Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
India Vs Bangladesh

সঞ্জু-সূর্যের দাপটে নজিরের ছড়াছড়ি, নিয়মরক্ষার ম্যাচে ছড়ি ঘোরাল ভারতই, টি২০ সিরিজ়েও চুনকাম বাংলাদেশ

দ্বিতীয় ম্যাচেই সিরিজ় পকেটে চলে আসায় শনিবার তৃতীয় ম্যাচ ছিল নেহাতই নিয়মরক্ষার। সেখানেও দাদাগিরি ভারতের। সঞ্জু স্যামসনের শতরানে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিল ভারত।

cricket

সঞ্জু স্যামসন (বাঁ দিকে) এবং সূর্যকুমার যাদব। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৪২
Share: Save:

ভারত বনাম বাংলাদেশের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল নেহাতই নিয়মরক্ষার। দিল্লিতেই সিরিজ়‌ পকেটে পুরে ফেলেছিল ভারত। কিন্তু কোচ গৌতম গম্ভীরের আমলে কোনও ম্যাচই ‘নিয়মরক্ষা’র হওয়ার সুযোগ নেই। তাই তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এমন খেলল ভারত, যা দেখে মনে হল এই ম্যাচের উপরেই সিরিজ়ের জয় নির্ভর করছে। গোটা ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করলেন ভারতের ব্যাটারেরা। চার-ছয়ে নজির গড়লেন। সর্বোচ্চ রান তুললেন। আরও কত নজির। এ বার ভারতে এসে পুরোপুরি খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে নাজমুল হাসান শান্তদের। টেস্ট সিরিজ়‌ের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ়েও চুনকাম। পাকিস্তানকে গিয়ে পাকিস্তানকে হারানোর পর এই ফলাফল বাংলাদেশের চোখ খুলে দিতে বাধ্য। শনিবার হায়দরাবাদে আগে ব্যাট করে ভারতের তোলা ২৯৭/৬-এর জবাবে বাংলাদেশ থেমে গেল ১৬৪/৭ রানেই। হার ১৩৩ রানে।

ভারতীয় ক্রিকেটে একটি চালু কথা রয়েছে। সঞ্জু স্যামসন সুযোগ যথেষ্ট পান। তবে কখনওই আস্থার দাম রাখতে পারেন না। শনিবার সঞ্জু বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর উপর ভরসা না রাখলে ভুল হবে। টি-টোয়েন্টি থেকে রোহিত শর্মা অবসর নেওয়ায় ওপেনারের জায়গা ভরাট করার জন্য কাউকে খুঁজে বার করতেই হত। সঞ্জুকেই সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রথম দু’টি ম্যাচে শুরুটা ভাল করেও আউট হয়ে গিয়েছিলেন। তৃতীয় ম্যাচে যে খেলাটা খেললেন তাতে ওপেনারের জায়গা আপাতত নিশ্চিত হয়ে গেল তাঁর।

ভারত ব্যাট করার সময়ে দেখে মনেই হচ্ছিল না মাঠে কোনও ক্রিকেট খেলা চলছে এবং সেখানে খেলছেন ২২ জন রক্তমাংসের ক্রিকেটার। মনে হচ্ছিল ‘বুক ক্রিকেট’ চলছে অথবা কোনও খেলার পুনঃসম্প্রচার হচ্ছে। প্রতি বলে চার-ছয়। ‘বুক ক্রিকেট’-এও এত দ্রুত রান ওঠে কি না সন্দেহ। সঞ্জু এবং সূর্যকুমার যাদব ঠিক সেই গতিবেগেই রান তুলছিলেন।

সঞ্জু নিজের মনোভাব পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন দ্বিতীয় ওভারেই। তাসকিন আহমেদকে পরপর চারটি চার মারলেন। পরের ওভারে খারাপ শট খেলে আউট হলেন অভিষেক শর্মা। তরুণ ওপেনার এই নিয়ে তিনটি ম্যাচেই ব্যর্থ হলেন। তবে অভিষেকের আউট হওয়া যেন শাপে বর হল ভারতের কাছে। বাংলাদেশের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল কয়েক মুহূর্তে।

সূর্যকুমারের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। সাদা চোখেই বোঝা যাচ্ছিল বল লেগ স্টাম্পের অনেকটা বাইরে পড়েছে। তবু উইকেটকিপার লিটন দাস এবং বোলার তানজিম হাসানের প্ররোচনায় ডিআরএস নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তৃতীয় আম্পায়ারকে ‘নট আউট’ দেওয়ার জন্য দ্বিতীয় বার রিপ্লে দেখতে হয়নি। ধারাভাষ্যকারেরাও অবাক হন বাংলাদেশের সিদ্ধান্তে। সুনীল গাওস্কর বলেই ফেলেন, ক্রিকেট শিখতে শুরু করা বাচ্চা ছেলেও এই ডিআরএস নিত না।

সন্ধ্যা যত গড়িয়ে রাতের দিকে গেল, ততই বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ হল। কোনও বোলারকেই রেয়াত করছিলেন না সঞ্জু-সূর্য। পাওয়ার প্লে-তে উঠে গেল ৮২ রান। চার, চার, চার, ছয় মেরে ষষ্ঠ ওভার থেকে ১৯ রান নেন সূর্য। সপ্তম ওভারেই সঞ্জুর অর্ধশতরান হয়ে যায়। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে ভারতের রানও ১০০ পেরিয়ে যায়।

আসল মুহূর্ত আসে দশম ওভারে। রিশাদ হোসেনের প্রথম বলে কোনও রান নিতে পারেননি সঞ্জু। পরের পাঁচটি বল মাঠের পাঁচ দিকে পাঠান সঞ্জু। এর মধ্যে চতুর্থ ছয়টি সবচেয়ে দূরে যায়। ওভার শেষের পর হাসি দেখা যায় কোচ গৌতম গম্ভীরের মুখেও। প্রথম দশ ওভারে ওঠে ১৫২/১। ধারাভাষ্যকারেরা তখনই বলাবলি করছিলেন, তিনশো উঠবে কি না। শেষ মেশ তিন রান আগেই থামল ভারত।

১৩তম ওভারের প্রথম বলে মেহেদি হাসানকে চার মেরে শতরান পূরণ করেন সঞ্জু। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর প্রথম শতরান। সঙ্গে সঙ্গে সূর্য গিয়ে জড়িয়ে ধরেন সঞ্জুকে। গোটা মাঠ এবং রিজার্ভ বেঞ্চে প্রত্যেকে উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান কেরলের ব্যাটারকে। তবে জুটি আর স্থায়ী হয়নি। পর পর দু’ওভারে সঞ্জু এবং সূর্য ফিরে যান।

তবে ভারতের রান রেট তাতে এক মুহূর্তের জন্যও কমেনি। নতুন দুই ব্যাটার রিয়ান পরাগ এবং হার্দিক পাণ্ড্যও চালিয়ে খেলতে থাকেন। ১৪ ওভারের মধ্যে ২০০ পেরিয়ে যায় ভারত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যা দ্বিতীয় দ্রুততম।

শেষের দিকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মনোভাব কোথায় এসে ঠেকেছিল তা বোঝা গিয়েছে পর পর দু’টি ঘটনায়। প্রথমটি ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে। মুস্তাফিজুর রহমানের বল হার্দিকের প্যাডে লেগেছিল। হার্দিক দাঁড়িয়ে থাকলেও উল্টো দিকে থাকা রিয়ান মাঝ পিচ পেরিয়ে যান। সামনে থাকা বল ছুড়ে বোলারকে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল লিটনের। তিনি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বোলারের মাথার উপর দিয়ে বল ছোড়েন। তত ক্ষণে হার্দিক অপর প্রান্তে পৌঁছনোর দৌড় শুরু করে দিয়েছেন। লিটনের ছোড়া বল নাজমুল ঠিক করে ধরতেও পারেননি। ফলে হার্দিক নিরাপদে ক্রিজ়‌ে পৌঁছে যান।

পরের ঘটনাটি পরের বলেই। রিয়ানের ব্যাটের কানায় লেগে শট উপরে উঠে যায়। ইমন ঝাঁপিয়ে চেষ্টা করলেও বল তালুবন্দি করতে পারেননি। তবে লং অফ থেকে মাহমুদুল্লার পক্ষে দৌড়ে আসা সহজ ছিল। ক্যাচটিও তাঁরই ছিল।

শেষের দিকে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তানজিমের বল পর পর ফেরেন হার্দিক এবং নীতীশ রেড্ডি। শেষ বলে রিঙ্কুর ছয়ে তিনশোর তিন রান দূরে থামে ভারত।

বাংলাদেশের যতটা ভেবেছিল, তার থেকেও খারাপ হল শুরুটা। মায়াঙ্ক যাদবের প্রথম বলেই রিয়ান পরাগের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন পারভেজ় ইমন। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিতে থাকে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারে তানজিদের ক্যাচ ফেলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। তবে বদলা নেন চতুর্থ ওভারে বল করতে এসে। প্রথম বলেই তুলে নেন তানজিদকে। লিটন অবশ্য লড়াই ছাড়েননি। নীতীশ রেড্ডির প্রথম ওভারে পাঁচটি চার মারেন।

বাংলাদেশের হয়ে দীর্ঘ ক্ষণ লড়াই করার চেষ্টা করেন লিটন এবং তৌহিদ হৃদয়। ধীরে হলেও যতটা সম্ভব খারাপ বল কাজে লাগিয়ে রান তোলার চেষ্টা করছিলেন। রবি বিশ্নোইয়ের বলে লিটন (৪২) ফিরতেই বাংলাদেশের আশা কার্যত শেষ হয়ে যায়। জীবনের শেষ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে আট রান করলেন মাহমুদুল্লা। এক প্রান্তে একাই লড়ে গেলেন তৌহিদ। চাপের মুখেও তাঁর বেশ কিছু শট নজর কাড়ল। তবে দলকে জেতানোর জন্য কখনওই তা যথেষ্ট ছিল না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy