Who was raja raja Chola Ponniyin Selvan I controversy dgtl
Ponniyin selvan
‘পিএস ১’-এর রাজরাজ চোল কি সত্যিই হিন্দু রাজা ছিলেন? সুদক্ষ এই শাসকের সময়ে কি আদৌ ছিল হিন্দু ধর্ম?
‘পোন্নিয়িন সেলভান ১’ ছবিতে চোলদের বার বার হিন্দু শাসক বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মানতে নারাজ কমল হাসান থেকে পরিচালক ভেত্রিমারান। কে ছিলেন এই রাজরাজ চোল?
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২২ ১২:২৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
রাজরাজ চোল। তিনি কি শুধুই পরাক্রমশালী এক রাজা? না কি হিন্দু রাজা! তিনি নিজে কী ভাবতেন, তা আর জানার উপায় নেই। কারণ ইতিহাসের সঙ্গে কালক্রমে মিশেছে কল্পনা। লোকগাথা। ইতিহাস আর কল্পনার মাঝে সেই সূক্ষ সীমানা বিলুপ্ত হয়েছে। আর তা থেকেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
০২২০
দক্ষিণ ভারতের পরাক্রমশালী রাজরাজ চোল। বড় দাদা আদিত্যের মৃত্যুর পর ৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন রাজরাজ। সেই থেকে ১০১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেছিলেন তিনি।
০৩২০
যুদ্ধ করে একের পর এক রাজ্য নিজের দখলে এনেছিলেন। ভারত মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন।
০৪২০
শ্রীলঙ্কার উত্তরাংশ, লক্ষদ্বীপ দখল করেছিলেন রাজ চোল মলদ্বীপের উত্তরাংশও নিজের দখলে এনেছিলেন তিনি।
০৫২০
সেনাবাহিনীর মতো শক্তিশালী নৌবাহিনীও তৈরি করেছিলেন রাজ চোল। সেই দিয়ে তিনি দখলে এনেছিলেন কান্দালুর সালাই (কেরল)। গঙ্গাপদী, নোলাম্বাপদী, তাড়িগাইপদী (কর্নাটক)-ও দখল করেছিলেন তিনি।
০৬২০
বীর যোদ্ধার পাশাপাশি দক্ষ শাসক ছিলেন রাজ চোল। নিজের বিশাল সাম্রাজ্য জরিপ করে ছোট ছোট অংশে ভাগ করেছিলেন। সেগুলির নাম ছিল ভালানাদুস। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে তৈরি হত একটি ভালানাদুস।
০৭২০
এই ছোট ছোট অংশের এক একটিতে এক জন করে শাসক নিয়োগ করেছিলেন তিনি। তাঁদের হাতে শাসনের ক্ষমতা দিয়ে রেখেছিলেন। এই সব ছোট অংশের আয়-ব্যয় অডিটও করানো হত।
০৮২০
রাজ চোলের নির্দেশেই থাঞ্জাভুরে তৈরি হয়েছিল বৃহদীশ্বর মন্দির। শিবের এই মন্দির আজও দ্রাবিড় শিল্প-স্থাপত্যের নিদর্শন বহন করে চলেছে। সম্প্রতি একে হেরিটেজের তকমা দিয়েছে ইউনেসকো।
০৯২০
রাজ রাজ ছিলেন শৈব। নিজেকে ‘শিবপদ শেকরন’ বলে অভিহিত করতেন। এর অর্থ, ‘যিনি নিজের মাথার রাজমুকুট শিবের চরণে রাখেন’। শিবভক্ত হলেও বেশ কয়েকটি বিষ্ণু মন্দিরও তৈরি করিয়েছিলেন তিনি।
১০২০
এই চোল সাম্রাজ্য উঠে এসেছে মণিরত্নমের ছবি ‘পোন্নিয়িন সেলভান ১’-এ। ছবিটি কল্কি কৃষ্ণমূর্তির উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। মুক্তির পর দারুণ সাফল্য পেয়েছে এই ছবি। তবে বিতর্কও পিছু ছাড়েনি।
১১২০
পরিচালক ভেত্রিমারান দাবি করেন, ছবিতে রাজা রাজা চোলকে ‘এক জন হিন্দু রাজা’ হিসাবে দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পরিচয় ক্রমেই আমাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’’
১২২০
ভেত্রিমারান স্পষ্টই জানিয়েছেন, রাজা রাজা চোল হিন্দু রাজা ছিলেন না। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ভারতে আসার পর ‘হিন্দু’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে বলে জানান তিনি। খ্রিস্টিয় অষ্টম শতকের এক জন শাসককে হিন্দু বলা কতটা যুক্তিগ্রাহ্য, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
১৩২০
সেই নিয়ে আবার পাল্টা মন্তব্য করেন তেলঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলিসাই সৌন্দরারাজন। অভিযোগ করেন, তামিলনাড়ুর বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের হিন্দু-পরিচয় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার।
১৪২০
ভেত্রিমারানের পাশে দাঁড়ান দক্ষিণী তারকা কমল হাসান। দাবি করেন, রাজ চোলের শাসনকালে হিন্দু ধর্ম বলে কিছু ছিল না।
১৫২০
কমল বলেন, ‘‘বইনবম, শিবম এবং সমনাম— এই তিন গোষ্ঠীর কথা জানা যায়। যাঁদের এক ছাতার তলায় এনে পরবর্তী কালে ‘হিন্দু’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন ব্রিটিশরা। তাঁরা জানতেন না কোনটার উচ্চারণ কী। যেমন থুথুকুণ্ডিকে করে দিয়েছিলেন তুতিকোরিন, তেমন এটাও উচ্চারণের বিকৃতির কারণেই হয়েছে।”
১৬২০
এই মন্তব্যের পরেই মাঠে নেমেছে বিজেপি। দলের নেতা এইচ রাজা বলেন, ‘‘আমি ভেত্রিমারানের মতো অতটা ইতিহাস জানি না। কিন্তু উনি কি রাজ চোলের তৈরি দু’টি গির্জা বা মসজিদের নাম বলতে পারবেন? নিজেকে শিবপদ শেকরন বলে অভিহিত করতেন। তার পরেও তিনি হিন্দু নন?’’
১৭২০
চোল সাম্রাজ্য এবং সিংহাসন দখল ঘিরে যে টানাপড়েন আর ষড়যন্ত্র ছিল, তা-ই উঠে এসেছে ছবির পরতে পরতে। শুধু বাইরে নয়, ঘরের শত্রুরাও কতটা মারাত্মক, সেটাই দেখানো হয়েছে ছবিতে।
১৮২০
ছবিতে রয়েছেন বিক্রম, ঐশ্বর্য, কার্থি, জয়ম রবি। রাষ্ট্রকূটদের উপর আক্রমণ করেন যুবরাজ আদিত্য (বিক্রম)। সেখান থেকে গল্পের শুরু। এর পর নিজের বিশ্বাসভাজন সেনাপতি ভান্থিয়াথেবন (কার্থি)-কে গুপ্তচর হিসাবে পাঠিয়ে দেন ভিন্ রাজ্যে।
১৯২০
এর পর গল্প যত গড়ায়, ততই দেখা যায়, বাইরের থেকে ভিতরের শত্রুর সংখ্যা অনেক বেশি। অভিযোগ, ছবিতে চোলদের বার বার হিন্দু শাসক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২০
এই নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। দক্ষিণী তারকাদের একাংশ যা মানতে নারাজ।