একটা জিনিস হবেই, আমি জানি, কিন্তু তবু সে ভাবনা গাঢ় করে মনের ভেতর জমলেই আমি অবশ হয়ে যাই। এক দিন আমি বুড়ো হয়ে যাব। কী তিতকুটে একটা ব্যাপার, না? অথচ কিছুতেই অ্যাভয়েড করতে পারব না। আমার চুল পেকে যাবে, আমার দাঁত পড়ে যাবে, আমার চামড়া ঝুলে যাবে। আমার যৌবন আমায় ভেংচি কাটবে। অসহ্য।
ঝুরঝুরে বিকেল তখনও আসবে, আর আমি হয়তো একটা জানলা দিয়ে কেবল কোনও বাড়ির পেছনের দেওয়াল আর রংচটা পাইপটুকুই দেখতে পাব। কিংবা তা-ও নয়? কে বলতে পারে আমার হাঁটা-চলার শক্তি থাকবে কি না! গরমকালে ঘুরন্ত ফ্যান আর শীতকালে সাদা দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে হবে জীবন। কোনও প্রিয়জন ফোনও করবে না। আমিও হয়তো কাউকে ফোন করতে পারব না। হয়তো স্মার্টফোন তখন এমন কায়দাবাজির জিনিস হবে যে সে আমার গ্রে সেলে এঁটে উঠবে না। জীবন তখনও সাইকেডেলিক মোডে ঘুরবে, রং ধরাবে, আর আমি চেয়েও তাকে চাখতে পারব না এমন করে। আমার জন্য বরাদ্দ কোনও বিরক্ত সেবিকা খেঁকিয়ে উঠবে, ‘এই বুড়িটার বড্ড খাঁই। এটা দাও, ওটা করো, দু’দণ্ড বসতেও দেয় না!’ কখনও কোনও প্রিয়জন দেখতে এলেও দু’মিনিটের বেশি আমার কাছে দাঁড়াতে পারবে না। যে আমি নিজেকে সুগন্ধিতে আমোদিত করে রাখি, তার ঘরেই তখন ওষুধ, ডিসইনফেক্টরের গন্ধ মিশিয়ে এমন একটা গুমোট, যারা দেখতে আসবে তারা হয়তো বলবে, ‘আরও একটু থাকতে চেয়েছিলাম। জানি, একটু বেটার ফিল করতেন, কিন্তু ওই গন্ধটায় না আমার মাথা ঝিমঝিম করে।’ আমি কি তখন মৃদু হাসব?
আর যদি আমার মনটাই বদলে এক কৌটো কালমেঘের বড়ি হয়ে যায়? আমিই যদি কেবল বিষাদ-বিস্বাদ মেনুটা বুফেতে সাজিয়ে নিই? সে তো আরও ভয়ঙ্কর! আফটার অল মানুষের মন। বদলাতে তো পারেই। আগে যেমন আমির খানকে দেখতে না পেলে মন উচাটন হত, এখন তো আর তেমন হয় না। তা হলে এখন যা যা দোলা দেয়, তখন আর দেবে না? যদি তিতকুটে একটা মানুষ হয়ে যাই, সেই আমিটার জন্য আমার ভারী মায়া হবে। তার চারপাশের লোকেরা তাকে তো সহ্য করতে পারবে না, এড়িয়ে চলবে।
নিজের মনকে বোঝাই— এ সব যদি না চাও তা হলে মিষ্টি খেয়ো না, ঘন ঘন কাবাব থেকে মন তুলে নাও। কাল থেকে জিম যাব, কাল থেকে হাঁটব, এ সব গপ্পো নিজেকেই দিয়ো না। আজ থেকেই করো। তার পর ফের ভাবতে বসি, আচ্ছা, আমি যদি সংযমে থেকে বেশ তন্দুরস্ত রাখি আমার শরীর আর নিজের কাজ নিজেই করে নিতে পারি? কারও ওপর নির্ভরশীল না হই, নিজের মতো বেড়াতে যাই, এই রকমই হইহই করি, তা হলেও কি আমি বুড়ি হয়ে যাব?
হুঁহুঁ বাবা, তখনও দুটো ডায়লগ এ কানে আর ও কানে। এক, যাহা পজিটিভ—‘দেখেছ, এই বয়সেও নিজেকে কেমন ফিট রেখেছেন? ওঁকে দেখে কিন্তু শেখার মতো।’ মানে বয়সের খোঁটা খোঁচাবেই। তবু আমি ডায়লগ শুনে প্রফুল্ল হয়ে প্রেশার কিংবা সুগারের একটা ওষুধ লুকিয়ে টুক করে খেয়ে নেব। আর দুই, যাহা নেগেটিভ— ‘এই বয়সেও বুড়ির শখ দেখেছ? বয়স হয়েছে ধম্মকম্ম কর না, তা নেইকো, শিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকছে!’
আনফেয়ার, খুব আনফেয়ার। অন্তত আমার ক্ষেত্রে এটা হওয়া উচিত ছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy