টিকাকরণ: একটি শিশুকে গুটিবসন্তের ভ্যাকসিন দিচ্ছেন এডওয়ার্ড জেনার। ছবি: গেটি ইমেজেস।
সারা বিশ্ব আজ অপেক্ষায়, কবে একটি জবরদস্ত ভ্যাকসিন আসবে আর পাততাড়ি গুটোবে কোভিড-১৯। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তৈরি কয়েকটি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে চলছে পরীক্ষানিরীক্ষা। শোনা যাচ্ছে, কোনও কোনও ভ্যাকসিন পরীক্ষায় পাশ করার আগেই, সেগুলির বরাত দেওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে গেছে বহু দেশ। ভাবলে অবাক লাগে, পৃথিবীতে প্রথম ভ্যাকসিন আসার দিন পরিস্থিতি ছিল উল্টো। ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনার তাঁর তৈরি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরও, লন্ডনে দোরে দোরে ঘুরেও প্রথমে কাউকে রাজি করাতে পারেননি ভ্যাকসিন নিতে। একে গেঁয়ো ডাক্তারের তৈরি ভ্যাকসিন, তায় তার উৎস গরুর শরীরের বসন্তের পুঁজ। ভয়ঙ্কর এক অসুখের প্রতিবিধান নাকি পাওয়া গেছে সামান্য গোয়ালিনিদের গল্পকথার মধ্যে! বিতৃষ্ণা, তাচ্ছিল্য আর অবজ্ঞায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সবাই। মজার ব্যাপার, জেনারের কাঁটা-বিছানো পথে ফুল ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে এসেছিলেন ইংল্যান্ডের রোম্যান্টিক যুগের কয়েকজন কবি!
প্রাচীনকাল থেকেই দেশে দেশে গুটিবসন্ত ছিল বিভীষিকা। অ্যাজ়টেক আর ইনকা সভ্যতা প্রায় মুছে যায় গুটিবসন্তের তাণ্ডবেই। ইউরোপে মধ্যযুগ থেকেই যখন-তখন মহামারির আকার নিত এই রোগ। প্রাণে যারা বেঁচে যেত, সেই সব রোগীর মুখে আর শরীরে থেকে যেত সেই ‘দাগি দৈত্যে’র হিংস্রতার কুৎসিত স্মৃতিচিহ্ন। ‘দাগি দৈত্য’ অর্থাৎ ‘স্পেকল্ড মনস্টার’— আঠেরো শতকের ইংল্যান্ড এমনই নাম দিয়েছিল গুটিবসন্তকে। যে রোগে রোগীর মুখে অমন কুৎসিত দাগ থেকে যায়, সে রোগের নিজের মুখেও ভয়ঙ্কর দাগ থাকবে, এমনটাই কল্পনা করেছিল মানুষ। দৃষ্টিশক্তিও চলে যেত দৈত্যের কবল থেকে বেঁচে যাওয়া অনেকের। ১৬১৬ সালে কবি ও নাট্যকার বেন জনসন ‘অ্যান এপিস্ল টু স্মলপক্স’ কবিতায় গুটিবসন্তকে ‘হিংসুটে জঘন্য অসুখ’ বলে সম্বোধন করে প্রশ্ন রেখেছিলেন: “কোনও কালে এক জন সুন্দরীও কি তোমার হাত থেকে রেহাই পাবে না?”
পাশ্চাত্যে প্রথম অটোমান সাম্রাজ্য থেকে এসেছিল গুটিবসন্ত প্রতিরোধের পদ্ধতি ‘ইনোকিউলেশন’। আক্রান্ত মানুষের গুটিবসন্তের গুটি থেকে রস নিয়ে সুস্থ মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হত, তার ফলে অনেক সময়ই প্রথম জনের থেকে দ্বিতীয় জনের শরীরে সিফিলিস বা যক্ষ্মার মতো অসুখও ছড়িয়ে পড়ত। যদিও মৃদু আক্রমণ হয়েছে, এমন রোগীর গুটি থেকে রস নিয়ে সুস্থ মানুষের শরীরে চালান করা হত, তবু অনেক সময়ই দ্বিতীয় ব্যক্তির শরীরে গুটিবসন্ত ভয়াল রূপ নিয়ে হাজির হত। আবার তার থেকে ছড়িয়ে পড়ত আশপাশের মানুষের মধ্যেও। কিন্তু তাও হাজার হাজার মানুষ রোগ প্রতিরোধের এই পদ্ধতির সাহায্য নিত ভয়ঙ্কর গুটিবসন্তের খপ্পরে না পড়ার আশায়।
১৭৫৭ সালে ওই পদ্ধতিতেই ইংল্যান্ডে কয়েক হাজার শিশুর টিকাকরণ হয়। তার মধ্যে ছিল গ্লস্টারশায়ারের এক গ্রামের আট বছরের একটি শিশুও। বড় হয়ে সেই শিশু ডাক্তারি পড়ে গ্রামের মানুষের সেবায় নিজেকে সঁপে দিল। সেই ডাক্তার ছিলেন এডওয়ার্ড জেনার। ডাক্তার জেনার এক বার গ্রামের গোয়ালিনিদের মুখে শুনলেন, তাদের এক বার গো-বসন্ত হয়ে গেলে আর গুটিবসন্ত হয় না। গো-বসন্ত রোগটা ছিল নিতান্তই নিরীহ। জেনার ভাবলেন, গো-বসন্ত থেকে গুটিবসন্তরোধী টিকা তৈরি করা গেেল তা হবে নিরাপদ।
১৭৯৬ সালের মে মাসে জেনার এক গোয়ালিনির শরীরে গো-বসন্তের ক্ষত থেকে রস সংগ্রহ করে প্রয়োগ করলেন তাঁর বাগানের মালির আট বছর বয়সি একটি ছেলের ওপর। জ্বর, মাথাধরার মতো কিছু অসুস্থতার পর সে সুস্থ হয়ে ওঠে। তার কিছু দিন পর তার শরীরে গুটিবসন্তের রস চালান করেন, কিন্তু তার শরীরে সে রোগের কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। পরে গরুর শরীরে গো-বসন্তের ফুসকুড়ি থেকেও জেনার ভ্যাকসিন সংগ্রহ করেন আরও অনেককে টিকা দেওয়ার জন্য। কিন্তু রয়্যাল সোসাইটিতে জেনারের পাঠানো ভ্যাকসিন-বিষয়ক গবেষণাপত্রের স্থান হল আস্তাকুঁড়ে।
১৭৯৮ সাল। ইংরেজি কবিতার গতিমুখ বদলে দিতে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ আর স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ তাঁদের কাব্যগ্রন্থ ‘লিরিক্যাল ব্যালাডস’ প্রকাশ করলেন সে বছর। আর সে বছরই ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনার প্রকাশ করলেন তাঁর একটি ছোট্ট বই— ডাক্তারি শাস্ত্রকে নতুন পথ দেখানোর জন্য, গুটিবসন্ত থেকে বাঁচার নিরাপদ উপায়ের স্বপ্ন ফেরি করবার জন্য। ল্যাটিন ‘ভ্যাক্কা’ শব্দের মানে গরু, তাই জেনার তাঁর এই বইতে গো-বসন্ত বোঝাতে ‘variolae vaccinae’ কথাটি ব্যবহার করেন। তা থেকেই পরে টিকা, বোঝাতে ভ্যাকসিন কথাটির প্রচলন হয়। এই বইতে গোয়ালিনি, খেতমজুর-সহ হতদরিদ্র বেশ কিছু লোকের কাহিনি তুলে ধরেছিলেন, যারা জীবনে কোনও না কোনও সময় গো-বসন্তে আক্রান্ত হয়েছিল, ফলে তাদের শরীরে গুটিবসন্ত প্রতিরোধের ক্ষমতা জন্মায়। প্রথম যে গোয়ালিনির হাতের ফুসকুড়ি থেকে জেনার ভ্যাকসিন সংগ্রহ করেছিলেন, তার হাতের একটি ছবিও এই বইয়ের জন্য আঁকিয়েছিলেন তিনি।
লন্ডনে এসে ডাক্তার জেনার তিন মাস পড়ে থাকলেন লোকের খোঁজে— কে নেবে তাঁর ভ্যাকসিন? লন্ডনে স্বীকৃতি চাই। না হলে কি আর সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা মিলবে? নিচু শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মেশা গেঁয়ো ডাক্তার নেহাতই পাগলের প্রলাপ বকছেন— এই ছিল জেনার সম্পর্কে লন্ডনের অভিজাত সমাজের মূল্যায়ন। ফরাসি বিপ্লবের সময় ইংল্যান্ডেও তার ছায়া পড়েছিল, দেখে আঁতকে উঠেছিলেন অনেকে। সে আতঙ্কের রেশ কি আর সহজে কাটে? সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছিল র্যাডিক্যালদের, যাঁরা সমাজ বদলের চিন্তায় বিভোর ছিলেন। জেনারের চিন্তাভাবনায় র্যাডিক্যালদের গন্ধ পেলেন অনেকে। অভিজাতরা ভাবলেন, সাধারণ যে সব গরিবগুর্বো মানুষ এত দিন তাঁদের পায়ের তলায় থাকত, যাদের কারবার গরু-বাছুর নিয়ে, তারা কী করে গল্পকাহিনির মতো চিকিৎসার পথ দেখাবে! জেনারের উলটপুরাণ মানতে হলে তো জগৎ-সংসার উচ্ছন্নে যাবে। চিকিৎসকরাও ভ্যাবাচ্যাকা। চার্চের পুরোহিতরাও শিহরিত। অসুস্থ পশুর শরীর থেকে পুঁজরস মানুষের শরীরে ঢুকবে? এ যে ঘোর অনাচার! গো-বসন্ত আক্রান্ত গরুর শরীর যে ভ্যাকসিনের উৎস, তা মানুষের শরীরে ঢুকলে যে কী ঘটবে সে নিয়ে জনমানসে নানা গুজব আর আতঙ্ক ছড়াল। ১৮০২ সালে খ্যাতনামা ব্যঙ্গচিত্র শিল্পী জেমস গিলরে তাঁর বিখ্যাত ব্যঙ্গচিত্রটি আঁকেন, যেখানে দেখা যায়, জেনার লন্ডনবাসীদের ভ্যাকসিন দিচ্ছেন আর তারা ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে। তাদের ভয় মাথায় গরুর মতো শিং বেরিয়ে যাবে, এমনকি বাছুরও জন্ম নেবে তাদের শরীর থেকে। জেনার ব্যর্থমনোরথ হয়ে ফিরে গেলেন দেশে। তাঁর ধারণা সঠিক প্রমাণ করতে মফস্সল এলাকায় কারও কারও ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলেন তিনি। নিজের এগারো মাসের শিশু সন্তানকেও ভ্যাকসিন দিলেন।
যুগটা ছিল রোম্যান্টিক কবিদের। যে যুগ স্মরণীয় হয়ে আছে নতুন পথে চলার নেশা আর মানুষের সুখদুঃখের কথা ভাবার জন্য। কবি কোলরিজ আর রবার্ট সাদি উঠেপড়ে লাগলেন ডাক্তার জেনারের মানবকল্যাণে তৈরি এই ভ্যাকসিনের প্রচারে। পত্রপত্রিকায় তাঁরা পঞ্চমুখ হলেন জেনারের প্রশংসায়। গ্রামের মানুষদের সেবা করেন যে ডাক্তার, তাঁর হাত ধরে মানুষ মুক্তি পেতেই পারে কয়েক শতাব্দীর মারণ রোগের বিপদ থেকে। মফস্সলে থেকে নিখরচায় মানুষের যক্ষ্মার মতো দুরারোগ্য অসুখ দূর করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আর এক ডাক্তার টমাস বেডোস। তাঁর প্রচারেও কোলরিজ আর সাদি নেমেছিলেন কোমর বেঁধে।
লন্ডন ছেড়ে যাওয়ার সময় জেনার ডাক্তার ক্লাইনের কাছে কিছু ভ্যাকসিন রেখে গিয়েছিলেন। ডাক্তার ক্লাইন ছিলেন লন্ডনের সেন্ট টমাস হাসপাতালের শল্যচিকিৎসক। গেঁয়ো ডাক্তারের ভ্যাকসিন খানিকটা হালে পানি পেয়েছিল এই ক্লাইনের সৌজন্যে। ১৭৯৯-১৮০০ সালে গুটিবসন্ত ভয়ঙ্কর মহামারি হয়ে দেখা দিলে ভ্যাকসিনের ব্যাপারে উৎসাহ বাড়ল। লন্ডনের আর এক ডাক্তার জর্জ পিয়ারসনও এগিয়ে এসেছিলেন ভ্যাকসিনের সমর্থনে। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই দেখা গেল, পিয়ারসন প্রচারের আলো নিজের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। জেনারের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁর কৃতিত্বকে খাটো করার চেষ্টা করছেন। ১৮০২ সালে জেনার যখন পার্লামেন্টে তাঁর কাজের জন্য অর্থসাহায্যের আবেদন করেন, পিয়ারসন দাবি করেন, জেনারের আগে বেঞ্জামিন জেসটি গো-বসন্ত থেকে টিকা প্রয়োগ করেছিলেন।
আসলে ১৭৭৪ সালে গুটিবসন্তের এক মহামারির সময় এই কৃষক প্রতিবেশীর গরুর শরীরে গো-বসন্তের ফুসকুড়িতে স্ত্রীর সেলাই করার সূচ ফোটান, তার পর তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলের শরীরে সেই সূচের ডগায় লেগে থাকা রস প্রয়োগ করেন। জেসটি তাদের মধ্যে এ রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পেরেছিলেন, যদিও এমন কাজের ফলে ছিছিক্কার পড়ে গিয়েছিল প্রতিবেশীদের মধ্যে। সকলের গালাগাল জুটেছিল জেসটির ভাগ্যে।
১৮০৫ সালে যখন পার্লামেন্ট ফের জেনারকে অর্থসাহায্যের কথা বিবেচনা করতে যাবে, তখনই পিয়ারসনের উদ্যোগে অরিজিনাল ভ্যাকসিন পক ইনস্টিটিউট জেসটিকে ডেকে পাঠাল। পিয়ারসনের উদ্দেশ্য ছিল জেসটির দিকে সবার নজর ঘোরানো। সেখানকার বারো জন অফিসারের সামনে জেসটিকে হাজির করানো হয় সত্য যাচাইয়ের জন্য। তাঁর একটি প্রতিকৃতিও আঁকানো হয় শিল্পী মাইকেল শার্পকে দিয়ে। বহু বছর এই ছবিটির হদিশ না মিললেও ২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার এক ব্যক্তির কাছে এটি পাওয়া যায়। ডাক্তার জেনারের আগে এ ভাবে গো-বসন্তের রসকে কাজে লাগিয়ে গুটিবসন্ত প্রতিরোধ করার কাজ জেসটি করলেও জেনার বিজ্ঞানসম্মত ভাবে টিকার কার্যকারিতা প্রমাণের উদ্যোগ নেন। তিনি এক জনকে টিকা দিয়ে তার শরীর থেকে অন্যকে দেওয়ার জন্য টিকাও তৈরি করেন। মানুষের মঙ্গলের জন্য সুসংহত ভাবে টিকা দেওয়ার কথা জেসটি ভাবতে পারেননি বা সার্বিক ভাবে মানুষ যাতে নিরাপদ সেই টিকা গ্রহণ করতে পারে, তার জন্য চেষ্টাও করেননি।
এরই মধ্যে ১৮০৪ সালে ভ্যাকসিন নিয়ে ‘গুড টাইডিংস: নিউজ় ফ্রম দ্য ফার্ম’ কবিতা লিখলেন রবার্ট ব্লুমফিল্ড। ব্লুমফিল্ড লিখলেন গরুর নিঃশ্বাসের সৌরভের কথা। কী অদ্ভুত রোম্যান্টিকতা! সত্যিই তো, যে গরুর জন্য ভয়ঙ্কর রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে, তার নিঃশ্বাস সুরভিত হবে না! আরও বিস্ময়কর, গির্জার পাদ্রিরাও ধর্মোপদেশের সঙ্গে জুড়ে দিলেন ভ্যাকসিনের পক্ষে কিছু কথা।
ধীরে ধীরে ভ্যাকসিনকে খারাপ চোখে দেখা বন্ধ হল। জেনার পরিচিতদের তো বটেই, অন্য কেউ ভ্যাকসিনের ব্যাপারে উৎসাহ দেখালেই তাঁর ভ্যাকসিন পাঠিয়ে দিলেন নিজের খরচে। ভ্যাকসিন নেওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকল। ইংল্যান্ডের সেনাবাহিনীর সমস্ত সৈনিককে ভ্যাকসিন দেওয়া হল। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে গেল ভ্যাকসিন। ব্রিটেনের সঙ্গে ফ্রান্সের যুদ্ধ চলছে তখন। নেপোলিয়ন তাঁর সেনাবাহিনীর সমস্ত সৈনিককে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। মানবকল্যাণে ডাক্তার জেনারের অবদানে তিনি এমনই আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন যে, বিশেষ পদক দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করেন। শুধু তাই নয়, তাঁর অনুরোধে দু’জন ব্রিটিশ যুদ্ধবন্দিকে তিনি মুক্তিও দিয়ে দেন। নেপোলিয়ন জেনারকে ‘মানবজাতির সবচেয়ে বড় উপকারী মানুষদের এক জন’ বলেছিলেন। জেনারের আবেদন তাঁর কাছে পৌঁছলে তিনি নাকি বলে ওঠেন, ‘জেনার! উনি কিছু চাইলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করতে পারি না।’
আজ ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগেই কপালে ভাঁজ পড়েছে ভ্যাকসিনের দাম কত হবে সেই চিন্তায়। অথচ জেনার তাঁর এই মানবহিতৈষী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অর্থের কথা না ভেবেই। বরং ভ্যাকসিন নিয়ে মাতামাতি করতে গিয়ে তাঁর ডাক্তারি লাটে উঠেছিল। শেষে ১৮০২ সালে দেশের পার্লামেন্ট তাঁকে দশ হাজার পাউন্ড ও ১৮০৭ সালে কুড়ি হাজার পাউন্ড অর্থসাহায্য করে। বাড়ির বাগানে জেনার গড়েছিলেন ছোট্ট একটি কুটির, নাম দিয়েছিলেন ‘টেম্পল অব ভ্যাকসিনিয়া’। তিনি বিনা পয়সায় মানুষকে ভ্যাকসিন দিতেন সেখানে।
আজ চল্লিশ বছর হল বিদায় নিয়েছে গুটিবসন্ত। প্রয়োজন নেই সে রোগের ভ্যাকসিনেরও। কিন্তু তৈরি হয়েছে অন্য নানা রোগের ভ্যাকসিন। আগামী দিনেও বহু অজানা রোগের ভ্যাকসিন তৈরি হবে। ভ্যাকসিন কথাটির মধ্যে থেকে যাবে ডাক্তার জেনারের ছোঁয়া। গুটিবসন্তের প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কৃতিত্ব শুধু নয়, মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ভ্যাকসিনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার ব্যাপারেও তাঁর লড়াই কুর্নিশযোগ্য। মানুষের হিতার্থে তাঁর পাগলামির কাহিনি হয়তো হারিয়ে যাবে, যেমন হারিয়ে যাবে তাঁর দু’এক জন ডাক্তার-বন্ধু আর কোলরিজ-সাদির মতো রোম্যান্টিক কবিদের কাহিনি, যাঁরা ডক্টর এডওয়ার্ড জেনারের মতো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্রোতের বিপরীতে হাঁটার সাহস দেখিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy