ভারতের মঙ্গলযান ‘মম’
আয়ু ধরা হয়েছিল ছ’মাস। কিন্তু লাল গ্রহের পরিক্রমায় সোমবার হাজার দিন পার করে ফেলল ভারতের মঙ্গলযান ‘মম’। এখনও পুরোপুরি সুস্থ। কাজ করে চলেছে দিব্য। স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত ইসরো। মঙ্গলকে এ পর্যন্ত ৩৮৮ বার পরিক্রমা করেছে ভারতের এই যানটি। তাতে পৃথিবীর হিসেবে হাজার দিন লাগলেও মঙ্গলের হিসেবে অবশ্য সময়টা ৯৭৩.২৪ দিন।
পিএসএলভি রকেটে চেপে শ্রীহরিকোটা থেকে ‘মম’-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৩-র ৫ নভেম্বর। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টান কাটিয়ে মঙ্গলের দিকে রওনা দেয় ১ ডিসেম্বর। ৯ মাসের যাত্রা শেষে ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এটিকে প্রতিবেশী গ্রহের নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। মাত্র ৪৫০ কোটি টাকা খরচ করে প্রথম চেষ্টাতেই সফল ভাবে মঙ্গলে যান পাঠিয়ে গোটা বিশ্বের নজর কাড়ে ভারত। সে সময় ইসরো জানিয়েছিল, ছ’মাস ধরে মঙ্গলের আকাশে পাক খাবে মম, ছবি তুলে পাঠাবে। ২০১৫-এর মার্চে ইসরো জানায় এখনও যথেষ্ট জ্বালানি রয়েছে, মম বাড়তি ছ’মাস কাজ করতে পারবে। তিন মাস পরে আবার ইসরোর চেয়ারম্যান এ এস কিরণ কুমার ঘোষণা করেন, কয়েক বছর চলার মতো জ্বালানি রয়েছে ‘মম’-এ। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, পৌনে তিন বছর পরেও ঠিকঠাক তথ্য ও ছবি পাঠিয়ে যাচ্ছে এর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ৫টি যন্ত্র ও ক্যামেরা। রঙিন ছবি তোলার এই ক্যামেরাটি এখনও পর্যন্ত ৭১৫টি ছবি পাঠিয়েছে। পৃথিবীতে সেগুলি বিশ্লেষণের কাজ চলছে।
আরও পড়ুন: মহাকাশে পাড়ি দিল ইসরোর ‘দানব’ রকেট
তবে ব্যাঘাত যে একেবারে ঘটেনি তা অবশ্য নয়। ২০১৫-র ২ জুন থেকে ২ জুলাই মম-এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, পৃথিবী ও মঙ্গলের মাঝে সূর্য চলে আসায়। এর পরে ২০১৬-র ১৮ থেকে ৩০ মে মম-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যায়নি তীব্র সৌর বিকিরণের কারণে। সে বার পৃথিবী ছিল সূর্য ও মঙ্গলের মাঝখানে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সব সমস্যাই নতুন পথ খুঁজে নেওয়ার অনুপ্রেরণা তাঁদের কাছে। যেমন, গ্রহণের সময় মম যাতে দীর্ঘ ক্ষণ আড়ালে ও বিচ্ছিন্ন হয়ে না থাকে, তার জন্য এর কক্ষপথে সামান্য বদলও ঘটানো হয় এর পরে।
‘মম’-এর ক্যামেরায় মঙ্গল
সফল মঙ্গল অভিযানের পরেও ভারত মহাকাশ গবেষণায় একের পর এক ধাপ পেরিয়ে চলেছে। এ মাসের গোড়াতেই পাঠিয়েছে দৈত্যাকার রকেট জিএসএলভি মার্ক-থ্রি। ভবিষ্যতে দেশের তৈরি এমন রকেট মানুষও নিয়ে যেতে পারবে মহাকাশে। তবে আমেরিকার মতো উন্নত দেশের চেয়ে অনেক সস্তায় মঙ্গলে যান পাঠিয়ে মহাকাশ বাণিজ্যে ভারতকে এক লাফে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছিল ইসরো। নির্ধারিত আয়ুর চেয়ে প্রায় ছ’গুণ সময় পেরিয়ে সেই যানের নিখুঁত পরিক্রমা এ বার বিশ্বকে দেখিয়ে দিল, শুধু সস্তা নয়, ভারতের মহাকাশ প্রযুক্তি প্রত্যাশার চেয়েও টেকসই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy