Advertisement
১২ অক্টোবর ২০২৪
আমার ডায়েরি

দুজন ভোট দিলেও, লড়ে যাব

৭ জানুয়ারি ২০১৫: হ্যাঁ ঠিকই, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে তা হলে চেনেননি। বলেছিলাম এবিপি আনন্দ-এর লাইভ ইন্টারভিউতে। বলেছিলাম, আমার রাজনীতির পরিভাষা কেমন। সব রাজনৈতিক দলের সব ভালমানুষ, যাঁরা হারজিতের কথা না ভেবে মানুষের জন্য রাজনীতি করবেন, তাঁরা সবাই নিজ নিজ দলে, সামনে এগিয়ে আসুন।

ছবি: মণীশ মৈত্র

ছবি: মণীশ মৈত্র

রূপা গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০০:১৯
Share: Save:

• ৭ জানুয়ারি ২০১৫
হ্যাঁ ঠিকই, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে তা হলে চেনেননি। বলেছিলাম এবিপি আনন্দ-এর লাইভ ইন্টারভিউতে। বলেছিলাম, আমার রাজনীতির পরিভাষা কেমন। সব রাজনৈতিক দলের সব ভালমানুষ, যাঁরা হারজিতের কথা না ভেবে মানুষের জন্য রাজনীতি করবেন, তাঁরা সবাই নিজ নিজ দলে, সামনে এগিয়ে আসুন।
অনেক তো হল টাকার খেলা, ভূরি ভূরি বাড়ি গাড়ি, তাও আরও চাই, আরও চাই! কত সিকিয়োরিটি ডিপোজিট লাগে মানুষের? জন্ম তো একটাই।
মনে আছে ছোটবেলায় জেঠুর বন্ধুরা লেক ক্লাবে এক দিন বলেছিল জেঠুকে, ‘ও মানিকদা, সিইএসসি-তে এত বড় চাকরি করেন, ছেলের জন্য একটা বাড়ি বানালেন না? অ্যাম্বাসাডর চালিয়ে ছুটি পেলেই হিল্লিদিল্লি বেড়িয়ে পয়সা খরচ করেন?’ জেঠু বলেছিল, ‘ছেলেকে মানুষ করেছি। দাঁড়িয়ে গেছে। তার জন্য সম্পত্তি বানিয়ে রেখে তাকে অকর্মণ্য করতে চাই না। নিজে খেটে বানাবে।’

• ৮ জানুয়ারি

মোবাইল ফোনটাকে মাঝে মাঝে এক ভয়ংকর জ্বালাতনের মতো মনে হয়। পর পর ফোন খারাপ হচ্ছে— অনেক শুভেচ্ছাবার্তা, আনন্দও হয়, আবার ভয়ও করে এই হ্যাং করে গেল— গেলও তাই। রিপ্লাই করব কী, thank you লিখতে লিখতে than পর্যন্ত লেখা হচ্ছে না, আরও পাঁচটা এসএমএস।

তার মধ্যে একটা ফোন, হ্যাঁ রে, তোর ওয়েবসাইট-টা কী হল? খুললে কী সব চাইনিজ দেখাচ্ছে? যা! কুড়ি বছরেরও বেশি পুরনো ওয়েবসাইট। হ্যাক মানে? এ কী! একেই বলে পলিটিক্স? পেছন থেকে অতর্কিতে ছুরি মারা? আসলে সিনেমার নতুন কাজ আপডেট করতে বিশেষ মনে থাকত না, তাই একটা বন্ধুকে বলেছিলাম, বিজেপি জয়েন করলাম, এটা সাইট-এ আপডেট করতে... যাকগে, ওয়েবসাইট দেখে কি আর দেশের মানুষ আমায় চেনে? খোঁজখবর করে অনেক কিছুই বুঝলাম, কিন্তু বিষয়টা নিয়ে বেশি লড়তে ইচ্ছা করেনি। পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমার ‘ওয়েবসাইট হ্যাকিং’ সামান্য একটা ইস্যু।

বাড়ির সবাইকে নিয়ে বোলপুর যাওয়ার প্ল্যান ছিল, বেরিয়ে পড়লাম। ফুল, গাছপালা সহ আলোছায়ার শান্তির ‘ছুটি’। তাতে আবার চিরাচরিত ডোর-বেল নেই, আছে পিতলের ঘণ্টা-হাতুড়ি। ঠিক যেমনটা থাকত ছোটবেলার স্কুলে। মালি কী গাছ লাগিয়েছে এই সিজনে, সেই সব নিয়ে আওয়াজ তুলতেই ছেলের ধমক, ‘আর খিটখিট কোরো না মা, ছাড়ো, যা করেছে, যথেষ্ট করেছে, বি হ্যাপি!’ বলেই ঢংঢং করে দিল ছুটির ঘণ্টা বাজিয়ে।

• ১৬ জানুয়ারি

‘খামোশ সা অফসানা’ সিরিয়ালের শুটিং-এর কাজে দিল্লি এসেছিলাম। মূক ও বধির এক মহিলার চরিত্র। অভিনয় করার জন্য এক বন্ধুর কাছে ট্রেনিংও নিয়েছি। ভাষাটা তো শিখলাম, দুঃখটা কি আসলে বুঝলাম? কিছু তো করিনি আমরা। আমাদের রাজ্যে দিদির দৌলতে শুধু খয়রাতি, ফ্রি-তে কী দিচ্ছি, তার হিসাব। নিদেনপক্ষে সিভিক পুলিশের চাকরি দিয়ে দেবেন, এ ক্ষেত্রে তো সেটাও হবে না।

আসলে এডুকেশন দেওয়ার রীতি তো এই রাজ্যে উঠে গেছে বাম আমল থেকেই। রাইটিং স্কিল আছে কি না, বা পেন্টিং স্কিল, কালার সেন্স কত, কোন বাচ্চার কী স্কিল আছে তা পরখ করার পদ্ধতি— এ সব আছে সরকারি স্কুলে? সমস্ত স্কুলে কেন মূক-বধিরের ল্যাংগোয়েজ পড়ানো হবে না? অ্যাট লিস্ট, সপ্তাহে একটা ক্লাস, যাতে সবাই আমরা বুঝতে পারি ওদের কথা? যাতে ওরা ভয়ে গুটিয়ে না থাকে?

যা-ই হোক, কাল ভোরে ফ্লাইট, ব্যাক টু কলকাতা। রাতে একবার গডকড়ীজির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলাম। বাড়ির অফিসেও, রাত ন’টাতেও খুব ভিড়। বললেন, বিজেপি-তে নিয়ম মেনে চলাটাই সবচেয়ে বড় পাঠ। যা কাজ দেওয়া হবে, সেটা করো, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ো, মানুষ এক দিন তোমায় যোগ্য সম্মান দেবে, রাজনীতিতেও।

পরের অংশ পড়তে ২ ক্লিক করুন

• ২৯ জানুয়ারি

নতুন করে চেনা যেন নিজেকে। বড় সংবাদমাধ্যমের বড় পার্টি। গান-বাজনা, হইহই, বড় বড় লোকের সমাবেশ। আমার জগতের নামীদামি লোক, যাঁদের আজকাল নামের সঙ্গে এমপি জুড়ে ডাকতে হয়। সব যেন অচেনা লাগছে। ভয়ে বেশি কথা বলছে না। অচ্ছুৎ যেন আমি। কথা বললে ছবি উঠে যাবে, আর কাল সকালে সে ছবি বেরোলে, দিদি বকবে।

দু-তিন দিন আগে সুন্দরবনে বালি-তে ম্যানগ্রোভ ফেস্টিভ্যাল ছিল, আর গত পরশু বীরভূমের অঙ্গরগড়িয়া থেকে ঘুরে এলাম। রোদে ঝলসানো মানুষগুলোকে বললাম, আয়রন ট্যাবলেট কেন খাওয়া প্রয়োজন। সরকারি ওষুধগুলো কেন যে টাইমে আসে না, কোথায় যে খাতায় লেখা হয়, আর বিক্রি হয়ে যায়! বাঘের সঙ্গে লড়াই করত অনিল মিস্ত্রি, সে এখন জঙ্গলের মানুষদের শেখায়, জঙ্গলে কী ভাবে বাঘ বাঁচানো যাবে। কোন সুদূর সুন্দরবন থেকে মেয়েদের নিয়ে সিউড়িতে এসে তাদের প্যারামেডিক্যাল ট্রেনিং দেওয়া যায়, তার কাজ করার চেষ্টা করি আমরা, আমাদের এনজিও-র মাধ্যমে। আজও যে সুন্দরবনে হাতুড়ে ডাক্তাররা রুগিদের অপারেশন করছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। কোথাও যে অঙ্কগুলো মেলাতে পারছি না। কবে পারব? এই হাসির ফোয়ারায় যোগ দিতে পারলাম না কেন? বাড়ি এসে চিৎকার করে কাঁদলাম খানিক ক্ষণ। নাহ্! এই গয়না, ফরেন ট্রিপের জগৎ থেকে অনেক দূরেই ছিলাম, আরও যেন ছিটকে গেলাম। যে দিন মিছিলের পেছনের সারির মানুষগুলোর দুধে-ভাতে চেহারা হবে, নিজের ইচ্ছায়, মিছিলে যোগদান করতে আসবে, আর সে দিন হয়তো রাজনীতিতে পড়ে থাকার প্রয়োজন পড়বে না আমার।

পাড়ুইতে, একটি মেয়েকে গাছে বেঁধে মারা হয়েছে, টিএমসি অ্যান্টিসোশ্যাল আর পুলিশ মিলে। ‘বিছুটি পাতা কেস’, ‘সাত্তোর নির্যাতিতা’, এই সব নাম লেখে কাগজে— শমীকদা সবটা বললেন, খবরের কাগজের বাইরের সব খবর। ‘নৃশংসতা’ শব্দটার তো মানে আছে একটা, এ যেন সবের ঊর্ধ্বে— এ আমার পশ্চিমবঙ্গ? কার তৈরি? বুদ্ধিজীবীদের? এই সব পলিটিশিয়ান, অ্যাক্টর, হু’জ হু-রা ঘুরছেন, বিছুটি পাতা মাখবেন? দেখবেন কেমন লাগে?

দু’দিন পরেই ‘আরশিনগর’ আর ‘অন্য অপালা’র স্ক্রিপ্ট রিডিং। শুধু কথা দেওয়া আছে, তাই, না হলে কবে ‘না’ করে দিতাম। সারা গা চুলকোচ্ছে, উফ, বিছুটি পাতা যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ আমার গায়েই মাখাচ্ছে।

• ৭ ফেব্রুয়ারি

এক মাস এমনি এমনি কাটেনি, সকাল থেকেই ডিরেক্টর জন–এর সঙ্গে ঝগড়া চলছে আমার। ছবির নাম ‘আরো একবার’, ডেট বাড়িয়েই চলছে, রাজনীতির মানুষরা যেমন ‘আরও টাকা আরও টাকা’ করে, ও তেমন ‘আরও ডেট আরও ডেট’ করছে। অদিতি রায়, ‘অবশেষে’-র ডিরেক্টর, ওর শর্ট ফিল্ম প্রজেক্ট-টা করা হল না, টাইম বেরোল না। খুব স্নেহের পাত্রী আমার। নীল আর অদিতি।

আজ এক বন্ধুর প্রোগ্রামে বড়বাজারে, পুস্তক বিতরণী অনুষ্ঠানে গেছিলাম। অনেক বাচ্চাদের সিলেবাসের বই বিতরণ করে এই সংস্থা। প্রচুর প্রচুর ছাত্র-ছাত্রীর ভিড়। বইয়ের নেশা তুলে দিলাম কেন আমরা? টিভি এল, কম্পিউটার এল। সিপিএম অনেক বাধা দিয়েছিল। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শুধুই ইন্টারনেটে বই পড়া শুরু হল। গড়িয়াহাটে বইয়ের দোকানগুলো, বেশির ভাগ উঠেই গেল। শাড়ি-জামার দোকান বেড়েই চলেছে। তবে সরকারি হ্যান্ডলুম স্টোরগুলো লাটে তুললাম আমরা। আরআইসি, তন্তুজ-এর বাঁধা মাইনে। বিক্রি হোক চাই না-হোক চাকরি আমার পাকা। তাই টুলে বসে ঝিমোব আর রাজনীতির আলোচনা করব। রাজনীতি তুঙ্গে, সিপিএম-কে পালটে টিএমসি-কে আনব। তা হলে ধর্মঘট করিয়ে আবার আমার মাইনে বাড়াব। সিপিএম-ই শিখিয়েছে, ৩৪ বছর ধরে, মালিক চোর। যা! এ ক্ষেত্রে তো মালিক আমার সরকার। সরকারকেই ঠকাই। কারখানাগুলোয় লালবাতি। আরে, সোনার ডিম পাড়া মুরগি— এ কি মেশিনের ডিম নাকি, পাড়তেই থাকবে— সিপিএম গিয়ে টিএমসি আসবে, ডিম তো দরকচা মারা পশ্চিমবঙ্গ হয়ে রয়ে গেল— খাবে কী মানুষ? যাকগে, কাল আবার ভোরে ওঠা, সামনের দু’তিন দিন কৃষ্ণগঞ্জ, বনগাঁ যাওয়ার আছে। বাই-ইলেকশন। তবে টিকিটের জন্য পার্টি চেঞ্জ করা ব্যাপারটা আমার পছন্দ নয়। মতুয়া ভোটটা হয়তো আসবে, কিন্তু জাতের হিসেবে ভোট আলাদা হবে কেন। কেটে গেলে সবার শরীর দিয়ে তো লাল রক্তই বেরোয়!

• ১৫ ফেব্রুয়ারি

খিদিরপুরের মাইকেল মধুসূদন দত্ত লাইব্রেরির একটা অনুষ্ঠানে অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের নিমন্ত্রণে সন্ধেটা খুব সুন্দর কাটল। বহু পুরনো বই। যত্নে রাখা। কিন্তু এই লাইব্রেরি-সংস্কৃতিটা আমাদের ছোটবেলায় যতটা বেশি ছিল, তা আর আমরা ধরে রাখতে পারলাম না। পলিটিকাল ক্যাডার দিয়ে শিক্ষকতা করানোর রেওয়াজ করল রাজনীতিবিদরা। আমার ঘরের ছেলেটা চাকরি পেল, আমার সংসারটা বেঁচে গেল। ছেলেটাকে বদলে শুধু ঝান্ডা নিয়ে হাঁটতে যেতে হয়। আমার ‘একটু কম যোগ্য’ ছেলেটির হাতে তুলে দিলাম দশ হাজার বাচ্চার ভবিষ্যৎ। অল্পশিক্ষিত, অপরিণত করে রাখলাম পরের প্রজন্মের একাংশকে। আর আমার চাকরি বাঁচাবার তাগিদে ঝান্ডা থেকে ফ্ল্যাগটা খুলে নিয়ে প্রয়োজনে তাকে লাঠি হিসেবে ব্যবহার করলাম মানুষ পেটানোর জন্য। জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে নোংরা খেলা হল রাজনীতির, যাতে মানবাধিকার কমিশনটাকে পশ্চিমবঙ্গে ঠুঁটো করে রাখা যায়। নিপাট রসিক সম্মাননীয় মানুষটির ওপর রাজনীতির লাঠির বাড়ি পড়ল। কোথায় নামিয়ে এনেছেন দিদি সমাজটাকে?

• ১৯ মার্চ

শতরূপা সান্যালের ‘অন্য অপালা’র শুটিং চলছে বসিরহাটের এক রাজবাড়িতে। সন্ধ্যাবেলা হইহই, পাড়ার কিছু ছেলের হুমকি, ধমকি। কিছু টাকা-পয়সা ছাড়তে হবে। বসিরহাটে এই ক’দিনে এত মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, এক জনের বাড়িতে একটা গেস্ট হাউসের মতো করে আমার থাকার ব্যবস্থাও হয়েছে। তারা, আর পাড়া জুড়ে সবাই লজ্জিত এই ঘটনায়। তৃণমূলের কিছু মানুষও এসে ক্ষমা চেয়ে গিয়েছে। বলল, রাজ্যে কাজের বাজার ভয়ংকর, তোলা তুলে সংসার চালানোটাই একমাত্র শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অবশ্য এই সব চমকানিতে শতরূপা আর আমাকে কাত করতে পারেনি এরা। বেশ কিছুটা বেগ দিয়েছে অবশ্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কর্তাব্যক্তিরা। হেয়ার ড্রেসার, মেকআপ ম্যানদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি।

এখন তো ফেডারেশন-এর কর্তাব্যক্তি সরকার পক্ষের গণ্যমান্য মানুষ— যাঁদের সিনেমার কার্যপদ্ধতির সঙ্গে কোনও দিনই কোনও সম্পর্ক ছিল না। কেন শুটিং বন্ধ করে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে যোগদানের নির্দেশ আসে কেউ জানে না। এই সব আদেশ মেনে চললে প্রোডিউসার চ্যানেল থেকে আরও প্রোজেক্ট পাবেন, সিনেম্যাটোগ্রাফার একই সঙ্গে দশটা সিরিয়ালের ‘ডিরেক্টর অব ফোটোগ্রাফি’ হয়ে কাজ করবেন, অ্যাসিস্ট্যান্টদের দিয়ে কাজ করাতে পারবেন, এগজিকিউটিভ প্রোডিউসার বা ডিরেক্টর বা প্রোডিউসার হতে পারবেন সহজে, অভিনেতারা কাজ পাবেন এবং দিদির বাড়ি মুড়ি খেতে যাবেন। রাঘববোয়ালরা ছোট মাছ খেয়ে ময়দান খালি করতে পারবেন। ডিস্ট্রিবিউশনের মাঠ পরিষ্কার, সরকারি ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে শপিং মল বানাতে পারবেন। আপনাদের কি সত্যিই খুব ভাল লাগছে? দিদিমণির বিদেশযাত্রা স্পনসর করতে হচ্ছে, ইলেকশন ফান্ডে জমার হিসেব, বড় বড় অ্যাওয়ার্ড ফাংশনে কোটি টাকার খরচ, মাঝখান থেকে সরকারি তহবিল ধারে চলছে, অনেক তো হল, মেরুদণ্ড তো বেঁকে বেঁকে প্যারালিসিস হয়ে যাবে।

পরের অংশ পড়তে ৩ ক্লিক করুন

• ২৮ মার্চ

সামনে কর্পোরেশন ইলেকশন, কোনও রকমে শুটিং শিডিউল শেষ করে ক্যাম্পেনিং-এর শিডিউল প্ল্যান করব। নতুন ছবি, হিন্দি সিরিয়াল— একে একে ক্যানসেল করে চলেছি, তার ওপর একেবারে ঘুম কেড়ে নেওয়া ঘটনা। কানাঘুষো শুনলাম, আমাকে নির্বাচনে লড়তে বলবে বেঙ্গল বিজেপি, বললেন রাহুলদা। আমার মজাই লাগল, একটা নতুন ব্যাপার। আবার ভয়ও করছে, কারণ এ-সবের কোনও ধারণাই নেই। শুটিং শেষ হতে আরও সাত দিন, এ ভাবে প্রস্তুতি ছাড়া ইলেকশন লড়া...

আমার তো বাংলা বিজেপি-তে বলভরসা শমীকদা। ফোন করে বললাম, শিগগির আসুন, রাহুলদাকে বোঝান: আমি পারব না। এই সব চলতে চলতে কথায় কথায় বেরোল, আমার ভোটার কার্ড সোনারপুরের ঠিকানার। রাহুলদা, শমীকদা, অফিসের সবাই শুনে অবাক। সবাই জানে আমি টালিগঞ্জেই থাকি পঁচিশ বছর ধরে। ছিল ভোটার কার্ড এখানেই। হঠাৎ এক বার কর্পোরেশন ইলেকশনের আগে দেখলাম, ভোটিং স্লিপ বাড়িতে এল না। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, নাম কেটে গিয়েছে লিস্ট থেকে। শেষে মা সোনারপুরের বাড়ির ঠিকানায় করিয়ে দিয়েছিল। যাই হোক, এ বার অফিস থেকে চেষ্টা করছিল উত্তম। সরকার পক্ষের লোক নই তো, স্পেশাল কেয়ার নিয়ে শর্ট নোটিসে ভোটার কার্ড চেঞ্জ করে দেবে, এ ভাবাই যায় না।

• ১৪ এপ্রিল

ঠকঠক করে কাঁপছিলাম। চোখের কাছে আঙুল এনে বাপ-মা-ঠাকুরদা নির্বংশ করে গালাগালি। শুনিনি, দেখিনি, রাজনীতির কত রূপ! এদের জন্যেও সিনেমা করেছি, ভাবতে লজ্জা করছিল। দিদির Paid দুষ্কৃতী ছাত্রছাত্রীরা। তার পর এক দল স্টেজের পায়া খুলে আমায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করল। বুদ্ধি করে বসে পড়লাম ধপ্‌ করে। যাতে চৌকিগুলো ভেঙে দিলেও, জোরে না পড়ে যাই। পারলাম না আমার সহকারী ছেলেটাকে বাঁচাতে। ও এক বার সামনে এসে বলতে চেষ্টা করছিল, চলুন এখান থেকে। যেই বুঝল ও আমার লোক, ধুমধাম মার। দুটো থান ইট দিয়ে গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিল। বেলা তিনটে থেকেই আমাদের স্টেজ জবরদখল করে, ফ্ল্যাগ ছিঁড়ে নামিয়ে, নিজেদের ফ্ল্যাগ লাগিয়েছে টিএমসি-র ছেলেরা। গোপালনগর পৌঁছনোর আগেই শুনেছিলাম, ‘গন্ডগোল হচ্ছে, ফিরে চলো, আমরা পুলিশকে খবর দিচ্ছি, সিচুয়েশন হ্যান্ডল করে নেবে।’ জোর করে গেছি, যখন শুনেছি পারমিতা নামে একটি মেয়ে ক্যান্ডিডেট, ওখানেই আছে, একা সব সামলাচ্ছে। পুলিশ পারমিশনের পেপারটা নিজে চোখে দেখেছি, তাই বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ডেঁটে বসে থেকেছি ওই আধভাঙা স্টেজে।

সন্ধেয় দুটো ভাল জিনিস পাওনা হয়েছে। প্লেন পোশাকে পুলিশের চার জন অফিসার আমাকে আর পারমিতাকে বাঁচিয়ে দিল সে দিন। আর খিদিরপুর থেকে পঁচিশটা বাইকে করে হইহই করে চলে এল পঞ্চাশটা ছেলে। খবর পেয়েছে, আমাদের টিএমসি মারছে। তছনছ করে দিত আজ থানা আর ওই গুন্ডাদের। ওদের হাত ধরে আমি একটাই কথা বলেছিলাম, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আর একটা অন্যায় কোরো না। আমাদের কর্মীরা ওই অফিসারদের হাতজোড় করে বলল, ‘থ্যাংকস যে আপনারা আমাদের দিদিকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন আজ।’ আমরাই পারতাম আমাদের ছেলেদের মানুষ করতে। আমরাই তাদের, নিজেদের স্বার্থে গুন্ডা বানিয়েছি।

পুলিশ পরিত্রাণ চাইছে মমতা সরকারের হাত থেকে, এটা নিশ্চিত।

যাই হোক, অত ভাবার সময় নেই, কালকে বড় র‌্যালি, বাবুল টাইম দিয়েছে আমাকে।

• ১৫ এপ্রিল

উফ, দৌড়ে কোমর ব্যথা হয়ে গেছে আজ। একে তো সারা মাস দু’বেলা মিলিয়ে মিনিমাম পাঁচটা করে ওয়ার্ডে প্রচার। ১৪৪টা ওয়ার্ড, সব জায়গায় কি যাওয়া সম্ভব? যেখানে পৌঁছতে পারব না সে-ই অভিমান করছে, আমারও মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যতই বাবুলের সঙ্গে পনেরো-কুড়ি বছরের পরিচয় হোক, তবু তো কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। পাড়ার ছেলেমেয়েরা যথারীতি ‘রূপাদি, তোমায় টাইম দিয়েছে, আমাদের ওয়ার্ডেই পুরোটা ঘোরাব।’ কিন্তু তা আবার হয় নাকি? রুট হল, মেন রোড ধরে, ভারত পেট্রোলিয়ামের মোড় থেকে শুরু। স্টেজে কে থাকবে, সেই নিয়ে সমস্যা, রাহুলদার ওয়ার্ডও পাশেই, ৯৭, সেখান থেকে রাহুলদাকে নিয়ে র‌্যালি করে এলাম ৯৪-এর স্টেজে, সেখান থেকে ভেবেছিলাম সামনের একটা গাড়িতে আমি থাকব, রুট যাতে ঠিক থাকে। অত গাড়ির ভিড়, আনোয়ার শাহ রোড, টালিগঞ্জ ফাঁড়ি দিয়ে নিউ আলিপুর, খিদিরপুরের কিছুটা হয়ে ভিক্টোরিয়ার সামনে দিয়ে, রবীন্দ্রসদন মেট্রো স্টেশন, হাজরা, রাসবিহারী, গোলপার্ক হয়ে টালিগঞ্জ থানায় শেষ হল। শেষমেশ রাজুর বাইকে ঘুরতে হল, আর খানিকটা দৌড়ে ম্যানেজ দিলাম। নিউ আলিপুরের রাস্তায় দুজন কর্মী বাইক থামিয়ে বলেছিল, ওদের গলিতে ঢোকাতে হবে, না হলে ওরা রাস্তায় শুয়ে পড়বে। ওদের নাকি কথা দিয়েছে কোনও নেতা। অবশ্য বাকিরা, ওদের বন্ধুরাই বলল, ছাড় ও-সব, রূপাদি ঠিকই বলেছে, এত গাড়ির লাইন, ছোট রাস্তায় ঢোকালে মানুষ নাজেহাল হবে ভিড়ে।

যাই হোক, আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিয়ে বিজেপি-র সবচেয়ে লম্বা কার র‌্যালি হল কলকাতার বুকে।

• ৮ মে

লোকাল সমস্ত মানুষের ভিড়— ক’দিন ধরে জায়গাটা পরিষ্কার করা হচ্ছে। সব প্রমাণ লুপ্ত করার জন্য মাটি ফেলা চলছে গাড়ি গাড়ি।

মে মাসের ঠান্ডায় দার্জিলিঙে ভালই শুটিং চলছিল ঋতু, ইন্দ্রাণী আর আমার শেষ শিডিউলের। কমিটমেন্টের শেষ বেলা। কিন্তু পিংলা ব্লাস্ট-এর খবর যে দিন পেলাম, সে দিন নিজের দুরবস্থার কথা নিজেই স্পষ্ট করে বুঝলাম। জানতাম, এই মানসিক অবস্থায় ঠিক করে শুট করতে পারব না। মনে আছে, খবরে বলছে মাত্র কয়েক জন মারা গেছে, এ দিকে ওখানকার টিএমসি, বিজেপি-র লোকেরা ফোনে আমাকে বলছে, সরকারি রিপোর্ট ভুল। সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ। নম্বরটা ১২-১৩ না ২১-৩১, তাতে কী ফারাক হল? যারা গেল, তারা তো গেল। তুষারদা ফোন করে জয়দা আর আমাকে বলেছিলেন, ‘দিদি এক বার আসুন, লোকাল মহিলারা এক বার আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে।’ তিন জন মানুষ কলকাতা থেকে, আর জনা কিছু স্থানীয় বিজেপি নেতা যেতে চেয়েছিলাম— পুলিশ কর্ডন করে দাঁড়িয়ে পড়ল। মারামারি করতে হবে! আমাকে আইনের জালে জড়াবে, আমি ভাঙচুর করব, তবে না রাজনীতি হবে!

• ৯ জুলাই

বাড়ি থেকে পনেরো মিনিটের রাস্তা, হরিদেবপুরে পঁয়ত্রিশ রাউন্ড গুলি চালাল টিএমসি-র লোকেরা। পুলিশ বেচারা লুকিয়ে পড়ল গুমটি ঘরে। রাজারাজড়ায় লড়াই হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। মায়ের কোল খালি হল। তাকে কেন মরতে হল, জানতেই পারব না। গেছিলাম দেখা করতে। অন্ধকার গলিতে মেরেই দিত আমায় আর জয়প্রকাশদাকে। এক জন টিএমসি মহিলা দু’হাত দিয়ে আগলে আমায় ওই মারমুখী টিএমসি জনতা থেকে বাঁচিয়ে বের করে আনল। জয়দার ঘাড়ে মেরেছে, পেছন থেকে, আবার আমার গাড়িতে লাথি, টোল খেয়ে গেল। মুখটা দেখিনি ওই মহিলার, স্পর্শটা মনে গেঁথে আছে। খুঁজে নেবই তাকে। রাজনীতির নোংরামির ঊর্ধ্বে উঠে আসা ওই মহিলাকে।

• ৩০ জুলাই

বৃষ্টি যেন থামেই না। জল বেড়ে চলেছে চতুর্দিকে। প্রতি বছরই তো হয়, বাংলার প্রচুর জায়গা চলে যায় জলের তলায়। মানুষ নেমে পড়ে মাঠে সবাই সবাইকে সাহায্য করতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক বছর বন্যা নিয়ে রাজনীতি করেছেন বামেদের বিরুদ্ধে। এ বার তাঁর ছানাপোনারা করলেন বিজেপির বিরুদ্ধে। আবার গাড়ি ভাঙা, ধাক্কাধাক্কি-গালিগালাজ। কই, এত বার সুন্দরবনে গেছি বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে, তখন তো কেউ কিছু বলেনি।

কাল রাতে হঠাৎ ঠিক করে ফেললাম, ভাই বোন বন্ধু সবাইকে বললাম, কে কী পারিস দে, সকালে বাজারে পাঠিয়ে চাল, মুড়ি, সব কেনালাম, রাতে বড়বাজারে ফোন করে দোকান খুলিয়ে ত্রিপল আনালাম— জয়দা, আমি। ভোর হতেই যা অ্যারেঞ্জ হল, কেনা হল, সব নিয়ে দুটো গাড়ি নিয়ে রওনা। আর বাকি জিনিস দোকান খুললে রামুরা নিয়ে আসবে।

বাড়ির চাল নেই, গাছ ভেঙে পড়েছে, হেঁশেল বন্ধ, জলে ডুবে আছে মাইল কে মাইল। হাবরায় পাঁচ-ছ’টা স্পটে, যেখানে পারছি দাঁড়াচ্ছি, ঘরের মানুষগুলোকে যা যা আছে সব ভাগ করে দিচ্ছি। কিন্তু এত কমে কী হবে?

কিছু ছেলে তাড়িয়ে বের করার চেষ্টা করল আমাদের আর বিজেপির সমস্ত কর্মীকে, যারা জলে ভিজে ভিজে সব মালপত্র ডিস্ট্রিবিউট করছিল। প্রচুর মানুষ রুখে দাঁড়াল, ওই ক’টা টিএমসি নেতার বিরুদ্ধে।

অসহায় মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোকে বার বার একটাই সান্ত্বনা দিয়েছি, ‘মুখ্যমন্ত্রী চলে আসবেন শুনেছি, একদম ভেবো না, আর একটা দিন, দেখো, উনি এসে সব ঠিক করে দেবেন, সরকারের সেই মেকানিজ্ম থাকে।’

মহিলারা হাত ধরে বার বার বলেছে, ‘কই এ ভাবে বিরোধী দলের কোনও মানুষকে তো কথা বলতে শুনিনি, আপনি তো জানতেই চাননি, কারা বিজেপি কারা সিপিএম কারা টিএমসি।’

পরের অংশ পড়তে ৪ ক্লিক করুন

• ৮ অগস্ট

কৈলাস বিজয়বর্গীয়জি’র সঙ্গে দেখা করার সুযোগ এল। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বোলিয়ে?’ ভাবলাম, এ আবার কী প্রশ্ন? কীসের কী বলব? Essay তো ঠিক করে আসিনি। যাকগে, আমার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা শেয়ার করলাম। টানা পঁয়তাল্লিশ মিনিট। কী বললাম অতশত মনে নেই। শুধু মনে আছে বলেছি, ‘এক জন, দুজন, পাঁচ জন নেতানেত্রী নিয়ে এত চিন্তাভাবনা মনকষাকষি না করে, নেতৃত্ব তৈরি করার সুযোগ করে দিন, পঞ্চায়েত, কর্পোরেশন, অ্যাসেম্বলি, পার্লামেন্ট মিলে পাঁচশো জন নেতানেত্রীকে সামনে এগিয়ে আনতে হবে। সমস্যা না দেখে সলিউশন খুঁজি। আমাকে একটু শিখিয়ে নিন।’

• ২৪ অগস্ট

কত ঘটনা, কত লিখব, এই ডায়রি তো হতবাক হয়ে যাচ্ছে। বরানগরে ওই মেয়েটিকে এমন লাঞ্ছনা করল, যে তাকে সুইসাইড করতে হল। বেচারা ওর দিদিটা প্রেগন্যান্ট। দেখেই ভয় করছিল। বার বার বোঝালাম, তুমি শান্ত হও, তোমার মধ্যে বাড়ছে ‘কৃষ্ণ’, পরের প্রজন্মের ধারক-বাহক সে হবে না, এমন কে বলতে পারে! থানায় গেলাম, ওসি-আইসিকে দেখে খারাপ লাগছিল। লোকাল টিএমসি নেতার ওপর বিরক্ত। কথা দিলেন ডিউটি পালন করবেন।

কিন্তু বরানগর যাব শুনে যে বয়স্ক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছিলেন, তাঁকে তো ভুলতে পারব না। বুড়ো-বুড়ির সংসার, আঠেরো বছরের তরতাজা একমাত্র ছেলেকে টিএমসি-র ছেলেরা ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে স্নানের, খেলার নাম করে পুকুরে ডুবিয়ে মেরে দিয়েছে। পুলিশ, কোর্ট-কাছারি, ঘুরে বেড়াচ্ছেন বছর ধরে, শুধু বিচার চাই।

যে মারল, যে মরল, দুজনেই তো মায়ের সন্তান। খুনির জন্ম দেব ভেবে জন্ম দিইনি তো তাকে! তা হলে সে খুনি কেন হল? যারা ডুবিয়ে মারল, বুড়ো-বুড়ির একমাত্র তরতাজা আঠারো বছরের ছেলেটাকে, তারা ঘুমোয় রাতে নিশ্চিন্তে?

• ১১ ডিসেম্বর

রাজ্যে বিজেপি প্রেসিডেন্ট নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তন হল। দিলীপদা প্রেসিডেন্ট হলেন। আন্দামানের প্রচারে বেশি করে আলাপ হয়েছিল। শক্ত খুঁটি।

আমার জন্য একটা পদ থাকবে নতুন কমিটিতে, এটাও শুনেছিলাম। ‘মহিলা মোর্চার প্রেসিডেন্ট’। হলও তাই। পরিবর্তন আমি খুব একটা বুঝিনি। পদের মহিমা নিয়ে আমি ভাবি না। তবে হ্যাঁ, দায়িত্ব বাড়ল অনেক। ন্যাশনাল মহিলা মোর্চা প্রেসিডেন্ট আমায় সরাসরি প্রোগ্রাম দেবেন এবং আমি তাঁকে রিপোর্ট করব।

• ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আজ শেষ হল। কৈলাসজি শিবপ্রকাশজি যে দিন বলেছিলেন, এই এত বড়, দশ দিনে ১৩৮ কিমি হাঁটার পথ— কামদুনি থেকে কাকদ্বীপ— আমায় পদযাত্রা লিড করতে হবে— ভাবিনি পারব। প্রতিটি নারী নির্যাতনের ঘটনা আমাদের এই শক্তি জুগিয়েছে। পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষ সাহস দিয়েছে আর এক পা চলতে। এত বড় মহিলা টিম আছে বিজেপি বেঙ্গল-এর, তা এই বার সবার সামনে উঠে এল। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে মহিলা টিমের দশ দিন ধরে এত দীর্ঘ পদযাত্রা আগে কখনও হয়নি।

• ৭ মে

‘রূপা, ক্যায়সি হো? উত্তর হাওড়াকে লোগ ক্যায়সে হ্যায়?’ কথাটা কানে বাজছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন, কেমন আছি আমি আর আমরা সবাই, এই উত্তর হাওড়ার মানুষ।

ভোটে লড়ব বলে খুব একটা তৈরি ছিলাম না। যত বার বীরভূম গিয়েছি হায়তুন্নিসার পাশে দাঁড়াতে, দুধকুমারদাকে ফিরিয়ে আনতে, তত বার অনেকে ভেবেছে, আমি বীরভূমে জমি বানাচ্ছি। রাজনৈতিক জমি বানাতে হয় শুনেছি। আলিপুরদুয়ার, হাবরা, বাসন্তী, শিলিগুড়ি, আসানসোল, দিনাজপুর, কোন জায়গার নাম বলব, আর কোনটাই বা বাদ দেব, কোথাও তো নিজের জমি বানাতে ছুটিনি।

এত বড় পদযাত্রা করলেন, এতগুলো নির্বাচনী কেন্দ্রের ওপর দিয়ে হাজার হাজার মানুষের ভালবাসা আর আশীর্বাদ কুড়িয়ে, ভবানীপুর, জোড়াসাঁকো, নিদেনপক্ষে নিজের টালিগঞ্জ ছেড়ে শেষে কিনা ‘উত্তর হাওড়া’?— বলেছে কত লোকে।

কৈলাসজি বলেছেন, লড়তেই হবে। শিবপ্রকাশজি প্রচুর ভরসা করেছেন আমার ওপর। অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। পূজাদি, মহিলা মোর্চার জিএস, এত কম দিনেই এত ভালবেসেছেন।

আমি তো প্রথমেই বলে এসেছি আমার রাজ্য সভাপতিকে, যেখানে বলবেন সেখানে লড়ব, আমি কোনও কর্মীর আকাঙ্ক্ষায় আঘাত করতে চাই না। শুধু অনুরোধ একটাই— এমন কোনও মানুষের বিরুদ্ধে আমায় লড়তে বলবেন না, যিনি ভালমানুষ হিসেবে পরিচিত রাজনীতিবিদ, যিনি মানুষের জন্য কাজ করেছেন বা করছেন।

গত এক বছর ধরে বাবা আমার আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে গেছে। এখন যা চাই, তা-ই দিতে পারে। বাবার ছবি সঙ্গে নিয়েই ঘুরি।

এখন নাকি রেজাল্ট বেরনো অবধি আমার কোনও কাজ নেই। আমি তা মনে করি না। কয়েকটা ওয়ার্ডে রিপোল করাতে পারলেই হোর্ডিং খুলিয়ে ফেলব, দেওয়াল পরিষ্কার করানো বাকি আছে। তা ছাড়া উত্তর হাওড়ায় বাড়ি খোঁজা চলছে। যদি দুজন মানুষও আমায় ভোট দিয়ে থাকেন, তাঁদের জন্যও আমি দায়বদ্ধ উত্তর হাওড়ার প্রতি। যে ইমোশনটাকে ছুড়ে না ফেলে দিলে নাকি রাজনীতি করা যায় না, সেই ইমোশনটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।

কানে বাজছে, ‘রূপা, কেয়া কেয়া করনা হ্যায় য়াহাঁ? কেয়া বাত করতি হো? দো লাখ লোগ হ্যায়, ফির ভি এক কলেজ নেহি হ্যায় য়াহাঁ?’

(শেষ)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE