Meet this mother from Gurugram who started unique newspaper just for kids dgtl
The Children's Post
ছেলের জেনারেল নলেজ কাঁচা, আস্ত খবরের কাগজ খুলে শিরোনামে ইনি
মার্কশিট জুড়ে ভাল নম্বরের ছড়াছড়ি। মুখে অনর্গল ইংরেজি। কিন্তু জেনারেল নলেজটা বড্ড কাঁচা। নিজের অফিসের জন্য দিনের পর দিন এমন অনেক ইন্টারভিউ নিয়ে নিরাশ হয়ে যাচ্ছিলেন গুরুগ্রামের নিধি অরোরা। নিজেই বেকার যুবক আর বাচ্চাদের জেনারেল নলেজ বাড়াতে খুলে ফেললেন সংবাদপত্রের প্রকাশনা। আর নাম দিলেন ‘দ্য চিলড্রেনস পোস্ট’।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১২
মার্কশিট জুড়ে ভাল নম্বরের ছড়াছড়ি। মুখে অনর্গল ইংরেজি। কিন্তু জেনারেল নলেজটা বড্ড কাঁচা। নিজের অফিসের জন্য দিনের পর দিন এমন অনেক ইন্টারভিউ নিয়ে নিরাশ হয়ে যাচ্ছিলেন গুরুগ্রামের নিধি অরোরা। নিজেই বেকার যুবক আর বাচ্চাদের জেনারেল নলেজ বাড়াতে খুলে ফেললেন সংবাদপত্রের প্রকাশনা। আর নাম দিলেন ‘দ্য চিলড্রেনস পোস্ট’।
০২১২
শুধু বেকার যুবকরা নন। নিধির ভয় ছিল নিজের ছেলেকে নিয়েও। যার মধ্যে কোনও দিনই খবরের কাগজ পড়ার কোনও আগ্রহ খুঁজে পাননি তিনি। নিজের ছোটবেলায় প্রায়শই বাবার রাগী মুখ দেখে ঘুম ভাঙত নিধির। কারণ, খবরের কাগজটা যিনি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন, তিনি দেরি করেছেন।
০৩১২
ছেলে তখন আট বছরের। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চাকরি ছেড়ে দিলেন নিধি। ঠিক করলেন, নিজের ছেলেকে একটু বেশি করে সময় দিতে হবে। জেনারেল নলেজ আর খবরের কাগজ পড়ার প্রতি ছেলের আগ্রহটাও বাড়াতে হবে।
০৪১২
নিধির কথায়, “যখন থেকে ছেলের সঙ্গে আরও বেশি করে সময় কাটাতে লাগলাম, তখনই দেখলাম সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে ওর জ্ঞান খুবই কম। আর তখন মনে হল, খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাসটা ওর মধ্যে তৈরি করতে হবে। কিন্তু কোন কাগজ পড়বে? এ দেশে বাচ্চাদের জন্য সত্যিই কি ঠিকঠাক কোনও খবরের কাগজ আছে?’’
০৫১২
সাত বছর বয়স থেকে রোজ খবরের কাগজ পড়ে আসছেন নিধি। তাঁর কথায়, “ব্রেড-বাটার-টোস্টের পাশে যেন খবরের কাগজটাও থাকে।” এক দিন ছেলেকে স্কুলে ছেড়ে আসার পরে নিজেই একটি খবরের কাগজ বের করবেন বলে ঠিক করলেন নিধি। পাশাপাশি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন আইআইএম গ্র্যাজুয়েট নিধি অরোরা।
০৬১২
২০১৭ সালের ২১ জুন ‘দ্য চিলড্রেনস পোস্ট’-এর প্রথম প্রকাশনা বের হল। কিন্তু তাতে যেন মন ভরল না নিধির। ওই বছরেই ৩০ জুন ফের প্রকাশিত হল ‘দ্য চিলড্রেনস পোস্ট’। নিধি প্রথমেই ছেলেকে দিলেন সেই পেপার। ছেলে ঘর বন্ধ করে পড়া শুরু করল।
০৭১২
মিনিট কুড়ি পরই দরজা খুলে বেরিয়ে এসে মা’কে জড়িয়ে ধরল নিধির ছোট্ট ছেলে। আর বলল, ‘‘মা! আজকে যে আমি কতটা খুশি তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।’’ ছেলের মুখে অমন কথা শুনে যেন মনোবল আরও বেড়ে গেল নিধি অরোরার। দু’মাসের মধ্যে সাত জনের একটা টিম নিয়ে জোরকদমে শুরু করে দিলেন ‘দ্য চিলড্রেনস পোস্ট’-এর সম্পাদনার কাজ।
০৮১২
সেই দিনই নিধি পরিষ্কার বুঝে গিয়েছিলেন যে, এমন নানাবিধ খবর পড়ার খিদে ছোটদের মধ্যে রয়েছে। যে সাতজনের টিম নিধি তৈরি করলেন, তাঁদের কাজ করার শর্ত ছিল মাত্র দু’টি। এক, সপ্তাহে এক দিন তাঁদের এই পত্রিকার জন্য কাজ করতে হবে। দুই, কাজ এক দিন করলেও বাড়ির বাচ্চাদের রোজ পেপারটা পড়াতে হবে।
০৯১২
মূলত ৮-১৩ বছরের বাচ্চাদের জন্যই তৈরি এই খবরের কাগজ। নিধির দাবি, গোটা দেশে বাচ্চাদের সংবাদপত্র বলতে শুধু এটিই। নিধি বলছেন, “প্রথমে ৫০ জন পাঠক দিয়ে শুরু। আর এই মুহূর্তে ৩৫০০-এরও বেশি বাচ্চা আমাদের এই কাগজের পাঠক।” সংখ্যাটা যে খুব শীঘ্রই আরও কিছুটা বেড়ে যাবে তাতেও আশাবাদী নিধি।
১০১২
শিশুদের উন্নয়নমূলক নানান কাজের সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও রোজ এই খবরের কাগজ সংগ্রহ করে। নিধি বললেন, ‘‘বিনামূল্যেই দেশের নানান জায়গায় আমরা এই খবরের কাগজটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’ চার পাতার এই কাগজ কেবল ইন্টারনেটেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে বেশ কিছু স্কুলে বাচ্চাদের ওই ই-পেপার থেকে প্রিন্ট আউট দিয়ে পড়ানো হচ্ছে।
১১১২
এই মুহূর্তে সাত জনের টিম নিয়ে কাজ করছেন নিধি। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, পরিবেশ বিষয়ক আলোচনা, অর্থনীতি, গ্যাজেটস, টেকনোলজি, এমনকি ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কেও আলোচনা করা হয় ‘দ্য চিলড্রেনস পোস্ট’-এ।
১২১২
পাজল, কুইজ, কবিতা, ছোট গল্প, কার্টুন— এই সবও রয়েছে দ্য চিলড্রেনস পোস্টে। নিধি বললেন, ‘‘আমাদের কাগজের বেশির ভাগ কার্টুনিস্টরাই শিশু।’’ ‘দ্য চিলড্রেনস পোস্ট’-এর ভক্ত এক অভিভাবক নভিতা বহেতি বলছেন, ‘‘এই পেপার এখন আমাদের রোজ চাই। শুধু আমার ছেলে না, ছেলের বাবাও রোজ পড়ছে।’’