দম্পতি: কলকাতার বাড়িতে অরুণ সোম এবং তাঁর স্ত্রী লুদমিলা। রুশ সাহিত্যচর্চাই তাঁদের সংসার।
ইন্দো-সোভিয়েট কালচারাল সোসাইটিতে ক্লাস নিচ্ছেন তরুণ শিক্ষক। প্রবল ভিড়। ক্লাসঘরের বাইরেও ছাত্রছাত্রী। সোসাইটির অফিসে এসে এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি খোঁজ করলেন শিক্ষকের। অচেনা লোকটির ক্লাসে যাওয়ার অনুমতিও মিলল। শিক্ষক তাঁকে দেখেই চমকে উঠলেন, “ননীদা!” উত্তর এল, “উপায় কী? পর্বতকেই মহম্মদের কাছে আসতে হল।”
তরুণ শিক্ষকের নাম অরুণ সোম। যে সব বাঙালি প্রজন্মের ছেলেবেলা বা বড়বেলাও ‘প্রগতি প্রকাশন’-এর বইপত্রে রঙিন, তাঁদের কাছে এই অনুবাদকের নামটা প্রায় কিংবদন্তির মতো। তখন অবশ্য তিনি রুশ ভাষার শিক্ষক। দিনে কলেজের চাকরি করেন, বিকেলের পর সোসাইটির ক্লাস। সেখানেই এক দিন অগ্রজ অনুবাদক ননী ভৌমিক অরুণের স্বপ্নপূরণের খবরটি দিলেন। জানালেন, “মস্কোতে তোমার অনুবাদকের চাকরিটা বোধ হয় এ বার হয়ে যাবে। বাংলায় ওরা নতুন লোক নিচ্ছে। দূতাবাসে নমুনা পাঠিয়ো।” সে নমুনা পছন্দ হল রুশদের। এক বছরের মধ্যেই মস্কোগামী বিমানে চড়ে বসলেন অরুণবাবু।
কলেজে পড়তে পড়তেই রুশ ভাষার প্রতি টান তৈরি হয়েছিল তাঁর। কেন? সোজা উত্তর— এক রকম বামপন্থী আদর্শের কারণেই। যদিও কখনও পার্টি-ঘনিষ্ঠতা ছিল না, এখনও নেই। অরুণবাবু মনে করতে পারেন, ১৯৫৫ নাগাদ পার্ক সার্কাস ময়দানের বইমেলায় ন্যাশনাল বুক এজেন্সি-র স্টলে রাত জেগে বই গুছিয়েছেন, বিক্রি করেছেন। সেখানেই প্রথম হাতে দেখেন প্রগতির বাংলা বই— ননী ভৌমিক, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, সমর সেনের অনুবাদ। পড়ে ফেলেন ‘দাদুর দস্তানা’, অল্প কিছু রুশ ক্লাসিকও। মন ভরে না। আর ইংরেজিতে তলস্তয় তুর্গেনেভ চেখভ যত পড়েন, তত মনে হয়— এর বাংলা চাই! এই সাহিত্যই যে ইউরোপ-সেরা! এমন ব্যাপ্তি আর কোথায়? এমন করে জীবনের কথা কে-ই বা বলতে পেরেছে? ওই বাঙালি অনুবাদকেরা রুশ দেশে থাকতেন ঠিকই, কিন্তু কেউই রুশ শিখে সেখানে যাননি। আর, রুশ ভাষা দু’-তিন বছরের মধ্যে ভাল করে রপ্ত করা অসম্ভব, অন্তত অনুবাদের মতো তো নয়ই। অতএব, সে যুগের বেশির ভাগ অনুবাদই হত ইংরেজি থেকে। ব্যতিক্রম কেবল ননী ভৌমিক। বহু পরিশ্রমে আয়ত্ত করেছিলেন রুশ ভাষা, অনুবাদ করতেন সরাসরি। যদিও অরুণবাবুর খেদোক্তি, এমন সৃজনশীল এক জন সাহিত্যিক স্রেফ অনুবাদকের চাকরি করে জীবন কাটিয়ে দিলেন!
অরুণবাবু নিজে যদিও অনুবাদকই হতে চেয়েছিলেন। স্কুলে পড়িয়েছেন, কলেজেও, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশ ভাষা বিভাগ তাঁর হাতেই প্রতিষ্ঠিত, তবু মনে মনে ওই একটাই স্বপ্ন। ১৯৬৬ সালে রুশ ভাষা ও সাহিত্যের বৃত্তির পরীক্ষা দিয়ে এক বছরের জন্য মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার সুযোগ পেলেন। ১৯৬৯-এ আরও এক বার। ননী ভৌমিকের সঙ্গে তখনই আলাপ। দেখলেন, প্রগতি-র অনুবাদ কী ভাবে হয়। বাঙালি অনুবাদকের কাজ শেষ হওয়ার পর বাংলা-জানা রুশ সম্পাদক তা খুঁটিয়ে পড়েন— মূলের সঙ্গে মেলান। জিজ্ঞাস্য তৈরি হয়, অতঃপর অনুবাদক-সম্পাদকের দীর্ঘ বৈঠক। কিন্তু এ সব দেখে তাঁর কী আনন্দ? নিজে তো হাত দিতে পারছেন না। হয়তো পথ খুলে দিল মুক্তিযুদ্ধ। বাংলা ভাষা অঙ্গরাজ্য থেকে রাতারাতি রাষ্ট্রের ভাষা হয়ে উঠতেই প্রগতিতেও বাংলাকে সবচেয়ে বড় করে তোলার জন্য তোড়জোড় শুরু হল। বৃহত্তম অনুবাদ বিভাগ হিন্দিকে ছাপিয়ে গেল বাংলার পরিকল্পনা। চাকরি পেলেন অরুণবাবু, সঙ্গে মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়, ও পার বাংলা থেকে আরও দু’জন।
প্রায় সতেরো বছরের চেষ্টায় স্বপ্ন সফল হয়েছিল। কিন্তু, তার পরের উনিশ বছরে তা শুকিয়েও গেল। সোভিয়েট ইউনিয়নের আয়ু ফুরিয়ে গেল। নবারুণ ভট্টাচার্যকে এক বার বলতে শুনেছিলাম, “সোভিয়েট পতনে যাঁদের সত্যি সত্যিই মেটিরিয়াল ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল, তাঁদের এক জন আমি। আমার চাকরিটা খোয়া গিয়েছিল।” অরুণবাবুও তেমনই। খড়কুটো আঁকড়ে ছিলেন চার বছর। কী না করেছেন— ভারতীয়দের রুশ শেখানো, বাণিজ্য সংস্থায় দোভাষী, এমনকি সামান্য ‘অড জব’-ও করেছেন। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি এমন জায়গায় পৌঁছল যে, এক বছরের মধ্যেই প্রায় সব সঞ্চয় শেষ। আর, কাজ ছাড়া বাকি গোটা সময়টা যদি খাবার জোগাড় করতেই কেটে যায়, তা হলে আর কত দিনই বা যুঝে যাওয়া সম্ভব? মেয়েদের স্কুলের খরচ তো আর জোগানো যাবে না। অতএব, দেশে ফিরে আসা। স্বহস্তে সজ্জিত বিরাট লাইব্রেরি আর সরকারি আনুকূল্যে প্রাপ্ত ফ্ল্যাট ছেড়ে এক সুটকেসে কলকাতায় প্রত্যাবর্তন। ওখানকার পেনশনের হিসেব কষার মতো অবস্থাও তখন নেই। আর কখনও ফিরেও যাননি অরুণবাবু, যাওয়ার কথা ভাবেনওনি।
এখানে তখন বামফ্রন্ট সরকার। অনেক আশ্বাস শুনেছিলেন— কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবেই। কানাকড়িও হয়নি। আবারও এলোমেলো কাজ। কখনও রুশ চায়ের কোম্পানির বিজ্ঞাপন অনুবাদ, কখনও টিউশনি। শেষে দেবেশ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁকে পুরনো পথে ফিরিয়ে দিল। তাঁর অনুরোধে সাহিত্য অকাদেমির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেন অরুণবাবু। নতুন যাত্রা শুরু হল ‘অপরাধ ও শাস্তি’-র হাত ধরে। অশীতিপর অরুণবাবু আজও রাত জেগে রুশ সাহিত্য অনুবাদ করেন। বলেন, “আমি হলাম প্রফেশনাল অনুবাদক। ওটাই আমার উপার্জন। এখানকার লোকে হয়তো অনুবাদ বলতে শখের কাজ ছাড়া কিছু বোঝে না।”
যদিও দেশে ফেরার পর কাজের ধরন অনেকটাই পাল্টে গিয়েছিল। প্রগতি ছিল প্রোপাগান্ডা বা প্রচারের প্রকাশন। অনুবাদকের রুচি সেখানে গণ্য হত না। আগের বছর যিনি মার্ক্সের চিঠিপত্র অনুবাদ করেছিলেন, আগামী বছর হয়তো তিনি পেলেন ইউক্রেনীয় উপকথার ভার। না হলে সমর সেনের মতো প্রতিভাবান সাহিত্যিককে কখনও নীরস সমাজতত্ত্বের বই অনুবাদের কাজে আটকে রাখা হয়? আসলে, সম্পাদনার মতো প্রোগ্রাম বা প্রকল্প পরিকল্পনাও করতেন রুশ কর্তারা। সারা বছরের প্রোগ্রাম সাজিয়ে দেওয়া হত, বিভাগীয় প্রধানেরা অনুবাদকদের মধ্যে সে সব ভাগ-বাটোয়ারা করে দিতেন। গড়ে ৬০ শতাংশই অর্থনীতি-সমাজ-রাজনীতি বিষয়ক বই, ৩০ শতাংশ শিশু সাহিত্য, আর ক্লাসিকের জন্য বরাদ্দ মাত্র ১০ শতাংশ। সে আক্ষেপ কিছুটা মেটে ১৯৮০-র দশকে, ‘রাদুগা’ প্রকাশনের জন্মের পর। ক্লাসিক সাহিত্য অনুবাদ শুরু হয় ‘রাদুগা’য়, ননী ভৌমিক অল্পস্বল্প করেছিলেন, মূলত অরুণবাবুই। তা সত্ত্বেও কাজের ধরনটা পছন্দ হওয়ার মতো ছিল না। তিনি বলেন, “একে বাংলায় বলে ফুরনের কাজ। মাইনের ব্যাপার নেই। যেমন কাজ, তেমন টাকা। রুটিন নিশ্চয়ই ছিল, বাঁধাধরা কাজের চাপও ছিল, কিন্তু দ্রুত অনুবাদ করতে পারলে অবশ্যই বেশি টাকা উপায় করা যেত।” গোলমাল বাধত হাতে লেখা নিয়েও। স্কুল-পাশ-করা রুশ মেয়েরা ছাপাখানার কাজ করতেন, বাংলা খুব ভাল জানতেন না, খারাপ হাতের লেখার অনুবাদকদের উপর বেজায় চটতেন। সাহিত্য অকাদেমির নতুন পর্বে সে সব ঝামেলা নেই। অরুণবাবু যা ভাবেন-লেখেন, তা-ই চূড়ান্ত। সেখানে ‘সোভিয়েত নারী’ বা ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন’ পত্রিকা অনুবাদের উটকো নির্দেশ আসে না, কম বাংলা-জানা সম্পাদকের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে সময় নষ্টও হয় না।
তবুও, প্রগতি-র কথা ঘুরেফিরে আসে অরুণবাবুর কথায়। ওটাই যে স্বপ্ন! প্রগতির আদিজন্ম ১৯৩১ সালে। সে সময় সোভিয়েটের সরকারি প্রকাশনা সংস্থার উদ্যোগে বিদেশি ভাষায় রুশ সাহিত্য অনুবাদ— এবং উল্টোটাও— শুরু হয়। সাধারণ মানুষের জীবন এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ— এই দুই-ই ছিল বই নির্বাচনের প্রধান মাপকাঠি। সংস্থার নাম ‘বিদেশী শ্রমজীবীদের প্রকাশনা সমিতি’। ১৯৩৯ সালে তারই নাম হয় ‘বিদেশী ভাষায় সাহিত্য প্রকাশালয়’, এবং ১৯৬৩-তে ‘প্রগতি প্রকাশন’। অরুণবাবু অবশ্য বিষয়টাকে শুধু রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের নিক্তিতে মাপেন না। তাঁর মতে, রুশ সাহিত্যে বরাবরই একটা মানবতাবাদী ধারা বহমান, তার আবেদনও সর্বব্যাপী, সে কারণেই গোটা পৃথিবীতে তা এত জনপ্রিয়। শিশু-কিশোর সাহিত্য সৃষ্টি এবং প্রচারে সোভিয়েট বিশ্বকে পথ দেখিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তার আগে পুশকিন তলস্তয় তুর্গেনেভ সকলেই শিশু-কিশোরদের জন্য কিছু না কিছু লিখেছেন। ১৯৫০-এর দশকে এই প্রকাশনা সংস্থায় স্থায়ী বাংলা বিভাগ তৈরি হয়। সে সময়ই মস্কো পাড়ি দেন ননী ভৌমিক।
অরুণবাবুর কাছে সাহিত্য অকাদেমিতে সবচেয়ে বড় কথা ব্যক্তিগত পছন্দের অধিকার। তাঁর কাছে প্রতিষ্ঠানে চৌহদ্দি আর নেই, মাথার উপর সম্পাদক বা নীচে কম্পোজ়িটর নেই। আরও জরুরি কথা, কী অনুবাদ করবেন, তা-ও তাঁরই স্বাচ্ছন্দ্য। আর, এই সুযোগটাই চমৎকার ভাবে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। বাছা-বাছা রুশ অনুবাদে ঋদ্ধ হয়েছেন বাঙালি পাঠক।
পছন্দের কথা যখন এলই, তখন প্রশ্ন ওঠে, অরুণবাবুর প্রিয় রুশ সাহিত্যিক কে? এ প্রশ্নের জবাব তিনি নিশ্চিত ভাবেই দেন না। আজীবন রুশ সাহিত্যের সাধক ও ইতিহাসকারের কাছে এমন প্রশ্ন অর্থহীনও। তিনি বিরাট সাগরে ডুব দিয়েছেন। তবু আশ্চর্য ইঙ্গিতবাহী কথা বলেন— “দস্তয়েভস্কি তো দস্তয়েভস্কিই! তাঁর লেখা পড়তে শুরু করলে আর কারও লেখা পড়া যায় না।”
এত ক্ষণ এই প্রতিবেদন পড়তে পড়তে যদি কারও মনে হয়ে থাকে যে, এত বিশিষ্ট রুশ সাহিত্যিকের মাঝে দস্তয়েভস্কি কেন অনুল্লিখিত, তার উত্তরটি দেওয়ার সময় এখন হয়েছে। অরুণ সোমের কথা বলতে গেলে ফিয়োদর দস্তয়েভস্কির জন্য যদি আলাদা করে জায়গা রাখা না হয়, তা হলে সাহিত্য বা অনুবাদ, কারও প্রতিই সুবিচার করা হয় না। সাহিত্যে অকাদেমি থেকে রুশ ক্লাসিক অনুবাদের অফার পেতেই তিনি ঠিক করেছিলেন, এ বার দস্তয়েভস্কি নিয়েই লেগে পড়বেন। প্রথমে ‘অপরাধ ও শাস্তি’। তার পর একখানা তলস্তয় পেরিয়েই ‘কারামাজ়ভ ভাইয়েরা’। সে প্রস্তাব কৌতূহলী কর্তারা যখন জানতে চাইলেন ‘আবার দস্তয়েভস্কি?’, তখন অনুবাদকের জবাব, ‘আবার বললে হবে?’ কারামাজ়ভ শেষ হতে হাত দিলেন ‘দি ইডিয়ট’-এ। তত দিনে অবশ্য আর প্রশ্ন ওঠে না, তাঁর পছন্দ তখন সবাই জেনে গিয়েছেন— সবই দস্তয়েভস্কি! এবং, সে অনুবাদ হতে হবে মূলানুগ, ইংরেজি থেকে হলে যথাযথ অভিব্যক্তি মার খাবে। এ যুগে তো আর চুক্তির প্রশ্নও নেই, মনের আনন্দে বাঙালি পাঠককে দস্তয়েভস্কি পড়িয়ে চলেছেন অরুণবাবু।
দস্তয়েভস্কিকে কেন এত বড় মাপের মনে হয়? অনুবাদক বলেন, যিনি সোভিয়েট আমলের সাহিত্যিক নন, কস্মিনকালেও সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতায় ঘর করেননি, তাঁর রচনার মধ্যে মনন এমন ভাবে বঞ্চিত মানুষের পক্ষে, তা বিস্ময়ের। রচনা ধরে ধরে দেখানো যায়, ন্যায়বিচারের যে পক্ষ তিনি বেছে নিয়েছেন, তা স্পষ্টই পুঁজিবাদের অমানবিকতার বিরুদ্ধাচরণ। এই দৃষ্টিকোণকে কমিউনিস্টরা ‘প্রলেতারীয় সাহিত্য’ বলতে পারেন, অরুণবাবু বলেন ‘দস্তয়েভস্কি-মানস’। আর বেশি বলতে চান না অরুণবাবু। দস্তয়েভস্কি সকলের জন্য নয়, তাঁকে নিয়ে হাটে-মাঠে আলোচনা করা যায় না। সে বিষয়ে কথা বলতে গেলে দীক্ষিত হতে হয়। যদিও, সে দীক্ষা নিয়ে ফেললে জীবনে অন্য আর কিছু পড়াই হবে না! একদম পৃথক জগৎ।
২০১৮ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে দস্তয়েভস্কির বাড়ি (অধুনা মিউজ়িয়াম) দেখতে গিয়ে গিফ্ট শপ থেকে তাঁর প্রতিকৃতি আঁকা টি-শার্ট কিনেছিলাম। অরুণবাবুকে দেখাতেই কিছু না বলে পাশের ঘর থেকে স্ত্রী লুদমিলা-কে ডেকে আনলেন। দু’জনেরই চোখ-মুখ উজ্জ্বল। লুদমিলারও ইদানীং আর রাশিয়া যাওয়া হয় না। কত গল্পই যে করলেন! দস্তয়েভস্কি লোকসমাগম ভালবাসতেন না বলে ভক্তরা ঠিকানা জেনে ফেললেই বাসা বদল করতেন। বড়জোর তিন বছর। কেউ এলেও ওয়েটিং রুমের বেশি ঢুকতে দিতেন না। তবে, তাঁর শেষযাত্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা শহর। উনিশ শতকে বসে স্রেফ সাহিত্যসাধনা করে পেট চালানো চাট্টিখানি কথা ছিল না। এ বার কথায়-কথায় আড্ডা জমে ওঠে।
১১ নভেম্বর দস্তয়েভস্কির দ্বিশতজন্মবার্ষিকী। কলকাতায় কিছু কি হবে? অরুণবাবুর খেদোক্তি— ধুমধাম করে হওয়া উচিত। গোর্কির দেড়শো নিয়ে কিছু কিছু হয়েছিল, কিন্তু এটা কি কারও মনেও নেই? সারা জীবনে অনেক অনুবাদ করেছেন, রুশ সাহিত্যে তাঁর বিরাট পাণ্ডিত্য, কিন্তু মনের মণিকোঠায় দস্তয়েভস্কি।
ইদানীং প্রগতি বা রাদুগার বই ফ্যাকসিমিলি সংস্করণে বার করছেন কিছু প্রকাশক। অনলাইন আর্কাইভও হয়েছে। সে সব অরুণবাবুর বড় আশা। বঙ্গদেশে যত বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়া যায় রুশ সাহিত্য। দস্তয়েভস্কির দুশো বছরে সেটুকু তো করাই যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy