এক দল গবেষক দিন-রাত কাজ করে চলেছেন।
কলকাতা থেকে সুইডেনের ক্যারোলিন্সকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে এসেছি প্রায় ১৫ বছর হল। কিন্তু, এমন পরিস্থিতি কখনও দেখিনি। এক দল গবেষক দিন-রাত আমাদের এখানে কাজ করে চলেছেন কোভিড-১৯ নিয়ে। কী ভাবে এই মারণ ভাইরাসের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারে বিশ্ব? করোনা-আতঙ্কের এই আবহে আমাদের ইনস্টিটিউট আশার আলো দেখাতে পারে গোটা বিশ্বকে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাওয়া কোনও ব্যক্তির রক্তের প্লাজমাই হয়ে উঠতে পারে এর মূল চাবিকাঠি। আর সে কাজেই ব্রতী আমাদের ইনস্টিটিউট-এর এক দল গবেষক।
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে যখন স্প্যানিস ফ্লু হয়, তখন থেকে মহামারির সময়ে রক্ত ট্রান্সফিউশনের পদ্ধতি প্রচলিত। আমাদের শরীরে যখন কোনও ভাইরাস আক্রমণ হানে, তখন রক্তের প্লাজমায় কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তারাই ওই ভাইরাসটির সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে।তাই, ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর একেবারে সুস্থ হয়ে যাওয়া কোনও ব্যক্তির রক্তের প্লাজমা প্রথমে সংগ্রহ করা হয়। তার পর সেই প্লাজমা দেওয়া হয় মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লড়াই করা ব্যক্তির শরীরে। আসলে যিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাঁর শরীরের অ্যান্টিবডি ভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছে বলেই ধরা হয়। এ বার সেই অ্যান্টিবডিই যদি কোনও আক্রান্ত মানুষের শরীরে দেওয়া হয়, তা হলে তিনিও ভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম হতে পারেন। করোনা থেকে সুক্ত হওয়া মানুষের প্লাজমায় থাকা অ্যান্টিবডি অসুস্থকে সারিয়ে তুলতে পারে। অতীতে অনেক ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি রীতি মতো কার্যকরী হয়েছে। কোভিড-১৯ রুখতে এ পদ্ধতি সক্ষম হবে কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন।
আমাদের ইনস্টিটিউটে সংক্রামক রোগ ও মহামারি সংক্রান্ত বিষয়ের অধ্যাপক জোয়াকিম ডিলনারের নেতৃত্বেই গোটা প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হচ্ছে। প্রশ্নটা তাঁকে করেছিলাম। এই পদ্ধতি সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটা? জোয়াকিম বললেন, ‘‘গত শতাব্দীতে বিশ্ব জুড়ে যত সংক্রমণ হয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকরী হয়েছে। তবে আমরা জানি না, কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজ করবে কি না! আমাদের চেষ্টা করতে হবে।’’
আরও পড়ুন- একের মধ্যে অনেক ।। শীতলা থেকে টিকা ।। কী জানি আর কী জানি না
প্রথমে অনুমোদন মেলেনি। তবে, সম্প্রতি ৩০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর জন্য পরীক্ষামূলক এই চিকিৎসার অনুমোদন দিয়েছে সুইডেনের ‘এথিক্যাল রিভিউ অথরিটি’। সম্প্রতি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের রক্ত প্লাজমা ক্যারোলিন্সকা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ৩০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে দেওয়া হবে খুব শীঘ্রই। তার পর গোটা বিষয়টির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করবেন ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা। করোনা-আক্রান্ত হয়ে যাঁদের চিকিৎসা স্টকহলমে হয়েছে, আমাদের এখানে তাঁদের রক্তের প্লাজমাই নেওয়া হবে। কারণ? অধ্যাপক জোয়াকিম বলছিলেন, ‘‘অন্যান্য মহামারির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একই ভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় হয়। তাই যে ভাইরাসের যে ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন কোনও ব্যক্তি, তাঁর প্লাজমা কেবল সেই ভাইরাসের সেই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত অন্য রোগীর শরীরে দেওয়াটাই জরুরি।’’
আরও পড়ুন: করোনার দৈব শিকার: স্বয়ং মা শীতলাই লকডাউনে
আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ অন্য বেশ কিছু দেশ তাদের হাসপাতালে এই পদ্ধতিটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করেছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতির একটা অন্যতম সুবিধা হচ্ছে, রক্তদানের সমস্ত ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই সর্বত্র আছে। তবে একটা মস্ত বড় অসুবিধাও রয়েছে। কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে রক্ত প্লাজমায় অ্যান্টিবডির লেভেল ঠিক কত হবে, সেটা মাপার কোনও পদ্ধতি এখনও বেরোয়নি। আর সেখানেই ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা, যাঁরা অ্যান্টিবডি নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজটি করবেন, তাঁদের বড় ভূমিকা রয়েছে।
আশা করা যায় খুব শীঘ্রই ভারতেও এই পদ্ধতিটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হবে।
লেখক: সুইডেনের ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটের গবেষক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy