ছবি কুনাল বর্মণ।
পূর্বানুবৃত্তি: বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না, তা জানার জন্য শশিকান্তকে নিয়ে যাওয়া হল লালবাজার থানায়। পুলিশ অফিসার মুকুন্দ ভট্টাচার্যের জেরায় সে স্বীকার করে যে, দীনেশ মজুমদারের কাছে তার বাড়ির ঠিকানা পাওয়া গেলেও, সে কোনও বিপ্লবীকেই চেনে না। ধৃত বিপ্লবীদের দলে একটি মেয়েও ছিল, যার নাম স্বর্ণপ্রভা। তাকে দেখে চিনতে পারে শশিকান্ত। এই মেয়েটিই কয়েক বছর আগে পুকুরধার থেকে হারিয়ে যাওয়া লাবণ্যময়ী। সে স্বীকার করে যে, শশিকান্তদের বড় বাড়িতে তিন বিপ্লবীর আশ্রয় হবে, এই আশায় সে ওদের ওই ঠিকানা দিয়েছিল। শশিকান্তর সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। অফিসার দুঃখপ্রকাশ করে ছেড়ে দেন শশিকান্তকে। বাড়ি ফিরে সে জেঠিমা, পিসিমা আর উমানাথকে তার থানা থেকে রেহাই পাওয়ার বৃত্তান্ত শোনায়।
শশিকান্ত বলল, “থাকলে আজ ওরা আমাকে ছেড়ে দিত না।” যদিও মনে মনে সে বলতে চেয়েছিল— ‘থাকলে আমি গর্বিত হতাম।’
অনিচ্ছাসত্ত্বেও শশিকান্ত পিসি ও জেঠিমার চাপে সবিস্তারে লালবাজার থানায় যা যা ঘটেছে, তা বর্ণনা করে বলল, “এ বার তোমরা বলো, আমার দোষটা কোথায়?”
“আমরা কী বলব, লালবাজারের বাঘা-বাঘা পুলিশ অফিসারই তোর কোনও দোষ ধরতে পারেনি। তা হলে কি ছেড়ে দিত এত সহজে?” বিভাবতী বলল।
উমানাথ এখন একটু নরম। বললেন, “আমাদের বাড়ির ঠিকানা ওই বিপ্লবীকে কে দিল?”
“যে দিয়েছে, সে হয়তো আমাকে চেনে। আমার বাড়িও চেনে। কিন্তু আমি তো তাকে বলিনি, আমার নাম-ঠিকানা বিপ্লবীকে দিতে!” শশিকান্ত যুক্তি দেয়।
“তা ঠিক,” উমানাথ বলেন, “তবে তোর সতর্ক থাকা উচিত। এক বার নয়, দু’বার হল। সবাইকে ছেড়ে তোকেই বা পুলিশ বার বার ধরছে কেন?”
শশিকান্ত বলল, “পুলিশ আমার মতো অনেক নিরপরাধকেই জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে যায়, আবার ছেড়েও দেয়। যেমন আমাকে ছেড়ে দিল।”
উমানাথ মাথা দুলিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ কী মনে করে, ফিরে এলেন। বললেন, “তোর যে বন্ধুটি বাগবাজার থেকে আসে, সে তো কংগ্রেস করে, না?”
শশিকান্ত অবাক হল। হরপার্বতী কংগ্রেস করে, সেটা কাকা জানল কী করে! সে তো কখনও বলেনি!
শশিকান্ত চুপ করে আছে দেখে, উমানাথ বলেন, “তুই ভাবছিস, আমি জানলুম কী করে, তাই তো?”
শশিকান্ত কোনও উত্তর দেওয়ার আগেই উমানাথ বলে ওঠেন, “রাস্তাঘাটে আমিও বেরোই, শশী। অনেক খবর আমিও রাখি। যাক, কিছু খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়...” উমানাথ এ বার হনহন করে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন।
শশিকান্তও ওর ঘরের দিকে যাচ্ছিল। নিভাননী তাকে থামালেন, বললেন, “তা হলে এটা ওই ছেলেটির কাজ?”
শশিকান্ত এত ধকলের পরও হেসে উঠল।
“হাসছিস যে বড়!” মৃদু ধমক দেন নিভাননী।
হাসতে হাসতেই শশীকান্ত বলেছিল, “পিসি, হরপার্বতী গান্ধীবাদী। ওরা সশস্ত্র বিপ্লবের বিরুদ্ধে। পারলে, এক জন সশস্ত্র বিপ্লবীকে ধরিয়ে দেবে, কিন্তু উপকার করবে না।”
“তা হলে এ কাজ করল কে?” বিভাবতী অনেক ক্ষণ পর কথা বললেন।
“আমি কী জানি?” বলে শশিকান্ত এ বার সত্যি সত্যি ওর ঘরের দিকে পা বাড়াল।
চোখের সামনে গত রাতের এই দৃশ্যপট ভেসে ওঠায় নিভাননী গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তার পর শশিকান্তর উদ্দেশে বলেন, “ও শশী, এক বার ওপরে আয় তো।”
নিভাননীর ডাকে শশিকান্ত উপরে উঠে আসে। এসে পিসিকে বলে, “বলো, কী বলছিলে? আমি কিন্তু আজ আপিস বেরোব।”
“সে নয় বেরোবি, এখন একটু হাঁ কর দিকি...” নিভাননী বলে।
শশিকান্ত অবাক হয়ে বলে, “হাঁ করব কেন?”
“মুখে মুখে কথা বলিস না, শশী,” বলে তিনি শশিকান্তর মুখে একটা বড় সন্দেশ পুরে দেন।
“গতকাল রাগারাগি করে কিছুই তো খেলি না। আমার বুঝি তাতে কষ্ট হয় না? কী করতে যে বেঁচে আছি!” বলে নিভাননী চোখ মোছেন। শশিকান্ত একগাল সন্দেশ মুখে পিসিকে জড়িয়ে ধরে। মায়ের গায়ের গন্ধ কেমন হয় শশিকান্তর জানা নেই। তবে পিসির গা থেকেও একটা কোমল সুন্দর গন্ধ তাকে অবশ করে দিল মুহূর্তকাল।
অফিসে গিয়ে অবধি শশিকান্তকে আজ শুধু দৌড়োদৌড়ি করে যেতে হল। একটা ডিকটেশন নিয়ে টাইপ করার পরই আর একটা ডিকটেশন নেওয়ার জন্য ডেকে পাঠাচ্ছিলেন বড়সাহেব ডগলাস। এমনিতে এই স্কটিশ ভদ্রলোক খুব স্নেহ করেন শশিকান্তকে। আজ সেই ডগলাস সাহেবের অন্য মূর্তি। কোনও কারণে হয়তো সাহেবের মেজাজ আজ খারাপ। সারাদিন বেশ কাজের চাপ গেল।
ছুটির পর অফিস থেকে বেরিয়ে কাছেই লালবাজারে হেঁটে চলে এল শশিকান্ত। থানার সামনে খানিক ক্ষণ অপেক্ষা করে চিন্তা করল, এই ভাবে তার থানার ভিতরে যাওয়াটা উচিত হবে কি না। তার পর হনহন করে ভিতরে ঢুকে গেল। একটু চিনতে অসুবিধে হলেও, শশিকান্ত ঠিক চলে এল গতকালের জায়গায়। উঁকি দিয়ে দেখল, গতকালের বাঙালি পুলিশ অফিসার অন্য অফিসারের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত। শশিকান্ত নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার জন্য একটু কাশল। তার পর বলল, “মে আই কাম ইন স্যর?”
“কাম ইন,” এক ইংরেজ পুলিশ অফিসার বলল। শশিকান্তর মনে পড়ল না, গতকালের জিজ্ঞাসাবাদে এই পুলিশ অফিসারটি ছিল কি না। যা-ই হোক, বাঙালি পুলিশ অফিসারটিকে সে বলল, “আপনার সঙ্গে একটু কথা আছে, স্যার।”
পুলিশ অফিসার মুকুন্দ ভট্টাচার্য বলল, “বলুন, এনি ইনফরমেশন রিগার্ডিং দীনেশ মজুমদার?”
“না স্যর,” শশিকান্ত বলল, “আমি তো আপনাকে কালই বলেছি যে, আমি দীনেশ মজুমদারকে চিনি না।”
“তা হলে, আজ কেন এলেন, মুখ দেখাতে?” মুকুন্দ ভট্টাচার্যের কণ্ঠস্বরে স্পষ্টই বিরক্তি।
শশিকান্ত একটু ইতস্তত করে বলল, “আমি ওই বিপ্লবী দলের মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে চাই।”
“নো, দ্যাট ইজ় ইমপসিবল!” বলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন ভদ্রলোক। শশিকান্তর পাশে এসে তার দিকে খানিক ক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে বলল, “তোমাকে দেখে তো বেশ ভাল ছেলে বলেই মনে হয়। তা হলে এই রকম ইচ্ছে কেন? দে আর ডেঞ্জারাস পলিটিক্যাল ক্রিমিনালস। কিপ অ্যাওয়ে ফ্রম দেম। আর তা ছাড়া, তারা এখন লালবাজারেও নেই। আজ সকালেই আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ট্রান্সফার হয়ে গেছে।”
ভদ্রলোক নিজের চেয়ারে ফিরে গেলেন। শশিকান্ত কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে লালবাজারের লম্বা করিডর পেরিয়ে আবার রাস্তায় এসে দাঁড়াল। কী করবে সে? লাবণ্যর সঙ্গে কী করে দেখা করবে? লাবণ্যর সঙ্গে দেখা হওয়াটা যে তার খুব প্রয়োজন... তার কাছ থেকেও অনেক কথা জানতে হবে, কিন্তু... হঠাৎই বিদ্যুৎ তরঙ্গের মতো হরপার্বতীর নামটা মনে পড়ে গেল শশিকান্তর। মনে মনে বলল— হর অনেক জানে, সে একটা উপায় নিশ্চয়ই বলে দেবে। শ্যামবাজারগামী একটি বাসে উঠে পড়ল শশিকান্ত।
হরপার্বতীকে এই সময় কোথায় পাওয়া যাবে, সেটা জানে শশিকান্ত। তাই বাস থেকে নেমে সোজা চলে এল বাগবাজার দর্জিপাড়া কংগ্রেসের অফিসে।
হরপার্বতী এখন কংগ্রেসের নেতা। তাকে ঘিরে কংগ্রেসের কর্মীরা সব সময় ভিড় করে থাকে। দর্জিপাড়ার এই অফিসে রোজ সন্ধেবেলা তার আসা চাই। উদ্দেশ্য, কর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময় ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাসমূহের খোঁজ খবর রাখা। আজ সে এসেছে কর্নওয়ালিস কাণ্ডের টাটকা খবর পাবে বলে। সকালে খবরের কাগজে ঘটনাটা থাকলেও প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অন্য রকম। শুনতে ভাল লাগে। কংগ্রেস কর্মীদের অনেকে যদিও বিপ্লবীদের বীরত্বের গুণগান করছে, সে এই সব হঠকারিতার নিন্দাই করে এসেছে এত দিন, আজও তা-ই করছে। তবু সেখানে উপস্থিত কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে বসবাসকারী দু’-এক জনের থেকে জেনে নিচ্ছিল প্রকৃত ঘটনাটা, যা খবরের কাগজে বেরোয়নি। যেমন বিপ্লবী দলে যে একটি মেয়ে আছে, তা কিন্তু কোনও খবরের কাগজে লেখেনি। অথচ কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের ওই বাড়িটির পাশের বাড়ির বাসিন্দা সতীশ সেনগুপ্তের দাবি, সে তার বাড়ির জানালার খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে নিজের চোখে দেখেছে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া বিপ্লবী দলে চব্বিশ-পঁচিশ বছরের এক তরুণী ছিল। উপস্থিত কেউই তার কথা বিশ্বাস করছিল না।
হরপার্বতীও বিশ্বাস করেনি। তবে সে কথা মুখে প্রকাশ করল না। বলল, “সতীশ যা বলছে, সেটা হতেও পারে, ওর মিথ্যে বলে লাভ কী? এমনও হতে পারে, পুলিশ মেয়েটির কথা খবরের কাগজওয়ালাদের কাছে গোপন রেখেছে।”
সতীশ কিছু বলতে যাচ্ছিল। হরপার্বতী এক হাত তুলে তাকে থামাল। ঘরের দরজায় শশিকান্তকে দেখে সে অবাক হয়েছে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বন্ধুকে সে ঘরে ঢোকার জন্য আমন্ত্রণ জানাল। বলল, “আরে, শশী যে! ঘরে এসো... কিন্তু, এই অসময়ে?”
শশিকান্ত ঘরে ঢুকল না। ঘরের বাইরে দাঁড়িয়েই বলল, “তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে, হর। এক বার বাইরে আসতে পারবে?”
হরপার্বতী শশিকান্তর পাশে এসে দাঁড়ায়। অদূরে একটা নির্জন জায়গায় তাকে নিয়ে গিয়ে বলে, “বলো কী কথা? কোনও বিপদ-আপদ?”
শশিকান্ত একটু চুপ করে থেকে বলল, “আমাকে একটা ব্যাপারে একটু সাহায্য করতে পারবে ভাই?”
হরপার্বতী অবাক হয়ে বলল, “বলো কী রকম সাহায্য? কী করতে হবে আমাকে?”
শশিকান্ত ইতস্তত করে বলল, “আমাকে একটি মেয়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে পারবে? মেয়েটি আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি।”
“তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? তুমি খামোখা এক জন জেলবন্দির সঙ্গে দেখা করতে যাবে কেন?” হরপার্বতী বলল।
শশিকান্ত একটু চুপ করে থেকে বলল, “মেয়েটি গতকাল কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের একটি বাড়ি থেকেধরা পড়েছে।”
“দীনেশ মজুমদার-সহ আরও তিন জন? পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়... তার মানে সতীশের কথাই ঠিক!” হরপার্বতীর কণ্ঠস্বরে উত্তেজনা।
“সতীশ কে?” শশিকান্ত অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
হরপার্বতী এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, বলল, “মেয়েটি তোমার কে?”
“কেউ না।”
“তা হলে?”
“দীর্ঘ আট বছর ধরে যাকে খুঁজে বেড়িয়েছি, যার কথা এক দিনের জন্যও বিস্মৃত হইনি, তাকে যদি হঠাৎ খুঁজে পাই, তার সঙ্গে দেখা করার জন্য মন আকুল হবে না?”
“আচ্ছা! এ সেই মেয়েটি, যে হারিয়ে গিয়েছিল! কী যেন তার নাম?”
“লাবণ্যময়ী।”
“হ্যাঁ, মনে পড়েছে। তোমার তখন পাগলের অবস্থা। এক দিন তুমি তার একটা ছবি দেখালে, যদি আমি কোনও সন্ধান দিতে পারি।”
“হ্যাঁ, এই সেই লাবণ্যময়ী...” বলে গতকাল থেকে আজ অবধি যা-যা ঘটেছে তার বিশদ বর্ণনা দিল শশিকান্ত।
সব শুনে হরপার্বতী বলল, “আমাকে দু’-এক দিন সময় দাও, আমি একটা ব্যবস্থা করে ফেলব।”
আশ্বস্ত হয়ে শশিকান্ত বাড়ির পথে রওনা দিল।
দু’-এক দিনের মধ্যে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের জেলারের কাছ থেকে অনুমতি জোগাড় করে শশিকান্তকে লাবণ্যময়ীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দিল হরপার্বতী। শশিকান্তকে দেখে লাবণ্যময়ী বলল, “কেন এলে শশীদা?”
“আট বছর পর তোকে খুঁজে পেয়ে, অনেক কষ্ট করে অনুমতি জোগাড় করে আমি দেখা করতে এলাম, আর তুই বলছিস, কেন এলাম!” শশিকান্ত বলল। তার চোখের কোণে জল চিকচিক করছিল।
সেটা লক্ষ করে লাবণ্যময়ী বলল, “আমি তো হারিয়েই থাকতে চাই শশীদা।”
“কেন?”
“হারিয়ে থাকলে কত সুবিধে।”
“কী সুবিধে?”
“ও তুমি বুঝবে না শশীদা। বিপ্লবের আবেগ সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।”
“আমি খুব সাধারণ, তাই না?”
“আমি তা বলিনি শশীদা। আমায় ভুল বুঝো না। যাক, তুমি কেমন আছ?”
“ভাল আছি।”
“কলেজ তো ছেড়ে দিয়েছিলে, চাকরিটা কি করছ, না ছেড়ে দিয়েছ?”
“চাকরিটা করছি এখনও।”
“বিয়ে করেছ?”
“না।”
“কেন?”
“করব না বলে।”
“কেন করবে না, শশীদা?”
“যে আমায় কথা দিয়েছিল সঙ্গে থাকবে বলে, সে হারিয়ে গেছে।”
“তাকে যদি খুঁজে পাও?”
শশিকান্ত যেন তড়িদাহত হল। বিস্ময়াবিষ্ট চোখে তাকাল লাবণ্যময়ীর দিকে। তার পর অস্ফুটে বলল, “লাবণ্য!”
লাবণ্যময়ী কোনও কথা বলল না। নীরবতাই যেন অনেক কথা। এক জন কনস্টেবল এসে জানিয়ে দিল যে, সময় শেষ। শশিকান্ত ধীরে ধীরে সেন্ট্রাল জেলের গেটের দিকে ফিরে চলল। গেটে হরপার্বতীর দাঁড়িয়ে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তাকে কোথাও না দেখতে পেয়ে একলা হেঁটে চলল উদ্দেশ্যহীন ভাবে। গ্রীষ্মের দুপুর। তবু আকাশ মেঘলা। হয়তো বিকেলের দিকে ঝড় উঠবে।
পায়ে হেঁটে এক দীর্ঘ প্রান্তর পেরিয়ে সে একটি প্রাচীন বটগাছের কাছে এসে থামল। চার দিকে কেউ নেই। শুধু গাছের পাতার শব্দ শোনা যাচ্ছে। শশিকান্তর মনে হল, ওই শব্দগুলো শুধু শব্দ নয়। ভাষা। গাছের প্রতিটি পাতা যেন ফিসফিস করে যেন তাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে।
শশিকান্ত দু’হাতে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ল বটগাছের নীচে। তার দু’গাল ভিজে গেল চোখের জলে। শশিকান্ত মুখ থেকে হাত সরিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। কালো মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ফুঁড়ে বৃষ্টি নামল। বটগাছের পাতায় বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনতে শুনতে কখন সে নিজেই বৃষ্টিস্নাত হয়ে গেল, তা তার খেয়াল থাকল না।
শেষ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy