চোদ্দ শাক কী ভাবে রাঁধেন সুদীপা? ফাইল চিত্র।
কালীপুজোর আগের দিন, ভূত চতুর্দশীর সকালে বাজারে গিয়ে চোদ্দো শাক কিনতেই হয়। এ প্রথা বহুকালের। উত্তর কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় এই রীতি একদম নিয়ম মেনে পালন করা হত বাড়িতে। এখনও হয়। ছোটবেলায় দেখতাম, বাজারে চোদ্দ রকম শাক আলাদা আলাদা করে বিক্রি হত। বাজার থেকে কিনে এনে বাড়িতে তা কুটতে বসে যেতেন মা-কাকিমারা। আর নিজের বাড়ি বলে শুধু নয়, পাশের বাড়ির কাকিমা, জেঠিমারাও দল বেঁধে চলে আসতেন শাক কুটতে। সারা সকাল ধরে চলত শাক বাছা। পাশাপাশি বসে বঁটি দিয়ে শাক কুটতে কুটতে কত যে গল্প, হাসাহাসি, ঠাট্টা-তামাশা চলত, তা বলে শেষ করা যাবে না!
চোদ্দ শাক খাওয়া এখন হয়তো শুধু নিয়ম বা রীতি হয়ে উঠেছে, কিন্তু একটা সময়ে এই প্রথাকে ঘিরেই আনন্দ ভাগ করে নিতেন বাড়ির মহিলারা। চার দেওয়ালের চৌহদ্দিতে হেঁশেল ঠেলতে ঠেলতেই যাঁদের দিন কাটত, তাঁদের কাছে এই চোদ্দ শাক রান্নার দিন ছিল হইহুল্লোড়ের দিন। এখনও মনে পড়ে পাশের বাড়ির ছোট কাকিমা বলতেন, “একা নয়, সকলে একসঙ্গে মিলেই চোদ্দ শাক খাব। রান্নাও একসঙ্গেই হোক না!” সে সব দিন এখন আর কোথায়? বাজারে তো এখন চোদ্দ রকম শাক পাওয়াও যায় না মনে হয়। সব মিলিয়ে-মিশিয়েই বিক্রি হয়।
শাক মানে তো প্রকৃতি। বাড়ির বড়রা বলতেন, চোদ্দ শাক খাওয়া মানে প্রকৃতির শক্তিকে নিজের মধ্যে গ্রহণ করা। মা আদ্যাশক্তি তো প্রকৃতির মধ্যেই থাকেন। শাক, লতাপাতার মধ্যেই তাঁর শক্তির আধার। তাই পুরাণ মেনেই চোদ্দ শাক খাওয়ার রীতি রয়েছে। আবার এর বৈজ্ঞানিক দিকও রয়েছে। একটা সময়ে তো আর হাত বাড়ালেই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যেত না। তখন ভেষজ উপাদানের উপরেই নির্ভর করতেন মানুষজন। আর শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি উন্নত করে। শাক তো জীবাণু প্রতিরোধী। শরীর ভাল রাখবেই।
ছোটবেলায় দেখতাম চোদ্দ রকম শাক বলতে ওল, কেও, বেতো, কালকাসুন্দে, নিম, সর্ষে, শালিঞ্চে, জয়ন্তী, গুলঞ্চ, পলতা, ভাঁট, হিঞ্চে বা হেলেঞ্চা, শুষনি ও শৌলক বা শুলকা শাক কিনে আনা হত। যদিও এখন চোদ্দশাকের যে আঁটি বাজারে বিক্রি হয় তাতে সব রকম শাক থাকে না। পালং, লাল শাক, মূলো, মেথি, পাট শাক, গিমে শাক, পুঁই, কুমড়ো, কলমি, সর্ষে, নটে, হিঞ্চে, শুষনি মিলিয়ে-মিশিয়ে চোদ্দ শাক বানানো হয়। সমস্ত শাক ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। ভাল করে শাক কুটে নিয়ে কড়াইতে কালো জিরে, শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে তার মধ্যে কুচিয়ে রাখা শাক দিয়ে দিতে হবে। চাইলে রসুনও দিতে পারেন। নুন, হলুদ, কাঁচা লঙ্কা আর অল্প জল দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে। শাক সিদ্ধ হয়ে গেলে অল্প চিনি দিয়ে নেড়ে নামিয়ে নিতে হবে। গরম ভাত ঘি দিয়ে মেখে চোদ্দ শাক ভাজা দিয়ে খেতে ভাল লাগবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy