ছবি: রৌদ্র মিত্র।
পূর্বানুবৃত্তি: যে সাপের স্বপ্ন তাঁকে দিনের পর দিন ভয় এবং অস্বস্তিতে ফেলেছে, তারই ব্যাখ্যা চাওয়ার জন্য পণ্ডিত সার্বভৌম ভট্টাচার্যের কাছে এসেছেন নৃসিংহ উপরায়। তাঁর কোষ্ঠীবিচার করে পণ্ডিত সার্বভৌম তাঁকে জানান যে, আপাত ভাবে ভয় পাওয়ার কারণ থাকলেও অন্তিম পরিণতি হানিকর নয়,বরং নৃসিংহ বিপদকে জয় করতে পারবেন। অন্য দিকে ভোর হওয়ার আগেই ইসমাইল গাজীর সৈন্যরা হিংস্র শ্বাপদের মতো ঢুকে পড়ল ওড়িশা সীমান্তের গ্রামে গ্রামে। জয়চন্দ্র নামে এক অশ্বারোহী তিরবেগে ঘোড়া ছুটিয়েছিল কোনও বিশেষ গন্তব্যে সংবাদ পৌঁছে দিতে। পথিমধ্যে কাফি খাঁ নামক এক দুর্ধর্ষ যোদ্ধা তাকে আক্রমণ করে। প্রবল যুদ্ধের শেষে কাফি খাঁকে খঞ্জর দ্বারা আঘাত করে জঙ্গলে পরাজিত করেন জয়চন্দ্র। কিন্তু কাফি খাঁ-ও বিষাক্ত শলাকা বিঁধিয়ে দেয় জয়চন্দ্রর গায়ে। বিষক্রিয়ার যন্ত্রণা উপেক্ষা করে গন্তব্যের দিকে ফের ঘোড়া ছোটায় জয়চন্দ্র।
মাধব মিশ্রর আস্তানার সামনে যখন জয়চন্দ্র পৌঁছল, তখন উষার আলো সবে ফুটতে শুরু করেছে। মন্দির থেকে একটু দূরে, কিছুটা নির্জন স্থানে একটি পান্থশালার দাওয়ায় সারা রাত জেগে বসে ছিলেন মাধব মিশ্র। জয়চন্দ্র তাঁর সামনে পৌঁছে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তার গৌরবর্ণ মুখ বিষের জ্বালায় তত ক্ষণে নীলবর্ণ ধারণ করেছে। শরীরের সমস্ত পেশি শিথিল। গাঢ় নীলবর্ণ ঠোঁটের কোণে ফেনায়িত লালা। মাধব মিশ্র গভীর মায়ায় তার মাথা কোলে তুলে নিয়েছেন।
তার মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে, পরম মমতায় কপালের উপর থেকে স্বেদবিন্দু মুছিয়ে দিতে দিতে মৃদু গলায় ডাকলেন, “জয়চন্দ্র! জয়চন্দ্র!”
জয়চন্দ্র পাষাণের মতো ভারী দু’চোখের পাতা অতি কষ্টে খুলল। তার ঠোঁট নড়তে থাকল। অস্ফুট স্বরে শুধু কয়েকটি সাঙ্কেতিক শব্দবন্ধ উচ্চারণ করতে পারল। তার পর জয়চন্দ্রের ঠোঁট থেমে যায়। চিরদিনের মতো সে চোখ বুজল।
ঘরের ছায়া থেকে দু’জন মানুষ বেরিয়ে এলে মাধব তাদের ইশারায় জয়চন্দ্রের দেহটিকে গোপনে কোথাও সরিয়ে দিতে বললেন।
তাঁকে এখনই বেরিয়ে পড়তে হবে।
সারাটা রাত অনিশ্চিত অস্থিরতায় কেটেছে নৃসিংহের। গোবিন্দ বিদ্যাধরের কাছে গিয়ে তিনি কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিলেন। গোবিন্দ বিদ্যাধর চরমুখে আগেই সংবাদ পেয়েছেন, অথচ যে ভাবে সৈন্য প্রস্তুত রাখার কথা, সেই ভাবে যেন প্রস্তুত নয় তারা। বিদ্যাধরের হাবভাব কেমন শীতল আর রহস্যময় লাগছিল নৃসিংহের কাছে। কিন্তু বিদ্যাধর তার মনোভাব বুঝতে পেরে বঙ্কিম হাসিতে মাথা নেড়ে আশ্বস্ত করেছিলেন, “আপনি এত উতলা হবেন না বণিকচূড়ামণি, আপনাদের মতো মানুষদের কোনও অনিষ্ট হতে দেব না আমরা। আমার সৈন্য প্রস্তুত আছে। আমাদের সৈন্যদের এত হীন ভাববেন না। ইসমাইল গাজির সাধ্য নেই আমাদের অনিষ্ট করে।”
নৃসিংহ কথা বাড়ালেন না। কিন্তু আশ্বস্তও হতে পারেননি প্রদেশপালের কথায়। গোবিন্দ বিদ্যাধর বড় কুটিল ব্যক্তি। যেমন ধূর্ত, তেমনই লোভী।
সারা রাত নিজের ক্ষুদ্র প্রাসাদে পদচারণা করতে করতে ঘুরে ফিরে তিনি বিদ্যাধরের কথাগুলি ভাবছিলেন। বিদ্যাধরের কথার ভিতরে একটা শ্লেষ ছিল। তিনি যেন মনে মনে নৃসিংহের এই রাজনৈতিক বিষয়ের ভিতরে ঢুকে পড়া পছন্দ করছিলেন না। হয়তো রাজনীতিকরা তাঁদের গোপন কূটনৈতিক বিষয়ে কারও দখলদারি পছন্দ করেন না। নৃসিংহকে অস্বস্তি দিচ্ছিল বিদ্যাধরের শীতলতা। নিঃস্পৃহ ভাবে তিনি যেন কিছু গোপন করে যাচ্ছিলেন।
পদচারণা করতে করতে তিনি ভাবলেন, এই বিষয়ে মাধবের সঙ্গে এক বার পরামর্শ করতে হবে। রাত্রি যত গভীর হচ্ছে, তত তাঁর আশঙ্কা বাড়ছিল। মাধব এখনও আসছে না কেন! তবে কি কোথাও কোনও অনিষ্ট ঘটল?
তিনি গবাক্ষের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। পুব আকাশে ভোরের আলো ফোটার আয়োজন শুরু হয়েছে। চিন্তাকুল চোখে তিনি অপস্রিয়মাণ অন্ধকারের দিকে তাকিয়েছিলেন। তখনই প্রহরীর সঙ্গে সেই ঘরে মাধব এসে প্রবেশ করলেন। মাধবকে দেখে নৃসিংহের মুখে প্রসন্নতার ভাব খেলে গেল। রাত্রি জাগরণের ক্লান্তি সত্ত্বেও অমলিন হাসিমুখে তিনি বললেন, “তোমার দেরি দেখে ভাবনা হচ্ছিল বড়। ভাবছিলাম কিছু অঘটন ঘটে গেল কি না!”
মাধব বিষণ্ণ ভাবে বললেন, “অঘটন ঘটতে দেরি নেই আর্য। রাতেই শত্রুসৈন্য ওড়িশা সীমান্তে ঢুকে পড়েছে। শুরু হয়ে গেছে তাদের ধ্বংসলীলা।”
নৃসিংহ চিন্তামগ্ন ভাবে শুধু মাথা নাড়লেন।
মাধব আবার বললেন, “পঙ্গপালের মতো তারা ঢুকে পড়ছে কোনও রকম প্রতিরোধ ছাড়াই। তবে আর একটু এগোলে তারা আমাদের সেনার প্রতিরোধের মুখে পড়বে।”
নৃসিংহ বললেন, “আমাদের সেনা কি প্রস্তুত?”
“প্রদেশপাল গোবিন্দ বিদ্যাধরের কাছ থেকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ পৌঁছেছে সেনার কাছে। আজ প্রভাতের পরেই তারা রওনা দেবে। মহারাজের কাছেও খবর পৌঁছে গিয়েছে।”
“তা হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই বলছ?”
“আছে আর্য।”
“কী রকম?”
“ক্রূর ইসমাইল গাজি গুরুতর এক অভিসন্ধির জাল বুনেছে।”
“কেমন অভিসন্ধি?”
“তারা মন্দির আক্রমণ করবে। লুঠপাট করে বিগ্রহ ধ্বংস করার মতলব এঁটেছে সম্ভবত। দুঃখের কথা, আমাদের গুপ্তচর জয়চন্দ্র সব কথা খুলে বলবার আগেই মারা গিয়েছে...” মাধব বিষণ্ণ ভাবে এক বার মাথা নাড়লেন।
নৃসিংহ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। শঙ্কাতুর গলায় বললেন, “তা হলে! এই খবর প্রদেশপালের কাছে তো দিতে হবে। মন্দিরের চার দিকে আলাদা করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
মাধব খুব শান্ত আর শীতল গলায় বললেন, “না, আর্য। এই খবরটা আমাদের গোপন রাখতে হবে। আমাদের সৈন্যরা প্রতিরোধ করবে, কিন্তু নিশ্চিত করে কি বলতে পারবেন, তারা শত্রু সেনাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারবে? আমাদের অর্ধেকের বেশি সেনা দাক্ষিণাত্যে মহারাজের সঙ্গে আছে। ফলে অর্ধেক সেনা নিয়ে উগ্র আক্রমণকারীদের প্রতিরোধ করা কি সম্ভব হবে?” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন মাধব মিশ্র।
নৃসিংহ কিছু বলার আগেই মাধব আবার বললেন, “আমাদের যে চর খবর নিয়ে এসেছে, তার উপরে শত্রুপক্ষের আক্রমণ হওয়ায় ধরে নিতে হবে যে, তাদের অভিসন্ধির কথা আমরা জেনে গিয়েছি, এই খবর তারা পেয়ে গিয়েছে। ফলে তারা কালবিলম্ব করবে না। অতর্কিতে হানা দেবে।”
নৃসিংহ উদ্বিগ্নহৃদয়ে পায়চারি করছিলেন। ভিতরে ভিতরে অস্থিরতায় দীর্ণ হচ্ছিলেন তিনি। মনে অদ্ভুত দোটানা। তিনি আবার ভাবলেন, তাঁর কি এত কিছু ভাবার কথা! মহারাজ আছেন, প্রদেশপাল আছেন, বীর সেনানায়করা আছেন। তিনি এখন এক বণিক মাত্র! কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলেন, তিনি তো প্রভু জগন্নাথদেবের সেবক। সেবক হয়ে এই সঙ্কটের সময়ে তিনি কি দূরে থাকতে পারেন?
পায়চারি থামিয়ে মাধবের সামনে এসে দাঁড়ালেন তিনি। জানলা দিয়ে তখন ভোরের আবছা আলো প্রবেশ করছে। সেই আলোয় তিনি মাধবের মুখের দিকে তাকালেন। মাধবের মুখ অভিব্যক্তিহীন, নির্বিকার। মাধবের মুখ সব সময়ই এমন। সেই ভাবলেশহীন মুখের দিকে তাকিয়ে নৃসিংহ বললেন, “চলো, তবে গোবিন্দ বিদ্যাধরের কাছে যাই। তার সঙ্গে আলোচনা করে কিছু একটা উপায় বার করি।”
“মার্জনা করবেন আর্যপুত্র, তবে আমার মনে হচ্ছে সেটা বোধ হয় ঠিক হবে না।”
নৃসিংহ বিস্মিত হলেন, বললেন, “কেন?”
মাধব চোখ নামিয়ে নিয়ে বললেন, “সব কথা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে আমার কাছে পাকা খবর আছে, গোবিন্দ বিদ্যাধর এ সমস্ত জানেন। গৌড়েশ্বর হুসেন শাহের এক চর গোপনে পুরীধামে এসেছিল কয়েক দিন আগে। গোবিন্দ বিদ্যাধরের সঙ্গে সেই চর একান্তে দেখা করেছে। তাদের মধ্যে গোপনে কথাবার্তা হয়েছে। প্রশ্ন হল, হুসেন শাহের দূত আমাদের প্রদেশপালের কাছে কেন এসেছিল? নিশ্চয়ই কুশল বিনিময় করতে নয়!”
নৃসিংহ আরও অবাক হলেন, “এত কথা তুমি জানলে কী করে?”
মাধব গলার ভিতরে হাসির শব্দ করলেন, “খবর রাখাই তো আমার কাজ, আর্য।” তার পরেই আবার স্বাভাবিক হয়ে বললেন, “আমার ধারণা, বিদ্যাধর সব কিছু জানেন। তাঁর মনেও কিছু পরিকল্পনা আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু সেটা আমরা জানি না।”
নৃসিংহ এই কথার অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবন করতে পারলেন। মুখে বললেন, “বিদ্যাধরের সম্পর্কে কিছু কিছু কথা আমারও কানে আসে। আমি তেমন আমল দিতাম না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সব কিছু উড়িয়ে দেওয়াও ঠিক হবে না...” এক মুহূর্ত থেমে তিনি আবার বললেন, “এসো মাধব, আমরা দু’জনে পরামর্শ করি।”
তিনি মাধবকে সঙ্গে নিয়ে অন্তঃপুরে চলে গেলেন। বাইরে তখন এক দল পাখি জেগে উঠে কূজনে মেতেছে।
৩
দূর থেকে একটা বাঁশির শব্দ শুনলেন নৃসিংহ উপরায়। খুবই মৃদু শব্দ, অন্ধকারে বায়ুপ্রবাহে ভেসে আসছে। বাকি সব যেন আপাতনিস্তব্ধ। বাতাসে কান পাতলে শোনা যায় অসহায় মানুষের হাহাকার। স্বজনহারা হতভাগ্যদের আর্তনাদ। বাতাসে রুধিরের ঘ্রাণ। রণক্লান্ত জনপদ যেন ঘুমিয়ে আছে। কিংবা কোনও এক সর্বনাশের অপেক্ষায় প্রহরগুনছে নিভৃতে।
প্রায় বিনা বাধায় গৌড়ের সৈন্যরা গ্রাম জনপদ ধ্বংস করতে করতে দ্রুত পুরী নগরীর দিকে এগিয়ে আসছে। সেই সঙ্গে চলছে লুঠতরাজ। গণহত্যা, নারী-হরণ। ওড়িশার সৈন্যদের সামান্য প্রতিরোধ তাদের গতিরোধ করতে পারছে না। তবে পুরীর উপকণ্ঠে পৌঁছে তারা হয়তো কঠিন প্রতিরোধের মুখে পড়বে। প্রদেশপাল ও সেনাপতি গোবিন্দ বিদ্যাধর রণনিপুণ। সংখ্যায় অনেক না হলেও বীর যোদ্ধারা আছেন। কিন্তু নগরীর ক্ষয়ক্ষতি কি ঠেকিয়ে রাখা যাবে?
সহস্র চিন্তায় দীর্ণ নৃসিংহ ভাবছিলেন, এই দুঃসময়ে কে এমন বাঁশিতে সুর তুলেছে! মনে হয় বংশীবাদকের কানে আসন্ন বিপদের আঁচ পৌঁছায়নি। সে তাই উদাসীন। সুরেলা বাঁশির সুর বাতাসে প্রজাপতির মতো সাঁতরাতে সাঁতরাতে সমস্ত নৈঃশব্দ্যের ভিতরে ভিতরে ছড়িয়ে পড়ছে।
বাঁশির সুরের মূর্ছনা শুনতে শুনতে নৃসিংহ গৃহ থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন। রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর। আকাশে অজস্র নক্ষত্র জেগে আছে। তবু যেন নিকষ অন্ধকার অপসারিত হচ্ছে না। তাঁর পরনে মন্দিরের সাধারণ সেবকের পোশাক। নগ্ন পদে তিনি নির্জন রাস্তা ধরে মন্দিরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন।
কিছু ক্ষণ চলার পর আরও এক জন নীরবে তাঁর সঙ্গী হলেন। তার পরে আরও এক জন। সকলেই সেবক। কারও মুখে কোনও শব্দ নেই। তাঁদের পায়েরও কোনও শব্দ নেই যেন। কেউ কারও দিকে তাকাচ্ছেন না। শুধু নিশ্চুপে নৃসিংহকে তাঁরা অনুসরণ করে যাচ্ছেন। নৃসিংহ তাঁদের উপস্থিতি জানেন, কিন্তু তিনিও পিছন ফিরে তাকাচ্ছেন না।
ধীরে ধীরে তাঁরা জগন্নাথ দেবের মূল মন্দিরের সিংহদ্বারের সামনে এসে হাজির হলেন। অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে মূল ফটকের সামনে হাজির হতেই একটা হালকা শিস বেজে উঠল। অন্ধকারে ছায়ার মতো যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের গায়ে যেন কাঁটা দিয়ে উঠল হঠাৎ। সেটা সামলে নিয়ে এক ছায়ামূর্তি আলতো শিস দিয়ে প্রত্যুত্তর দিল।
শোনা গেল সিংহদ্বার খোলার শব্দ। দরজাটা সম্পূর্ণ খুলে গেলে দেখা যায়, ভিতরের ছায়া ছায়া আলোয় কয়েকটি আবছা মূর্তি। কিন্তু কারও মুখে কোনও শব্দ নেই। পায়ে চলারও শব্দ নেই।
অন্ধকারে নৃসিংহের চোখ সয়ে গেলে তিনি দেখতে পেলেন, দুই দিক থেকে তিন জন করে ছয় জন ছায়ামূর্তি একটি শিবিকা তুলে নিয়েছে স্কন্ধে। এ বার তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে মূল ফটকের দিকে। এক পাশের অন্ধকার থেকে আরও একটি চেহারা বেরিয়ে এল। চলার ভঙ্গি দেখে নৃসিংহ চিনতে পারলেন মাধব মিশ্রকে। মাধব হাত তুলে একটা সাঙ্কেতিক ভঙ্গি করলেন। প্রত্যুত্তরে নৃসিংহ এক বার সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন। শিবিকা-বাহকরা এ বার মন্দিরের প্রধান ফটকের দিকে এগোতে থাকল।
সহসা একটা চিৎকার নিস্তব্ধতা খান খান করে দিয়ে জেগে উঠতে গিয়েও থেমে গেল। এক অজ্ঞ প্রহরী সহসা চিৎকার করে উঠতে গিয়েছিল। কিন্তু অর্ধেক চিৎকার তার গলার ভিতরেই থেকে গেল। এক সতর্ক ছায়ামূর্তি তার মুখ চেপে ধরে একটি ছোরা সমূলে তার গলায় বিঁধিয়ে দিয়েছে। এ বার শিবিকা বাহকের দল সতর্ক আর তৎপর হয়ে উঠল। তাদের সবারই পরনে কালো পোশাক। এমনকি সমস্ত শিবিকাটিও কালো কাপড়ে আচ্ছাদিত।
পালকি-বাহকদের পিছনে মন্দিরের মূল ফটক আবার বন্ধ হয়ে গেল। শিবিকা মূল রাস্তা ছেড়ে, অলি গলি পথ বেয়ে দ্রুত নগরীর বাইরে পাড়ি দিল। মন্দিরের ভিতরে নৃসিংহ আর মাধবের মধ্যে কী পরামর্শ হল, তা কেউ জানতেও পারল না।
দু’-এক দণ্ড পরে দেখা গেল, তিন জন ঘোড়সওয়ার অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে তিন দিকে রওনা হয়ে গেল। ঘোড়ার খুরে মোটা কাপড়ের আস্তরণ জড়ানো, যাতে শব্দ কম হয়।
ভোরের আলো ফোটার আগেই শিবিকা-বাহকের দল পুরী নগরীর উপকণ্ঠে একটি নির্জন স্থানে হাজির হয়ে গিয়েছে। সেখানে তাদের জন্যে অপেক্ষা করছিল বণিকের ছদ্মবেশে চার জন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা আর একটি বিশাল হস্তী। শিবিকা-বাহকরা দ্রুত শিবিকাটিকে একটি পেটিকার ন্যায় রূপ দিয়ে সেটিকে হস্তীটির পৃষ্ঠে স্থাপন করে দিল। তার পর হস্তিসহ অশ্বশকট অরণ্যের পথ ধরল। সেই অপরিচিত পথে মানুষের যাতায়াত বিরল।
ক্রমশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy