দুঃস্বপ্ন: সে দিনের অউশভিৎজ়, এখন যেমন। হলোকস্ট-এ নিহত হয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের স্মৃতিতে নিবেদিত দিনটিতে তোলা ছবি। ছবি: রয়টার্স
দিনটা ছিল ফ্রান্ৎজ় ভুঙ্ক-এর জন্মদিন। ফ্রান্ৎজ় ভুঙ্ক, হিটলারের নাৎসি বাহিনীর অধীনস্থ কুখ্যাত আধা-সামরিক বাহিনী ‘এসএস গার্ড’-এর এক জন তরুণ অফিসার। তার পোস্টিং তখন অউশভিৎজ়-এ। হ্যাঁ, সেই অউশভিৎজ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ঙ্কর দিনগুলোতে যে জায়গাটা হয়ে উঠেছিল বিভীষিকা। অউশভিৎজ় কনসেনট্রশন ক্যাম্প মানেই নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতা, নজিরবিহীন বর্বরতার আর এক নাম। গ্যাস চেম্বারে পাঠিয়ে লক্ষ লক্ষ ইহুদিকে এখানে হত্যা করেছে এসএস গার্ডরা। ফ্রান্ৎজ় ভুঙ্ক-এরও কাজ ছিল সেটাই— বন্দি ইহুদিদের সবাইকে গ্যাস চেম্বারে পাঠানো।
ইহুদিদের মেরে আনন্দ পেত নাৎসি বাহিনী। বিশেষত এসএস গার্ডরা তো পৈশাচিক আনন্দে মেতে উঠত। যে বন্দিকে একটু পরেই মেরে ফেলা হবে, তার গলাতেই গান শোনা ছিল অত্যাচারীর বিনোদনের অন্যতম উপায়। সে দিন গান গাইতে ডাক পড়ল এক স্লোভাকিয়ান ইহুদি তরুণীর। নাম হেলেনা সিট্রোনোভা। সেই দিনই গ্যাস চেম্বারে পাঠানোর কথা মেয়েটিকে। মৃত্যুপথযাত্রী এক সুন্দরী তরুণীর গলায় গান শোনার মতো ‘আনন্দদায়ক’ অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হতে চায়নি কেউ। ফ্রান্ৎজ়ও চায়নি। গান গাইল আতঙ্কিত হেলেনা। কী মনে করে সে দিন কৌশলে তার গ্যাস চেম্বারে যাওয়া আটকে দিলেন ফ্রান্ৎজ়।
পর দিন সকালে তার কাছ থেকে একটা চিরকুট পেল হেলেনা। চিরকুটে লেখা তিনটে শব্দ— ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’। প্রচণ্ড ঘৃণায় কাগজটা ছিঁড়ে ফেলে দিতে যাচ্ছিল হেলেনা। এসএস গার্ডের ভালবাসা? এর থেকে জঘন্য আর কীই বা হতে পারে! হঠাৎই ‘ভালবাসি’ শব্দটা বুকে কাঁপন ধরাল তার। এই মৃত্যুপুরীতে অন্তত যদি কিছু দিনও এই সুযোগে, এই ভালবাসার সুযোগে বেঁচে থাকা যায়! জীবনের অদম্য আশায় ফ্রান্ৎজ়-এর কাছে আত্মসমর্পণ করল হেলেনা। কিন্তু ঘৃণায় তার মুখের দিকে তাকাতেও পারত না মেয়েটা। কোনও ইহুদি মেয়ের সঙ্গে এসএস গার্ডের প্রেম ক্যাম্পে নিষিদ্ধ ছিল। জানাজানি হলে কাজ থেকে বদলি তো বটেই, চূড়ান্ত শাস্তিও জুটত কপালে। কিন্তু হেলেনার প্রেমে সত্যিই পাগল ফ্রান্ৎজ় পরোয়া করেনি কোনও কিছুরই।
পোল্যান্ডের এই কুখ্যাত ক্যাম্প অউশভিৎজ়ে তখন শুধুই মৃত্যুমিছিল। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ এই পাঁচ বছরে ১১ লক্ষেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল এখানে। ফ্রান্স, হল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, পোল্যান্ডের নানান প্রান্ত থেকে দলে দলে ইহুদিদের পাঠানো হত এই ক্যাম্পে। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষকে আসার সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করা হত। ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচেছিলেন যাঁরা, তাঁদের সংখ্যা নিহতদের তুলনায় নেহাতই অল্প। ১৯৪৫-এর ২৭ জানুয়ারি সোভিয়েট সেনার হাতে মুক্তি পায় অউশভিৎজ়। সেই স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে সম্প্রতি এখানে এসেছিলেন দুশোরও বেশি মানুষ, যাঁরা সেই কুখ্যাত ‘হলোকস্ট’ থেকে কোনও ক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। এঁরা এসেছিলেন আমেরিকা, ইজরায়েল, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া থেকে, দক্ষিণ আমেরিকার নানান দেশ থেকে। প্রায় সকলেই অতিবৃদ্ধ, আশি-নব্বইয়ের কোঠায় বয়স, অশক্ত। তবু এসেছিলেন ওঁরা। নিজেদের মুক্তির ৭৫ বছরের স্মরণে যত না, অউশভিৎজ়ে ভয়ঙ্কর অত্যাচারে যাঁরা নিহত হয়েছেন তাঁদের জন্য আরও বেশি করে।
শিউরে উঠতে হয় অত্যাচারের সেই বিবরণ পড়ে। প্রতি দিন মানুষ খুনের জন্য নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কার করত নাৎসিরা। মানুষ মারার জন্য সায়ানাইড-যুক্ত জিকলন-বি এখানেই প্রথম ব্যবহার হয়। এই বিশেষ ধরনের কীটনাশক দিয়ে দেওয়া হত ব্যারাকের সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ করে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ছোট স্ফটিকের টুকরোর মতো জিনিসগুলি পরিণত হত ভয়ঙ্কর গ্যাসে। একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য পাগলের মতো করত মানুষগুলো। সেই চিৎকার ছড়িয়ে পড়ত সমগ্র ক্যাম্পে। যন্ত্রণায় ফেটে পড়ত ফুসফুস। আর ও দিকে পৈশাচিক হাসিতে ফেটে পড়ত ‘এসএস’ গার্ডরা। এখানে স্নানের জায়গায় জলের বদলে শাওয়ারের মুখ দিয়ে আসত কার্বন মনোক্সাইড। নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিশে জমাট বেঁধে যেত রক্ত। হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে স্নানের ঘরেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ত হতভাগ্য মানুষগুলো। ছিল ‘হেল ভ্যান’-এর মতো নারকীয় পদ্ধতিও। প্রথমে মুক্তির লোভ দেখিয়ে ঠেসে ঠেসে মানুষ ভরা হত এই ভ্যানে। এর পর কার্বন মনোক্সাইডে ভরে দেওয়া হত ভ্যান। জঙ্গলে মৃতদেহ ফেলার জন্য যখন নিয়ে যাওয়া হত ভ্যানটিকে, সবাই শুধু ভিতর থেকে অমানুষিক যন্ত্রণাদীর্ণ চিৎকার শুনতে পেতেন। দেখতে পেতেন না কিছুই। কারণ নিরেট লোহার ভ্যানে বায়ু চলাচলের ছিদ্র পর্যন্ত থাকত না। প্রতি দিন শয়ে শয়ে মানুষ মারা যেত। শেষে এমন অবস্থা দাঁড়াল যে কবরে আর জায়গা নেই। মৃতদেহগুলোর কোনও ব্যবস্থা করা যাচ্ছিল না। স্তূপীকৃত দেহগুলো প্রচণ্ড গরমে পচতে শুরু করল। অটো প্রসবার্গার নামে এক ইহুদি বন্দির কথায়, প্রথমে তাদের দিয়েই বিরাট বিরাট কবর খোঁড়ানো হত। তার পর তার মধ্যে পচে যাওয়া রক্তাক্ত মৃতদেহগুলো ছুড়ে ছুড়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হত। মৃতদেহ ফেলার সময় সবাই দেখত, মৃতদের মধ্যে কেউ তাদের মা, কেউ বাবা, বন্ধু, বোন, প্রতিবেশী— সবাই তাদের নিজেদেরই লোক। রক্ত আর চামড়ার তীব্র পচা গন্ধে গা গুলিয়ে উঠত সবার। আর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে গ্যালন গ্যালন মদ খেত খুনির দল।
১৯৪৩ নাগাদ চারটি বিরাট বিরাট কবর তৈরি করে ফেলা হল অউশভিৎজ়ে। আটটি গ্যাস চেম্বার আর ছেচল্লিশটি উনুন বসানো হল। যাত্রী-ভর্তি ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে শিকার নির্বাচন করে এদের গ্যাস চেম্বারে পাঠানো হত। চিরকালই মানুষ মারার জন্য গ্যাস চেম্বার নাৎসিদের বেশি পছন্দ ছিল। কারণ বুলেটের থেকে এই ব্যবস্থা অনেক সস্তা। এখানেই শেষ নয়। এই কনসেনট্রশন ক্যাম্পে চলত মানব পরীক্ষাগারও। বন্দিদের গিনিপিগ করে শিশু, গর্ভবতী মহিলা, যমজ ভাইবোনের ওপর চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা পরীক্ষা চলত। জোসেফ মেনগেলেস নামে এক এসএস চিকিৎসক কী ভয়ানক পরীক্ষা চালাতেন এদের ওপর, তার ভয়ঙ্কর বিবরণ আছে ইভা মোজেসকোর নামে এক রোমানিয়ান বন্দির বর্ণনায়। ডাক্তার ইভার দু’হাত শক্ত করে বেঁধে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বাঁ হাত থেকে প্রচুর রক্ত নিতেন। ও দিকে ডান হাতে চলত উপর্যুপরি বিষাক্ত ইঞ্জেকশন দেওয়া। ভয়ানক জ্বরে আচ্ছন্ন থাকতেন ইভা। মেনগেলেস তাঁর অবস্থা দেখে পাশবিক আনন্দে বলতেন, এ আর কিছুতেই বেশি দিন বাঁচবে না। অসহ্য বেদনায় কাতরাতে কাতরাতেও ইভা শুধু জানতেন, যে করে হোক তাঁকে বেঁচে থাকতে হবে। সে মারা গেলে তাঁর যমজ বোন মিরিয়ামের ওপর একই পরীক্ষা চালিয়ে তাঁকে মেরে ফেলে মেনগেলেস দুই বোনের মৃতদেহের তুলনামূলক ময়না তদন্ত করবেন।
হিটলারের অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন রুডলফ হস— যিনি এই ক্যাম্পটি তৈরি করেছিলেন— তাঁর স্মৃতিচারণে বলেছিলেন, ‘‘নিজেদের আসন্ন মৃত্যু সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনবহিত, জীবনে পরিপূর্ণ কাতারে কাতারে মানুষ নিশ্চিন্তে দলে দলে হেঁটে যেত গ্যাস চেম্বারের দিকে। গ্যাস চেম্বারের যাওয়ার রাস্তা ছিল ফুলে ভরা। আমার দেখে মনে হত, আমাদের নিজেদের মানুষের শত্রু এরা। আমি এক অদ্ভুত প্রশান্তি লাভ করতাম এঁদের মেরে।’’
শুধুই কি মানবতার অপমান, যন্ত্রণা, নিপীড়ন আর পাশবিকতায় ভরা বাস্তব? অউশভিৎজ় এক উত্তরণেরও গল্প, সমস্ত হিসেবনিকেশ পাল্টে দেওয়া এক গভীর ভালবাসারও কাহিনি। চারদিকে দমচাপা পরিবেশ আর প্রতি পদে পদে মৃত্যুভয়, তার মধ্যেও যে ভালবাসা আসে। যেমন এসেছিল ফ্রান্ৎজ় ভুঙ্ক আর হেলেনা সিট্রোনোভাকে ভাসিয়ে দিয়ে!
হেলেনা-ফ্রান্ৎজ়ের প্রেম নাটকীয় মোড় নিল একটা খবরে। হেলেনার বোন দুটি শিশু-সহ অউশভিৎজ়ে আসছে! গ্যাস চেম্বারে পাঠানো হবে সবাইকে! বোনকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হেলেনা সাহায্য চাইল ফ্রান্ৎজ়-এর কাছে। বোনের নাম জেনে নিয়ে তৎক্ষণাৎ তাকে বাঁচাতে ছুটল ফ্রান্ৎজ়। কিন্তু বাচ্চাদের ব্যাপারে কোনও প্রতিশ্রুতি দিল না। ফ্রান্ৎজ় জানত, অউশভিৎজ় শিশুহত্যার জন্য কুখ্যাত। ফ্রান্স থেকে আসা চার হাজার শিশুকে তত দিনে হত্যা করা হয়েছে এখানে। এই কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের এক লিথুনিয়ান নাৎসি প্রধানের কাজই ছিল ফেনল ইঞ্জেকশন দিয়ে বাচ্চাদের মেরে ফেলা। ফ্রান্ৎজ় হেলেনার বোনের সন্তানদের বাঁচাতে পারল না, কিন্তু গ্যাস চেম্বারে ঢোকানোর ঠিক আগে হেলেনার বোনকে খুঁজে পেয়ে অবধারিত মৃত্যুর হাত থেকে তাকে কৌশলে বাঁচাল। আর এই ঘটনাই আমূল বদলে দিল হেলেনাকে। সেও ভালবাসতে শুরু করল ফ্রান্ৎজ়কে। এসএস অফিসারও উজাড় করে দিল নিজেকে। ভয়ঙ্কর অউশভিৎজ়ে নিরাপত্তা দিল, আশ্রয় দিল জীবনের আশা ছেড়ে দেওয়া এই ভীত সন্ত্রস্ত মেয়েটিকে। সবার চোখ এড়িয়ে চলল দেখাসাক্ষাৎ, ঘনিষ্ঠতা। এর পরেও বহু বার মৃত্যুর খাঁড়া এগিয়ে এসেছিল হেলেনার ওপর। প্রতি বারই বিরাট ঝুঁকি নিয়ে, নিজেকে বিপন্ন করেও প্রেমিকাকে বাঁচিয়েছে ফ্রান্ৎজ়। মুক্তির পরে হেলেনা বলেছিল, ওই মৃত্যুপুরীতে বসেও আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে ও এক জন এসএস গার্ড আর আমি এক জন ইহুদি।
যুদ্ধ শেষে সোভিয়েট সেনা যখন নাৎসি-অধিকৃত জায়গাগুলো একে একে দখল করতে লাগল, তখন সব গ্যাস চেম্বার উড়িয়ে দিয়ে ও গণহত্যার প্রমাণ লোপাট করে পালাতে লাগল এসএস গার্ডরা। পালাল ফ্রান্ৎজ়ও। কিন্তু হেলেনার কথা ভোলেনি সে। নিজের মায়ের ঠিকানা তুলে দিয়েছিল হেলেনার হাতে, যাতে সেখানে পৌঁছে সুরক্ষিত থাকে হেলেনা। কিন্তু ফ্রান্ৎজ়কে ছাড়া আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারেনি হেলেনা। বোন রেজিনকাকে নিয়ে সে পাড়ি দিল যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্ব ইউরোপের দিকে। শেষ পর্যন্ত পৌঁছল ইজরায়েলে। ফ্রান্ৎজ় ফিরে এল অস্ট্রিয়ায়। দু’জনের জীবন কাটতে লাগল দুই দেশে।
বহু বছর পর, ১৯৭২ সালে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী কার্যকলাপের জন্য বিচার শুরু হল ফ্রান্ৎজ়-এর। জানতে পেরে সুদূর ইজরায়েল থেকে ছুটে এল হেলেনা আর তার বোন। সাতাশ বছর পর আবার দেখা হল ফ্রান্ৎজ়-হেলেনার। হেলেনা সাক্ষ্য দিল, কী ভাবে অউশভিৎজ়ে প্রতি পদে তাদের প্রাণ বাঁচিয়েছিল ফ্রান্ৎজ়। প্রাক্তন এসএস গার্ডও বলল, হেলেনার সান্নিধ্য ও ভালবাসা তাঁকে পাল্টে দিয়েছিল, গভীর অন্ধকার থেকে আলোর দিকে মুখ ফিরিয়েছিল সে। তার বিরুদ্ধে বন্দিদের অমানুষিক নিপীড়নের প্রমাণ পাওয়া গেলেও, হেলেনার সাক্ষ্য আর অস্ট্রিয়ার আইনের সীমাবদ্ধতার জন্য ছাড়া পেয়ে গেল ফ্রান্ৎজ়। তাকে বাঁচিয়ে ফিরে গেল হেলেনাও। দু’জনের আর দেখা হয়নি। হেলেনা সিট্রোনোভা মারা যায় ২০০৫-এ, আর তার চার বছর পর, ২০০৯ সালে মৃত্যু হয় ফ্রান্ৎজ়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy