ইনসেটে, স্টিফেন হকিং। পাশে, হকিংয়ের সেই ব্ল্যাক বোর্ডের হিজিবিজি। ছবি- কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে।
আছে কি আরও আরও ব্রহ্মাণ্ড? আছে আরও আরও প্রাণ এই ব্রহ্মাণ্ডের এ-মুলুক সে-মুলুকে? সেই প্রাণ রয়েছে কি এমন সব রূপে যা আমাদের অজানা, অচেনা?
কেন এলোমেলো দাড়ির মঙ্গলগ্রহী এঁকেছিলেন স্টিফেন হকিং? কী বোঝাতে চেয়েছিলেন?
প্রতিসাম্য বা ভারসাম্য শব্দের আগে কেন তিনি ‘বোকা’ বা ‘আজগুবি’ বিশেষণ বসিয়েছিলেন?
কেন এঁকেছিলেন ইটের দেওয়াল বেয়ে তরতরিয়ে উঠে যাচ্ছে শামুকজাতীয় এমন একটি অদ্ভুতদর্শন প্রাণী, যার নাকটা যে কোনও দিকেও হেলানো, দোলানো যায়?
অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড আর অগণ্য প্রাণের বৈচিত্র্য নিয়ে স্টিফেন হকিংয়ের মনের গভীরে কোন কোন প্রশ্ন লুকিয়ে ছিল? তিনি কী কী খুঁজতে চেয়েছিলেন? যা খুঁজে পাননি। যে প্রশ্ন, কৌতূহলগুলির উত্তর তিনি জেনে যেতে পারেননি।
শেষ না হওয়া গাণিতিক সমীকরণগুলি দিয়ে ব্রহ্মাণ্ডের কোন কোন রহস্যের জট খুলতে চেয়েছিলেন তিনি? যা তাঁর পক্ষেও সম্ভব হয়নি। যে সব রহস্যের গোলকধাঁধায় হাবুডুবু খাচ্ছেন তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের বিজ্ঞানীরা, হকিংয়ের শেষ না হওয়া সমীকরণগুলি কি এ বার তার জট খুলে দিতে পারে মুহূর্তেই?
৪২ বছর আগে নিজের ঘরে ঢাউস ব্ল্যাকবোর্ড জুড়ে যে সব কাল্পনিক ছবি এঁকেছিলেন হকিং, লিখেছিলেন জটিল বহু সমীকরণ, চক দিয়ে লিখে রেখেছিলেন রহস্যে মোড়া বহু শব্দসমস্টি, এ বার হয়তো সে সবের জট খুলতে পারে।
ইংল্যান্ডের সায়েন্স মিউজিয়াম অব লন্ডনে শুরু হয়েছে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর অফিস ঘরের নানা সামগ্রী নিয়ে প্রদর্শনী। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে। যেখানে থাকবে ৪০ বছর ধরে জটিল রহস্যে মোড়া হকিংয়ের একান্ত ব্যক্তিগত সেই ঢাউস ব্ল্যাক বোর্ড, খুব কাছ থেকে যা দেখার সৌভাগ্য হয়নি এত দিন বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানী, গবেষকদের। এমনকি, হকিংয়ের ঘনিষ্ঠ ছাত্রছাত্রীদেরও। এই ব্রহ্মাণ্ড যে উত্তরোত্তর আরও বেশি গতিতে চার দিকে ফুলে-ফেঁপে উঠছে তা নিয়ে পিএইচডি-র সময় যে গবেষণাপত্রটি লিখেছিলেন হকিং, সেটিও থাকবে প্রদর্শনীতে। থাকবে তাঁর সেই বিখ্যাত হুইলচেয়ার। জটিল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হয়ে যৌবন থেকে যা আমৃত্যু সঙ্গী ছিল হকিংয়ের। প্রদর্শনী চলবে জুন পর্যন্ত। তার পর হকিংয়ের সেই সব সামগ্রী নিয়ে যাওয়া হবে ব্রিটেনের অন্যান্য মিউজিয়ামেও।
কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এ কথা জানানো হয়েছে। চার বছর আগে, ২০১৮-য় মৃত্যু হয় হকিংয়ের। তাঁর অন্যতম সেরা ভবিষ্যদ্বাণী ছিল— আলো বেরিয়ে আসতে পারে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের রাক্ষুসে গ্রাস থেকেও।
হকিং সেই ব্ল্যাক বোর্ডে এমন বহু অসমাপ্ত গাণিতিক সমীকরণ লিখে রেখে গিয়েছেন যার জট খোলা সম্ভব হলে হয়তো ব্রহ্মাণ্ডের অনেক অজানা কথাই জানা হয়ে যাবে এখনকার বা পরবর্তী প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের।
পদার্থবিজ্ঞানের দু’টি প্রতিদ্বন্দ্বী শাখা সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ (থিয়োরি অব জেনারেল রিলেটিভিটি) আর কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বা গতিবিদ্যা (কোয়ান্টাম মেকানিক্স)-কে প্রায় ছাত্রাবস্থা থেকেই মেলানোর নেশায় বুঁদ ছিলেন হকিং। তাঁর আমৃত্যু বিশ্বাস ছিল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ আর আইনস্টাইন যাকে ভুতুড়ে বলেছিলেন সেই কোয়ান্টাম গতিবিদ্যাকে এক সুতোয় বাঁধা সম্ভব হলেই ব্রহ্মাণ্ডের সব রহস্যের জট খোলা সম্ভব হবে। জানা যাবে আদতে কী ভাবে এই ব্রহ্মাণ্ড তৈরি হয়েছিল প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে, তার পর ঠিক কী কী ঘটনা একের পর এক ঘটেছিল, ব্রহ্মাণ্ডের পরিণতি কী, তার পর নতুন কোনও ব্রহ্মাণ্ড তৈরি হবে কি না, আগেও অন্য কোনও ব্রহ্মাণ্ড ছিল কি না অথবা এখনও আরও আরও ব্রহ্মাণ্ড রয়েছে কি না।
সেই সবকিছুর তত্ত্বকেই হকিং পরে তাঁর লেখা একটি বইয়ে তুলে ধরেছিলেন। যার নাম— ‘থিয়োরি অব এভরিথিং’। যাতে এই ব্রহ্মাণ্ডের আপাত বিপ্রতীপ, পরস্পরবিরোধী নিয়মকানুনগুলিও কোনও একটি বিন্দুতে এসে হাত মেলায়, হয়ে ওঠে তাদের সঙ্গমস্থল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy