এই টেলিস্কোপ ব্রহ্মাণ্ডের ১৩০০ কোটি বছরের ইতিহাসকে চাক্ষুষ করতে পারবে। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
বড়দিন মহাকাশেও।
এ বারের ক্রিসমাস ডে-ই হয়ে উঠতে চলেছে সভ্যতার মহাকাশ অভিযানের ‘রেড লেটার্স ডে’।
ইতিহাসে লাল অক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে যে দিনটি সেই শনিবার বড়দিনেই মহাকাশে রওনা হচ্ছে সভ্যতা থেকে ব্রহ্মাণ্ড ফুঁড়ে দেখার সেরা ‘চোখ’। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।
নাসা শুক্রবার জানিয়েছে, শনিবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে ফরাসি গায়ানার কোরোউ থেকে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)-র বানানো অত্যন্ত শক্তিশালী ‘আরিয়ান-৫’ রকেটে চেপে মহাকাশে পাড়ি জমাবে মহাকাশে সভ্যতার পাঠানো সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ। ১৩৮০ কোটি বছর আগে হওয়া বিগ ব্যাং বা মহা-বিস্ফোরণের পর ব্রহ্মাণ্ড কী ভাবে তৈরি হয়েছিল, কী ভাবে তৈরি হয়েছিল প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের তারাগুলি, কী ভাবে তৈরি হয়েছিল ছায়াপথগুলি (‘গ্যালাক্সি’) বা ছায়াপথগুলির ঝাঁক (‘গ্যালাক্সি ক্লাস্টার’), তা জানতে ও বুঝতেই মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে এ বার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপকে। যা ব্রহ্মাণ্ডের ১৩০০ কোটি বছরের ইতিহাসকে চাক্ষুষ করতে পারবে। খুঁড়ে বার করতে পারবে ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম ও তার বিকাশের ইতিহাস। তার ক্রমবিবর্তনেরও।
তিন দশক আগে একই উদ্দেশ্যে নাসা মহাকাশে পাঠিয়েছিল হাব্ল স্পেস টেলিস্কোপকে। গত শতাব্দীর নয়ের দশকের গোড়ায়। যা এখনও দাপটে কাজ করে চলেছে মহাকাশে। তবে ব্রহ্মাণ্ডের ১২০০ কোটি বছরের বেশি ইতিহাস খুঁড়ে দেখার ক্ষমতা নেই হাব্ল টেলিস্কোপের। তাই জেমস ওয়েবকে মহাকাশে পাঠানোর খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বিজ্ঞানীদের।
নাসা জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় উৎক্ষেপণের আধ ঘণ্টা পর খুলে যাবে টেলিস্কোপের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলার বিশাল অ্যান্টেনা আর টেলিস্কোপকে শক্তি জোগানোর জন্য প্রয়োজনীয় সুবিশাল সোলার প্যানেলগুলি। উৎক্ষেপণের ৬ দিন পর থেকে খুলতে শুরু করবে টেলিস্কোপের ঢাউস সানশিল্ডগুলি। যা তীব্র সূর্যরশ্মির ঝাপ্টা আর তাপ থেকে বাঁচাবে টেলিস্কোপটিকে। এই সানশিল্ডগুলি দেখতে একেবারে পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ানের মতো। তত দিনে চাঁদকে পেরিয়ে যাবে জেমস ওয়েব।
উৎক্ষেপণের পর দ্বিতীয় সপ্তাহে টেলিস্কোপের সুবিশাল আয়না খুলে যাবে। তার ৬ মাস পর থেকে ব্রহ্মাণ্ডকে খুঁড়ে দেখার কাজে নামবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।
হাব্ল এখন পর্যবেক্ষণ চালায় দৃশ্যমান আলো ও অতিবেগনি রশ্মি (‘আলট্রাভায়োলেট রে’)-র মতো আলোকতরঙ্গের কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যে। এ ব্যাপারেও হাব্লকে টপকে যাবে জেমস ওয়েব। তার পর্যবেক্ষণ চলবে অনেক দূরে পৌঁছনোর অনেক বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মি (‘ইনফ্রারেড রে’) তরঙ্গে। জেমস ওয়েবকে বসানো হবে পৃথিবী থেকে ১০ লক্ষ মাইল দূরে। একটি স্কুল বাসের সমান ওজনের এই টেলিস্কোপ সেখান থেকে প্রদক্ষিণ করবে সূর্যকে। হাব্ল তা করে না। হাব্ল প্রদক্ষিণ করে পৃথিবীকে। সূর্য থেকে দেখলে জেমস ওয়েব থাকবে পৃথিবীর পিছনে। ল্যাগর্যাঞ্জে ২ পয়েন্টে। পৃথিবীর যেখানে যখন রাত, সেই দিকে। উৎক্ষপণের পর থেকে জেমস ওয়েবের ল্যাগর্যাঞ্জে ২ পয়েন্টে পৌঁছতে সময় লাগবে এক মাস।
এই টেলিস্কোপের প্রধান সম্পদই হল তার দৈত্যাকার আয়না। চওড়ায় যা সাড়ে ২১ ফুট বা সাড়ে ৬ মিটার। যার ভিতরে থাকবে ১৮টি ছোট আয়না। বেরিলিয়াম দিয়ে বানানো সেই আয়নাগুলির উপর ভাগ সোনার পাত দেওয়া মুড়ে দেওয়া রয়েছে। অবলোহিত রশ্মি প্রতিফলনের জন্য।
সেই আয়নাগুলিকে মুড়ে রাখা আছে পাঁচটি স্তরের সানশিল্ডগুলি দিয়ে। যেগুলি ঘুড়ির মতো দেখতে। পুরোটা খোলার পর দৈর্ঘ্যে হবে একটি লন টেনিস খেলার মাঠের আকারের।
সানশিল্ডগুলির যে দিকটি থাকবে সূর্যমুখী হয়ে, সে দিকটি সর্বাধিক ১১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (বা ২৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রা সহ্য করতে পারবে। অন্য দিকটি শূন্যের নীচে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার হাড়জমানো ঠান্ডাও সহ্য করতে পারবে অনায়াসেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy