Who is Zainab Abbas? The Pakistan cricket presenter who has become the centre of controversy due to her early return from India amid ongoing ICC World Cup dgtl
Zainab Abbas Controversy in ICC Cricket World Cup
ভারতে এসেও ‘ভয়ে’ ফিরে গেলেন পাকিস্তানে! বিতর্কে জড়ানো এই ক্রীড়া সঞ্চালিকা কে?
ক্রীড়া সঞ্চালনা করার জন্য বহু দেশে ঘুরলেও এই প্রথম ভারতে এসেছিলেন জয়নব। আসার আগে জানিয়েছিলেন, ভারতে কী এমন আকর্ষণ রয়েছে, তা তিনি খতিয়ে দেখতে চান।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৩২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
ক্রিকেট বিশ্বকাপে সঞ্চালনা করতে ভারতে এসেছিলেন পাকিস্তানের এক জনপ্রিয় মহিলা ক্রীড়া সঞ্চালক। কিন্তু কাজ শুরু হতে না হতেই ‘ভয় পেয়ে’ দেশ ফিরে গেলেন তিনি।
০২২৬
নাম জয়নব অব্বাস। যাঁরা ক্রিকেট সম্পর্কে খবর রাখেন, তাঁদের কাছে জয়নব পরিচিত মুখ। এই সে দিনও তাঁকে নিয়ে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল।
০৩২৬
ক্রিকেট ম্যাচের বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা জয়নব এক ফিল্ডারের লাথি খেয়ে মাঠের মধ্যেই পড়ে গিয়েছিলেন। মজার মুহূর্ত! বিভিন্ন স্পোর্টস চ্যানেল তাদের সমাজমাধ্যমে দৃশ্যটি পোস্ট করে। হাসিখুশি পাক ক্রীড়া সঞ্চালক নিজেও সেই মজায় যোগ দেন।
০৪২৬
জয়নবের অনুরাগীরা বলেন, তিনি এমনই। এর আগেও বহু অপ্রস্তুত হওয়ার মতো পরিস্থিতিকে নিজের পক্ষে ঘুরিয়ে নিয়েছেন তিনি। শুধু উপস্থিত বুদ্ধির জোরে। তা হলে এ বার এমন কী হল যে, ভয় পেলেন জয়নব?
০৫২৬
শুক্রবার নিজের দেশে ফিরে এক্স (সাবেক টুইট) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে জয়নব জানিয়েছেন তাঁর দেশে ফেরার কারণ। এ-ও জানিয়েছেন, কেন ভয় পেয়েছেন তিনি।
০৬২৬
ওই পোস্টে জয়নব ক্ষমাও চেয়েছেন ভারতীয়দের কাছে। তবে একই সঙ্গে জানিয়েছেন, ভারত তাঁর সঙ্গে কেউ দুর্ব্যবহার করেননি। তাঁর নিরাপত্তা কোনও ভাবে বিঘ্নিত হয়নি। কেউ কোনও খারাপ আচরণও করেননি তাঁর সঙ্গে।
০৭২৬
ভারত সরকার তাঁকে পাকিস্তানে ফিরে যেতে বলেছে বলেও একটি জল্পনা দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। সেই জল্পনাও অসত্য বলে জানিয়েছেন জয়নব। লিখেছেন, তাঁকে ফিরে যেতে বলা হয়নি। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভাবেই তাঁর নিজের। তিনিই ভয় পেয়েছিলেন। ভয় পেয়েছিলেন তাঁর দেশের আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুরাও। তা-ই ফিরে এসেছেন তিনি।
০৮২৬
ক্রীড়া সঞ্চালনা করার জন্য বহু দেশে ঘুরলেও এই প্রথম ভারতে এসেছিলেন জয়নব। আসার আগে জানিয়েছিলেন, ভারতে কী এমন আকর্ষণ রয়েছে তা আমি খতিয়ে দেখতে চাই। দু’দেশের মধ্যে সংস্কৃতিগত মিল, ভাষা এবং শিল্পের সাদৃশ্য থাকলেও কেন এত বিরোধিতা, তা-ই খুঁজে দেখতে চান তিনি। ভারতে সফর নিয়ে তাই উত্তেজিত ছিলেন তিনি।
০৯২৬
কিন্তু এই জয়নবই আবার অতীতে সমাজমাধ্যমে ‘ভারত-বিরোধী’ পোস্টও করেছিলেন। ‘হিন্দু-বিরোধী’ কথাবার্তা লেখা ছিল সেই পোস্টে। গত ৫ অক্টোবর বিশ্বকাপ শুরুর প্রথম দিনেই জয়নবের সেই পুরনো ভারত-বিরোধী পোস্ট নিয়ে একটি মামলা হয় দিল্লি আদালতে। নীত জিন্দল নামে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী সাইবার আইনে অভিযোগ করেন।
১০২৬
একই সঙ্গে বিষয়টি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং আইসিসি-কে জানিয়েছেন বিনীত অনুরোধ করেন, বিশ্বকাপের কাজ থেকে যেন সরিয়ে দেওয়া হয় এই পাকিস্তানের ক্রীড়া সঞ্চালককে। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফিরতে হয় জয়নবকে।
১১২৬
ফিরে যাওয়ার পর তিনি সমাজমাধ্যমে একটি জবাব দেন। লেখেন, ‘‘ভারতে থাকাকালীন সকলের সঙ্গে খুব ভাল সময় কাটিয়েছি। আমাকে সকলে আপন করে নিয়েছিল। নিজের দেশেই ছিলাম মনে হয়েছে। আমাকে ভারত থেকে বার করে দেওয়া হয়নি। কেউ চলেও যেতে বলেনি। যদিও সমাজমাধ্যমে যে ভাবে যে প্রতিক্রিয়া পাচ্ছিলাম, সেটা ভয়ঙ্কর। আমার পরিবার বা আমার কোনও ক্ষতি করার কথা ওঠেনি, কিন্তু আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সেই কারণে আমার নিজের জন্য একটু সময় দরকার ছিল।’’
১২২৬
পাকিস্তানের এই ক্রীড়া সঞ্চালক অবশ্য এই প্রথম বিতর্কে জড়ালেন, এমন নয়। এর আগে নিজের দেশেও প্রত্যাখ্যানের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। শুধু মহিলা বলে তাচ্ছিল্যের স্বীকারও হয়েছেন।
১৩২৬
তার পরও অবশ্য আটকে রাখা যায়নি জয়নবকে। পাক সংবাদমাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে উঠেছেন জয়নব। তিনি দেশের প্রথম সারির ক্রীড়া সাংবাদিকও। দেশ-বিদেশে নানা খেলায় ধারাভাষ্যকার হিসাবে প্রায়ই দেখা যায় তাঁকে।
১৪২৬
জয়নবের বাবা নাসির আব্বাস পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন দীর্ঘ দিন। তাঁর মা আন্দলীব আব্বাস রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের নেত্রী তিনি। সাংসদ হিসাবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন জয়নবের মা।
১৫২৬
২০১৯ সালে হামজা কর্দারের সঙ্গে বিয়ে হয় জয়নবের। তাঁর শ্বশুর পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক আব্দুল হাফিজ় কর্দারের পুত্র। ক্রিকেটের আবহেও বড় হয়ে উঠেছেন জয়নব। বিয়েও করেছেন ক্রিকেটঘেঁষা পরিবারে।
১৬২৬
যদিও পাকিস্তানের এই দাপুটে টেলিভিশন সঞ্চালিকার কেরিয়ারের সূচনা মেকআপ শিল্পী হিসাবে। ২০১৫ সালে দেশের একটি ক্রীড়া বিষয়ক টিভি চ্যানেলে অতিথি সঞ্চালক হিসাবে যান জয়নব। সেখান থেকেই তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরে যায়।
১৭২৬
এর পর ওই চ্যানেলটির স্থায়ী সঞ্চালিকা হিসাবে কাজ শুরু করেন জয়নব। টেন স্পোর্টস, সোনি এবং স্টার স্পোর্টসের মতো চ্যানেলেও কাজ করেছেন। একাধিক পাক তারকা ক্রিকেটারের সাক্ষাৎকার নিয়ে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তিনি।
১৮২৬
বহু পাক সংবাদপত্রে খেলার পাতায় নিয়মিত কলামও লেখেন জয়নব। তবে এর পরও শুধু মহিলা সাংবাদিক বলে তাঁকে সাক্ষাৎকার দিতে চাননি তাঁরই দেশের এক ক্রিকেটার।
১৯২৬
আবার গত টি-২০ বিশ্বকাপেও খোদ পাকিস্তান দলের কোচ তাঁকে অপমান করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন তাঁর ভক্তরা। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তান নিউ জ়িল্যান্ডকে হারানোর পর পাক বোলিং কোচ শন টেটের সঙ্গে মাঠেই কথা বলতে গিয়েছিলেন জয়নব। সিডনির মাঠে টেটকে বার বার পিছন দিক থেকে ডাকছিলেন জয়নব। কিন্তু সেই ডাক শুনেও তাঁর দিকে ফিরে তাকাননি পাকিস্তানে ওই অস্ট্রেলিয়ান কোচ।
২০২৬
জয়নব অবশ্য সহজাত দক্ষতাতেই এই উপেক্ষা হজম করে নিয়েছিলেন। একটুও অপ্রস্তুত না হয়ে তিনি গোটা ঘটনাটি বর্ণনা করেছিলেন ক্যামেরার সামনে। সেই ভিডিয়োও ভাইরাল হয়।
২১২৬
নিজের দেশে আরও বহু বার সমালোচিত হতে হয়েছে জয়নবকে। এক বার বিরাট কোহালি ও এবি ডেভিলিয়ার্সের সঙ্গে ছবি তোলার কারণে ট্রোলিংয়ের শিকার হয়েছিলেন। আইপিএলের একটি ম্যাচে আরসিবিকে সমর্থনের জন্যেও পাকিস্তানের সমালোচনার শিকার হন তিনি।
২২২৬
পড়াশোনা করেছেন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরে দোলচে অ্যান্ড গাবানার মতো আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডের হয়েও কাজ করেছেন দীর্ঘ দিন।
২৩২৬
পাকিস্তানের এই লাস্যময়ী ক্রীড়া সঞ্চালিকা একটা নিজের স্টুডিও তৈরি করে মেকআপ আর্টিস্টের কাজ করতেন। তিনি নিজেও পরে মডেলিং করেছেন।
২৪২৬
ভারতের ডিজ়াইনার মণীশ মালহোত্রের ফ্যাশন শোয়ে র্যাম্পে হেঁটেছে জয়নব। সিনেমায় অভিনয় করার প্রস্তাবও এসেছিল তাঁর কাছে।
২৫২৬
যদিও জয়নব তাঁর প্রথম ভালবাসা ক্রিকেট ছেড়ে অন্য পেশায় যাননি। ২০১৫ সাল থেকে ক্রিকেট সঞ্চালনা শুরু করেন। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের প্রথম মহিলা সাংবাদিক এবং ধারাভাষ্যকার হিসাবে দেখা যায় জয়নবকে।
২৬২৬
কর্মক্ষেত্রে একাধিক স্বীকৃতি পাওয়া এই সঞ্চালিকা অবশ্য এখন কাজ ছেড়ে নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে ব্যস্ত । তবে ভারতীয়দের কাছে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আমার কথায় যাঁরা আঘাত পেয়েছেন, তাঁদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি এক সময়ে যা লিখেছিলাম, তা আজকের আমি হলে কখনওই মেনে নিতাম না। আমি এখন একজন অন্য মানুষ। আশা করব সবাই ভাল থাকবেন।’’