উজ্জ্বল আলোকরশ্মির বলয় তারাটির সৌন্দর্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি করলেও আদতে দিন ঘনিয়ে এসেছে এই নক্ষত্রটির। নক্ষত্র জীবনের উপান্তে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে সিডব্লিউ লিওনিস। কোনও নক্ষত্র প্রসারিত হতে হতে নিজের ভর বিকিরণ করতে থাকলে সেই পরিস্থিতিতে সুপারনোভা তৈরি হয়। সিডব্লিউ লিওনিসের ক্ষেত্রেও ঘটছে সেই একই মহাজাগতিক নিয়ম।
১৯৬৯ সালে এরিক বেকলিন প্রথম সিডব্লিউ লিওনিসকে চাক্ষুষ করেন। মাউন্ট উইলসন মানমন্দির থেকে প্রতি দিনের মতো মহাকাশের একটি বিশেষ অংশে পর্যবেক্ষণ চালাতে গিয়ে তাঁর নজরে আসে একটি অদ্ভুতদর্শন নক্ষত্র। এর উজ্জ্বলতা মাঝেমাঝে বাড়ছে এবং কমছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অভাবে সেই তারার ঠিকুজি বার করতে অসমর্থ হন তিনি। পরে হাতে থাকা তথ্য ও তারাটির গতিপ্রকৃতি দেখে তিনি নিশ্চিত হন এটি একটি দৈত্যাকার লাল তারা।
পরবর্তী কালে নাসার হাব্ল টেলিস্কোপে আরও স্পষ্ট ভাবে ফুটে ওঠে সিডব্লিউ লিওনিসের মনোমুগ্ধকর লোহিত সৌন্দর্য। ছয় বছরের গবেষণার পর নাসা জানিয়েছে এই তারাটির চারপাশে কার্বনের ঘন ধূলিধূসরিত মেঘের স্তর বাড়ছে। এই মেঘগুলির আস্তরণ নক্ষত্রটিকে ঘিরে মাকড়সার জালের মতো অবয়ব তৈরি করেছে। এই গ্যাসীয় মেঘের কারণে প্রতি ৬৪৯ দিন পর পর এর আভা ক্ষীণ হতে থাকে।
কোনও কোনও গবেষকের মতে এই দৈত্যাকার লাল তারাটি ধীরে ধীরে কার্বন নক্ষত্রে রূপান্তরিত হবে। এই ধরনের নক্ষত্রগুলি মৃত্যুর পর সাধারণ দৈত্যাকার লাল নক্ষত্রের মতো আচরণ না করে সম্পূর্ণ উল্টো আচরণ করতে শুরু করে। সাধারণত নক্ষত্রের আয়ু ফুরোলে তা বিস্ফারিত হয়ে মহাকাশের গহ্বরে মিলিয়ে যায়। কখনও বা তৈরি করে কৃষ্ণগহ্বর। কার্বন নক্ষত্রের ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের ফলে বেরিয়ে আসা সেই কার্বন ভবিষ্যতের নক্ষত্র এবং গ্রহ গঠনের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করে।
একটি নক্ষত্র তার গোটা জীবনের গতিপথে হাইড্রোজেন পরমাণুকে হিলিয়ামে রূপান্তরিত করতে থাকে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে দৈত্যাকার লাল তারার অভ্যন্তরে হিলিয়াম ও তার বাইরে হাইড্রোজেনের স্তর তৈরি হয়। হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে, অভিকর্ষের ক্রমাগত টানে নক্ষত্রটি ভেঙে পড়তে শুরু করে। কোর সঙ্কুচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোরের চারপাশের প্লাজ়মার শেল হাইড্রোজেন পোড়ানোর কাজ শুরু করে।
জ্বালানি ফুরোলেই নক্ষত্র অন্তিম দশার দিকে যাত্রা শুরু করে। তখন এটি তার বাইরের স্তরগুলিকে মহাকাশের বুকে ছড়িয়ে দিতে থাকে। মাধ্যাকর্ষণ এবং অন্যান্য শক্তি এই গ্যাস ও ধূলিকণাকে মেঘের আকার দেয়, যাকে ‘প্ল্যানেটারি নেবুলা’ বলে। এই ‘প্ল্যানেটারি নেবুলা’ হল জৈবিক প্রক্রিয়া সংক্রান্ত গবেষণা চালানোর জন্য ‘সোনার খনি’।
পৃথিবী থেকে ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে সিডব্লিউ লিওনিস। এই তারাটি সূর্যের জায়গায় থাকলে তার ব্যাসার্ধ মঙ্গল গ্রহের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে যেত। সূর্যের থেকে ৫০০ গুণ বড় নক্ষত্রটির এখন দৈত্যাকার লাল নক্ষত্রের দশা চলছে। জ্বলতে জ্বলতে ফুরিয়ে কার্বন গ্রহ এবং একদম অন্তিম পর্যায়ে তা শ্বেত বামনগ্রহে রূপান্তরিত হতে পারে বলে নাসার বিজ্ঞানীরদের ধারণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy