Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প
bengali short story

হাওয়া বদল

তোফা ঘুরলাম। সুন্দর সমুদ্র, ঝাউবন। জমিয়ে মাছের মাথা দিয়ে ডাল, আলুভাজা, ভাত সাবড়েছি।

ছবি:রৌদ্র মিত্র

ছবি:রৌদ্র মিত্র

দেবদীপ মজুমদার
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২০ ০০:০৫
Share: Save:

ভুলুদা প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে হাত নাড়তে নাড়তে বলল, ‘‘আর বলিস না তো দিঘা দিঘা! কান পচে গেল মাইরি! কী আছেটা কী দিঘায়? ফালতু ভিড়। লোকজন, আন্ডা বাচ্চা। লুঙ্গি পরা বাঙালি মাছভাজা সাঁটাতে-সাঁটাতে ‘ও কিন্তু জলে ডুবে যাবে...’ বলতে বলতে দৌড়ে বেড়াচ্ছে! প্যাচপেচে গরম। আর এর খালি দু’দিন অন্তর দিঘা চল দিঘা চল!’’

এবড়োখেবড়ো পিচে ঘণ্টায় দেড়শো কিমি বেগে বাউন্সার, বেকায়দায় পড়ে শ্যামলদা মিনমিন করে ডিফেন্স করল, ‘‘সমুদ্র, ঝাউবন, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত...’’

ভুলুদা আজ আগুনে ফর্মে আছে। দোসা তৈরির চাটুতে জল ছিটোলে যেমন হয়, তেমনই ফুটতে ফুটতে বলল, ‘‘ঝাউবনে সক্কাল সক্কাল টাটকা ইয়ের গন্ধ। সূর্যোদয় দেখা বেরিয়ে যাবে! বিকেলে মাতালের দল যখন উৎপাত করবে, সূর্যাস্ত মাথায় উঠবে। গিয়েছিস দিঘা! যত্ত সব।’’
পাশের টেবিল থেকে অসমঞ্জবাবু বললেন, ‘‘তার চেয়ে তোমরা গোয়া যেতে পারো তো। ঘন নীল সমুদ্র। উঁচু-নিচু রাস্তা, দিগন্ত জুড়ে পাহাড়, সাগর-নদী-মোহনা, পর্তুগিজ গির্জা। মাণ্ডবী নদীর মোহনা তো ডলফিনের অভয়ারণ্য! পর্তুগিজদের বাগাতোর ফোর্ট। সমুদ্রের পারে সার দেওয়া স্যাক, ইন্ডিয়ান, কন্টিনেন্টাল সব পাবে। সময় কেটে যাবে হু হু করে।’’

যজ্ঞের আগুনে যেন ঘি পড়ল! সশব্দে চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে ভুলুদা বলল, ‘‘দেখছেন দু’বছর ধরে দিঘাই গিয়ে উঠতে পারলাম না। আবার গোয়া! আমরা তো আর আপনার ছেলের মতো বড় চাকরি করি না, যে বছরে দু’বার করে ঘুরতে যাব। ওর জীবন বিমার ফলাও এজেন্সি, আর আমার? পুরনো আসবাবপত্রের দালালি। এই হয়ে উঠছে না! প্রতি বার নিজেই হুজুগ তোলে, আর নিজেই বাগড়া দেয়।’’

আড্ডাটা মাঠে মারা যাচ্ছে দেখে বিচলিত হয়ে উঠলাম। রোববারে বেলা পড়তে না পড়তেই বাড়ির বাজার সেরে সোজা এসে বসি চায়ের দোকানে। চায়ের দোকান বললেও আমাদের কাছে এটা ছোটখাটো কাফে। পৃথিবীর সমস্ত বিচিত্র মানুষ যেন এখানে জড়ো হয়। এই ভুলুদা-শ্যামলদা যেমন। দু’জনেই অকৃতদার, অভিন্নহৃদয় বন্ধু, অথচ দেখা হলেই ঝগড়া! অসমঞ্জবাবু রিটায়ার্ড সরকারি চাকুরে। আছেন কানাইদা, সাইবার কাফেতে কম্পোজ়িটরের চাকরি করেন। রবিবার ছুটি, তবুও বিরাটি থেকে চলে আসেন। হাতিবাগানের হলে সিনেমা দেখে বিকেলের ট্রেনে বাড়ি। মুখে মুখে ছড়া কাটেন, নানা তরল হাসিঠাট্টা করেন। নাট্যকর্মী বাপিদা থেকে কিশোরকণ্ঠী অভিজিৎদা সবাই মিলে হাসি, আড্ডা, গানে মশগুল হয়ে থাকি দু’-তিনটে ঘণ্টা। চা-টোস্ট-ওমলেট সহ রোববারের এই আড্ডায় সারা সপ্তাহের লড়াইয়ের রসদ পেয়ে যাই।

আজ মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করলাম, ‘‘আমি বলি, তোমরা মন্দারমণি যেতে পার, বা তাজপুর। সুন্দর ফাঁকা জায়গা, পরিচ্ছন্ন রিসর্ট, ভাল খাওয়াদাওয়া। খুব বেশি খরচও নয়। বাজেট কেমন মোটামুটি?’’
শ্যামলদা উদাসীন ভাবে বলল, ‘‘এই ধরো, পাঁচশো।’’

বেশ ঘাবড়ে গেলাম। পাঁচশো টাকা! পুরো ট্রিপের বাজেট!

শ্যামলদা বলল, ‘‘হ্যাঁ! আর কত লাগবে? তুমিও চলো না। ভাল হবে। পয়সাও ভাগাভাগি হয়ে যাবে।’’
‘‘আপনিই যান দাদা। ওই পাঁচশো টাকা নিয়ে মারামারি পোষাবে না। ভুলুদা ঠিকই বলেছে। আপনি বরং বাড়ির ছাদ থেকে একটু ঘুরে আসুন।’’

শ্যামল বলল, ‘‘কী বলছ! পাঁচশো টাকায় দিঘা ঘোরা হবে না! এই কাছেই তো!’’
ভুলুদা আমায় বলল, ‘‘আরে, ওর কথা ছাড়ো। ও জীবনে কোথাও যাবে না। শুধু ফালতু বকবে। দিঘা দিঘা করে আমার ঘিলু নাড়িয়ে দিল।’’

পিঠটান দিলাম। এখন ভুলুদা আর শ্যামলদা দিঘা নিয়ে তর্কাতর্কি চালাবে। এটা মাঝে-মাঝেই হয়। শ্যামলদার অনেক দিনের শখ দিঘা যাওয়ার, দু’-তিন সপ্তাহ অন্তর উনি এক বার দিঘা যাওয়ার হুজুগ তোলেন। অনেক পরিকল্পনা হয় এবং বেশির ভাগ সময় শ্যামলদাই কোনও না কোনও ছুতো করে শেষ মুহূর্তে দিঘা যাওয়া বাতিল করে দেন। আমার ধারণা উনি নিজেই যেতে চান না। দিঘা-তর্ক চলুক, আমি হাঁটা লাগালাম। আর দেরি হলে বাড়ির মার্জারকুলের সঙ্গে পঙ্‌ক্তিভোজন সারতে হবে।

পরের রোববার। আড্ডা দারুণ জমে উঠেছে। কিশোরকণ্ঠী অভিজিৎদা আর সাংবাদিক অর্পণ তর্কে ব্যস্ত। অভিজিৎদা গান ভাল গাইলেও ওঁর মূল প্রতিভা বিতর্কে। মোহনবাগান, কিশোর কুমার আর একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অন্ধ সমর্থক। আজ পর্যন্ত কাউকে ওঁর সঙ্গে তর্কে পেরে উঠতে দেখিনি। বিভিন্ন অযুক্তি-কুযুক্তি, উদ্ভট উপমা দিয়ে উনি জিতেই ছাড়বেন। তবে এই প্রতিভা ওঁর লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করেছে। আজ চলছিল বাঙাল-ঘটি নিয়ে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি, অভিজিৎদা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘রাখ তোর বাঙাল রান্না! আমরা খাই ভেটকি, তোরা শুঁটকি, বিধান রায় তেলাপিয়া মাছ নিয়ে এল মশা মারবে বলে, সেটাও খেয়ে ফাঁক করে দিলি, তোরা কী খাস না বলবি?’’

আমি একটু সাহায্য করতে গেলাম, ‘‘না, না, বাঙালরা খুব ভাল ভাল মাছ খায়।’’

অর্পণ আমার কথার খেই ধরে, ‘‘পদ্মার ইলিশ খেয়েছ কখনও?’’

শর্টপিচড বলটা হুক করে বাউন্ডারির দিকে পাঠাতে পাঠাতে অভিজিৎদা বলল, ‘‘শোন বাতেলা কম মারবি, দেখেছিস জীবনে পদ্মার ইলিশ? তুই জানিস বাঙালদের মিশরে ঢোকা বারণ হয়ে গিয়েছে?’’
এ রকম অদ্ভুত গুগলির জন্য আমরা দু’জনেই প্রস্তুত ছিলাম না।

‘‘মানে? মিশরে? শুধু বাঙালদের ঢোকা বারণ?’’

অভিজিৎদা প্রায় টেনিদার মতো বলল, ‘‘তা হলে আর বলছি কী! ওরা জানতে পেরেছে বাঙালরা শুঁটকি খায়, যদি কোনও বাঙাল গিয়ে, মমিকে শুঁটকি ভেবে চুষে খেতে আরম্ভ করে? তাই ঢুকতে দিচ্ছে না।’’

অর্পণের মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে। আমি কোনও মতে হাসি চেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা ভাবছি, এমন সময় ভুলু আর শ্যামলের প্রবেশ। প্রসঙ্গ বদলাতে হাঁকলাম, ‘‘আরে কী খবর দিঘাদা? কোথায় ছিলেন? আমি ভাবলাম দিঘা গিয়েছেন বুঝি।’’

শ্যামল বেশ উৎসাহিত, ‘‘জানো, আমাদের রজত ওর ছেলে, বৌকে নিয়ে দিঘা ঘুরে এল। কত নতুন সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরেছে!’’

অসমঞ্জবাবু কোণের টেবিলে বসে এত ক্ষণ আমাদের আলোচনা শুনছিলেন আর মিটিমিটি হাসছিলেন, এ বার একটু অবাক হলেন, বললেন, ‘‘দিঘায় আবার কোন নতুন জায়গার উদ্ভব হল!’’
শ্যামলদার গলায় শিশুর উচ্ছ্বাস, ‘‘বিশ্ব বাংলা, সায়েন্স পার্ক... তার পর দারুণ একটা ভাতের হোটেল, পুরো বাড়ির খাবার! ভাত, ডাল, শুক্তো, মাছ, সব। পেটচুক্তি আশি টাকা।’’

ভুলুদা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘কী বলব বল! এই হল বাঙালির দোষ। ঘরের খাবারই যদি খাবি তো বাড়িতে বসে খা। ঘরের পাশে সায়েন্স সিটি জীবনে যাসনি, দিঘায় গিয়ে সায়েন্স পার্ক দেখবি!’’
অসমঞ্জবাবু বিজ্ঞের মতো বললেন, ‘‘সমুদ্রে গেলে সামুদ্রিক খাবার খাওয়া উচিত। বুঝলে না, আগের বছর আমার ছেলে-বৌমা গোকর্ণ গিয়েছিল। কত রকম সি-ফুড যে ওখানে পাওয়া যায়... ক্র্যাব, লবস্টার, স্কুইড...’’

শ্যামলদা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘‘স্কুইডটা আবার কী?’’

আমি আস্তে করে বললাম, ‘‘ছোট ছোট অক্টোপাস।’’

শ্যামল বেশ ঘাবড়ে গিয়ে প্রায় আর্তনাদ করে উঠল, ‘‘অক্টোপাস!’’
অসমঞ্জবাবু ঘাড় নেড়ে বললেন, ‘‘হ্যাঁ। অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক, জেলি ফিশ, শার্ক এ সব না খেলে সমুদ্রে যাওয়া বৃথা। দিঘায় তো ভাল পমফ্রেট-ভাজাও পাওয়া যায় না। তোমরা বরং গোকর্ণ চলে যাও…’’

শ্যামলদা ভয়ানক আতঙ্কিত, ‘‘শার্ক মানে হাঙর! থাক থাক, ও সব হাঙর, তিমি, ডলফিন খাওয়ার আমার কোনও ইচ্ছেই নেই। আমার দিঘাই ভাল। আপনি গিয়ে যত খুশি শামুক, ঝিনুক খান। পারলে আস্ত প্রবাল প্রাচীর খেয়ে আসুন। ঘুরতে গিয়ে হাঙরের কারবার আমার পোষাবে না।’’
অসমঞ্জবাবু কেন জানি না হঠাৎ খেপে উঠে বললেন, ‘‘যাবই তো! আগামী সপ্তাহে তারকালি যাচ্ছি। প্লেনে মুম্বই, তার পর গাড়ি। নীল আরব সাগর, সমুদ্রের ধারের স্যাক। নৌকো করে চলে যাব ছবির মতো ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ড। চার দিক সমুদ্রঘেরা শিবাজির আমলের অপূর্ব সিন্ধগড় দুর্গ দেখব। তুমি এখানেই বসে থাকো কুয়োর ব্যাং হয়ে। তোমার কোথাও যাওয়া হবে না। যত্ত সব। দিঘা আবার একটা যাওয়ার জায়গা হল!’’ বলে গটমট করে দোকান ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।

শ্যামলদা কাঁদো কাঁদো, ‘‘আমাদের এই ভাবে বলে গেল!’’

ভুলুদারও একটু খারাপ লেগেছে, যতই হোক প্রাণের বন্ধু তো, বলল, ‘‘বলবেই তো! তুই এমন আরম্ভ করেছিস দিঘা যাওয়া নিয়ে!’’

‘‘কী করব বলো। ছোটবেলায় বাবা মারা গেল। মা আর আমি জেঠুর বাড়িতে আশ্রিত। মা-ও গেল পনেরো সালে। সেই থেকে আমি একা। কোথায় আর ঘুরতে যাব বলো? আর কার সঙ্গেই বা যাব! খুব ছোট বেলায় এক বার বাবা দিঘা নিয়ে গিয়েছিল। আবছা মনে পড়ে। সমুদ্র, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত। আমার কাছে দিঘাই গোয়া, দিঘাই আন্দামান...’’ শ্যামলদার ভারী হয়ে আসা স্বর সবাইকে ছুঁয়ে গেল।

আমারও একটু খারাপ লেগেছে। কিন্তু অসমঞ্জবাবুকে কখনও এ রকম আচরণ করতে দেখিনি, আমাদের থেকে অনেক বড় হলেও সব সময় হেসে কথা বলেন, বন্ধুর মতো হাসিঠাট্টায় যোগ দেন।
ভুলুদার মনে হল একটু আঁতে লেগেছে, শ্যামলের দিকে ফিরে গম্ভীর গলায় বলল, ‘‘যা-ই হোক। তুই যাবি তো বল। উনি পরের সপ্তাহে ঘুরতে যাবেন, আমরাও যাব। দিঘাতেই যাব। ওই পরের সপ্তাহেই। শুক্রবার রাতে বেরোব, সোমবার ব্যাক।’’

শ্যামলদা একটু দোনামনা করে বলল, ‘‘এত তাড়াতাড়ি!’’

ভুলুদা বলল, ‘‘তা হলে এক তারিখ?’’

শ্যামলদা আবার সেই পুরনো খেলা শুরু করেছে, কাঁচুমাচু হয়ে বলল, ‘‘সে তো অনেক দেরি।’’
ভুলুদা বেশ খেপে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘ও নিজেই যাবে না। কাকাবাবু ঠিকই বলেছেন। তুই একটা কুয়োর ব্যাং।’’

আমি একটু আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে শ্যামলদাকে বললাম, ‘‘অত প্ল্যান করে কোথাও যাওয়া হয় না। যখন হুজুগটা উঠেইছে, আগামী উইক-এন্ডেই বেরিয়ে পড়ুন।’’
শ্যামলদা তার পরও একটু দোনামনা করেছিল কিন্তু আমাদের দু’জনের যুক্তিতে একটু কোণঠাসা হয়েই রাজি হয়ে গেল। ওঁর এত দিনের ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে, ভেবে বেশ লাগছিল।

পরের রোববার চায়ের আড্ডায় যাব কি না ভাবছিলাম, প্রায় কেউই নেই, ফাঁকা-ফাঁকা লাগবে। তবুও ইতস্তত করে দোকানে গিয়ে আমি তো অবাক। ভুলুদা, শ্যামলদা দু’জনেই উপস্থিত। শ্যামলদা বিধ্বস্ত গলায়, প্রায় কাঁদো কাঁদো ভাবে বলল, ‘‘আর কোনও দিন যাবই না দিঘা।’’
ভুলুদা এ বার মারমুখী, ‘‘তোকে বলেছিলাম সব নিয়ে নিবি। আমি জোগাড়যন্ত্র করছি, শালা উত্তেজনায় সব ভুলে মেরে দিয়েছে। আমার এত মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে, যে কী বলব!’’

জানতে পারলাম, দু’জনেরই ঘোরাঘুরির তেমন অভিজ্ঞতা নেই। কেউই কোনও সচিত্র পরিচয়পত্র নিয়ে যাননি! এখন দিঘায় নিরাপত্তার খুব কড়াকড়ি। সন্ধের বাস ধরে পৌঁছতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল, কোনও হোটেল রাত্তিরটুকুও থাকতে দেয়নি। তার পর যা হয়, সারা রাত ঘুরে, ভোরবেলার বাস ধরে বাড়ি চলে এসেছেন। রাগের মাথায় এক বার সমুদ্র দর্শনও করেননি ভাল করে।
খুবই খারাপ লাগছিল। এমন সময় অসমঞ্জবাবু ঢুকলেন দোকানে। একটু অবাক লাগল। ওঁর ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল না?

জিজ্ঞেস করতে বেশ খুশি খুশি গলায় বলেন, ‘‘গিয়েছিলাম তো। তোফা ঘুরলাম। সুন্দর সমুদ্র, ঝাউবন, বিশ্ববাংলা মার্ট। জমিয়ে রুইমাছের মাথা দিয়ে ডাল, আলুভাজা, ভাত সাবড়েছি। সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত দেখেছি।’’

ভুলুদা অবাক হয়ে বলল, ‘‘বিশ্ব বাংলা! কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?’’

‘‘কেন, দিঘা!’’

আমরা সমস্বরে বললাম, ‘‘দিঘা!’’

অসমঞ্জবাবু মুখ নিচু করে হাসলেন, তার পর বললেন, ‘‘হ্যাঁ দিঘা। প্রতি বার জানো, এই হয়। যাওয়ার মুখে কোনও না-কোনও কারণে আমার ছেলে ট্যুর ক্যানসেল করে দেয়। তার পর আমাদের বাদ দিয়ে নিজেরা কোথাও না কোথাও চলে যায়। আসলে ওরা আমাদের বুড়োবুড়িকে নিয়ে যেতে চায় না। তাই এ বারও যখন ছেলে বলল, ছুটি ক্যানসেল, যাওয়া হবে না, আমি বললাম, নাহ্‌, যাওয়া হবেই। তারকালি না হোক, দিঘাই হবে।’’

অসমঞ্জবাবুর গলায় এমন কিছু ছিল, আমরা কেউ কোনও কথা বলতে পারলাম না।
উনিই আবার শ্যামলদা-ভুলুদাকে বললেন, ‘‘কিন্তু তোমরা কোথায় ছিলে? দেখতে পেলাম না তো?’’
আমি ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম। প্রথমে উনিও বেশ অবাক হলেন, কিন্তু তার পর শ্যামলদার ঝুলে পড়া মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘কিন্তু শ্যামল, বেরোতে গেলে বাধাবিপত্তি তো আসবেই, তা বলে বেরোবে না? এই দেখো না, আমি তো কত দিন ধরে এখানে যাব, ওখানে যাব না করছি, কিন্তু বেরিয়ে পড়ে কী বুঝলাম জানো? কোথায় যাচ্ছি সেটা বড় কথা নয়, বেরিয়ে পড়েছি সেটাই বড় কথা। এই যাব-যাব ভাবটাই বেড়াতে যাওয়ার আসল মজা! বার বার তো আর এক ভুল হবে না।’’
আমি বললাম, ‘‘সত্যিই তো, মঞ্জিল মিলেগি ভটক কর হি সহি, গুমরাহ তো উও হ্যায় যো ঘর সে নিকলে হি নেহি!... আবার ঘুরতে যাওয়ার আনন্দে সবার জন্য আমার তরফ থেকে চা হোক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Short Story Bengali Literature
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy