Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
rainy day

Rainy Day Khichuri Recipe: মেঘলা দিনের মন-কেমন আর হাতে মাখা খিচুড়ির গল্প

বাইরে কালো করে মেঘ আর বাঙালি হেঁশেলে খিচুড়ি হবে না, তা কী করে হয়? তবে খিচুড়ি রান্নাও কিন্তু অনেক রকম। জেনে নিন হাতে মাখা খিচুড়ির রেসিপি।

সায়ন্তনী মহাপাত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২২ ২০:০১
Share: Save:

এমন মেঘলা দিনে রান্নাঘরে ফিরে আসতে সাধ জাগে। সেই রান্নাঘর, যে দু’হপ্তা আগেই রাগ করে আমায় বলেছে, শিগগিরই তার উঠোনে পা না রাখলে আমার জন্য সে নিরুদ্দিষ্টের প্রতি পত্র লিখবে। চার বছরের অবোধ শিশুর মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, ‘‘এক বারও কি আসতে ইচ্ছে করে না তোমার এত সাধের ঘরখানিতে? বলি সাধ করে যে নীল রঙের টালি লাগালে দেয়াল জুড়ে, দেখেও তো যেতে পারো তেলের চিটে আর ফোড়নের ছিটেয় কী তার অবস্থা!’’

তা এ গল্পও দু’হপ্তা আগের। কাজের চাপে তবুও ওমুখো হতে পারিনি। কিন্তু বাধ সাধলো কদিনের এই মেঘলা আকাশ। আলো আঁধারির জলছবি বড্ড অকেজো করে দেয় মানুষকে। কী যে এক আলস্যি এসে বসে সারা শরীর জুড়ে, সব কাজ ফেলে রেখে সারাটা বেলা খালি বসে বসে বৃষ্টি দেখারই সাধ জাগে। ঝুপঝাপ, টুপটাপ বৃষ্টির তাল আমার মতো ছন্দহীনকে কবিতার অন্ত্যমিল না-ই বা শেখাতে পারল, কিন্তু আমার বিরহ আর বিষাদের ভাষা— সে তো এই মেঘলা দিনের কাছেই ঋণী।

এ সব ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতেই কখন ঢুকেছি রান্নাঘরে সে খেয়াল ও নেই। হাত তার স্বাভাবিক ছন্দে খুঁজে নিয়েছে সব কিছু। উপরের তাক থেকে নেমে এসেছে নীল ঢাকার মুগ ডালের কৌটো আর সাদা বাটিতে ভিজে আরও সফেন হয়ে, মহুয়ার মতো মৃদু গন্ধ ছড়াচ্ছে রাঢ়ের গাঙ্গেয় উপত্যাকার গোবিন্দভোগ চাল।

এই চালও তো বৃষ্টির গল্প বলে। নদির উপরে চারিদিক সাদা করে আসা বৃষ্টির যে কী মোহিনী নেশা, সে যে না দেখেছে জানবে না। আপনি দেখবেন বৃষ্টি ছুটে, দৌড়ে এগিয়ে আসছে। আপনাকে ঘিরে ধরে, ভাসিয়ে না দেওয়া অব্দি যেন তার শান্তি নেই তবুও কে জানে কোন সম্মোহনের বলে সেই অপার সৌন্দর্যের সামনে থেকে আপনি এক পা-ও নড়তে পারবে না। ভিজে চুপ্পুস হয়ে, ভেজা শাড়ি কাপড়েও আপনার মুখে লেগে থাকবে এক আলগা হাসি। যেন ভিড়ের ফাঁকে আড়াল খুঁজে ছুঁয়ে গিয়েছে সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত হাত।

বৃষ্টির ফোঁটা এ ভাবেই ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় শরীর মনের সব টুকু।

তবে বৃষ্টির দিনে সবাই কি আর দূরে থাকে? কেউ কেউ ফিরেও আসে। যেমন আমার কাজের দিদি মৌসুমীর মা। বৃষ্টির দিনের কথা হলেই যে বলত, ‘‘সেই সে বারে যখন আয়লার ঝড়ে সব ভেসে গেলো গো দিদি, বাবা কারও কতা না শুনি নদীতে মাছ ধরতে গেইছোলো। ইস্কুল বাড়ির জানলায় বসে আমি তিনদিন খালি বনবিবিরে ডেকিচি মানুষটার ভালোই ভালোই ঘরে ফেরার তরে। ঠাকুর আমার মান রেইকেচিলো গো দিদি, তিন দিনের মাতায় ঝড় জল মাথায় নে ঘরের মনিষ্যি ঠিক ঘরে ফিইরেছিলো।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বৃষ্টি হলেই আজকাল আমার মৌসুমীর মায়ের কথা মনে পড়ে। ‘আশার আলো’ ডালিম কাঠের বাক্সে ভরে বড় যত্নে রাখার জিনিস, রাতবিরেতে বিপদে আপদে বড় ভরসা জোগায়!

বাইরে আবার ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল। মোটা লোহার কড়াইতে ঢিমে আঁচে মুগ ডাল ভাজার কাজও শেষ। বড় ডেকচিতে রসুন, পেয়াঁজ, টমেটো, নুন, হলুদ, লঙ্কা, তেল আর মশলার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভেজানো চাল আর ভাজা ডাল। কিছু কিছু কাজ হাত ছাড়া হয় না। যেমন বন্ধু রঞ্জিনীর এই হাতে মাখা খিচুড়ি। রঞ্জিনী শিখেছে, ওর এক ডেলিপ্যাসেঞ্জার সহযাত্রীনির কাছ থেকে। বর্ণনা শুনেই মনে হয়েছিল এ-ও এক বর্ষার দিনে তড়িঘড়ি সন্তানের কাছে বাড়ি ফিরতে চাওয়া কোনও মায়ের তৈরি রেসিপি। ঝড়জলের দিনে অতি দস্যি ছেলেরও একমাত্র আশ্রয় তার মায়ের আঁচল, মা মাত্রেই সে কথা খুব জানে। তাই তো ঘরে ফিরে সন্তানকে বুকে টেনে নেওয়ার তার এত তাড়া। মায়ের ঠিক বুকের মাঝখানটাতে মুখ গুঁজে, চুলে বিলি কেটে যাওয়া মায়ের হাতের ওম নিতে নিতে,ওই যে একটুখানি ‘ভয় কী সোনা, আমি তো আছি’— একটা শিশুকে অনেক অনেক যুদ্ধে জিতে যাওয়ার সাহস জোগায়। মা ও তাই শর্টকাটে রান্না সারার আছিলা খোঁজে। তার পর ছেলের মাথার আদর আদর গন্ধ নিতে নিতে শান্তির ঘুম।

আমাদের বাঙালি ঘরে 'হাত' আর 'আদরের' বড় অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক। এই যে হাত দিয়ে মেখে মেখে চাল, ডাল, মশলার সঙ্গে মিশে যায় মায়ের আদর সে স্বাদের আবেদন তো চিরন্তন। আবার বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরলে ঈষৎ বকুনির সঙ্গে ভালোবাসার মানুষ যখন নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো হাতে মাথা মুছিয়ে দেয়, সেই আদরটুকুর জন্যও সারা শহর ঘুরে বৃষ্টিতে ভিজতে পারে অনেক মানুষ।

আসলে বৃষ্টি মানেই তো তাই, দূরে থাক কি কাছে সোঁদা মাটির মনকেমনিয়া গন্ধ এলেই বড় বেঁধে বেঁধে থাকতে, সবকিছুকেই বড় ভালোবাসতে সাধ জাগে।

হাতে মাখা খিচুড়ি

হাতে মাখা খিচুড়ি ছবি: সায়ন্তনী মহাপাত্র

হাতে মাখা খিচুড়ি (৩ জনের জন্য)

উপকরণ

গোবিন্দভোগ বা চিনি আতপ চাল: ১ কাপ

সোনা মুগের ডাল: ৩/৪ কাপ

পেয়াঁজ: ২টি মাঝারি

রসুন: ৫-৬ মাঝারি কোয়া

টমেটো: ১ টি বড়

কাঁচা লঙ্কা: ৪-৫ টি

জিরে-ধনে বাটা বা গুঁড়ো: ১ বড় চামচ

লঙ্কার গুঁড়ো: ১ চা চামচ

হলুদ: ১ চা চামচ

নুন স্বাদমতো

সর্ষের তেল: ২ বড় চামচ

পদ্ধতি

চাল ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। সেই ফাঁকে খুব কম আঁচে সোনালি করে ভেজে তুলুন মুগের ডাল।

এ বারে একটা তলা পুরু বাসনে মিহি করে কুচনো পেয়াঁজ আর কাঁচা লঙ্কা মেশান নুন দিয়ে। হাত দিয়ে চেপে মাখুন যাতে পেয়াঁজ থেকে বেশ জল বেরিয়ে আসে। এতে সব মশলা আর সর্ষের তেল দিয়ে মিশিয়ে নিন।

হালকা হাতে চাল আর ডাল ও মেশান যাতে ভেঙে না যায়।

২ কাপ গরম জল দিয়ে, শক্ত ঢাকা আটকে খুব কম আঁচে রান্না করুন ১২ মিনিট।

তার পর খিচুড়ির ঠিক মাঝখানটা আলতো হাতে একটু ফাঁকা করে দিয়ে দিন আরও ১/২ কাপ জল।

একটা লোহার চাটুর উপর এই বাসন বসিয়ে ঢাকা দিয়ে দমে বসান আরও ৭ মিনিট।

জল শুকিয়ে মাখা মাখা হলে ঘি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

ডিম আলুর পাতুরি

ডিম আলুর পাতুরি ছবি: সায়ন্তনী মহাপাত্র

অলস দিনের সহজ এই খিচুড়ির যোগ্য সঙ্গতে রইল ততোধিক সহজ আর একটি রান্না। এক পাত্রে মেখে রান্না করা ডিম আর আলুর পাতুরি।

ডিম আলুর পাতুরি (৩ জনের জন্য)

উপকরণ

দেশি মুরগির ডিম: ৬টি

আলু: মাঝারি ২টি

পেয়াঁজ: বড় ১টি

রসুন: বড় কোয়া ৬টি

জিরে ধনে লঙ্কা বাটা: ২ বড় চামচ

সর্ষের তেল: ২ বড় চামচ

নুন স্বাদ মতো

হলুদ: ১ চা চামচ

কলাপাতা ২ টি

পদ্ধতি

ডিম্ সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে অর্ধেক করে কেটে রাখুন।

আলু ঝিরিঝিরি করে কেটে সামান্য নুন মাখিয়ে রাখুন।

একটি পাত্রে পেয়াঁজ মিহি করে কুচিয়ে নুন আর বাকি মশলা দিয়ে ডলে ডলে মাখুন। ওতেই সর্ষের তেলও দিয়ে দিন।

একটি চাটুতে দুই পরত কলার পাতা বিছিয়ে সর্ষের তেল মাখিয়ে নিন।

এ বার একটি করে ডিমের টুকরো হাতে নিয়ে মশলা মাখিয়ে, ডিমের কাটা দিক কলাপাতার দিকে করে গোল করে ধার বরাবর সাজিয়ে দিন। মধ্যেখানে বেশ খানিকটা জায়গা রাখুন।

বেঁচে যাওয়া মশলায় আলু দিয়ে ভাল করে মেখে ওই মাঝখানের ফাঁকে ভরে দিন।

ঢাকা বন্ধ করে কম আঁচে রান্না করুন ১০ মিনিট বা যত ক্ষণ না আলু সেদ্ধ হয়ে জল শুকিয়ে যায়।

উপরে আরও একটি কলাপাতা ঢেকে উল্টে দিয়ে আবার রান্না করুন ৫ মিনিট।

হয়ে গেলে গরম গরম পরিবেশন করুন।

অন্য বিষয়গুলি:

rainy day Khichdi Recipes Khichdi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy