উনিশ শতকের মাঝামাঝি বাংলায় রেলপথ প্রতিষ্ঠা এবং রেল-চলাচলের সূচনা সাধারণ মানুষের মনে বিশেষ আলোড়ন তুলেছিল। ১৮৫৪ সালের ১৫ অগস্ট, প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ২৪ মাইলের রেললাইন ব্যবহৃত হয়। এর পর প্রথমে হাওড়া থেকে পাণ্ডুয়া, পরে ১৮৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাওড়া থেকে রানিগঞ্জ পর্যন্ত নিয়মিত ট্রেন চালু হয়। প্রথমে পণ্য পরিবহণের জন্য চালু হলেও অচিরেই আরও বহু রেললাইন বসে এবং মানুষের যাতায়াতের অঙ্গ হয়ে ওঠে রেলগাড়ি। ‘সম্বাদ প্রভাকর’ কাগজে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তাঁর ‘শারদ্বর্ণন’ কবিতায় লিখলেন— ‘টাকা ছেড়ে থাবড়ায়/ পার হয়ে হাবড়ায়/ চালিয়েছে রেলওয়ে পথে। হুগলির যাত্রী যত/ যাত্রা করি জ্ঞান হত/ কলে চলে স্থলে জলে সুখ। বাড়ী নহে বড়ো দূর/ অবিলম্বে পায় পুর/ হয় দূর সমুদয় দুখ’। ১৮৮৪ সালে দুর্গাচরণ রায়ের লেখা ‘দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন’ বইয়ে দেবতা বরুণ, ব্রহ্মাকে ভারতে রেলপত্তনের ইতিহাস বর্ণনা করে বলেছেন— ‘যে দিন প্রথমে চলে অনেকে সাহস করিয়া উঠে নাই। তৎপরদিন আরোহীর সংখ্যা দেখে কে?’। দীনবন্ধু মিত্র, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণকামিনী দাসী, রূপচাঁদ পক্ষী থেকে শুরু করে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-সহ বহু লেখকের লেখায় এই নতুন আশ্চর্য যানের উল্লেখ ছিল। তা থেকে জনজীবনে এই দ্রুতগতির ট্রেনগাড়ির ভূমিকা ও অভিঘাত কী বিপুল ছিল, আন্দাজ করা যায়।
স্ট্যান্ডার্ড গেজ বা ব্রড গেজ রেললাইন ছাড়াও অজস্র ছোট আকারের মিটার গেজ ও ন্যারো গেজ রেললাইন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। বাংলায় ছোট রেললাইনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল ‘ম্যাকলিয়ড রাসেল অ্যান্ড কোম্পানি’ এবং ‘মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি’। স্বল্প ব্যয়ে, স্বল্প মূলধনে, কম পুঁজি ও গ্যারান্টি মানির সাহায্যে এই ফিডার লাইনগুলো বসানো সম্ভব ছিল বলে ১৮৯০ থেকে ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা পর্যন্ত এই প্রাইভেট কোম্পানির অজস্র ছোট রেলগাড়ির স্বর্ণযুগ হয়ে ওঠে ভারতবর্ষ। এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘মার্টিন রেল’। হাওড়া, হুগলির গ্রামাঞ্চলের বিরাট সংখ্যক মানুষের কাছে তো বটেই, পরবর্তী কালে বারাসত-বসিরহাট লাইট রেলওয়ে চালু করে তিনটি জেলার মানুষের কাছে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল এই লাইট রেলওয়ে। আজও হয়তো হাওড়া, হুগলি, বারাসত, বসিরহাটের জায়গায় জায়গায় এই ন্যারো গেজ রেললাইনের অবশিষ্টাংশ কোথাও কোথাও রয়ে গিয়েছে, তার উপরে উঠেছে দোকানপাট, তৈরি হয়েছে বাস রুট। কিন্তু মানুষের স্মৃতিতে আজও অমলিন এই ট্রেন। বিশেষত যাদের জন্ম পঞ্চাশের দশকে, তারা ছেলেবেলার স্মৃতি হিসেবে আজও রোমন্থন করেন এই ট্রেনে চড়ার কাহিনি। ষাটের দশকের শেষ অবধি মার্টিন রেল চলেছিল। সত্তর দশকের গোড়ায় পৌঁছে আস্তে আস্তে উঠে যায় এই লাইট ট্রেন। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৫০-৫১ সালে চালু লাইট রেলওয়ের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে হাওড়া-আমতা, হাওড়া-শিয়াখালা এবং বারাসত-বসিরহাট লাইনের মার্টিন রেলওয়ের বিবরণ। অথচ আজ তা ধূসর ইতিহাস, বিস্মৃতির আবরণে ঢাকা।
ব্রিটিশ-বাঙালি যৌথ মালিকানায় গড়ে উঠেছিল মার্টিন লাইট রেলওয়ে। ইংরেজ ব্যবসায়ী টমাস অ্যাকুইনাস মার্টিনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই রেল-পরিষেবা গড়ে তুলেছিলেন বাঙালি উদ্যোগপতি স্যর রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৮৯০ সালে তাঁরা গড়ে তোলেন তাঁদের কোম্পানি ‘মার্টিন অ্যান্ড কোং’। ব্রিটিশ ভারতে, ইউরোপীয় পার্টনারদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ছেড়ে টমাস মার্টিন যে ভাবে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন এক জন বাঙালি ভাগ্যান্বেষী শিল্পপতির সঙ্গে, তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
১৮৫৪ সালের ২৩ জুন, বসিরহাটের ভ্যাবলা গ্রামের এক অতি সাধারণ পরিবারে রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় এই কঠোর পরিশ্রমী ও সৎ বাঙালি এক জন শীর্ষস্থানীয় সফল ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর পুত্র বীরেন মুখোপাধ্যায় বাবার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন এবং ১৯৪৬ সালে যখন ‘মার্টিন অ্যান্ড বার্ন’ কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়, তিনি তার ম্যানেজিং ডিরেক্টর হন। বীরেন মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী লেডি রাণু মুখোপাধ্যায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশেষ স্নেহভাজন। বীরেন মুখোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় ১৯৪৫ সালে মার্টিন কোম্পানির ট্রেনের জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ডিজেল ইঞ্জিন চালু হয়। হাওড়া-আমতা, হাওড়া-শিয়াখালা, বারাসত-বসিরহাট— সব ক’টি শাখারই ডিরেক্টর ছিলেন স্যর বীরেন মুখোপাধ্যায়। তুখোড় ব্যবসায়িক বুদ্ধির অধিকারী রাজেন্দ্রনাথ টের পেয়েছিলেন যে, হাওড়া, হুগলি, চব্বিশ পরগনার বিস্তৃত অঞ্চলের প্রচুর মানুষজন কাজের সূত্রে কলকাতা যাতায়াত করেন, কিন্তু তাঁদের জন্য কোনও সস্তা সুগম যাতায়াত-ব্যবস্থা নেই। সেই অভাব দূর করতেই হাওড়া-আমতা লাইট রেলওয়েজ় (এইচ এ এল আর) এবং হাওড়া-শিয়াখালা লাইট রেলওয়েজ় (এইচ এস এল আর) গড়ে ওঠে। এর পর এই দুই প্রধান রেলপথের আরও শাখাপথ বেরিয়েছিল। মার্টিন রেলের অপর গুরুত্বপূর্ণ শাখা ছিল বারাসত-বসিরহাট লাইট রেলওয়ে (বি বি এল আর)। চব্বিশ পরগনা জেলার এই বর্ধিষ্ণু জনপদকে রেললাইনের মাধ্যমে যুক্ত করার এই প্রয়াস ছিল ঐতিহাসিক। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯০৫, বারাসত থেকে বসিরহাট, ২৬ মাইল দীর্ঘ এই রেলপথের সূচনা হয়। এর পর টাকি এবং ইছামতী-তীরবর্তী হাসনাবাদ পর্যন্ত দু’টি এক্সটেনশন লাইন খোলা হয়েছিল। যাত্রীর সংখ্যা অতি দ্রুত বৃদ্ধির কারণে ১৯০৮ সালে এই লাইনেই শ্যামবাজার শাখা খোলা হয়। গোটা উত্তর এবং পূর্ব কলকাতাকে ছুঁয়ে চলত এই মার্টিন রেল। শ্যামবাজার থেকে শুরু হয়ে পাতিপুকুর, বাগুইআটি, হাতিয়ারা, রাজারহাট, লাঙলপোতা, হাড়োয়াখোল, খড়িবেড়ি, আমিনপুর, বেলেঘাটা জংশন হয়ে এই ট্রেন পৌঁছত হাসনাবাদ। নিত্যযাত্রী ছাড়াও কাঠ, পাট, মাছ, দুধ, মাদুর ও কৃষিজ পণ্যও নিয়ে যেত এই লাইনের গাড়িগুলি। বাষ্প-ইঞ্জিনচালিত পাঁচ কামরাবিশিষ্ট এই ধীরগতির ট্রেনে শ্যামবাজার থেকে বসিরহাট পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লাগত সাড়ে চার ঘণ্টা। কিন্তু খুব দ্রুত শ্যামবাজার থেকে বাস-পরিষেবা চালু হয়। ট্রেনের চেয়ে ঢের কম সময়ে এবং কম খরচে বাসে চড়ে মানুষ পৌঁছতেন গন্তব্যে। ১৯২৭ সালে মার্টিন কোম্পানির এই শ্যামবাজার-হাসনাবাদ লাইন বিক্রি করে দেওয়া হয় অন্য কোম্পানির কাছে। আরও পরে যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়া, রেলপথ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় ১৯২৭ সালে কোম্পানি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে। পঞ্চাশ বছর চলার পর ১ জুলাই ১৯৫৫ এই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শেষ ট্রেনটি যে দিন শ্যামবাজার থেকে ছাড়ে, সে দিন লাইনের দু’ধারে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল শেষ বিদায় জানাতে। ১৯৫৫-র পর এই রেলপথ ভারত সরকার অধিগ্রহণ করে এবং ইস্টার্ন রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের অন্তর্গত হয়ে যায় এই লাইট রেললাইন। ১৯৬২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রেলমন্ত্রী জগজীবন রাম এই নতুন রেললাইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
মার্টিন রেলের হাওড়া-আমতা এবং হাওড়া-শিয়াখালা শাখার গভীর প্রভাব পড়েছিল তখনকার সামাজিক জীবনে। পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত হাওড়া-হুগলি-চব্বিশ পরগনার সামাজিক ইতিহাসে এই রেলের ভূমিকা বিরাট। এই রেললাইনের স্টেশনগুলোয় হাটবাজার, স্কুল, কলেজ, জনবসতি গড়ে ওঠে। কৃষিজাত পণ্য এবং গ্রামীণ কুটিরশিল্পে উৎপন্ন দ্রব্য খুব সহজেই মার্টিন ট্রেনের মাধ্যমে শহরের বাজারে চলে আসতে লাগল। মার্টিন রেলের দৌলতে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল বলেই আমতা-রামসদয় কলেজ এবং কদমতলায় হাওড়া নরসিংহ কলেজ তৈরি হয়, গ্রামাঞ্চলের বহু ছাত্র এখানে ভর্তির সুযোগ পায়। হাওড়া-হুগলির গ্রামগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ এই মার্টিন রেল ধরেই হাওড়া এবং কলকাতা শিল্পাঞ্চলে নিয়মিত যাতায়াত করত। একটা সময়ে হাওড়া-আমতা শাখায় মোট ৭৫টি ট্রেন চলাচল করত। পাশাপাশি বাস রুটেও চলত বেশ কিছু গাড়ি, বাস, টেম্পো ইত্যাদি।
সামাজিক ইতিহাসের অন্যতম উপাদান যে লোকবাহিত গল্পগাছা, মার্টিন রেল নিয়ে সেই পরম্পরাও খুব একটা কম নেই। গ্রামের মেয়েরা নাকি রেললাইনে সিঁদুর মাখিয়ে দিয়ে ছড়া কাটত— “রেল রেল রেল তোমার পায়ে দিই দেল”। কেউ হয়তো আত্মহত্যা করার জন্য মার্টিন রেলের লাইনে শুয়ে রয়েছে। অত্যন্ত ধীরগতির ট্রেন বলে ড্রাইভার হয়তো কেবিন থেকে নেমে এসে লোকটিকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠালেন। কোনও চাষি হয়তো চলার পথে ড্রাইভারকে অনুরোধ করলেন গাড়ি থামাতে। পার্শ্ববর্তী কোনও পরিচিতের বাড়িতে তিনি রেখে এলেন তাঁর মাচার লাউ। পুকুরের মাছও গাড়ি দাঁড় করিয়ে তুলে দেওয়া হত গার্ডের কামরায়। গ্রামের পরিচিত কোনও মহিলা ট্রেনলাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, ড্রাইভার সদয় হয়ে তাকে বললেন— “মাসি, হাঁটছ কেন? ট্রেনে উঠে পড়ো।” মহিলা জবাব দিল— “তুমি এগোও বাবা, আমার তাড়া আছে।” অর্থাৎ গোড়ার দিকে ট্রেনের গতি ছিল মানুষের পায়ে হাঁটার গতির চেয়েও শ্লথ। স্টেশনে ঢোকার আগে কিছু ক্ষণের জন্য পাদানিতে চড়া এবং স্টেশন ছেড়ে ট্রেনের গতি বাড়ানোর আগে গাড়ি থেকে নেমে পড়া অনেকের কাছেই ছিল এক মজাদার খেলা। বাংলা সাহিত্য, ছড়া, প্রবাদবাক্য, বাংলা-হিন্দি সিনেমায় মার্টিন রেলের উল্লেখ এবং অনুপ্রবেশ তাই সে দিন ছিল অবশ্যম্ভাবী। শিবরাম চক্রবর্তীর ‘হাওড়া-আমতা ট্রেন দুর্ঘটনা’ নামক উপন্যাস, কবি বিষ্ণু দে-র লেখা ‘ছড়ানো এই জীবন’, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অভিযাত্রিক’-এ মার্টিন রেলের উল্লেখ পাওয়া যায়। হিন্দি এবং বাংলা ছবিতেও এসেছে এই রেলের দৃশ্য। ১৯৬৬ সালে গুরু দত্তের ছবি ‘বাহারে ফির ভাই আয়েগি’-তে ধর্মেন্দ্র ও জনি ওয়াকারের অভিনয়ে এবং মহেন্দ্র কপূরের কণ্ঠে ‘বাদল যায়ে অগর মালি, চমন হোতা নহি মালি’ গানটি দৃশ্যায়িত হয়েছে। ১৯৭১ সালের সুপারহিট ‘ধন্যি মেয়ে’ ছবিটিতে ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’ গানটি মার্টিন ট্রেনের সিকোয়েন্সে গাওয়া হয়, যদিও স্টুডিয়োতে দৃশ্যটি পুনর্নির্মিত হয়েছিল। ১৯৬৯ সালে দীনেন গুপ্ত পরিচালিত রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘নতুন পাতা’ সিনেমায় নায়িকা এই মার্টিন রেলওয়ের অন্তর্গত পাঁতিহাল স্টেশনে স্টেশনমাস্টারের ঘরের ছাদে উঠে বাঁদর ধরার কসরত করেছিল। স্টেশনে ট্রেন এসে দাঁড়ানো, ট্রেন ছেড়ে চলে যাওয়া, স্টেশনে ট্রেনে চড়ে নব বরবধূ আসার দৃশ্য এখানে দেখানো হয়েছে। ১৯৬৪ সালে কিশোরকুমার পরিচালিত ‘দূর গগন কে ছাঁও মে’ ছবিতেও মার্টিন ট্রেনের দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। জনস্মৃতিতে রয়ে গেছে ট্রেনের হকার বা ফেরিওয়ালাদের কথাও। হকাররা এক কামরা থেকে অন্য কামরায়, এমনকি ছাদে-বসা যাত্রীদের কাছেও চা-ফুলুরি-বেগুনি পৌঁছে দিত। মাজুর ‘খৈচুর’, জগৎবল্লভপুরের পান, মাকড়দহের চা, ডোমজুড়ের তেলেভাজা, আমতার পান্তুয়া রীতিমতো আদরের ছিল যাত্রীদের কাছে। এ ছাড়াও এই অঞ্চলের তেভাগা আন্দোলন, মার্টিন রেল-কর্মচারী আন্দোলন, যাত্রী সমিতি, রেলকর্মচারীদের স্ট্রাইক ইত্যাদির স্মৃতিও সে কালের বহু মানুষের স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল।
১৯৫৭-৫৮ থেকে সমস্যা শুরু হলেও ষাটের দশকের শেষে মার্টিন রেলের হাওড়া-আমতা এবং হাওড়া-শিয়াখালা শাখায় কোম্পানির আর্থিক অবনতি প্রকট হয়ে ওঠে। বাস ও মোটর পরিষেবার উন্নতির সঙ্গে তাল রাখতে না পেরে, ক্রমবর্ধমান শ্রমিক অসন্তোষ ও ধর্মঘটের চাপে মার্টিন রেল কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১ জানুয়ারি ১৯৭১ থেকে এই লাইনের সমস্ত রেল চলাচল বন্ধ করে দেন। ১৯৭২ সালে লোকসভার প্রাক্-নির্বাচনী জনসভায় এসে তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী এই লাইট রেলওয়ে পুনরায় চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন। ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে এই মিটার গেজ রেলওয়ের বদলে ব্রড গেজ রেলওয়ে চালু হয়। দায়িত্ব নেন ভারতীয় রেল মন্ত্রক। মার্টিন রেলের বেশির ভাগ কর্মচারীদের রেল দফতরের বিভিন্ন বিভাগে চাকরি দেওয়া হয়। ক্রমে সমস্ত রেলপথটি ভারতীয় রেলের দক্ষিণ-পূর্ব শাখার অন্তর্ভুক্ত হয়। মার্টিন রেল আর নেই। কিন্তু আজও মানুষের স্মৃতিতে এর অস্তিত্ব অম্লান।
ঋণ : নিশীথ মান্না, রমেন সর, প্রদোষ পাল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy