ডোভার লেনের বাঁক ঘুরে দু’পা এগোলেই তেল-মশলার সুঘ্রাণ নাকে এসে ঝাপটা মারে। ৭/২বি, ডোভার লেন, ওরফে ‘চিলেকোঠা’-র রান্নাঘরে তখন চিংড়ি-ইলিশ-ট্যাংরা নিয়ে পুরনো দিনের রান্নার নানা কসরত চলছে। সঙ্গে রয়েছে মাংস ও নিরামিষেরও হরেক পদ। গড়িয়াহাট এলাকার এই রেস্তরাঁটি বাঙালি হেঁশেলর। অল্পবয়স হলেও ভোজনরসিকদের অভিধানে সহজেই জায়গা করেছে হারিয়ে যাওয়া বাঙালি রান্নার হাত ধরে।
এই বর্ষায় ইলিশ, মাংস ও নিরামিষ পদকে আর একটু রসিয়ে পুরনো কালের হারিয়ে যাওয়া রান্নার সমীকরণ দিয়ে নিজেকে ঢেলে সাজিয়েছে ‘চিলেকোঠা’। শুরু করেছে ‘পাত পে়ড়ে কব্জি ডুবিয়ে’-র নয়া উৎসব। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত চালু এই উৎসবে ‘চিলেকোঠা’ সঙ্গে পেয়েছে মধুশ্রী বসু রায় ও দেবযানী চট্টোপাধ্যায় আলমকে। এই দুই শেফের সুচারু পরিচালনা ও বাহারি পদে জমে উঠেছে এই উৎসব।
বর্ষা মানেই মাছের রকমারি পদ। ইলিশ, ডিম ভরা কই, ট্যাংরা, চিংড়িতে ভরন্ত পাত। তবে কেবল মেছোরাই নয়, নিরামিষের মন রাখতে এই এই পর্যায়ের মেনুতে রয়েছে কলমির বড়া দিয়ে বানানো শুক্তো থেকে চালপটল, চালকুমড়ো সরষে বাটা এমনকি রসগোল্লার ডালনাও। ইলিশ নিয়ে বাঙালিসুলভ আদিখ্যেতাও কম নেই। ইলিশের বিশেষ থালা সেজেছে ইলিশের লেজা থেকে মুড়ো মিশিয়ে সাজানো নানা খাদ্যে। দামও নাগালের মধ্যেই। ইলিশ ও নিরামিষে রয়েছে সতেরো রকমের পদ। আমিষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আঠারোয়। ছোটদের জন্য মিলছে তাদের উপযুক্ত খাদ্যপরিমাণের বিশেষ থালিও।
আরও পড়ুন: ঘটি-বাঙালের পাতে মৎস্যই ন্যায়
এই উৎসবের পাত থেকেই ‘আনন্দবাজার ডট কম’-এর জন্য দুটো রেসিপি সরিয়ে রাখলেন চিলেকোঠার দুই বিশেষ শেফ। মাছের পাটিসাপটা ও ইলিশ পানিখোলার এই পদ সহজে বাড়িতে বানাতে পারেন আপনিও। রইল সেই কৌশলের হদিশ।
মাছের পাটিসাপটা
শেফ: মধুশ্রী বসু রায়
উপকরণ
পুরের জন্য:
ভেটকি ফিলে: ৫০০ গ্রাম
মাঝারি আকারের সেদ্ধ করা আলু: ২ টি
বড় মাপের পিঁয়াজ একটা কুচোনো: ১ টি
রসুন বাটা: দেড় চা চামচ
আদা বাটা: ১ চা চামচ
গরম মশলা গুঁড়ো: আধ চা চামচ
কাঁচা লংকা: ২ টো (কুচোনো)
হলুদ গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ
লাল লঙ্কা গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ
চিনি: ১/৪ চা চামচ
নুন: স্বাদ মতো
সাদা তেল: ২ টেবিল চামচ
লেবুর রস: ১ টেবিল চামচ
পাটিসাপটার জন্য:
ময়দা: আধ কাপ
সুজি: ১/৪ কাপ
ঘি: ১ টেবিল চামচ
নুন: স্বাদ মতো
প্রণালী:
মাছের ফিলেটা কে অল্প নুন ও লেবুর রস মাখিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। এর পর একটি ফ্রাইং প্যানে তেল দিয়ে ভাল করে গরম করে নিন। তেল গরম হয়ে গেলে এতে কুঁচানো পিঁয়াজগুলো দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। সোনালী রং না ধরা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এ বার এতে আদা ও রসুন বাটা দিয়ে নাড়তে থাকুন। হলুদ গুঁড়ো ও লঙ্কা গুঁড়োও মিশিয়ে দিন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে প্যানের গায়ে যেন পুরটা লেগে না যায়। দরকার হলে পুর তৈরির সময় একটু একটু করে জলের ছিটে দিতে পারেন।
এ বার ভেটকির ফিলেটাকে ছোট ছোট টুকরো করে প্যানে দিন ও হালকা তেলে খুব ভাল করে নাড়তে থাকুন। এতে এবার গরম মশলা গুঁড়ো, স্বাদ মতো নুন ও চিনি দিন। পুরটা ভাল করে ভাজা ভাজা হয়ে এলে গ্যাস বন্ধ করে ঠান্ডা হতে দিন। এর পর আগে থেকেই সেদ্ধ করে রাখা আলুগুলো কে চটকে নিতে হবে। মাছের পুরের সঙ্গে মিশিয়ে কাঁচা লঙ্কা দিন।
পাটিসাপটার জন্য একটি পাত্রে ময়দা, সুজি, অল্প ঘি, নুন দিয়ে একটা পাতলা মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি এমন বানাতে হবে যেন প্যানে দিয়ে ছড়ানো যায়। অনেকটা চালের গুঁড়ি দিয়ে পাটিসাপটা বানানোর মতোই থকথকে করতে হবে এই মিশ্রণ। এ বার একটা গরম ফ্রাইং প্যানে, ঘি ব্রাশ করে, মিশ্রণ টি দিয়ে পাটিসাপটার মতো গোল করে ছড়িয়ে দিন। অল্প আঁচে করতে হবে গোটা রান্নাটি। মিশ্রণটি পাটিসাপটার মতো সামান্য ভাজা হয়ে এলেই এর মধ্যে মাছের পুর লম্বা করে মাঝখানে রাখুন ও দু’দিক থেকে রোল করে নিন পাটিসাপটার মতো। খুন্তি দিয়ে উপরটা একটু চেপে প্লেটে নামিয়ে দিন এবং কাসুন্দির সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন।
আরও পড়ুন: পলান্ন, বিরিয়ানি বা ভুনি খিচুড়ি বানানোর কায়দাকানুন
ইলিশ পানিখোলা (৩ জনের মতো)
শেফ: দেবযানী চট্টোপাধ্যায় আলম
উপকরণ:
ইলিশ মাছ: ৬ পিস (প্রতিটি পিস ১০০ গ্রাম ওজনের)
পেঁয়াজ: ৩ টি
সর্ষের তেল: ৪ টেবিল চামচ
নুন: স্বাদ মতো
হলুদ গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ (চাইলে ব্যবহার নাও করতে পারেন)
প্রণালী:
মাছের টুকরোগুলো ভাল করে ধুয়ে নুন মাখিয়ে রাখুন। হলুদ ব্যবহার না করেও এই পদ তোফা খেতে হয়। তাই হলুদ নিয়ে কোনও অতিরিক্ত আবেগ না থাকলে তা অনায়াসে বাদ দিতে পারেন। পিঁয়াজগুলোকে ভাল করে কুঁচিয়ে রাখুন। এ বার একটা পাত্রে পিঁয়াজ কুচি, ১ চা চামচ নুন, ৩ টেবিল চামচ সর্ষের তেল দিয়ে ভাল করে মাখান যত ক্ষন না পর্যন্ত পিঁয়াজ থেকে জল বেরচ্ছে। মিনিট দশেক পর আস্তে আস্তে পিঁয়াজ কুঁচিগুলো থেকে জল ছাড়বে ও খুব হালকা গোলাপি রঙের হয়ে যাবে।
এর পর এতে চেরা কাঁচালঙ্কা দিয়ে সেটাও ভাল করে মাখান। যাঁরা ঝাল খেতে চান না, তাঁরা লঙ্কার পরিমাণ কমাতে পারেন। এ বার একটা প্যানে এই মাখানো পিঁয়াজ দিয়ে এর উপরে মাছের টুকরেগুলো দিন ও প্যান ঢাকা দিয়ে ১০ মিনিট অল্প আঁচে রান্না হতে দিন। এ বার এতে ২ কাপ জল ও লঙ্কা দিন। এর আগে নুনটা চেখে নিন। এবাপ এক টেবিল চামচ সর্ষের তেলও যোগ করুন। প্যান টা ঢাকা দিয়ে আরও ৫-৭ মিনিট অল্প আঁচে রান্না হতে দিন। মাছের সঙ্গে বেশ ভাল পরিমাণ ঝোল রাখতে হবে। গরম ভাতের সঙ্গে ইলিশের এমন সাদাটে ঝোল দিয়েই সাবাড় করতে পারেন পুরো পাত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy