আশাবাদের মর্মমূলে অবিশ্বাস্য শব্দ, বাক্য থাকলেও তা যদি বিজ্ঞানী বলেন তবে তা বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয় সাধারণ মানুষের কাছে। -ফাইল ছবি।
হার মানতে হল আধ্যাত্মিক গুরুদের। জিতলেন বিজ্ঞানীরাই। আমজনতার রায়ে।
দেখা গেল, অযথা আশার বেলুন ফোলানো কথাবার্তাও বিজ্ঞানীদের মুখে শুনলে তা যতটা বিশ্বাস করেন সাধারণ মানুষ, সেই ধরনের কথা কোনও আধ্যাত্মিক গুরু বললে তা ততটা বিশ্বাস করেন না আমজনতা।
এমনকি, ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মপ্রাণ মানুষও চট করে বিজ্ঞানীদের কথাই বেশি বিশ্বাস করেন। তার মর্মার্থের গভীরে পৌঁছনোর ক্ষমতা সাধারণ মানুষের মধ্যে সকলের না থাকলেও।
২৪টি দেশে চালানো সাম্প্রতিক একটি গবেষণার ফলাফলে এই ছবি বেরিয়ে এসেছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’-এ। শুক্রবার।
জীবন জটিল থেকে উত্তরোত্তর জটিলতর হয়ে ওঠায় মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ছে আশাবাদের। উজ্জ্বল বা উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের সোনালি আলো জটিলতর জীবনে, যাপনে মানুষকে বেঁচে থাকার বল-ভরসা জোগাচ্ছে।
সেই আশাবাদের মর্মমূলে অবিশ্বাস্য শব্দ, বাক্য থাকলেও তা যদি কোনও বিজ্ঞানী বা বিজ্ঞানী মহলের মুখ থেকে আসে তা বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের কাছে। এই বিশ্বাসযোগ্যতার নিরিখে হার মানতেই হচ্ছে আধ্যাত্মিক ধর্মগুরুদের। যাঁদের পরিচিতি, জনপ্রিয়তা ‘স্পিরিচুয়াল গুরু’ নামে।
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে চালানো আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি-সহ ১৭টি দেশের গবেষকরা দেখেছেন, এই আধ্যাত্মিক গুরুরা কোনও বিশেষ ধর্ম বা সম্প্রদায়ের নন। তাই নন কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু (‘রিলিজিয়াস গুরু’)।
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, ২৪টি দেশের প্রায় ১১ হাজার মানুষকে একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্রে বানানো নানা ধরনের আশ্বাসবাক্য শোনানো হয়েছে। পড়ানো হয়েছে। তাঁরা কতটা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, কত জনের গভীর বিশ্বাস রয়েছে ধর্মে, আলাদা আলাদা ভাবে তারও খোঁজখবর নিয়েছেন গবেষকরা।
গবেষকরা দেখেছেন, যত জনকে এই পরীক্ষার আতশকাচের নিচে ধরা হয়েছে তাঁদের ৭৬ শতাংশই বিজ্ঞানীদের কথাই বেশি বিশ্বাস করেন আধ্যাত্মিক ধর্মগুরুদের চেয়ে।
শুধু তাই নয়, যাঁরা গভীর ভাবে ধর্মে বিশ্বাসী, প্রকৃত অর্থেই ধর্মভীরু, তাঁদেরও বেশির ভাগই সভ্যতা, মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কে যে কোনও ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক ধর্মগুরুদের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন বিজ্ঞানীদের। তবে আমজনতার সেই বিশ্বাসের পাল্লাটা যতটা ঝুঁকে থাকে বিজ্ঞানীদের দিকে, ধর্মভীরুদের বিশ্বাসের পাল্লাটা বিজ্ঞানীদের দিকে ততটা ঝুঁকে থাকে না অবশ্য। তবে তাঁদের ক্ষেত্রেও বিশ্বাসযোগ্যতা, ভরসার নিরিখে আধ্যাত্মিক ধর্মগুরুদের চেয়ে এগিয়ে থাকেন বিজ্ঞানীরাই।
গবেষকরা জানিয়েছেন, সমাজ বিবর্তনের ধারায় যেহেতু শিক্ষক, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের কাছ থেকেই মানুষ শেখেন বাল্যকাল থেকে, তাই এঁদের প্রতি আমজনতার বিশ্বাস আধ্যাত্মিক ধর্মগুরুদের চেয়ে বেশি থাকে।
গবেষকরা এও দেখেছেন, সাধারণ মানুষ সব সময় ভাল ভাবে হয়তো বিজ্ঞানীদের অনেক কথাই বুঝতে পারেন না। পৌঁছতে পারেন না সেই সব কথার গভীর মর্মার্থে। তবু তার পরেও তা বিশ্বাস করে নেন। আধ্যাত্মিক ধর্মগুরুদের কথা কিন্তু যাচাই করার চেষ্টা করেন সাধারণ মানুষ। খুব একটা নির্দ্বিধায় মেনে নিতে চান না।
কেন, তার কারণ খোঁজারও চেষ্টা করেছেন গবেষকরা। জানিয়েছেন তার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ। যার অন্যতম— আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রগুলির বিজ্ঞানের উপর অধিকতর বিশ্বাস, নির্ভরতা, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের কাজকর্ম নিয়ে রাষ্ট্রের অধিকতর প্রচারও বিজ্ঞানীদের উপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও ভরসা বাড়ানোর সহায়ক হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy