রোগনাশিনী: শিল্পী কৃপাময়ী কর্মকারের আঁকা মহামারি পটের প্রতিকৃতি
আমাদের বাংলায় মহামারি পট আছে, এ কথা জানলে, ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের মতো সেটারও খোঁজ করতেন। সঙ্কটকালে প্রতিষেধক না পেয়ে বহু দেশের ভরসা ‘হার্ড ইমিউনিটি’, ভারতে অনেকে করোনাদেবীর পুজোও শুরু করেছেন। বিশ্বাসের অ্যান্টিবডিতে যদি নিস্তার মেলে! মহামারি পট পেলে কে কী করতেন তা অনুমান করা যেতে পারে।
বাংলায় গল্পের নানা বিস্তার। পুরাণ, মহাকাব্য, ইতিহাস— বাস্তব জীবনে মিশে জীবন্ত। সিরাজউদ্দৌল্লার সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল এক মল্লরাজের, তাঁর সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে গাছতলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন রাজা। স্বপ্নে শুনলেন, দেবীরূপ এঁকে পটপুজো করলেই মিলবে কলেরা থেকে মুক্তি। রাজা ফিরে এসে শিল্পীকে দিয়ে তৈরি করালেন সেই দেবীর রূপ। দুর্গাপুজোর নবমীর গভীর রাতে সেই ‘মহামারি পট’-এর পুজো এ বারও নিশ্চয়ই হবে বাঁকুড়া জেলার জামকুড়ি মল্লরাজ পরিবারে। প্রচলিত বিশ্বাসে এই পট দেখা ও আঁকা নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকারক। জরাজীর্ণ, অস্পষ্ট পট দেখে বছর দশ আগে আবার তা এঁকেছিলেন যিনি, তিনি কৃপাময়ী কর্মকার— কয়েক প্রজন্ম ধরে বয়ে চলা মল্লরাজের পটশিল্পী-পরিবারের বর্তমান শিল্পী।
মহামারি পট তো পুজোর সঙ্গে জড়িত প্রাচীন রীতি। পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়ার শিল্পীরা করোনাভাইরাসের ছবি এঁকে গানে গানে বলছেন তার কথা। নানা বিষয়ে পট এঁকে গান বেঁধে গ্রামেগঞ্জে শোনান তাঁরা, কখনও কাকদ্বীপের জাহাজডুবি, কখনও কন্যাশ্রী প্রকল্প নিয়ে। লকডাউনে ঘরে বসে করোনার গানই তৈরি হচ্ছে। দুখুশ্যাম চিত্রকর ছন্দে লিখে ফেলেছেন ভাইরাসের চিন থেকে ফ্রান্স আমেরিকা ব্রিটেনে ছড়িয়ে পড়ার কথা। আশি ছুঁই-ছুঁই শিল্পী তাঁর নাতি, বছর কুড়ির জুলফিকারের সাহায্যে হোয়াটসঅ্যাপে গান পাঠিয়েছেন— ‘সাত দফা আইন মেনে তাড়াব ভাইরাস/ যথা চেষ্টা করে যাচ্ছে ডাক্তার ও নার্স।/ এ কেমন মারণ ভাইরাস কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ/ পুলিশ শিল্পী একসঙ্গেতে গাইছি মধুর গান।/ এ কথা শুনে মারণ ভাইরাস কবরেতে যান/ ঈশ্বর আল্লা আছে করবে মুশকিল আসান।’ বন্ধদশা উঠলেই সুরে সুরে মেলে ধরবেন পট। তরুণ জুলফিকার জানালেন, গ্রামের একশো ঘরই বোধহয় করোনার পট আঁকছে। স্বর্ণ চিত্রকর, মামণি চিত্রকরের মতো অনেকেই করোনার পটচিত্র ও গান নিয়ে ফেসবুকে চলে এসেছেন। রুকসানা চিত্রকর গাইছেন, ‘ভাইরাস থেকে হও গো সচেতন, ও জনগণ।’
দক্ষিণ দিনাজপুরের খন লোকনাট্যের শিল্পী মাধাই মহন্ত আজ থাকলে, এই নতুন রোগ আর নতুন শব্দ শুনে নিশ্চয়ই কাউকে দিয়ে পালা লেখাতেন আর তাতে কোয়রান্টিন-কালীন বন্দিদশার কথা বলতেন। নিরক্ষর তিনি, অথচ পঞ্চাশটারও বেশি পালা রচনা করেছেন। তাঁরই ‘মিনতি সরি পুলিশ মার্ডার’ অভিনয় করতে গিয়ে পুলিশ দলটাকেই গ্রেফতার করেছিল। ঢাকবাদ্য ও নাটুয়া নাচের বন্দিত শিল্পী, আশি বছর বয়সি হাড়িরাম কালিন্দীর আফসোস, এ বার চৈত্র-শেষ ও বৈশাখ জুড়ে শিবগাজন, বিয়ে আর জ্যৈষ্ঠ মাসে রোহিণ পরবে ঢাকের শব্দ আর নাটুয়া নাচের ছন্দ একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। ‘পঞ্চান্ন বছর বাজিয়েছি। সবাই বলে হাড়িরামকে না আনলে পরবটা ভাল লাগবেই নাই।’ হনুমাতা ড্যাম আর ঢেউখেলানো টাঁড় জমি পেরিয়ে পুরুলিয়ার গ্রাম-গ্রামান্তরে হাড়িরাম তাঁর দলবল নিয়ে হাজির হতে পারলেন না। করোনার মাস ছয়েক আগে জঙ্গলমহলেরই এক প্রান্তবর্তী গ্রামে খাদান থেকে পাথর তোলা দেখছিলাম। ঝাড়গ্রামের ঢাঙিকুসুম গ্রামের লোকেরা সেই পাথর থেকে থালা বাটি গেলাস তৈরি করেন, কলকাতার হস্তশিল্প মেলাতেও যা দেখা যায়। ক্রেতা না থাকায় এখন সে কাজ আর নেই। উত্তর দিনাজপুরের মৃৎশিল্পে প্রাজ্ঞ ভানু পাল কারুশিল্পীদের ভবিষ্যতের আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছিলেন। মেলা বন্ধ, বাঁশ বেত মাটি গালা শোলা ঝিনুক ধাতুর তৈরি হাতের কাজ বিক্রির জায়গা নেই। শহরে-গঞ্জে অনুষ্ঠান নেই, বাউল ঝুমুর ভাওয়াইয়া গম্ভীরা আলকাপ কুশান বনবিবি রায়বেঁশে পুতুলনাচ ছৌ সব থমকে গেছে।
বাংলা জুড়ে হাজার হাজার বাউল শিল্পী। কেউ কেউ সাধক, অনেকেই গায়ক। পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়লে তাঁরা কর্মশালায় গেয়ে ওঠেন ‘বাজারে লেগেছে আগুন’, কখনও গান বাঁধেন পোলিয়ো টিকা, পরিবেশ দূষণ বা সম্প্রীতি নিয়ে। করোনা নিয়ে যে বাউলরা সজাগ হবেন, স্বাভাবিক। বাউল শিল্পীদের কাছে সব সময় ফরমায়েশি গানের চাহিদা থাকে। অনেকেরই আশঙ্কা, করোনা-উত্তর কালে সরকারি অনুষ্ঠান কমবে। ভাবছেন, তবে কি পেশা পাল্টাতে হবে? আসলে এমন ধাক্কা তো আগে আসেনি! তবে ওঁরা গান লিখছেন। পূর্ব বর্ধমানের মণিমোহন দাসের গানে বিষাদ ও হতাশার সুর— ‘জ্বলছে চিতা বিশ্ব জুড়ে, গণসমাধি এ বার/ শেষ অব্দি কয়জন বেঁচে থাকবে, ওগো আর।’ কয়েকটা গানের ভিডিয়ো রেকর্ডিংও করেছেন। বাউল-সহ কয়েক লক্ষ লোকশিল্পী রাজ্য সরকারের লোকপ্রসার প্রকল্পে মাসিক ভাতা পেলেও, চারু-কারুশিল্পীদের জন্য তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই।
এই সময়ে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির কাছে চড়িদা গ্রামে রাত-দিন এক করে কাজ করতেন কারুশিল্পীরা। চৈত্র মাস থেকেই মুখোশ তৈরির ব্যস্ততা থাকে। দুর্গা, মহিষাসুর, কার্তিক, গণেশ, শিবের অলঙ্করণ ও সাজসজ্জার কাজে যুক্ত আড়াইশো পরিবারের কয়েকশো মানুষ। জেলার কয়েকশো দল ছাড়াও ঝাড়খণ্ডের বহু ছৌ নাচের দল মুখোশের জন্য ভিড় করে এ সময়। মনোরঞ্জন সূত্রধরের আক্ষেপ, কলকাতা থেকে মুখোশ তৈরির সরঞ্জাম কিনে ফেরার পর পরই সব বন্ধ হয়ে গেল। ছৌ নাচ বন্ধ, তাই মুখোশেরও দরকার নেই। ছৌ নাচের শিল্পীদের ভাতা আছে, কিন্তু তাঁদের যাঁরা মুখোশে সজ্জিত করেন তাঁদের কোনও নিয়মিত সাহায্য নেই। দক্ষিণ দিনাজপুরের মহিষবাথানের সমবায় সমিতির কাঠের মুখোশের চাহিদা আছে সরকারি বিপণনে, তাই তাঁরা খানিক আশায়।
তাজকিরা বেগমের সমস্যা অন্য। বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ মিলিয়ে দুশোরও বেশি স্বনির্ভর গ্রামীণ মহিলার অন্যতমা তিনি। দূরদূরান্ত থেকে এসে ডিজ়াইন করা থান ও সুতো নিয়ে তৈরি করে দেন নকশি কাঁথা। লকডাউনে এ বার ইদে মুসলিম মহিলা শিল্পীদের করুণ অবস্থা। পূর্ব বর্ধমানের নতুনগ্রামের পুতুলশিল্পীদের মেলায় কাঠের পুতুল বিক্রিই ভরসা। কিন্তু ঘোষপাড়া, মায়াপুর, অগ্রদ্বীপের দোলে বা জামালপুরের গাজনে মেলা বসেনি। হয়নি অযোধ্যা পাহাড়ের শিকার উৎসব, শুশুনিয়া পাহাড়ের নীচে বারুণী মেলা। উত্তরবঙ্গে টোটোপাড়ার হাটও বন্ধ ছিল। তবে, লকডাউনের শুরুতে কাঁথি এলাকায় অগ্রগামী পুতুলনাচের দল করোনা-সচেতনতার প্রচার করেছে। আন্দামানে এই দলই এক বার সোয়াইন ফ্লু-র প্রচার প্রদর্শনীও করেছিল। এখন পরিচালক গান লিখছেন, ‘বিশ্ব ভারত রাজ্য জুড়ে/ মহামারি আসছে তেড়ে/... হায় রে, কী ব্যাধি আসিল করোনা/ ও জরিনা, কী করে প্রাণ/ বাঁচাই বলো না।’ গান বেঁধেছেন বেণীপুতুল শিল্পীরাও। পূর্ব মেদিনীপুরের বসন্তকুমার ঘোড়ই তরজা গানের সুরে তৈরি করেছেন, ‘শুনুন শুনুন জনগণ শুনিবেন সকল/ মহামারি করোনার কথা কিছু করিব বর্ণন।/ যে ভাইরাস সারা বিশ্বে/ লাফিয়ে লাফিয়ে করছে দেশ দখল/ হু সংস্থা মহামারি ঘোষণা করিল এখন।’
দিনযাপনের সঙ্কটের মধ্যেও গ্রামীণ জনজীবনে সুর-ছন্দ রচনার এ এক অন্য তাগিদ। বাংলার প্রবীণতম বহুরূপী শিল্পী সুবলদাস বৈরাগ্য লিখেছেন, ‘হায়রে দেশের কী হল/ করোনা মহামারি দেখা দিল...’ লাহাংকারি গানের শিল্পী, দার্জিলিঙের তারণ সিংহ আগে জলদূষণ, এনসেফালাইটিস, ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার গান গেয়েছেন, এ বার পালা করোনার। বেলপাহাড়ির আশি পেরনো ছত্রমোহন মাহাতো পথে বেরিয়েছিলেন, ঝুমুরের তালে ধামসা মাদল ঘুঙুর নিয়ে চলছে গান— ‘আতঙ্কে নয় সতর্কে ভাই, করোনাকে করব জয়/ বিজ্ঞানীদের নিয়ম মেনে সরকারকে কর সহায়।’ নরহরি মাহাতোর ছড়া: ‘এ সময় দরকার চেতনার জাগরণ/ মাস মিডিয়ার চোখ থাকে যেন সারাক্ষণ।’ হারিয়ে যাওয়া হেটো কবিতায় উত্তরবঙ্গের সাধক বাউলের নিরীক্ষা: ‘হতাশাতে ভুগিও না ছাড়িও না আশা/ জিতব মোরা ঘুরে যাবে কালচক্রের এই পাশা।/... হেটো কবিতায় সুরে মনে পাই প্রেরণা/ তরণীসেন মহান্তের লেখা স্বভাবে দিন কানা।/ উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে-সুভাষগঞ্জে ঠিকানা— বন্ধু রে।’
নদিয়ার বৃত্তিহুদা গ্রামে কুবির গোঁসাইয়ের প্রতি ভক্তের ডাক রূপ পায় গানের সুরে। সাহেবধনী সম্প্রদায়ের উৎসবে বুদ্ধপূর্ণিমার সন্ধ্যায় কুবিরের সমাধিমন্দিরের সামনে বসে তাঁরই উত্তরাধিকারী নবকুমার বৈরাগ্য গাইতেন, ‘কোথাও প্রেমের চাল প্রেমেরই ডাল, প্রেম হাঁড়িতে পাক করিব/ আবার প্রেম-পাথরে ঢেলে দিয়ে, আমি গুরুধনের সেবা দিব।’ সেই তিনিই এখন লিখছেন করোনা থেকে মুক্তির কথা: ‘করোনা থেকে করো মুক্তি সর্ব বিশ্ব সমুদয়।/ খ্যাপার মনে চিন্তা সদাই/ তুমি ছাড়া আর আমার তো কেহ নাই।’ লোকধর্মের সুর ও বাণী মানবজীবনের অন্তর-বাহিরের সারকথা তুলে ধরে।
মালদহ ও দুই দিনাজপুরে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ জুড়ে গম্ভীরা ও গমিরা পুজো-উৎসবে কাঠের সঙ্গে শোলার মুখোশও আবশ্যিক সামগ্রী। দক্ষিণ দিনাজপুরের মধুমঙ্গল মালাকার বলছিলেন, অন্তত পঞ্চাশটি থানে যায় তাঁদের তৈরি মুখোশ। তাঁর মতো কারুশিল্পীদের এখন খুব দুর্দিন। শোলার কাজের বিষয় নিয়ে এই সময়ে তাঁর সুরাতে, এমনকি নিউ ইয়র্কেও যাওয়ার কথা ছিল। আঞ্চলিক, দেশীয়, আন্তর্জাতিক, সব ভূগোলে লক্ষ্মণরেখা টেনে দিয়েছে করোনা। শোলার কাজ নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘোরা শিল্পীর গলায় বিষণ্ণতা, এ বার বোধহয় গ্রামের দোকানের বেচাকেনার উপরেই নির্ভর করতে হবে!
নাচ-গান-নাটকের লোকায়ত শৈলীতে সব সময়ই তাৎক্ষণিক অদলবদল আর সংযোজন চলতেই থাকে। করোনার আবহে মুর্শিদাবাদের করুণাকান্ত হাজরা লিখেছেন আলকাপ পালা ‘জীবন ভালবাসি রে’। দল নিয়ে একটু রিহার্সালও দিয়েছেন। তাতে আছে সংলাপ, চুটকি, গান— ‘একদিন মোরা করবই জয়/ জীবনকে বড় ভালবেসে রে।’ একটার পর একটা পরব চলে গেল, পেশা ঘিরেও অনিশ্চয়তা, কিন্তু অধিকাংশ শিল্পীই হাল ছাড়ছেন না। সব ঠিকঠাক হলে আবার মেলায় যাবেন নাচ-গান-নাটক করবেন গ্রাম-শহরের মণ্ডপে। তাই তাৎক্ষণিক সুরও তৈরি হচ্ছে অবিরত। শুনতে শুনতে চোখ চলে যায় সত্তর বছর আগে যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির ‘পূজাপার্বণ’ প্রসঙ্গে লেখায়— ‘মেলেরিয়ায় ও কালদোষে যাবতীয় উৎসব শ্রীহীন ও লুপ্তপ্রায় হইয়াছে। বাঙ্গালীর জীবন-যাত্রায় কত ব্রত, কত পূজা, কত পরব ছিল তাহা পাঁজি দেখিলে বুঝিতে পারা যায়...’
যখনই কোনও বাধা আসে, ছেদ ঘটে অভ্যাসে। খুলে যায় অন্য দিক। মুক্তি ঘটে একঘেয়েমি থেকেও। আশা-নিরাশার মধ্যে মানুষের আত্মশক্তি তৈরি হয়। কঠিন সময়ে তা ঝলক দিয়ে ওঠে। বাউল শিল্পী সুভদ্রা শর্মা তাই সরল রসিকতা মিশিয়ে এই সময়েই লিখে ফেলেন, ‘ও সোনা ও মনা ও করোনা/ এই কথাটি শোনো না,/ জীবন নিয়ে টানাটানি আর কোরো না।’ করোনার শঙ্কার মধ্যেই দোল দিয়ে যায় লোকশিল্পীর এই সোহাগ-ভরা আকুতি। সঙ্কটের বিহ্বলতার মধ্যেও পথের ঠিকানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy