Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
International News

রাজবাড়ির কেক-কাহিনি

রানি ভিক্টোরিয়ার বিয়ের কেকের টুকরো উঠেছিল নিলামে। কেকের উপকরণ উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন রানি এলিজ়াবেথ।রানি ভিক্টোরিয়ার বিয়ের কেকের টুকরো উঠেছিল নিলামে। কেকের উপকরণ উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন রানি এলিজ়াবেথ।

ঐতিহ্য: রানি ভিক্টোরিয়ার বিয়ের কেক

ঐতিহ্য: রানি ভিক্টোরিয়ার বিয়ের কেক

ঊর্মি নাথ
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

গতকাল বিকেলে ইংল্যান্ডের ছোট রাজপুত্র হ্যারি ও মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্ক্‌লের চার হাত এক হল। রাজবাড়ির বিয়ে, সে তো এমনই জায়গা করে নেবে ইতিহাসে। কিন্তু স্রেফ সে কারণে নয়, এ বিয়ে রাজপরিবারের দীর্ঘ ঐতিহ্যকে কিছুটা হলেও বদলে দিয়েছে। সে বদলের হাওয়া লেগেছে বিয়ের কেকেও।

শোনা যায়, কেক-এর রাজকীয় বেশের ব্যাপারটা মোটামুটি শুরু হয় ১৮৪০ সালে প্রিন্স আলবার্টের সঙ্গে রানি ভিক্টোরিয়ার বিয়ের সময় থেকে। ভিক্টোরিয়া ছিলেন বেশ খাদ্যরসিক। মিষ্টির প্রতি তাঁর টান ছিল একটু বেশিই। তাঁর বিয়ের প্লামকেকটির ওজন ছিল ৩০০ পাউন্ড (প্রায় ১৩৭ কিলোগ্রাম)। ১৪ ইঞ্চি পুরু এই কেকটি চওড়ায় ছিল ১০৮ ইঞ্চি! মস্ত প্লামকেকটি ঢাকা ছিল চিনির গুঁড়োর ধবধবে আস্তরণে। কেক সাজানো হয়েছিল ছোট ছোট চিনির পুতুলে। কেকের একদম উপরে প্রাচীন রোমান পোশাকে পুতুলরূপী ভিক্টোরিয়া এবং প্রিন্স আলবার্ট, তাঁরা শপথ নিচ্ছেন হাতে হাত ধরে। আলবার্টের পায়ের কাছে ভিক্টোরিয়ার প্রিয় পোষ্য এবং ভিক্টোরিয়ার পায়ের কাছে একজোড়া ঘুঘু। চারপাশে কয়েকটি কিউপিড তথা প্রেমের দেবতা। শোনা যায়, বিয়ের এক সপ্তাহ আগে বন্ড স্ট্রিটের যে বেকারি সংস্থা এই কেকটি তৈরি করেছিল তাদের দোকানে প্রায় ২১ হাজার লোক ভিড় জমিয়েছিল। জটলা সামলাতে হিমসিম খেতে হয়েছিল পুলিশকে।

রানি ভিক্টোরিয়ার বিয়ের ১৮ বছর পর তাঁর মেয়ে ভিকি ও প্রিন্স ফ্রেডরিক উইলিয়ামের বিয়ের কেকটি ছিল সাত ফুট লম্বা। চিনির পুতুল দিয়ে শুধু বর-কনেই নয়, দু’পক্ষের বাবা-মা’ও ছিলেন সেই পুতুলজগতে। আর ছিল প্রেমের তির হাতে বেশ কয়েকটি নগ্ন কিউপিড। সরলতা ও জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে কেকের উপর দেওয়া হয়েছিল কমলা রঙের ফুল। সম্ভবত ভিকি-ফ্রেডরিকের বিয়ের পর থেকেই রাজপরিবারে বিয়ের কেকে একাধিক স্তর এবং তার পরতে পরতে সাদা চিনির শৌখিন অলঙ্করণের রীতি শুরু হয়।

১৯৪৭, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টালমাটাল পৃথিবীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও কোনও ত্রুটি ছিল না হ্যারির ঠাকুমা রানি এলিজ়াবেথ এবং প্রিন্স ফিলিপের বিয়ের আয়োজনে। চকোলেট এলিজ়াবেথের ভারী পছন্দ। কিন্তু প্রথা মেনে তাঁর বিয়েতেও হয়েছিল ফ্রুটকেক। চার ধাপের এই কেক লম্বায় ছিল ৯ ফুট। ওজন ছিল প্রায় ২২৭ কিলোগ্রাম। কেকের চারটি ধাপ জুড়ে চিনির পুতুল দিয়ে বর্ণিত হয়েছিল বর-বধূর জীবন— তাঁদের প্রেম ও বিয়ে। এই কেকের উপকরণ দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে রানিকে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। এলিজ়াবেথের বিয়ের কেককে তাই বলা হয়, ‘১০,০০০ মাইল কেক’। বিয়ের কেকের ২০০০ টুকরো দেওয়া হয়েছিল অতিথিদের। আর ১০০ টুকরো বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায়।

এলিজ়াবেথের বড় ছেলে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ডায়ানার বিয়েতে চার ধাপের ফ্রুটকেকে শুধু কিসমিস বা স্রেফ চিনির পুতুল নয়, ব্যবহার করা হয়েছিল আসল অলঙ্কার। চার্লসের বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট-এর বিয়ের ফ্রুটকেকে চিনির পুতুল নয়, ছিল ইংল্যান্ড, ওয়েল্স, আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের জাতীয় ফুলের চিনির সংস্করণ। কেটের না-পসন্দ লম্বা কেক। অথচ তাঁর বিয়েতেই হয়েছিল আট-ধাপ কেক!

ইংল্যান্ডের বাইরে মনে রাখার মতো কেক— ১৯৫৬ সালে নায়িকা গ্রেস কেলির সঙ্গে মোনাকো দ্বীপের রাজা তৃতীয় রেনোয়ার বিয়েতে। ছ’ধাপের এই কেক মন্টে কার্লো শহরের এক বিখ্যাত হোটেলে তৈরি হয়েছিল। বর সেই কেক কেটেছিলেন নিজের তরবারি দিয়ে।

অনেক দেশকেই জয় করতে চেয়েছিলেন নেপোলিয়ন। কিন্তু তিনি মোটেও কেক পছন্দ করতেন না। অথচ তাঁর বিয়েতেও জবরদস্ত কেক তৈরি করেছিলেন তাঁর খাস রাধুনি মারি অঁাতোয়ান কারমে। তাঁকে পেস্ট্রি শেফ বলা হত। ফরাসি বিপ্লবের সময় মাত্র ১০ বছর বয়সে অাঁতোয়ান তাঁর বাবা-মা’র কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। বিক্রি হয়ে যান দাস হিসেবে। সেখান থেকেই পরে নেপোলিয়নের কেকশিল্পী!

কিন্তু এত বছরের ইংল্যান্ডের কেকের রাজ-ঐতিহ্য ভেস্তে দিল হ্যারি ও মেগানের বিয়ে। তাঁদের উৎসবের কেকে নেই চার ধাপ, আট ধাপের প্রতিযোগিতা। নেই চিনির পুতুলের খেলনাবাটি। তাঁদের বিয়ের লেমন ও এলডারফ্লাওয়ারের সুবাসিত কেক যেন বার্তা দিল বসন্তের। চিনির পুতুলের বদলে বিয়ের কেকে এল তাজা ফুল। আর মোলায়েম, শ্বেতাভ বাটার ক্রিমের অমসৃণ পালিশ বোধ হয় নিঃশব্দে কয়েকশো বছরের রাজকীয় ঐতিহ্য ভাঙার বার্তা দিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE