Advertisement
১১ জানুয়ারি ২০২৫
Thakur Bari of Kolkata

হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ-এর মতোই ছিল ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক নেটওয়ার্ক

এই সমিতি স্থাপনের বছর দুই আগে জ্যোতিরিন্দ্রর স্ত্রী কাদম্বরী দেবী প্রয়াত হন। নির্বান্ধব স্নেহপ্রবণ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছোটদের এই পারস্পরিক সহযোগিতার উদ্যোগে মুগ্ধ হয়েছিলেন।

পীতম সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৫
Share: Save:

১৮৮৬ সালের মাঝামাঝি। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির ছেলেমেয়েরা ঠিক করলেন, একটি সমিতি গড়তে হবে। সেই সমিতির সদস্য হতে পারবে শুধু এ বাড়িরই ভাইবোনরা। শুধু বাড়ির ভাইবোনদের নিয়ে এমন অভিনব ভাবনা অনেককেই অবাক করে। সবচেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। ১৮৮৬-র জুন মাসের ১১ তারিখে সাজাদপুর থেকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, সেজদাদা হেমেন্দ্রনাথের বড় ছেলে হিতেন্দ্রনাথকে সে কথা একটি চিঠিতে জানিয়েছিলেন। সাজাদপুর জমিদারির কাছারি থেকে তিনি লিখেছেন, ‘তোমরা যে “ভাই-বোন্-সমিতি” স্থাপন করেছ, তা-থেকে নানান্ কথা আমার মনে আসছে।’ অকপটে স্বীকার করেছিলেন, ‘কৈ— তোমাদের এই বয়সে, “ভাই-বোন্-সমিতি”র মত কোনও উচ্চতর কল্পনা তো আমাদের মাথায় আসেনি।’ যদিও এর আগে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও গুণেন্দ্রনাথের পরিচালনায় ঠাকুরবাড়িতে একটি ‘কমিটি এফ ফাইভ’ তৈরি হয়েছিল। সেই কমিটির পরিচালনায় জোড়াসাঁকো নাট্যশালা, বিদ্বজ্জন সমাগম, সারস্বত সমাজ, খামখেয়ালী সভা, ড্রামাটিক ক্লাব বা বিচিত্রা-র মতো নানা সভাসমিতিও বিভিন্ন কারণে গড়া হয়েছিল।

জ্যোতিরিন্দ্রর চিঠিতেই জানা যায়, সব ভাইবোন মিলে জ্ঞানের চর্চা করা, বড় ভাই ছোট ভাইয়ের শিক্ষার ভার গ্রহণ, পারস্পরিক সদ্ভাব বৃদ্ধির চেষ্টা, বিশুদ্ধ সঙ্গীতের বিশুদ্ধ আমোদ উপভোগ করাই ছিল এই সমিতির উদ্দেশ্য। এই সমিতি স্থাপনের বছর দুই আগে জ্যোতিরিন্দ্রর স্ত্রী কাদম্বরী দেবী প্রয়াত হন। নির্বান্ধব স্নেহপ্রবণ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছোটদের এই পারস্পরিক সহযোগিতার উদ্যোগে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি তখন জমিদারির দায়িত্ব থেকে ক্রমশ নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। এই সময়ে তিনি প্রায়ই মেজদাদা-মেজবৌঠান, সত্যেন্দ্রনাথ ও জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর বির্জিতলার বাড়িতে গিয়ে থাকতেন। বির্জিতলার বাড়িতে জোড়াসাঁকোর অন্যান্য আত্মীয়-পরিজনের নিত্য আনাগোনা ছিল। সেখানে নানা বিষয়ে আড্ডার আসর বসত।

বছর দুই পর, ১৮৮৮ সালের নভেম্বর মাসের ৫ তারিখ ছিল ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। বির্জিতলায় পরিবারের অনেকে এসেছেন। এই দিন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সূত্রপাত ঘটালেন। গত বছর দুই যাবৎ মনে মনে হয়তো ‘ভাই-বোন সমিতি’র কথা ভাবতে বসেই তিনি একটা নতুন কিছু করার স্বপ্ন বুনছিলেন। সেই স্বপ্নের ফসলস্বরূপ ১৬২ পৃষ্ঠার একটি খাতা মেলে ধরলেন সকলের সামনে। সেই খাতার প্রথম চারটি পৃষ্ঠা ছেড়ে পঞ্চম পৃষ্ঠায় নিজেই ঝর্না কলমের কালো কালিতে বৃত্তের চাঁদার আকারে মুখপাতে লিখলেন, ‘পারিবারিক স্মৃতি-লিপি পুস্তক’। এর ঠিক নীচে সোজা সরলরেখায় লিখলেন, ‘ইহাতে পরিবারের/ অন্তর্ভুক্ত/ সকলেই/ (আত্মীয়, বন্ধু, কুটুম্ব, স্বজন)/ আপন আপন মনের ভাব চিন্তা স্মর্ত্তব্য বিষয়/ ঘটনা প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করিতে পারেন/ ইতি।’ ছয়ের পাতাটি ছেড়ে নিজেই খাতার সাতের পাতায় উদ্বোধন করলেন ‘ভাষাতত্ত্ব’ বা ফিলোলজি বিষয়ে একটি লেখা লিখে।

সেই সময়ে রবীন্দ্র-পত্নী মৃণালিনী দেবী সন্তানসম্ভবা। বির্জিতলার বাড়ির আনাচে-কানাচে রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনী দেবীর দ্বিতীয় সন্তানের আবির্ভাব নিয়ে সকলেই কমবেশি উত্তেজিত। এই উৎসাহের আঁচ পড়ল এই ‘পারিবারিক স্মৃতি-লিপি’র খাতাতেও। ‘রবিকাকার সন্তান’ নামে হিতেন্দ্রনাথ একটি টিপ্পনী লিখলেন খাতায়, ‘রবিকাকার একটি মান্যবান ও সৌভাগ্যবান পুত্র হইবে।’

এর আগে প্রথম কন্যা মাধুরীলতার জন্ম হয়েছে। তাই হয়তো পরিবারের সদস্যরা দ্বিতীয় সন্তানটি ছেলেই হবে এমন প্রত্যাশা করেছিলেন। ফলস্বরূপ পারিবারিক খাতায় হিতেন্দ্রনাথ আরও লিখলেন, ‘কন্যা হইবে না। সে রবিকাকার মত তেমন হাস্যরসপ্রিয় হইবে না রবিকাকার অপেক্ষা গম্ভীর হইবে। সে সমাজের কাজে না ঘুরে দূরে দূরে থেকে ঈশ্বরের ধ্যান করবে।’ মজার বিষয়, রথীন্দ্রনাথের জন্মের দু’বছর পরেও হিতেন্দ্রনাথের সেই সরস মন্তব্যের নীচে বীরেন্দ্রপুত্র বলেন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘হিদ্দা, তোমার ভবিষ্যদ্বাণী এখন চাক্ষুষ।’ কারণ শিশু রথীর প্রকৃতিটা নাকি এমন গম্ভীর ছিল যে বলেন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘তা অস্বীকার করবার যো নেই।’ কৌতুক করে লিখেওছেন, ‘তবে কিনা সামাজিক জীব না হয়ে খোকা যে আরণ্যক ঋষি হবে তা-ও মনে হয় না। আর গম্ভীর হয়েছে বলে যে হাসবে না তা নয়।’ বলেন্দ্রনাথ এই লেখার নীচে ইংরেজিতে লিখছিলেন বি টি (B.T.) [বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর], মার্চ ১৮৯০।

দাদা-দিদিরা নবজাত খুড়তুতো ভাইকে নিয়ে বেশ মজা করেছিলেন সেই খাতায়। সেই মার্চেই সরলা দেবী বলেন্দ্রনাথের লেখার নীচেই লিখে দিলেন, ‘বোলদা, এক হিসেবে হিদ্দা ঠিক বলেছেন। খোকা যোগ করুক আর না করুক যথেষ্ট গোলযোগ করছে।’ এর পর বলেন্দ্রনাথেরও পাল্টা— ‘খোকা বেচারা যোগই করুক আর গোলযোগই করুক, জন্মাবার আগে থেকে তার উপর যে রকম আলোচনা চলেছে তা’তে তার পক্ষে কতদূর সুবিধের বলতে পারিনে। বড় হ’লেও সে বেচারীর না জানি আরও কত সইতে হবে কিন্তু তখন হয়ত প্রতিবাদ করতে শিখবে— এরকম নীরবে সহ্য করবে না।... আমাদের কালের ছেলেদের Biography মরবার পর লেখা হত, এখন হয় জন্মাবার আগে।’

এই কাহিনি পড়তে পড়তে মনে হতে পারে এ যেন আজকালকার দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার কোনও গ্রুপের কথোপকথন। অনেকটা রসে ভরা উপভোগ্য মন্তব্য চালাচালি করা নিজেদের মধ্যে। অথচ এই ঘটনা তো আজকের নয়, আজ থেকে প্রায় ১৩৫ বছর আগের। আশ্চর্যের ব্যাপারটি হল, এই ‘পারিবারিক স্মৃতি-লিপি’ খাতায় মন্তব্য চালাচালি বা বিভিন্ন লেখালিখি চলেছিল দু’বছর। এই দু’বছরে মোট ১৬২ পৃষ্ঠার মধ্যে ১৫৭টি পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে। বাকি ৫টি পৃষ্ঠা সাদা। শুধু চতুর্থ পাতায় লেখা ছিল ‘নিষেধ’, যা কিনা রবীন্দ্রনাথ স্বহস্তে লিখেছিলেন। সেখানে উপর থেকে নীচে এই খাতার লেখা সম্পর্কে পর পর তিনটি নিষেধাজ্ঞা ছিল— ‘১) পেন্সিলে লেখা। ২) আমাদের পরিবারের বাহিরে এই খাতা লইয়া যাওয়া। ৩) যতদিন এই খাতা লেখা চলিবে ততদিন এ খাতার প্রবন্ধ কাগজে অথবা পুস্তকে ছাপান।’ দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার জন্যই হয়তো খাতাটি ‘বাড়িতে সিঁড়ির উপরে একটি ডেস্কের উপর শিকল দিয়ে বাঁধা থাকত। যার যখন ইচ্ছে তাতে নিজের বক্তব্য লিখে রাখত।’ ইন্দিরা দেবীর ‘রবীন্দ্রস্মৃতি’ থেকে এ তথ্য জানা যায়। এর দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পর ইন্দিরা দেবী খাতাটি উদ্ধার করেন।

সময়টা ১৯৩৮ সাল। নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখ। কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঞ্চাশতম জন্মদিন। ইন্দিরা দেবী খাতাটিকে যত্ন করে নিয়ে এসে প্রথম পৃষ্ঠায় লিখে দিলেন, ‘শ্রীমান রথীন্দ্রের শুভ পঞ্চাশতম জন্ম দিনে বিবিদিদি’। এক দিন তাঁর জন্মের আগে ও পরে যে পারিবারিক স্মৃতিলিপির খাতায় তাঁকে নিয়ে মজা করে নানা রকমের টিপ্পনী কেটেছিলেন দাদা-দিদিরা, পঞ্চাশ বছরের জন্মদিনে সেই খাতাই তিনি উপহার পেলেন।

শুধু রথীর প্রসঙ্গই নয়, সেই স্মৃতিলিপির পাতায় ঠাকুরবাড়ির সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেক লেখাই আজ ইতিহাস হয়ে আছে বাংলা সাহিত্যের আসরে। আগেই বলা হয়েছে, প্রথম দিন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ‘ভাষাতত্ত্ব’ নিয়ে স্মৃতিলিপি খাতার সূচনা করেন। দ্বিতীয় লেখাটি ছিল বলেন্দ্রনাথের ‘অক্ষরতত্ত্ব’। উনিশ বছরের বলেন্দ্রনাথের কলম সেদিন বলিষ্ঠ ভাষায় জানিয়েছিল— ‘শুধু যে ভাষার কথা থেকেই জাতির ভাব বোঝা যায় এমন নয়, ভাষার অক্ষর দেখেও জাতির ভাব কতকটা বোঝা যায় বোধহয়। বাংলা ভাষার অক্ষর আর সংস্কৃতর অক্ষর দেখলেই এটা অনেকটা প্রমাণ হয়।’

সূচনার দিনটি, অর্থাৎ ১৮৮৮-র ৫ নভেম্বর ছিল বলেন্দ্রনাথের উনিশতম জন্মদিন। কিন্তু নিজের জন্মদিন প্রসঙ্গে তিনি কিছুই সেখানে লেখেননি। কোনও আত্মীয়ও এই খাতায় বলেন্দ্রর উদ্দেশে জন্মদিনের শুভেচ্ছালিপি লেখেননি। জানা যায়, ঠাকুরবাড়িতে জন্মদিন পালন চালু হয়েছিল জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর দৌলতে। বিলেত থেকে ফিরে তিনি নিজের পুত্রকন্যাদের জন্য জন্মদিন পালন শুরু করেন। তা দেখেই সরলা দেবীর উদ্যোগে ১৮৮৭ সালে রবীন্দ্রনাথের সাতাশ বছরের জন্মদিনটি প্রথম পালিত হয়েছিল। কিন্তু তার পরও জন্মদিন পালনের প্রচলন তৈরি হয়নি ঠাকুর পরিবারে।

এ দিকে রবীন্দ্রনাথ প্রথম দিনে পারিবারিক খাতায় কিছুই লেখেননি। দ্বিতীয় দিনে তিনি প্রথম লিখতে বসলেন। তাঁর নতুনদাদা আর বলু’র প্রথম দু’টি লেখার সূত্র ধরে ‘বাঙ্গালাভাষা ও বাঙালী চরিত্র’ নিয়ে তিনি লিখতে শুরুই করলেন এমন, ‘[অনেক] সময় দেখা যায় সংস্কৃত শব্দ বাঙ্গালায় রূপান্তরিত হয়ে এক প্রকার বিকৃত ভাব প্রকাশ [করে] কেমন এক রকম ইতর বর্ব্বর আকার ধারণ করে।’ সেই শুরু। এর পর দীর্ঘ দু’-বছরের ‘পারিবারিক স্মৃতিলিপি খাতা’র ইতিহাসে কবির ৩৮টি রচনা পাওয়া যায়। এর পর প্রায় সাত বছরের ব্যবধানে ১৮৯৫-এর নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও কয়েকটি রচনা লেখকরা এই খাতায় লিখেছিলেন, যার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের দু’খানা চিঠি এবং একটি অসম্পূর্ণ গ্রন্থ-সমালোচনাও ছিল। তবে এই খাতার ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ও বির্তকিত লেখাটি লিখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই। লেখাটির শিরোনাম ছিল ‘স্ত্রী ও পুরুষের প্রেমে বিশেষত্ব’। ১৮৮৮ সালের ১৯ নভেম্বর লেখা। ক, খ ও গ— এই তিনটি ভাগে সমগ্র রচনাটি লিখেছিলেন। দ্বিতীয় খ ও তৃতীয় গ রচনার শিরোনাম ছিল যথাক্রমে ‘পুরুষের কবিতায় স্ত্রীলোকের প্রেমের ভাব’ ও ‘ধর্ম্মে ভয়, কৃতজ্ঞতা ও প্রেম’। এই প্রবন্ধ তিনটি নিয়ে পারিবারিক স্মৃতিলিপি খাতায় দীর্ঘ বিতর্ক গড়ায়। বিতর্কে অংশ নেন শরৎকুমারী চৌধুরানী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী এবং শীতলাকান্ত চট্টোপাধ্যায়। এ যেন বর্তমান কালের সমাজমাধ্যমে কোনও বিতর্কিত প্রসঙ্গের অবতারণা এবং সেই বিতর্কে উৎসাহীদের বিবিধ বক্তব্যের ধেয়ে আসা বান।

ঠাকুরবাড়ির এই পারিবারিক খাতাতেও যথারীতি রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। ইতিমধ্যেই আলোচ্য ব্যক্তিরা ছাড়াও এই স্মৃতিলিপি খাতার লেখক-তালিকায় ছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ, ঋতেন্দ্রনাথ, ক্ষিতীন্দ্রনাথ, আশুতোষ চৌধুরী, প্রমথনাথ চৌধুরী, লোকেন্দ্রনাথ পালিত, সত্যপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়। একটা বিষয় লক্ষ করার যে, এই পারিবারিক স্মৃতিলিপি খাতায় মাত্র দু’জন নারীর লেখা পাওয়া যায়— শরৎকুমারী চৌধুরানীর (আশুতোষ চৌধুরীর ভাই যোগেশচন্দ্র চৌধুরীর স্ত্রী, যিনি সরাসরি ঠাকুরবাড়ির বধূ বা কন্যা নন) এবং রথীন্দ্র-প্রসঙ্গে মাত্র দু’টি বাক্য লিখেছিলেন ষোড়শবর্ষীয়া সরলা দেবী। এ ছাড়া ঠাকুরবাড়ির বৌ এবং মেয়েদের লেখা আশ্চর্যজনক ভাবে এই খাতায় অনুপস্থিত। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বির্জিতলার বাড়িতে রাখা এই খাতায় জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, স্বর্ণকুমারী দেবী এমনকি ইন্দিরা দেবীরও কোনও লেখা না থাকাটা সত্যিই বিস্ময়ের।

ইতিহাস বলে, পারিবারিক স্মৃতিলিপি খাতার তিন বছর আগে জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সম্পাদনায় ‘বালক’ পত্রিকাটি ঠাকুরবাড়ি থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে তাঁর ‘আশ্চর্য্য পলায়ন’ নামে একটি অনূদিত রচনা তিন কিস্তিতে ধারাবাহিক ভাবে মুদ্রিতও হয়। এ ছাড়াও স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘পৃথিবী’ বাঙালি মহিলার লেখা প্রথম বিজ্ঞানগ্রন্থ, যেটি ১৮৮২ সালে প্রকাশ পায়। ১৮৮৪-তে ‘ভারতী’র সম্পাদনার দায়িত্বও তিনি নিয়েছিলেন। ‘ভারতী’তে দুজনেই অনেক লেখা লিখেছিলেন। তা হলে কোন রহস্যে ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক স্মৃতিলিপি খাতাটি হয়ে উঠল নারীবিবর্জিত? সে কথা আজ হয়তো আর জানার উপায় নেই।

গ্রন্থ ও তথ্যঋণ: রবীন্দ্রপাণ্ডুলিপি-পরিচয়: কানাই সামন্ত, বিশ্বভারতী-রবীন্দ্রভবন; পারিবারিক স্মৃতিলিপি পুস্তকে রবীন্দ্রনাথ: পশুপতি শাশমল, সম্পাদনা অতনু শাশমল, দোসর পাবলিকেশন; রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ: পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স

অন্য বিষয়গুলি:

Whats App Group
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy