাজ করবে। তবে শুধু বিস্ফোরক সন্ধানেই পার্থসারথিবাবুর এই গবেষণা থেমে থাকেনি। তাঁর সহযোগীরা জানান, শরীরের মধ্যে নির্দিষ্ট কোষে ওষুধ পৌঁছে দিতে বা রোগাক্রান্ত কোষের ছবি তুলতেও এই এই খুদে কণা কাজে লাগবে। অর্থাৎ খাঁচার মতো এই ক্ষুদ্রকণাগুলি রাসায়নিককে পৌঁছে দিতে যানের কাজ করবে।
শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার বিজ্ঞান গবেষণায় দেশের সেরা স্বীকৃতি হিসেবে পরিচিত। ফি বছর ১১ জন বিজ্ঞানী সেই পুরস্কার পান। এ বার রসায়নে পার্থসারথিবাবুর পাশাপাশি জীববিদ্যায় কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজির বিজ্ঞানী শুভেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও এই পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কার পাওয়ার পরে পার্থসারথিবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুরস্কার বা স্বীকৃতির লোভে কাজ করি না। তবে শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার পাওয়া সত্যিই আনন্দের।’’
পার্থসারথিবাবু আদতে বর্ধমানের মানকরের বাসিন্দা। মানকরের রাইপুরে গ্রামের বাড়িতে এখনও পার্থসারথিবাবুর বাবা-মা থাকেন। তবে স্ত্রী দীপালি এবং ছেলে ঋতব্রত তাঁর সঙ্গে বেঙ্গালুরুতেই থাকেন। গ্রামের ছেলের এমন সাফল্যে খুশি রাইপুরবাসীও। তবে তাঁদের কাছে এই রসায়নবিজ্ঞানী কিন্তু এখনও ছোটবেলার ‘ফন্টে’। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনার পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক। স্নাতকোত্তরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া পার্থসারথিবাবুর পিএইচডি কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন সায়েন্স’ থেকে। ২০০২ সালে কলকাতার পাঠ চুকিয়ে আমেরিকা পাড়ি। ২০০৫ সাল থেকে আইআইএসসি-তে শিক্ষকতা-গবেষণা। রাইপুরের বাসিন্দা এবং স্থানীয় কোটা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন কর বলেন, ‘‘স্থান-কাল কখনও শিক্ষায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তা প্রমাণ করে দিয়েছে ফন্টে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy